Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Friday, September 18, 2015

সানি লিউন

এই বিষয়টা নিয়ে আমার আপাতত লেখার কোন ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু আমার ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের ধোঁআশে ভাবভঙ্গির কারনে লিখতে হচ্ছে। আশা করি আর কেউ পড়ুক বা না পড়ুক তারা পড়ে অন্তত আমার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করবেন।
দ্বিমুখীতা বা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মানব চরিত্রের অন্যতম বড় ত্রুটি। আমি নিজের জন্য যা ভাল মনে করি, অপরের জন্য তা ভাল মনে করি না। বিরক্ত-রাগান্বিত হই। উদাহরণ দেই। বাসের জন্য অপেক্ষা করার বিষয়টা কমবেশি সবার জীবনেই আছে। যেদিন রাস্তায় লোক বেশি থাকে সেদিনের অবস্থা করুণ পর্যায়ে যায়। লোক ভর্তি কোন বাসে ঠেলা-ঠেলি করে উঠলেন। আপনার পিছনে আরো কয়েকজন উঠল। উঠার পর পরবর্তীতে যখন বাসটা আরো লোক উঠানোর জন্য থামল, তখন আমার ভাল লাগল না। "বাস ভর্তি হয়ে গিয়েছে", "দাড়ানোর জায়গা নেই", "গরমে সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছি", "মানুষ উঠে কেন? দেখছে না জায়গা নেই" - ইত্যাদি নানাবিধ কথা বলে নিজেকে জাহির করে থাকি। অথচ কিছুক্ষন আগেই আমি ঠেলাঠেলি করে উঠলাম। আমি ভুলে যাই আমার যেমন গন্তব্যে পৌছাতে হবে, তেমনি আমার মত শতশত মানুষেরও পৌছাতে হবে। কারো কারো হয়ত আমার চেয়েও বেশি প্রয়োজন গন্তব্যে পৌছানো। কেউ হয়ত আমারে চেয়েও বেশিক্ষন ধরে অপেক্ষা করে আছে। ভাবখানা এমন যেন আমি পৌছাতে পারলেই চলবে। আর কেউ পৌছাতে পারুক বা না পারুক। এমন ঘটনা আরো আছে, সিএনজিতে উঠলে বাসকে সহ্য করতে পারি না। বাসে থাকলে সিএনজিকে পিষে ফেলতে ইচ্ছে করে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আবার কাছের মানুষের ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিমুখীতা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে। যে লোক প্রতিদিন দুই প্যাকেট সিগ্রেট খায় সেও চায় না তার ছেলে সিগ্রেট ধরুক। মদখোর ব্যক্তি চায় না তার ছেলে-মেয়ে মদ খাক। পাড়ার রোমিও ছেলেটা চায় না তার বোনের পিছনে কেউ লাইন দিক। রিকশাওয়ালাও চায় না তার ছেলে বড় হয়ে রিকশা চালাক। বরং সবাই তার ভবিষ্যত/অনুজ প্রজন্মকে সুস্থ দেখতে চায়। চায় সে যাই করুক না কেন তার আপনজনেরা যেন ভাল থাকে। সুস্থ, সুন্দর পরিবেশে থাকে। ঠিক একই কারনে মেমোরী কার্ডে জিবির উপর জিবি সানি লিয়নের ভিডিও থাকলেও সানি লিয়নের আগমনের পক্ষে যাওয়া উচিত কিনা সেটা নিজেদেরই বিবেচনা করা দরকার।
এখানে যদি কেউ ভন্ডামী দেখে, তাহলে আর কি করার আছে।
সানি লিউনের মত পর্ণস্টার এদেশে আসার মত পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয় নি। একসময় আসত গানের শিল্পীরা। এসেছে হিরো, হিরোইন রা। তাদের প্রোগ্রামের মাধ্যমে যে টাকার খেলা হয়েছে তা পর্ণস্টার আসার প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। আপতদৃষ্টে মনে হচ্ছে গানের শিল্পী, নাচের শিল্পী, নায়ক-নায়িকা আসার মত পর্ণস্টার আসাটাও একটি অতি স্বাভাবিক ঘটনা। আসতেই পারে। আসছে নাচতে, গাইতে। পর্ণস্টারগিরি করতেতো আসছে না! কথা সেখানেই। গান, নাচের কথা হলে গান-নাচের শিল্পী আনলেইতো হত। পর্ণস্টার আনার কি দরকার? আর আজকে নাহয় শিল্পী পর্ণ শো করবে না, কিন্তু আগামীতে? এখন যদি এসব পর্ণস্টারদের নাচ-গানের মত অতিস্বাভাবিক শো বন্ধ করা না যায় বা কোনরূপ বিরোধীতার সম্মুক্ষীন না হয় তবে নিকট ভবিষ্যতে এদের পর্ণশো করতেই আনা হবে। আর এদেশের মিডিয়াগুলো ব্যাপক কভারেজ দিবে।
"যাদের চাহিদা আছে, সামর্থ্য আছে, তারা যাবে; যাদের চাহিদা নেই, টিকেট কেনার সামর্থ নেই; তারা যাবে না। সিম্পল। সমস্যাটা কোথায়?"
দেশেতো একশ্রেণীর মানুষের কাছে ইয়াবার ব্যাপক চাহিদা আছে। সামর্থ্যও আছে। আছে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইনের চাহিদা। অস্ত্রের চাহিদাও কম নয় বলেই ধারনা করি। তাহলে এসবও অবাধে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হোক।
না, না, না। তখনতো দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হবে। ছিনতাই-রাহাজানি বাড়বে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হবে।
কথা এটাই। পার্থক্য হল মাদকের শক্তি আর অস্ত্রের ঝনঝনানি প্রত্যক্ষ প্রভাব চোখে পড়ে। আর ঐসবের প্রতিক্রিয়া চাক্ষুস দেখা যায় না। অনেকটা স্লো পয়জনের মত। মরে, কিন্তু বন্দুকের গুলির মত হুট করে মরে না। ধীরে ধীরে মরে।
"দেশে এত এত পতিতা থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে কিছু না বলে, তাদেরকে পুনর্বাসন না করে সানি লিয়নের পিছনে লাগার কারনটা বোঝা গেল না।"
কেউতো মানা করেনি পুনর্বাসন করতে। এখন ভাবা দরকার কিভাবে পুনর্বাসন করা যায়। তারমানে এই নয় যতক্ষন তাদের পুনর্বাসন করা না হচ্ছে ততক্ষন তাদের জন্য প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে, বিদেশী পতিতার ভচাম নৃত্য উপভোগ করতে হবে। যেসব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বা যারাই হোক, এসবের আয়োজন করে থাকে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় কবে হবে কে জানে!
কেউ কেউ আবার সানি লিয়নের ছোটবেলার কথা সামনে এনে মানুষের মনে একধরনের সমবেদনা কাড়ার চেষ্টা করেছেন। ছোটবেলায় কে কি করেছে না করেছে, তার জন্য তাকে দায়ী না করা গেলেও যখন তার স্বাধীনতা এসেছে তখন সে কি করেছে বা কি করছে সেটার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। সানি এখন কি? পর্ণস্টার। সে দেহব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে বা দিবে এমন খবর পেয়েছেন কেউ? বয়স হয়ে গেলেতো ছাড়তেই হবে। সেটা অবশ্যই ভিন্ন বিষয়।
“হেফাজত তাহলে সানি লিয়নের কথা জানে?”
প্রথম প্রথম এই ধরনের বক্তব্যগুলো ফান করার জন্য দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এধরনের বক্তব্যের মধ্যে বিকৃত মানসিকতা ছাপ পাওয়া যায়। ভাবভঙ্গিতে মনে হচ্ছিল, হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ সানির নিয়মিত খদ্দের বা নিশ্চয়ই ভিডিও দেখে তাদের কাম-বাসনা চরিতার্থ করে! তা না হলে মাদ্রাসার হুজুরেরা সানি লিয়নের কথা জানল কিভাবে? (নাউজুবিল্লাহ!)
এইগুলোর জবাব দেয়ার রূচি হয় না। অন্যকথা বলি।
আমাদের একটা সাধারণ প্রবনতা হচ্ছে মাদ্রাসার সাথে সংশ্লিষ্টদের হেয় প্রতিপন্ন করার মানসিকতা। চাই সে ছাত্র হোক বা শিক্ষক। তার জ্ঞান-গরীমা, আর্থিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। তাকে দুনিয়া এবং দুনিয়ার জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ ও উদাসীন মনে করা। ধারনা করা সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে তাদের কোন ধারনাই নেই।
এই ধারনার উপর ভিত্তি করে তাদের সম্পর্কে যা নয় তাইতো বলি-ই, গালিগালাজ করতেও পিছপা হই না। ছোট্ট একটা প্রশ্ন করি। এদেশে যেসব ইসলামী মাসিক পত্রিকাগুলো বের হয় সেগুলোর কতগুলো আমরা পড়েছি? অন্তত কতগুলোর নাম জানি? আমার লিস্টে কি এমন কেউ আছেন যে নিয়মিত কোন ইসলামী মাসিকের গ্রাহক? থাকলে প্লিজ কোন পত্রিকা পড়েন উল্লেখ করুন। মাসিক মদীন, আদর্শ নারী, মঈনুল ইসলাম, আল-কাউসার-ইত্যাদি পত্রিকায় সময় সাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে প্রচুর লেখা প্রকাশিত হয়। ১৫-২০ টাকা দিয়ে এসব পত্রিকা আমরা কিনি না ঠিকই, কিন্তু গলাবাজি আর গালিবাজি দিয়ে পুষিয়ে দেই। নিজের যোগ্যতা নিয়ে চিন্তা করি না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের অতি মূল্যবাদ মগজ দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা তা ব্যবহার করি না। কেউ শিখিয়েও দেয় না কিভাবে ব্যবহার করতে হবে। কারও শেখারও কোন আগ্রহ নেই।
দুঃখজনক!

No comments: