অহংকার আর বিরক্তি একই কথা নয়। অনেক সময় পোস্টের ভাষ্যে অহংকার প্রকাশ পেলেও বিরক্তিটাই মূল ব্যাপার।
যেখানে চাকুরী করি সেই প্রতিষ্ঠান অত্র এলাকায় মোটামুটি পরিচিত। অন্যকিছু না হোক অন্তত টাকাপয়সার দিক থেকে পরিচিত বাইরের মানূষের কাছে। ভেতরের খবরতো আমরা যারা চাকুরী করি তারা জানি। বাইরের মানুষ ওসব বিশ্বাস করবে না।
আমাদের অবস্থা যাই হোক না কেন বিভিন্ন ধরনের সাহায্যের আবেদন আমাদের কাছে আসে। আজ থেকে ২-৪ বছর আগেও এত আসত না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যার যাই প্রয়োজন হোক না কেন "অমুক প্রতিষ্ঠানে কাগজ দাও, অনেক টাকা পাবা"- বেশিরভাগই এমনটা ভাবছে এখন। সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ের জন্য কাগজ আসে তা হল বিয়ে! অমুকের মেয়ের বিয়ে, তমুকের বোনের বিয়ে এবং দুঃখের কথা হলেও সত্যি যে এসব ক্ষেত্রে প্রায় ৯৫ ভাগ হল হিন্দু ফ্যামিলির মেয়ে!
ভ্রু কুঁচকানোর কিছু নেই। হিন্দু হলে চাঁদা দিব না, মুসলিম হলে দেব - এমনটা ভাবার কোন কারন নেই। চাঁদা সমস্যা নয়। সমস্যা হল সিস্টেম! চট্টগ্রামের রিকশাওয়ালার মেয়ের বিয়েতেও ২০০ বরযাত্রী খাওয়াতে হয়। নাহলে পাত্রপক্ষ বিয়েতে রাজী হতে চায় না। কাজেই ভিক্ষা করে হলেও পাত্র পক্ষের দাবি মেটাতে হবে। অফটপিকে একটা প্রশ্ন রাখি, মুসলিম ধর্মেতো যৌতুক নিষিদ্ধ, কিন্তু আমরা মানি না। হিন্দু ধর্মে কি বৈধ? জানা আছে কি?
এসব গরীব হিন্দু পরিবারে সদস্যরা তাদের মেয়েদের বিয়েতে অনেকটা স্ববর্স্ব খোয়ানোর মত অবস্থা হয়। এইসব বিয়ের খাওয়া বা যৌতুক কোনটাই ইসলামী শরীয়ার দৃষ্টিতে বৈধ না। দুঃখ লাগে আমাদের চাঁদার টাকা ভাল কোন কাজে লাগছে না।
আচ্ছা গরীবদের কথা বাদই দিলাম। যাদের টাকাপয়সা আছে তাদের কথাই বলি। আমাদের এখানে চাকুরী করে ঢাকায় ফ্ল্যাট-দোকান নেই, এমন লোকের সংখ্যা কম। স্থানীয়দের বাদ দিয়ে অবশ্য। প্রায় প্রত্যেকেরই ফ্লাট, অথবা জমি বা অন্য কোন সম্পত্তি আছে। কাজেই ফট করে ৩০-৪০ লাখ টাকার দরকার হলে জোগাড় করতে পারবে না এটা কেন জানি বিশ্বাস হতে চায় না।
একটা সময় ছিল যখন মানুষের আর কোন উপায় থাকত না তখন অন্যের কাছে হাত পেতে দিত। পোলা বিদেশ যাবে? জমি বিক্রি করো। মেয়ের বিয়ে? গাভিটা বিক্রি করে দাও। অসুখ হয়েছে? ভিটে বন্ধক দাও।
এখন আর সেদিন নেই। আমার এক কলিগের দুটো কিডনিই বিকল হয়ে গেল। ভারতে চিকিৎসা করবেন। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন। অতি চালাকীর কারনে তার রোগ জটিল আকার ধারন করেছে। কোম্পানির ডাক্তার এই ব্যাপারে তার উপর যথেষ্ঠ ক্ষ্যাপা। তবুও তার রিকমেন্ডশনে কোম্পানি তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে। তবুও সে আমাদের নিকট সাহায্যের আবেদন করেছে। অথচ ঢাকায় তার ফ্ল্যাট আছে। সমালোচকদের মুখে শুনি তার স্ত্রী নাকি তাকে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে দিচ্ছে না বা তারও ফ্ল্যাট বিক্রি করার ইচ্ছে নেই। যারা খোজ খবর রাখে তাদের কাছে শুনি, তার স্ত্রী এখন তার মরার অপেক্ষায়।
কার জন্য তাহলে গাড়ী-বাড়ী? কি হবে এসব করে?
আজকে একটা আবেদন এসেছে। তিনি বিসিআইসির একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। বয়স ৪৯ বছর। আমাদের এখানে টিউশনি করান। জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, প্রফেশনালি কেউ যদি আমাদের এখানে টিউশনি করায় তবে মাসে লাখ খানেকের কাছাকাছি টাকা ইনকাম করা তার জন্য কোন ব্যাপারই না।
এইলোকেরও কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হবে। ৩০-৪০ লাখের মত খরচাপাতি লাগবে। যে চার্ট দেখলাম সে অনুযায়ী যদি টাকা উঠে তবে আমাদের এখান থেকে মানবিকতার খাতিরেই সে সাড়ে সাত লাখ টাকা পেয়ে যাবে। আর কোম্পানি যদি CSR ফান্ড থেকে দেয় তাহলেতো কথাই নেই। বসদের ছেলেমেয়েকে হয়ত পড়িয়েছেন, মেনেজ হয়ে যেতেই পারে।
যাদের টাকা নেই, তাদের কথা ভিন্ন। কিন্তু টাকা যাদের থাকার কথা তারাও যখন হাত পাতে তখন আল্টিমেটলি অভাবীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কারন আমাদের হাত তখন আর প্রসারিত হতে চায় না। গুটিয়ে থাকতে চায়।
মূলকথায় আসি। মাসের ১৫ দিন পার হয়ে গিয়েছে। মানিব্যাগের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, খালি হয়ে যাবার আশংকায় বাজারে যাওয়া হচ্ছে না। কাউয়ার ঠেং, বগার ঠেং রান্না করে নাকে-মুখে গুজে দিয়ে পড়ে থাকি। ভাবছি আর না, মানবিকতার চাঁদা দিয়ে নিজেই থালা হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাব।
যা আছে কপালে!
No comments:
Post a Comment