Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Friday, September 18, 2015

দাগ!

দাগ থেকে দারুন কিছু না হয়ে এটা কি হল?
বিকেলে অফিস থাকলে আমরা কমন একটা নাস্তা করি। একেকদিন একেকজন নাস্তা নিয়ে আসে। আর সেটাই মিলেমিশে খাই। গতকালকের নাস্তা ছিল পেয়ারা, বাংলা কলা আর চিটাগাং এর বিখ্যাত ওয়েল ফূডের ড্রাই কেক। ডাসা ডাসা পেয়ারাগুলো দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। নাস্তার অপেক্ষা না করে নিজের ভাগেরটা সাবাড় করে দিলাম।
এর আগে একদিন পেয়ারার জুস বানিয়েছিলাম। খুব মজা হয়েছিল। সেজন্য ঐ ভাই বললেন জুস বানাতে। আমি যুক্তি দিলাম, পাকা পেয়ারা হলে জুস বানাতাম। কাচা পেয়ারা জুস বানানোর কি দরকার। চিবিয়ে খেতেই মজা। আমার কথা শুনলে উনি নিজেও উনার ভাগেরটা খাওয়া শুরু করলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চিটাগাং এ কাচা পেয়ারার তুলনায় পাকা পেয়ারার চাহিদা ভাল!
যাই হোক, আসল কথায় আসি। যখন সন্ধ্যা হল তখন নাস্তার জন্য সবাই আস্‌লো। আমার ভাগে বাকি আছে বিস্কিট আর কলা। আমার আবার ক্যামিকেল মুক্ত সাগরকলা ছাড়া অন্য কোন কলা খেতে ইচ্ছে করে না। তবুও কোনমতে বাংলা কলা একটা খেলাম। এবার বিস্কিট খাবার আগে চা বানিয়ে নিলাম। তারপর চা এ ডুবিয়ে বিস্কিট খেতে লাগলাম। বিপত্তিটা বাধল এখানেই।
পায়ের উপর ঠ্যাং তুলে আরামসে চায়ে বিস্কিট ডুবিয়ে খাচ্ছি। হুট করে ভেজা বিস্কিট মুখে দেয়ার সময় ভেঙে ছলাৎ করে চায়ের পেয়ালায় ড্রাইভ দিল। আর চা ছলকে উঠে জায়গামত পড়ল! আমি আড়চোখে দেখে নিলাম কেউ খেয়াল করেছে কিনা। করেনি! সবাই গল্পে মশগুল। আস্তে করে পেপারটা টেনে নিয়ে কোলের উপর রাখলাম। নাস্তা খেতে খেতে ব্যাপারটা ভুলেই গেলাম।
ঘন্টাখানেক পর বস ডাকলেন তার রুমে। বসের সাথে কথা বলে বেড়িয়ে আসার সময় খেয়াল করলাম। প্যান্টে দাগ হয়ে আছে। কিন্তু দাগটা হয়েছে ছেলেদের অতিপরিচিত দাগের মত!
হায় হায়! বসে দেখে ফেলছে নাকি? লুজ্জা লুজ্জা...
তাড়াতাড়ি শার্টের ইন ছেড়ে দিলাম। তারপর ঐ অবস্থাতেই ডিউটি শেষ করলাম। ভাগ্যিস আমাদের সাথে কোন মেয়ে কাজ করে না। তাহলেতো আমি খারাপ পুলা হয়ে যেতাম!
দাগ থেকে ভাল কিছু হয় না। তাই দাগ ভাল না। এখন আবার ঘষে ঘষে দাগ তুলতে হবে। যন্ত্রণা!

মাযহাব সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নোত্তর

দ্বীন নিয়ে অহেতুক তর্ক-বিতর্ক ইসলাম ভাল চোখে দেখে নি। কুরাআন ও হাদীসে এই ব্যাপারে সতর্কবার্তা এসেছে। তাই কূট তর্ক এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হল সহজভাবে সহজ কিছু কথা বলা। যার ইচ্ছা সে মানবে, মানতে না চাইলে কে জোর করবে? তবে আশা করি যারা সন্দিহান তাদের সন্দেহ দূর হবে।
নিশ্চয়ই আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সিরাতুল মুস্তাকীমে চলা সম্ভব নয় এবং বিভ্রান্তি থেকে বাচাও সম্ভব নয়।
১. মাযহাব কাকে বলে?
২. মাযহাবের শাব্দিক অর্থ কি?

মাযহাব কি সেটা বলার আগে আরো কিছু পরিভাষা জানা দরকার। সেগুলো হল তাক্বলীদ, ইজতিহাদ ও ফিক্বহ।
ইজতিহাদের শাব্দিক অর্থ, উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাসাধ্য পরিশ্রম করা। ইসলামী ফেকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় ইজতিহাদ অর্থ,কোরআন ও সুন্নায় যে সকল আহকাম ও বিধান প্রচ্ছন্ন রয়েছে সেগুলো চিন্তা-গবেষণার মাধ্যেমে আহরণ করা। যিনি এটা করেন তিনি হলেন মুজতাহিদ।
[]
এবার আসি ফিকহের বিষয়ে।
ফিকহ হল
১. কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট বিধানবলীর সুবিন্যস্ত ও সংকলিত রূপ।
২. এবং ইসলামী ইবাদতসমূহের নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতির সুবিন্যস্ত রুপ যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সাহাবীগনকে (রাঃ) শিখিয়েছিলেন। তাঁরা তাবেয়ীগনকে এবং তাঁরা তাদের পরবর্তী লোকদেরকে শিখিয়েছিলেন।
৩. অনুরূপ ফিকহের আরেকটি গুরত্বপূর্ণ অংশ হল, ঐসব মাসআলার সুবিন্যস্ত সমষ্টি যা কুরআন-হাদীসে স্পষ্টভাবে বিদ্যমান নেই। [এখানেই ইজতিহাদের প্রসঙ্গ চলে আসে-পোস্টদাতা।]
এই ফিকহের একাধিক সংকলন বিদ্যমান ছিল, যার মধ্যে বর্তমান কাল পর্যন্ত শুধু চারটি সংকলনই স্থায়ীত্ব ও গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে। সেগুলো হল- ফিকহে হানাফী, ফিকহে মালেকী, ফিকহে শাফেয়ী, ফিকহে হাম্বলী। সাধারণ পরিভাষায় ফিহকের প্রত্যেকটি সংকলন ‘মাযহাব’ নামে পরিচিত। বলা বাহুল্য এখানে ‘মাযহাব’ শব্দটির অর্থ “ফিকহের মাযহাব” তথা ফিকহের নির্দিষ্ট একটি সংকলন। এখানে মাযহাব অর্থ দ্বীন বা আকাঈদ বিষয়ে মতবিরোধকারী কোন “ফির্কা” নয়।
[মাযহাব ও তাকলীদ কি ও কেন। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী। মাকতাবাতুল আশরাফ। পৃষ্ঠাঃ ১১-১৪]
তাক্বলীদের অর্থঃ
১. অনুসরণ করা, নকল করা, অনুকরণ করা। (ফারহাঙ্গ)
২. বেড়ী লাগানো, গলায় তরবারী ঝুলানো, কুরবানীর জন্তুর গলায় চিহ্ন স্বরূপ কিছু ঝুলিয়ে দেয়া ইত্যাদি। (আল-কাওসার)
৩. কোন কাজ কারও দায়িত্বে অর্পণ করা বা ন্যস্ত করা। (বয়ানুল্‌-লিসান)
৪. ‘হার’ পরিধান করা, “চিন্তা-গবেষণা ব্যতীত কারও কথার অনুসরণ বা অনুকরণ করা”; “ঐ শাহী নির্দেশ যা অনুসরণ করার জন্য জারী করা হয়”। (মিসবাহ)
আর পরিভাষায় ‘তাক্বলীদ’ অর্থ স্বধর্মীয় কোণ অনুসরনযোগ্য খাটি মুত্তাকী বুযুর্গের কথা ও কাজকে এই আস্থার ভিত্তিতে গ্রহন করে নিয়ে আমল করা যে, তিনি অবশ্যই উক্ত কথা বা কাজ কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই বলেছেন। উক্ত মেনে নেওয়া বা আমল করার ব্যাপারে দলীলের অপেক্ষা না করা। কিন্তু অযদি তৎক্ষনাৎ বা পরবর্তিতে দলীলও পাওয়া যায় বা বুঝে এসে যায়; তবে এটাও তাক্বলীদের পরিপন্থী নয়। মোট কথা, তাক্বলীদের জন্য দলীল-প্রমাণ তালাশ করা জরুরী নয়। আর দলীলের সম্যক ধারনা আব জ্ঞানও তাকলীদ পরিপন্থি নয়।
[সূত্রঃ মাযহাব মানব কেন? মুফ্‌তী মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। আলকাউসার প্রকাশনী। পৃষ্ঠা নং ১৭]
[সুতরাং বোঝা গেল কুরআন ও হাদীসে যেসব বিষয় প্রছন্ন বা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই সেগুলো নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বিধান বের করাই ইজতিহাদ। সেগুলোর (এবং যেগুলো স্পষ্টভাবে বিদ্যমান সেগুলোর) সংকলিত, সুবিন্যস্ত রূপই ফিকহ্‌। সেই ফিকহের অনুসরণ করাই তাক্বলীদ। এই পর্যন্ত বোঝার পর নিচের প্রশ্নগুলো যে অর্থহীন সেটাও না বোঝার কারন দেখি না।
১২. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণ রায়িআল্লাহু আনহু এর মাযবাহ কি ছিল?
১৩. এটা কি এখনো প্রচলিত আছে? নাকি বন্ধ হয়ে গেছে?
১৪. বন্ধ হলে কে বন্ধ করল?
১৫. কেন করল?
১৬. বন্ধ করার অধিকার কে দিল?
১৮. আর যদি বন্ধ হয়ে না থাকে তবে অন্যের নামে মাযহাব সৃষ্টি করার প্রয়োজন কি?

-পোস্টদাতা]
মাজহাব এর শাব্দিক অর্থ মতামত, বিশ্বাস, ধর্ম, আদর্শ, পন্থা, মতবাদ, উৎস। (মিসবাহুল লুগাত, থানবী লাইব্রেরী-২৬২ পৃষ্ঠা)
৩. প্রচলিত চার মাযহাব মান্য করা কি ফরয?
সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, “আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম। অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে”।
এই আয়াতের তাফসীরে তফসীরে মা’আরেফুল-কোরআনের ৫ম খন্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় (ইসলামী ফাউন্ডেশন) লেখা আছে,
আলোচ্য আয়াতের “অতএব জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে” বাক্যটি যদিও বিশেষ বিষয়বস্তু সম্পর্কে বলা হয়েছে, কিন্তু ভাষা ব্যাপকতার কারণে এ জাতীয় সব ব্যাপারকে শামিল করে। তাই কোরআনী বর্ণনাভঙ্গির দিক দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তিগত ও ইতিহাসগত বিধি যে, যারা বিধি-বিধানের জ্ঞান রাখে না, তারা যারা জানে, তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে নেবে এবং তাদের কথামত কাজ করা জ্ঞানহীনদের উপর ফরয হবে। একেই তাকলীদ (অনুসরণ) বলা হয়। [এরপর বিস্তারিত আলোচনার পর লেখা হয়েছে] এরপর দিন দিন জ্ঞানের মাপকাঠি সংকুচিত হতে থাকে এবং তাকওয়া ও আল্লাহ্‌ভীতির পরিবর্তে মানবিক স্বার্থপরতা প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে যদি কোন মাস’আলায় যে-কোন ইমামের উক্তি গ্রহণ করার এবং অন্য মাস’আলায় অন্য ইমামের উক্তি গ্রহন স্বাধীনতা দেয়া হয়, তবে এর আবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে মানুষ শরীয়ত অনুসরণের নামে প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে যাবে। যে ইমামের উক্তিতে সে নিজ প্রবৃত্তির স্বার্থ পূর্ণ হতে দেখবে সেই ইমামের উক্তিকেই গ্রহণ করবে। বলা বাহুল্য; এরূপ করার মধ্যে ধর্ম ও শরীয়তের অনুসরণ হবে কম এবং স্বার্থ ও প্রবৃত্তির অনুসরণ হবে বেশী। অথচ দীন ও শরীয়তের অনুসরণ না করে স্বার্থ ও প্রবৃত্তির অনুসরণ উম্মতের ইজমা দ্বারা হারাম। আল্লামা শাতেবী ‘মুয়াফাকাত’ গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। সাধারণ তাকলীদের বিরোধীতা সত্ত্বেও ইবনে তাইমিয়া এ ধরনের অনুসরণকে স্বীয় ফতোয়া গ্রন্থে ইজমা দ্বারা হারাম বলেছেন। এ কারনেই পরবর্তী ফিকাহবিদগন এটা জরুরী মনে করেছেন যে, আমলকারীদের ওপর কোন একজন ইমামেরই তাকলীদ করা বাধ্যতামূলক করে দেয়া উচিত। এখান থেকেই ব্যক্তিতাকলীদের সূচনা।
হযরত গাঙ্গুহী (রহ) তাক্বলীদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তাক্বলীদ’ বা অনুসরণ সাধারণত ‘ফরয’। কেননা আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেন, “তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করে নাও, যা কিছু তোমাদের অজানা রয়েছে”।
উক্ত আয়াত দ্বারা ‘তাক্বলীদ’ বা অন্যকে অনুসরণ করা ‘ফরয’ করে দেওয়া হয়েছে। (কারণ, একমাত্র মানার জন্যই ‘জানা’ জরুরী হয়ে থাকে। যার মানার বা অনুসরণ করার নিয়্যত নেই, তার জানারও দরকার নেই)
[মাযহাব মান্‌বো কেন? পৃষ্ঠা-৩৪]
[উপরোক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার যে, মাযহাব মান্য করা ‘ফরয’ (অবশ্য অন্য কিতাবে ওয়াজিবও বলা হয়েছে এবং সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।) তাই বলে চার মাযহাব একসাথে মানা বৈধ নয় বরং যেকোন কে মাযহাব মান্য করা ফরয। একাধিক ইমামের ফতোয়া অনুযায়ী চলতে গেলে নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণের সম্ভবনা রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে আলাদা পোস্ট দেয়া সম্ভব। সংক্ষিপ্ত করা হল। –পোস্টদাতা।)
৪. যদি ফরয হয়ে থাকে তাহলে এ ফরযটি উদ্ভাবন করল কে?
--উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার।
৫. এটি টি সকলের জন্যই? ৬. না কিছু লোকের জন্য?
-- যাদের ইজতিহাদ করার যোগ্যতা নেই তাদের জন্য।
৭. যারা চার মাযহাব মানে না,তারা কি মুসলিম নয়?
-- মূলবিষয়তো লিখেই দিলাম। এবার আপনিই ফতোয়া দিন তারা কি...

৮. হানাফী, শাফি’ঈ, মালিকী ওহাম্বলী এ চার মাযহাব কখন সৃষ্টি করা হয়েছে? ৯. কে সৃষ্টি করেছে?
-- সৃষ্টি করার অর্থ এখানে ধরে নিলাম “সূচনা” করা। ফিকহি মাযহাবের গোড়াপত্তন হয় ১০০ হিজরীর পরে। ইমামগন ও তাদের ছাত্রদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তা পূর্ণতা পায় ও সংকলিত হয়।
১০. কেন করেছে?
-- “ইজতিহাদ, ফিক্‌হ, মাযহাবের সংজ্ঞাগুলো আরেকবার পরে নিন দয়া করে।
১১. যাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি করা হয়েছে তাঁরা কি এ মাযহাবগুলি বানিয়ে নিতে বলেছেন?
-- আরেকটি অদ্ভূত ও অর্থহীন প্রশ্ন। উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি না।

১৯. চার মাযহাব মান্য করা ফরয হলে যারা চার মাযহাব মানেন না অথবা চার মাযহাব সৃষ্টি হওয়ার আগে যার মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের উপায় কি?
২০. তারা কি জাহান্নামী হবেন? (নাউযুবিল্লাহ)
২১. ইমাম চারজন কোন মাযহাব মানতেন?
২২. তাঁদের পিতা-মাত, উস্তাদ মন্ডলী ও পূর্বপুরূষগণ করা মাযহাব মেনে চলতেন?
২৩. সে মাযহাব কি এখন মানা যায় না?

এই প্রশ্নের উত্তরে “মাযহাব” কাকে বলে সেটা আবার দেখে নেয়ার অনুরোধ করছি। যে মাযহাব কাকে বলে সেটা পড়েছে তার কাছে এইসব প্রশ্ন আজগুবি।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সময় ফিকহ সংকলিত অবস্থায় ছিল না। ফিকহ্‌তো অনেক দূরের ব্যাপার কুরআনুল কারীমই সংকলিত অবস্থায় ছিল না। জামিউল কুরআন উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) কুরআন সংকলন করেন। যা যুগের পর যুগ পার হয়ে বর্তমানে আমাদের নিকট বিদ্যমান। হযরত উসমান (রাঃ) এর কুরআন সংকলনের পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ), আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ), ওমর (রাঃ) পরলোকগত হন। কাজেই এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে তারা কুরআনের (সংকলিত কুরআনের) অনুসারী ছিলেন কিনা তাহলে আর জবাব দেয়ার মত কিছু থাকে না। হাদীসও সংকলিত অবস্থায় ছিল না। অনেক পরে হাদীসের ইমামগন হাদীস সংকলিত করেন। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে, আগের যুগের মুসলিমরা কি বুখারী শরীফ মানতেন? বুখারী শরীফ যদি না মানেন তবেতো তারা সহীহ হাদিস অস্বীকার করলেন। তাদের হুকুম কি হবে? তারা কি জান্নাতী হবে না?
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং তার সুযোগ্য সাহাবাগনের (রাঃ) এর যুগে মানুষ যেকোন সমস্যার সমাধানে তাদের স্বরনাপন্য হতে এবং তাদের নির্দেশিত পথে আমল করতেন। তাদের মৃত্যুর মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে জেনে আমল করার পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়েছে। কাজেই কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী “জানা না থাকলে জ্ঞানীদের কাছ থেকে জেনে” নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। এটাই তাক্বলীদ।
যেমনটা সাহাবীরা করেছেন। তাদের মনে কোন প্রশ্ন জাগলে সরাসরি রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করতেন। পরবর্তী যুগের মানুষেরা সাহাবীদের (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করতেন এবং সে অনুযায়ী আমল করতেন।
আগেই বলেছি মাযহাব মানা তাদের জন্য জরুরী যাদের ইজতিহাদের যোগ্যতা নেই। যারা মুজতাহিদ (যিনি ইজতিহাদ করেন) তাদের জন্য মাযহাব মানা জরুরী নয়। কারন তারা নিজেরাই যেকোন সমস্যার সমাধান বের করতে সক্ষম।
২৪. ঈমানদারীতে এবং কুরআন-হাদীসের বিদ্যায় চার ইমাম শ্রেষ্ঠ ছিলেন না চার খলীফাহ্?
-- অবশ্যই চার খলীফাহ্‌ শ্রেষ্ঠ।
২৫. যদি খলীফাহগণ শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকেন তবে তাদের নামে মাযহাব হল না কেন?
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনার প্রশ্নটি যৌক্তিক। তবে না বুঝার কারণে আপনার মনে এমন প্রশ্ন উদয় হয়েছে। মূল কারণ হল, আমরা যদি বলি যে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর তাকলীদ করা হোক। তাহলে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর তাকলীদ করলে তাঁর কাছে ছিল কুরআন, রাসূল সাঃ এর হাদীস এবং তার নিজস্ব ফাতওয়া। কিন্তু হযরত উমর, হযরত উসমান ও হযরত আলী রাঃ এর ফাতওয়া কিন্তু হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর কাছে ছিল না? তাই তাঁর তাকলীদ করলে আমরা বাকি তিন খলীফায়ে রাশেদের ফাতওয়া থেকে বঞ্চিত থাকছি।
একইভাবে আমরা যদি উমর রাঃ এর তাকলীদের কথা বলি, তাহলে হযরত উমর রাঃ এর কাছে কুরআন, হাদীস, হযরত আবু বকর রাঃ এর ফাতওয়া এবং তাঁর নিজের ফাতওয়া রয়েছে। বাকি উসমান রাঃ এবং হযরত আলী রাঃ এর ফাতওয়া থাকছে না।
একই অবস্থা হযরত উসমান রাঃ এর তাকলীদের কথা বললে। হযরত আলী রাঃ এর তাকলীদের কথা বললে তাঁর কাছে কুরআন, হাদীস, হযরত আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ এর ফাতওয়া এবং হযরত আলী রাঃ এর নিজস্ব ফাতওয়া পাওয়া যাবে। কিন্তু তৎকালীন জিবীত থাকা ও মৃত্যুবরণ করা বাকি সাহাবীদের ফাতওয়া পাচ্ছি না।
এ কারণে সাহাবীদের পরবর্তীতে তাবেয়ী ইমাম আবু হানীফা এবং তাবে তাবেয়ী ইমাম শাফেয়ী, মালিক ও আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর তাকলীদের মাধ্যমে কুরআন, হাদীস এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের ফাতওয়াও পাওয়া যায়। আর আমাদের কাছে কুরআন হাদীসের সাথে সাহাবাগণও অনুসরণীয়।
وعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين من بعدي عضوا عليها بالنواجذ
হযরত ইরবাজ বিন সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধর। এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে আঁকড়ে ধর আমার পরে। এগুলোকে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধর। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৬১৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২০১২৫, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৫০, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৭৯, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৯২২, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৩২৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৪২, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪২০১, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-৪৩৭, মাশকিলুল আসার, হাদীস নং-৯৯৮}
তাই চার ইমামের তাকলীদ করার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের মাসায়েল পাওয়া যাচ্ছে। যা শুধু চার খলীফার তাকলীদ করলে পাওয়া যেতো না।
আর আমরা বিশেষ করে ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ এর অনুসরণ এ জন্য করে থাকি যে, যেহেতু হযরত আলী রাঃ সম্পর্কে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে,
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : أنا مدينة العلم و علي بابها فمن أراد المدينة فليأت الباب
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ আমি হলাম ইলমের শহর। আর আলী হল এর দরজা। সুতরাং যে ব্যক্তি শহরে প্রবেশ করতে চায়, সে যেন দরজা দিয়ে আসে। {মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৪৬৩৭, আলমুজামুল কাবীর লিততাবারী, হাদীস নং-১১০৬১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩২৮৯০, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-৫৭৪২}
যেহেতু আমরা ইলমের শহর রাসূল সাঃ এর ইলম পর্যন্ত পৌঁছতে চাই দরজা দিয়ে। আর ইলমের দরজা হযরত আলী রাঃ কুরআন, হাদীস, হযরত আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ এবং হযরত উসমান রাঃ এর ফাতওয়াসহ কুফায় এসে শুয়ে আছেন। তাই সেই কুফায় জন্ম নেয়া ইমামে আজম রহঃ এর তাকলীদ করার মাধ্যমে এই সকল ইলমের দরজা দিয়ে রাসূল সাঃ এর ইলমের শহরে প্রবেশ করে থাকি।
এ কারণে আমরা ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ এর তাকলীদ করে থাকি। যেহেতু তার কাছে সকল ইলমের ভান্ডার এসে পৌঁছেছে হযরত আলী রাঃ সহ অন্যান্য সাহাবীগণের পদচারণায় ধন্য কুফায়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com

[ফেসবুক থেকে-পোস্ট দাতা]
২৬. তাঁরা কি ইমামগণ অপেক্ষা কম যোগ্য ছিলেন?
-- কখনই না।

২৭. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর কালিমা পড়বে, ইমামদের নামে মাযহাব মানবে আর পীর-ফক্বীরদরে ত্বরীকাহ্ মত চলবে এ নির্দেশ কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোথায় আছে?
২৮. আল্লাহ নাবীর কি মাযহাব বা ত্বরীকাহ নেই?
২৯. সে মাযহাব বা ত্বরীকাহ কি যথেষ্ট নয়?

-- কিসব প্রশ্ন! হযরত উসমান (রাঃ) কুরআন সংকলন করেন। তাহলে কি কেউ বলতে পারে যে উসমানের কুরআন মানার কথা কোথায় আছে?
হাদীসের ইমামগন (রঃ) ছিহাহ্‌ সিত্তাহ্‌ সংকলন করেন। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে বুখারীর হাদিস মানার কথা কোথায় আছে?
প্রকৃতপক্ষে কুরআন আল্লাহর তরফ থেকেই। উসমান (রাঃ) সেটা সংকলন করেন এবং পূর্নাঙ্গ পুস্তিকার আকার দেন। তাতে কুরআনের মর্যাদা কমে যায় নি। আর কোন বোকাও একথা বলবে না যে, এটাতো উসমানের কুরআন!
হাদীসগ্রন্থসমূহে (ছিহাহ্‌ ছিত্তাহ্‌ সমুহে। এছাড়া অনেক গ্রন্থে সহীহ হাদীস পাওয়া যায়) হাদীস সমূহ সংকলিত হয়েছে। এই হাদীস সমূহও সংকলকগনের নয়। বরং তা সাহাবা (রাঃ)দের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর। কাজেই ইমাম বুখারীর হাদীস বলে কিছু নেই।
মাযহাব হল ফিকহের সংকলিত রূপ। ফিকহ্‌ এসেছে কুরআন ও হাদীস থেকে। (ফিকহ্‌ এর সংজ্ঞা আবার দেখে নিন।) কাজেই ফিকহ্‌ গ্রন্থসমূহে যে ফাতওয়া দেয়া হয়েছে তা সংকলকগনের কোন নিজস্ব ফতোয়া নয়। কুরআন-হাদীস থেকে সংগ্রহীত। তারপরও “আমরা আম্বিয়া আলাইহিমুস্‌ সালাম ছাড়া আর কাউকে মা’সূম ভুল-ত্রুটির উর্দ্ধে মনে করি না। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একজন উম্মতী এবং তার শরীয়তের খাদেম মনে করি। তাঁর ফিকহ্‌এর অনুসরণ আমরা এইজন্যই করি যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) শরীয়তের হুকুম আহ্‌কাম জানার জন্য ফকীহগনের শরনাপন্ন হওয়ার আদেশ করেছেন।
ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এর কোন কথা যদি শরীয়তের দলীল দ্বারা ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে সেটা হানাফী ফিকহ্‌এর মধ্যে “ফতোয়া যোগ্য” বিবেচিত হয় না। তাহলে আমরা কিভাবে কুরআন-হাদীসের বিরোধীতা করে তাঁর তাকলীদ করলাম”।
[উদ্ধৃত অংশটুকু “মাযহাব ও তাকলীদ কি ও কেন” বইয়ের ১৬-১৭ পৃষ্ঠা থেকে]
তাহলে বোঝা গেল ফিকহ্‌এর অনুসরনের মাধ্যমে মূলত কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণই করা হয়।
৩০. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর প্রতি কি ইসলাম পরিপূণ করা হয়নি?
৩১. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম কি কামিল নাবী নন?
৩২. ইসলাম কি মুকাম্মল ধর্ম নয়?

-- চার মাযহাবের কোন ইমাম এবং তার অনসারীদের কেউ এমন আক্বীদা পোষন করেন বলে আমার জানা নেই। কারো জানা থাকলে প্রমাণ পেশ করুন দয়া করে।
৩৩. ইসলাম পূর্ণ পরিণত এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম কামিল হয়ে থাকলে অন্যের মত ও পথ মান্য করার অবকাশ কোথায়?
৩৪. যারা পূর্ন পরিণত ইসলাম এবং কামিল নাবীকে অসম্পূর্ণ প্রমাণ করে অন্যের দ্বারা তা পূর্ণ করার স্বপ্ন দেখছে, তারা কি কুরআন ও সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করছে না?

-- আগেই বলেছি মাযহাব মানা মানেই হল কুরআন-সুন্নাহের অনুসরণ। মুজতাহিদগন কখনই এমন দাবি করেন নি যে, তারা ইসলামকে পূর্ণ করেছেন। তাদের সুযোগ্য অনুসারীদের কেউও এমন আক্বীদা পোষন করে না যে, ইসলাম অপূর্ণ ছিল, মুজতাহিদগন তা পূর্ণ করেছেন! (আস্তাগফিরুল্লাহ!)
বস্তুত মাযহাব বিরোধীদের এসব অভিযোগের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।
৩৫.যে দলটি মুক্তি পাবে বলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছেন- সে নাজাতপ্রাপ্ত দল চার মাযহাবের কোনটি?
৩৬. জান্নাতের পথ বা সীরাতুল মুস্তকীম বুঝবার জন্য আল্লাহ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম একটি সরল রেখা আস্কন করে বললেন, এটা আল্লাহর পথ।তোমরা এর অনুসরণ কর। তৎপর ঐ সরল রেখাটির ডানে- বামে আরো কতকগুলি রেখা আঁকলেন ও বললেন, এ পথগুলির প্রত্যেকটিতে একটি করে শাইত্বন আছে। তারা নিজ নিজ পথের দিকে ডাকছে। তোমরা ঐ পথগুলির অনুসরণ করো না। যদি কর, তহলে তারা তোমাদেরকে সরল পথ হতে বিভ্রান্ত করে ফেলবে। (মিশকাত) এ হাদীস অনুসারী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর পথ সিরাতুল মুস্তাকীম ব্যতীত অন্য পথগুলি কি শাইত্বনের পথ নয়?

-- ৩৫ নং প্রশ্নটি আসলে কোন প্রশ্নই না। প্রশ্নকর্তার ভঙ্গিতে মনে হচ্ছে চার মাযহাব চারটি পৃথক দল এবং পরস্পরের সাথে বিরোধ ও রেষারেষিতে মত্ত! এটা মাযহাব বিরোধীদের কষ্ট কল্পনা।
মুসলিম সমাজের বিবাদ বিরোধের মূল কারন হল আক্বীদায় বিভ্রান্তি। কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী যারা সহীহ আক্বীদার অনুসারী তারাই মূলত নাজাত প্রাপ্ত। চার মাযহাবের কোন ইমাম ও তাদের অনুসারীগন আক্বীদাগতভাবে বিভ্রান্ত নয়। তারা সকলেই কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী।
৩৭. কালিমা পড়া হয় নাবীর নামে, ক্ববরে রাখা হয নাবীর ত্বরীকায়, ক্ববরে জিজ্ঞাসা করা হবে নাবীর কথা, হাশর ময়দানেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম শাফা’য়াত করবেন আল্লাহ আদেশে- সে মহানবী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর ত্বরীকাহ্ বাদ দিয়ে অন্যের ত্বরীকাহ্ মানলে নাজাত পাওয়া যাবে কি?
-- না, পাওয়া যাবে না। এসবের সাথে মাযহাবের অনুসরণকারীদের সম্পর্ক বোঝা গেল না।
৩৮. বাংলাদেমে মাযার ও পীরের অন্ত নেই; যত পীর তত ত্বরীকাহ্। পীর সাহেবরা আজকাল
ক্বিবলা বানিয়ে নিয়েছেন। মানুষ কি মানুষের ক্বিবলা হতে পারে?
৩৯. তারা তাদের আস্তানাগুলিকে দারগা শরীফ, খানকা শরীফ, মাযার শরীফ, ওরশ শরীফ প্রভূতি নাম দিয়ে মুসলিমদের তীথস্থান মাক্কা ও মাদীনাহ্ আবমাননার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে?
৪০. পীর তার মুরীদকে বলে সব সময় পীরের ক্বলবের সাথে তোমার ক্বলব মিলিয়ে রাখবে, যখন পীর তার স্ত্রীর উপর. ...। তখন মুরীদ কোথায় থাকে?
৪১. এগুলি কি দ্বীন ও শরী’আতের নামে ভন্ডামী নয়?

-- তথাকথিত পীর ও তাদের কার্যকলাপের সঙ্গে মাযহাবের অনুসারীদের কোন সম্পর্ক নেই।
৪২. মুসলমানদের আল্লাহ এক, নবী এক, কুরআন এক, কেবলা এক এবং একই তাদের ধর্মকর্ম রীতি-নীতি। সুতরাং তাদের মুক্তি ও কল্যাণের পথ হচ্ছে মাত্র একটিই। যা ইসলাম, সিরাতে মুস্তাকীম বা তরিকায়ে মুহাম্মাদী।
-- হ্যা, ঠিক আছে। এখানে প্রশ্নটা কি?
(৪৩) আবু হানীফা কি হানাফী মাযহাব তৈরী করেছেন?
-- মাযহাবের সংজ্ঞা পড়ে আসুন আবার। পরিষ্কার হয়ে যাবে।

(৪৪) আবু হানীফা কি রাসূল সাঃ এর সব হাদীস জানতো? যদি জেনে থাকে তাহলে পরবর্তীতে হাদীস সংগ্রহের প্রয়োজন হলো কেনো? তার মাযহাবটাই তো যথেষ্ঠ ছিলো।তাই নয় কি?
-- ইমাম আবু হানীফা (রঃ) হাদীস শাস্ত্রের কি জানতেন না জানতে সেটা বিস্তারিত জানতে “মাযহাব মানব কেন?” এর ১৩২ তম পৃষ্ঠায় দেখুন। 
সাহাবী (রাঃ) গনও কিন্তু হাদীস সংকলন করেন নি। “আমি প্রশ্ন করি হযরত আবু বকর ওমর ওসমান আলি রা: কোন হাদিসের কিতাব লিখেছেন যেখান থেকে কোন হাদিস জাল কোন হাদিস যইফ তা জানতে পারতাম। অবশ্যয় লিখেননি। ওনারা যেকারনে লিখেন নি, সে কারনে ইমাম আবু হানিফাও লিখেন নি।

কারণ টা কি?
১। ছাহাবা যুগ যাকে হাদীসে খায়রুল কুরুন বলেছে সে যুগে হাদীস জাল বা জঈফ হয়নি, যার কারণে হাদস সংকলনের প্রয়োজন দেখা দেয়নি বরং হাদীস উস্তাদ থেকে শুনে শুনে মুখস্থ রাখা হইত। ইমাম আবু হানিফা সেই যুগেরই মানুষ ছিলেন। অর্থাত উনি সাহবা এবং তাবঈদের থেকে হাদীস শিক্ষা গ্রহণ করেচেন। পরের ‍যুগে যখন হাদিস জাল করা শুরু হয় তখন ইমাম আহমদ, ইমাম বোখারী প্রমুখ ব্যক্তি হাদীস সংকলনের কাজ শুরু করেন।
২। হাদিস শরীফে আছে : মুসলিম শরীফের রেওয়ায়াত।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( لا تَكْتُبُوا عَنِّي وَمَنْ كَتَبَ عَنِّي غَيْرَ الْقُرْآنِ فَلْيَمْحُهُ وَحَدِّثُوا عَنِّي وَلا حَرَجَ ... ) رواه مسلم
হুযুর পাক সা: বলেন: তোমরা আমার থেকে কোরান অন্য কিছু লিখবেনা। যদি লিখে থাক তাহলে মুছে ফেল। কিন্তু আমার থেকে রেওয়ায়াত কর।

এই হাদিসে কোরান ছাড়া অন্য কিছু লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। এর উপর ছাহাবাগণ আমল করেছেন, ইমাম আবু হানিফাও আমল করেছেন।
উনারা হাদিসের উপর আমল করাতে আপনার কোন অসুবিধা হইলে জানাবেন।
ইমাম আবু হানিফা রাহ: নিজে কোন কিতাব লিখেননি সংকলনের কাজে ব্যস্ত থাকার কারনে। তবে ওনার ছত্ররা ওনার রেওয়ায়ত সমুহ একত্রিক করেছেন।

যেমন :
1। الفقه الأكبر، برواية حماد بن أبي حنيفة
لفقه الأكبر، برواية أبي مطيع البلخي(2)
العالم والمتعلم، برواية أبي مقاتل السمرقندي(3)
رسالة الإمام أبي حنيفة إلى عثمان البتي(4)
الوصية، برواية أبي يوسف(5)”

(৪৫) যদি বলেন আবু হানীফা মাযহাব তৈরী করেছে তাহলে আমার প্রশ্নঃ আবু হানীফার ওস্তাদ হাম্মাদ কোন্ মাযহাব তৈরী করেছেন? নাকি করেননি? হাম্মাদের তো উচিত ছিলো হাম্মাদী মাযহাব তৈরী করা। তাহলে হাম্মাদ কেন মাযহাব তৈরী করেননি? নাকি হাম্মাদের মাযহাব তৈরী করার মত সামর্থ্য ছিলনা?
(৪৬) আবু হানীফার জন্মের আগের দিন যেসব মানুষ মারা গেছে তারা কোন মাযহাব মানতো?

(৪৭) আবু হানীফা যখন শিশু ছিলো তখন সারা দুনিয়ার মুসলিমগণ কোন মাযহাব মানতো?
(৪৮) আবু হানীফা তো আর জন্ম থেকেই মুজতাহিদ ছিলেননা।মুজতাহি দ হতে কম করে হলেও ২৫/৩০ বছর বয়স হয়েছে তার। তাহলে আবু হানীফার বয়স ২৫/৩০ বছর হওয়ার আগে সারা দুনিয়ার মুসলিমরা কোন মাযহাব মানতো? 
(৪৯) মুসলিম বিশ্বের এরিয়াটা একবার দেখুনঃ পশ্চিমে মরক্কো, আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল থেকে পূবে চীনের সীমান্ত আর উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর থেকে দক্ষিণে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিরাট এলাকা। আবু হানীফার জন্মের ছয়মাস আগে এই বিরাট এলাকায় কার মাযহাব মানা হত? তখন কিন্তু সব সাহাবা জীবিত ছিলেননা। দলিল সহ জানতে চাই।

দলিল সহ আগেই বলা হয়েছে, সে যুগে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আহমাদ, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ছাড়াও আরো অনেক মুজতাহিদ ছিল। তারাও কুরআন-সুন্নাহ গবেষনা করে সে অনুযায়ী মাছয়ালা দিতেন। কিন্তু কালক্রমে তাদের মতামতসমূহ সংরক্ষিত হয়নি। উপরোক্ত চার ইমামের ফিকহ্‌ প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং তাদের অনুসারীগন তা সংরক্ষন ও সমৃদ্ধ করেন। ধীরে ধীরে তা সমগ্র বিশ্বে ব্যাপ্তি লাভ করে। ৪৪ নং প্রশ্নের উত্তরেই বলা হয়েছে, হাদীস সংকলনের আগে মানুষ কিভাবে আমল করত এবং কেন হাদীস সংকলনের প্রয়োজন হল। এ নিয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন দেখি না।

NO VAT ON EDUCATION

ঘুমাবার আগে ছোট্ট করে দু'টো গল্প বলে যাই। নাহলে হয়ত ঘুমটা ভাল হবে না। যাদের জানা আছে তারা স্কিপ করে নিচে চলে যান। বর্ণনায় কিছু এদিক সেদিক হলেও কিছু করার নেই।
ইদুরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে এক কৃষক ইদুর ধরার জন্য ফাঁদ পাতল। ফাঁদ দেখে ইদুর দৌড়ে গেল মুরগীর কাছে সাহায্য চাইতে। মুরগী ভেবে দেখল ফাঁদ পাতা হয়েছে ইদুরের জন্য। কিছু হলে ইদুরের হবে, তার তো কিছু হবে না। সে ইঁদুরের কথায় কান দিল না।
ইদুর গেল খাসীর কাছে। একই যুক্তিতে খাসীও তাকে ফিরিয়ে দিল। এরপর গেল গরুর কাছে। গরুর কাছেও পাত্তা না পেয়ে ইঁদুর নিরাশ হয়ে গেল। একসময় ফাঁদে ইদুর ধরা পড়ল। ইঁদুর খেতে তখন সাপও আসল। ফাঁদে আটকা পড়া ইঁদুরের কিচ কিচে সজাগ হয়ে কৃষক যখন ফাঁদ বের করতে গেল তখন সাপ তাকে দংশন করল।
কৃষককে তখন হাসপাতালে নেয়া হল। সাপের বিষ বের করা হলেও কৃষক ছিল দুর্বল। ডাক্তার তাকে ভালমন্দ খেতে পরামর্শ দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিল। ভালমন্দ খাবারের প্রথম ফাঁড়াটা গেল মুরগীর উপর দিয়ে। কৃষকের অসুস্থতার খবর পেয়ে তার আত্মীয়-স্বজনরা তাকে দেখতে এল। তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। এবার খাসীর পালা। আত্মীয়দের আপ্যায়নে খাসীর জীবন গেল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশন কৃষক মারাই গেল। তখন তার কুলখানীতে গরু জবাই দেয়া হল।
ইঁদুরের সমস্যা মুরগী, খাসী পার হয়ে গরুতে গিয়ে শেষ হল।
একবার তিন বিদেশী জঙ্গলে ঘুড়তে যেয়ে জংলীদের হাতে বন্দী হল। জংলীরা তাদের ধরে নিয়ে তাদের সর্দারের কাছে নিয়ে গেল। বহু অনুনয় বিনয়ের পর জংলী সর্দার তাদের এক শর্তে ছেড়ে দিতে রাজি হল। কি শর্ত? শর্ত হল তাদেরকে প্রত্যেককেই পৃথক পৃখকভাবে বন থেকে তাদের পছন্দমত সুন্দর কোন ফল এনে দিতে হবে। তারা রাজি হল। তারা যেন পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য তাদের সাথে দু'জন করে গার্ড দেয়া হল।
সর্বপ্রথম যে ফিরে এল সে একটা আমড়া সর্দারের সামনে রাখল। তখন সর্দার তার সঙ্গীদের নির্দেশ দিল আমড়াটা যেন ঐলোকের পিছন দিকে দিয়ে ভরে দেয়া হয়। তাই করা হল। সর্দারের কান্ড দেখে জংলীরা খুব মজা পেল। পরেরজন কি নিয়ে আসে সে অপেক্ষাতেই রইল।
পরের জন নিয়ে আসল আম। তাকেও একই ভাবে পিছন দিক দিয়ে............... । ভরে দেয়ার পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে লোকটা হো হো করে হেসে উঠল। সবাইতো ভারি অবাক। কি হল? কি হল?
তখন সে বলল, "আমি আসার সময় দেখলাম, আরেকজন কাঠাল নিয়ে আসছে। আমার আম নাহয় গেল, ওর কাঠাল কিভাবে যাবে?" এই বলে সে আরেক চোট হেসে নিল!
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফীর উপর ৭.৫% ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। যেহেতু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব বড়লোকের পোলাপান পড়ে, সেখানে পড়তে মেধা লাগে না, সেখানে কোন পড়াশোনা হয় না এবং সার্টিফিকেট কিনতে পাওয়া যায় সেহেতু অনেকেই এই ব্যাপারটাতে একমত হয়েছে। আরে, লক্ষ লক্ষ টাকা ফী দিতে পারলে মাত্র ৭.৫% ভ্যাট দিতে সমস্যা কি? এইজন্য আবার আন্দোলন করা লাগে নাকি?
১০০ টাকায় ৭.৫০ টাকা। ১০০০ টাকায় হয় ৭৫ টাকা। ১০,০০০ টাকায় ৭৫০ টাকা আর ১,০০,০০০ টাকায় হয় মাত্র ৭৫০০ টাকা!
ভ্যাটম্যানের আসলে বয়স হয়েছে। নাহলে সে সবার জন্যই ৭.৫% ভ্যাট নির্ধারণ করত। ভ্যাটম্যানের বোঝা দরকার ছিল, বড়লোকের ছেলে-মেয়ে যদি লাখে ৭৫০০ টাকা দিতে পারে তাহলে গরীবের ছেলে-মেয়েরা হাজারে ৭৫ টাকা দিতেও পারবে। আমি ভ্যাটম্যানের কৃপাদৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই এইব্যাপারে। আশাকরি অতিদ্রুত এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবেন।
সরকারী কর্মচারী/কর্মকর্তারা বেতন কম পান বলে তাদের বেতন প্রায় ৯১-১০১% বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এতে তাদের দুর্নীতির মাত্রা কমবে এবং সেবার পরিমান বাড়বে। এই যুক্তিতে মন্ত্রীদের বেতন ৫০০% বাড়ানো দরকার। তাদের বেতনও নিশ্চয়ই কম। নাহলে তাদের চেয়ে দুর্নীতিবাজ এদেশে আছে নাকি?
সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফীর উপর যদি ৭.৫% কর আরোপ করা হলে এই বাড়তি টাকা ম্যানেজ করা তেমন একটা সমস্যা হবে না। তখন মন্ত্রীদের মধ্যে ভ্যাটম্যানের জনপ্রিয়তাও বাড়বে, মন্ত্রীদের দুর্নীতি কমবে আর সেবাও বাড়বে।
তাই মি. ভ্যাটম্যান। একটু ভেবে দেখবেন। আপনার ভালর জন্যই বললাম।
তখন আমরা হো হো করে হাসব। আর ভাবব, " আম নাহয় গেল, কাঠাল কিভাবে যাবে?"

ট্রু অর ফল্‌স

ঘটনা-১
প্রায় দুই-যুগ আগের কথা। দুর্গা পূজার মৌসুম। এদেশের অনেক জায়গার মত খুলনার এক স্কুলের দশম শ্রেণির কিছু ছাত্র পরিকল্পনা করেছে পূজা দেখতে যাবে। এদের মধ্যে রয়েছে তিন বন্ধু। তিনজনই মুসলিম। উদ্দেশ্য পূজা দেখা নাকি অন্য কিছু তারাই ভাল বলতে পারবে। কাহিনীর খাতিরে ধরে নেয়া যাক তাদের নাম আবুল, শরীফ ও বুলু।
এক সন্ধ্যায় তিন বন্ধু বেড়িয়ে পড়ল পূজা দেখতে। শীতকাল হওয়ায় চাদর দিয়ে নিজেদের শরীর ভালভাবেই মুড়িয়ে নিয়েছে। হালকায় কুয়াশা গলিয়ে তিন বন্ধু হেটে চলেছে পূজা মণ্ডপের উদ্দেশ্যে। সবচেয়ে বড় পূজার মণ্ডপটা কাছেই। যতই কাছাকাছি যাচ্ছে ততই পূজোর ঘণ্টার আওয়াজ জোড়াল হচ্ছে। রাস্তার ওদের মত অনেক ছেলে-মেয়ে আছে। ভিড়ের মধ্যে মিশে যেতে বেশি বেগ পেতে হল না।
এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করতে করতে তিন বন্ধুর নজর পরে এক মেয়ের দিক। মেয়েটা তাদের চেয়ে একটু ছোটই হবে। অপূর্ব চেহারার মেয়েটার দিক থেকে তারাতো বটেই পূজোতে আসা কোন ছেলেই চোখ ফেরাতে পারছিল না। মেয়েটাকে দেখার পর তাদের আর কোনকিছুই ভাল লাগছিল না। বিশেষ করে বুলু যেন একটু খ্যাপাটেই হলে গেল। মেয়েটাকে বুলুর চাই-ই চাই। আবুল এবং শরীফ বুদ্ধি দিল, মেয়েটাকে তুলে নিয়ে যাবে সুযোগ মত। তুলে নিয়ে যাবার মত কাজ করতে বুলুর মন সায় দেয় না। কিন্তু শরীফ ও আবুলের জোরাজুরিতে মানাও করতে পারে না। বন্ধুদের কাছে কাপুরুষ হতে চায় না।
তারপর একদিন সুযোগ বুঝে তিনজনে মিলে ঐ মেয়েটিকে স্কুলে যাবার পথে পথ আটকে ফেলে। মেয়েটি বিপদ বুঝে চিৎকার শুরু করে। আবুল সাথে সাথে মেয়েটির মুখ চেপে ধরে। অন্য দুজন হাত-পা ধরে চ্যাংদোলা করে বয়ে নিতে চায়। মেয়েটি তখন প্রাণপণ চেষ্টা করছে তাদের কাছ থেকে ছাড়া পেতে। হাত-পা ছোড়াছুড়ির কারনে ঠিকমত ধরে রাখা যাচ্ছে না। এক ফাকে মুখ থেকে আবুলের হাত ছুটে যেতেই মেয়েটি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে। সেই সাথে দূর থেকে কার যেন ডাক শোনা যায়। তিন-বন্ধু বুঝতে পারে আর জোরাজুরি করে লাভ নেই। তাই মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এই ঘটনায় ঐ মেয়ের পরিবার মামলা দায়ের করে। মামলার খবর পেয়ে বুলু পালিয়ে যায়। বাড়ির সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রাখে সে। একে একে হাইস্কুল, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে পড়াশুনা শেষ করে সরকারী উঁচু পদে চাকুরী পাবার পর বাড়িতে আসে। আবুল আর শরীফ এলাকায় বখাটে হিসেবেই থেকে যায়।
ঘটনা-২
স্কুল পার হয়ে দেশের এক স্বনামধন্য কলেজে ভর্তি হয়েছে সবুজ আর ফরিদ। পড়াশুনায় তেমন একটা ভাল না হলেও মেয়েদের পিছে পিছে ঘোরার ব্যাপারে দু'জনের কোন ক্লান্তি নেই। দ্বিতীয় বর্ষে উঠার পর প্রথমবর্ষের এক মেয়েকে দারুণ পছন্দ হয় সবুজের। অপরূপা হবার কারণে সবুজের মত আরো অনেকেরই মেয়েটার দিকে নজর পড়ে। সবাইকে পাল্লা দিয়ে আর ফরিদের সাহায্যে মেয়েটার সাথে সবুজের সখ্যতা গড়ে উঠে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রায়ই তারা কলেজের পিছনের বিশাল দিঘীর পাশে বসে প্রেমালাপে মত্ত থাকত।
এদিকে মেয়েটির বড় বোনের দেবরও মেয়েটিকে ভালবাসে। কলেজে ভর্তির আগে তার সাথেই মেয়েটির প্রেম ছিল। ব্যাপারটা এমন ছিল কলেজে আসলে সবুজের সাথে প্রেম আর ঘরে গেলে বেয়াইয়ের সাথে প্রেম! বেয়াই ছিল খুবই চালাক। কিছুদিনের মধ্যেই সে বুঝতে পারে কোথাও কোন গণ্ডগোল হয়েছে। খোজ নিয়ে জানতে পারে মেয়েটা তার কলেজেরই আরেক ছেলের সাথে প্রেমে মত্ত। মেয়েটিকে হারানোর ভয়ে তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে মেয়ের ফ্যামিলিতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু মেয়ের আপত্তির কারণেই হোক বা যেকোনো কারণেই হোক মেয়েপক্ষ আর এ বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না।
এতে সেই ছেলে উত্তেজিত হয়ে উঠে। এসিড ছুড়ে মারার হুমকি পর্যন্ত দেয় মেয়েটাকে। কিন্তু মেয়েটা পাত্তা দেয় নি। ভেবেছে অত সাহস কি আর হবে? কিন্তু একদিন সন্ধ্যায় মেয়েটি যখন তার পড়ার টেবিলে ছিল তখন সেই ছেলে জানালা দিয়ে এসিড ছুড়ে মারে। মেয়েটির পুরো মুখসহ শরীরের নানা জায়গা ঝলসে যায়। এসিড লেগে ছেলেটির হাতেও কনুই পর্যন্ত ঝলসে যায়। ঢাকা মেডিকেলে যখন যন্ত্রণায় মেয়েটি কাতরাচ্ছিল তখন সবুজ আর ফরিদ তাকে দেখতে যায়। তার রূপের আর তখন কিছুই অবশিষ্ট নেই। এসিডে ঝলসে যাওয়া বিকৃত চেহারা দেখে দু'জনেই শিউরে উঠে।
এই মেয়েটার আজো বিয়ে হয়নি। বিকৃত চেহারার মেয়েকে কেই বা বিয়ে করতে চায়? আর সেই ছেলে যে পালিয়েছে আর কোন খবর নেই। বড় ভাই তাকে আশ্রয় দেয় নি। আসলেও তাড়িয়ে দিয়েছে।
ঘটনা-৩
এবার আসি সাম্প্রতিক হবিগঞ্জের রুহুল আর অর্ণার কথায়। যারা জানেন তারাতো জানেন-ই, যারা জানেন না তাদের জন্য সংক্ষেপে বলি। প্রকাশ্যে এক স্কুল ছাত্রীকে মারধর ও তা ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোডের ঘটনায় কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সর্বত্র ছিঃ ছিঃ পড়ে যায়। পুলিশ দ্রুত রুহুলকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার পর রুহুলের কথায় বেড়িয়ে আসে এক চমকপ্রদ কাহিনী।
হবিগঞ্জ হল রুহুলের মামার বাড়ি। ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ গিয়ে রুহুল ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়। এসময় পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী অর্ণার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই কথা তার গার্জিয়ান জানতে পারলে তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাবা-মার কাছে অর্ণার সাথে যোগাযোগ করবে না-এমন শপথ করে রুহুল আবার হবিগঞ্জে ফিরে ক্লাস নাইনে বাণিজ্য শাখায় ভর্তি হয়। রুহুল অর্ণাকে এড়িয়ে চললেও অর্ণা তার পিছু ছাড়েনি। পরিবারে সিদ্ধান্তে রুহুল স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। টানা ২০ দিন সে স্কুলে যায় নি। তারপর তার ক্লাস টিচারের কথায় আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করে।
ঘটনার কিছুদিন আগে অর্ণা একটি ব্যাগে তার জামাকাপড় নিয়ে এসে রুহুলকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু বিয়ের বয়স হয়নি-এইধরনের অজুহাতে রুহুল তাকে ফিরে যায়। এতে অর্ণা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
এরপর অর্ণা হৃদয় নামের এক ছেলের সাথে সম্পর্ক করে এবং রুহুলের বিরুদ্ধে হৃদয়কে খেপিয়ে তোলে। এরপর একদিন হৃদয় তার বন্ধুদের নিয়ে অর্ণার স্কুলের সামনে রুহুলকে আটকিয়ে মারধর করে। অর্ণাও তখন পাশেই ছিল এবং তার বান্ধবীদের সাথে হাসিঠাট্টাও করছিল। এতে রুহুল চরম অপমানিত বোধ করে। তারপর থেকেই রুহুল প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে অর্ণাকে মারধর করে। এসময় ঘটনার ভিডিও করে রুহুলের বন্ধুরা। পরে সেই ভিডিও ফেবুতে আপলোড দেয় তার বন্ধুরা। রুহুল জানতে পেরে সাথে সাথে ডিলিট দেয়। কিন্তু ততক্ষণে ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তারপরের ঘটনা তো উপরে বললামই।
রুহুলের শ্রেণী শিক্ষক অবশ্য রুহুলকে ভদ্রছেলেদের একজন বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রথমোক্ত দুই ঘটনা আমার কলিগদের মুখে শোনা। আর ৩য় ঘটনাটি মিডিয়ার প্রকাশিত। বিস্তারিত পাবেন আজকের আমারদেশের প্রথম পাতায়।
আমার লেখার উদ্দেশ্য কাউকে দায়ী করা নয়। এধরনের ঘটনার জন্য কে দায়ী সে-ই আলোচনায় আমি যাব না। প্রথমোক্ত ঘটনা দুটি বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। কারণ যাদের কাছে শুনেছি তারা দু'জনেই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলায় তাদের কোন লাভ নেই।
শেষোক্ত ঘটনায় প্রথমদিকে পাবলিক রিএকশন ছিল একরকম। পুরো ঘটনা জানার পর এখন অন্যরকম হবার কথা। অবশ্য রুহুল সত্য বলছে এমনটা এখনো প্রমাণিত হয় নি। সে ফেঁসে গিয়েছে। এখন নিজেকে সেভ করতে নানান কথা বলবে সেটাই স্বাভাবিক। অর্ণা, হৃদয় ও রুহুলের বন্ধুদের জেরা করলে প্রকৃত সত্য বোঝা যাবে।
মূলকথা যেটা বলতে চাই সেটা হল, প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় কিছু পেলেই তা বিশ্বাস না করা। সাংবাদিকরাও মানুষ। তারা স্থলণের ঊর্ধ্বে নন। বরং তারা প্রায়ই ফেইক নিউজ প্রদান করে থাকেন। এমনকি কবর থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান নাকি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাণী দেন!
দোষী যে-ই হোক তার শাস্তিই কাম্য। সাংবাদিকদের দরকার খবর। খবরকে পত্রিকায় বা টিভিতে প্রকাশিত/প্রচারিত "সংবাদ" করাই তাদের কাজ। তাদেরকে এ কারণেই বেতন দেয়া হয়। যে যত ভালভাবে এই কাজটি করতে পারে সে তত ভাল সাংবাদিক। কাজেই আমার পরামর্শ থাকবে কোন সাংবাদিকের সাথে যখন কথা বলবেন (যেটা প্রকাশিত হতে পারে) তখন মোবাইলের অডিও/ভিডিও রেকর্ডার চালু করে পুরো কথাবার্তা রেকর্ড করে রাখবেন। এখনকার প্রায় সব মোবাইলেই অডিও/ভিডিও রেকর্ড করা যায়। কাজেই আপনার কথার উপর ভিত্তি করে সাংবাদিক যদি কোন খবর কে "সংবাদ" করে খবর পালটে দেয় তবে তাকে মিথ্যেবাদী প্রমাণ করার হাতিয়ার আপনার কাছে থাকবে। অবশ্য সাংবাদিক আর আমি যদি একই ক্যাটাগরির হই তাহলে আর এই সূত্র খাটবে না।
অশুভ রাত্রি!

সানি লিউন

এই বিষয়টা নিয়ে আমার আপাতত লেখার কোন ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু আমার ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের ধোঁআশে ভাবভঙ্গির কারনে লিখতে হচ্ছে। আশা করি আর কেউ পড়ুক বা না পড়ুক তারা পড়ে অন্তত আমার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করবেন।
দ্বিমুখীতা বা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মানব চরিত্রের অন্যতম বড় ত্রুটি। আমি নিজের জন্য যা ভাল মনে করি, অপরের জন্য তা ভাল মনে করি না। বিরক্ত-রাগান্বিত হই। উদাহরণ দেই। বাসের জন্য অপেক্ষা করার বিষয়টা কমবেশি সবার জীবনেই আছে। যেদিন রাস্তায় লোক বেশি থাকে সেদিনের অবস্থা করুণ পর্যায়ে যায়। লোক ভর্তি কোন বাসে ঠেলা-ঠেলি করে উঠলেন। আপনার পিছনে আরো কয়েকজন উঠল। উঠার পর পরবর্তীতে যখন বাসটা আরো লোক উঠানোর জন্য থামল, তখন আমার ভাল লাগল না। "বাস ভর্তি হয়ে গিয়েছে", "দাড়ানোর জায়গা নেই", "গরমে সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছি", "মানুষ উঠে কেন? দেখছে না জায়গা নেই" - ইত্যাদি নানাবিধ কথা বলে নিজেকে জাহির করে থাকি। অথচ কিছুক্ষন আগেই আমি ঠেলাঠেলি করে উঠলাম। আমি ভুলে যাই আমার যেমন গন্তব্যে পৌছাতে হবে, তেমনি আমার মত শতশত মানুষেরও পৌছাতে হবে। কারো কারো হয়ত আমার চেয়েও বেশি প্রয়োজন গন্তব্যে পৌছানো। কেউ হয়ত আমারে চেয়েও বেশিক্ষন ধরে অপেক্ষা করে আছে। ভাবখানা এমন যেন আমি পৌছাতে পারলেই চলবে। আর কেউ পৌছাতে পারুক বা না পারুক। এমন ঘটনা আরো আছে, সিএনজিতে উঠলে বাসকে সহ্য করতে পারি না। বাসে থাকলে সিএনজিকে পিষে ফেলতে ইচ্ছে করে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আবার কাছের মানুষের ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিমুখীতা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে। যে লোক প্রতিদিন দুই প্যাকেট সিগ্রেট খায় সেও চায় না তার ছেলে সিগ্রেট ধরুক। মদখোর ব্যক্তি চায় না তার ছেলে-মেয়ে মদ খাক। পাড়ার রোমিও ছেলেটা চায় না তার বোনের পিছনে কেউ লাইন দিক। রিকশাওয়ালাও চায় না তার ছেলে বড় হয়ে রিকশা চালাক। বরং সবাই তার ভবিষ্যত/অনুজ প্রজন্মকে সুস্থ দেখতে চায়। চায় সে যাই করুক না কেন তার আপনজনেরা যেন ভাল থাকে। সুস্থ, সুন্দর পরিবেশে থাকে। ঠিক একই কারনে মেমোরী কার্ডে জিবির উপর জিবি সানি লিয়নের ভিডিও থাকলেও সানি লিয়নের আগমনের পক্ষে যাওয়া উচিত কিনা সেটা নিজেদেরই বিবেচনা করা দরকার।
এখানে যদি কেউ ভন্ডামী দেখে, তাহলে আর কি করার আছে।
সানি লিউনের মত পর্ণস্টার এদেশে আসার মত পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয় নি। একসময় আসত গানের শিল্পীরা। এসেছে হিরো, হিরোইন রা। তাদের প্রোগ্রামের মাধ্যমে যে টাকার খেলা হয়েছে তা পর্ণস্টার আসার প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। আপতদৃষ্টে মনে হচ্ছে গানের শিল্পী, নাচের শিল্পী, নায়ক-নায়িকা আসার মত পর্ণস্টার আসাটাও একটি অতি স্বাভাবিক ঘটনা। আসতেই পারে। আসছে নাচতে, গাইতে। পর্ণস্টারগিরি করতেতো আসছে না! কথা সেখানেই। গান, নাচের কথা হলে গান-নাচের শিল্পী আনলেইতো হত। পর্ণস্টার আনার কি দরকার? আর আজকে নাহয় শিল্পী পর্ণ শো করবে না, কিন্তু আগামীতে? এখন যদি এসব পর্ণস্টারদের নাচ-গানের মত অতিস্বাভাবিক শো বন্ধ করা না যায় বা কোনরূপ বিরোধীতার সম্মুক্ষীন না হয় তবে নিকট ভবিষ্যতে এদের পর্ণশো করতেই আনা হবে। আর এদেশের মিডিয়াগুলো ব্যাপক কভারেজ দিবে।
"যাদের চাহিদা আছে, সামর্থ্য আছে, তারা যাবে; যাদের চাহিদা নেই, টিকেট কেনার সামর্থ নেই; তারা যাবে না। সিম্পল। সমস্যাটা কোথায়?"
দেশেতো একশ্রেণীর মানুষের কাছে ইয়াবার ব্যাপক চাহিদা আছে। সামর্থ্যও আছে। আছে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইনের চাহিদা। অস্ত্রের চাহিদাও কম নয় বলেই ধারনা করি। তাহলে এসবও অবাধে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হোক।
না, না, না। তখনতো দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হবে। ছিনতাই-রাহাজানি বাড়বে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হবে।
কথা এটাই। পার্থক্য হল মাদকের শক্তি আর অস্ত্রের ঝনঝনানি প্রত্যক্ষ প্রভাব চোখে পড়ে। আর ঐসবের প্রতিক্রিয়া চাক্ষুস দেখা যায় না। অনেকটা স্লো পয়জনের মত। মরে, কিন্তু বন্দুকের গুলির মত হুট করে মরে না। ধীরে ধীরে মরে।
"দেশে এত এত পতিতা থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে কিছু না বলে, তাদেরকে পুনর্বাসন না করে সানি লিয়নের পিছনে লাগার কারনটা বোঝা গেল না।"
কেউতো মানা করেনি পুনর্বাসন করতে। এখন ভাবা দরকার কিভাবে পুনর্বাসন করা যায়। তারমানে এই নয় যতক্ষন তাদের পুনর্বাসন করা না হচ্ছে ততক্ষন তাদের জন্য প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে, বিদেশী পতিতার ভচাম নৃত্য উপভোগ করতে হবে। যেসব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বা যারাই হোক, এসবের আয়োজন করে থাকে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় কবে হবে কে জানে!
কেউ কেউ আবার সানি লিয়নের ছোটবেলার কথা সামনে এনে মানুষের মনে একধরনের সমবেদনা কাড়ার চেষ্টা করেছেন। ছোটবেলায় কে কি করেছে না করেছে, তার জন্য তাকে দায়ী না করা গেলেও যখন তার স্বাধীনতা এসেছে তখন সে কি করেছে বা কি করছে সেটার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। সানি এখন কি? পর্ণস্টার। সে দেহব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে বা দিবে এমন খবর পেয়েছেন কেউ? বয়স হয়ে গেলেতো ছাড়তেই হবে। সেটা অবশ্যই ভিন্ন বিষয়।
“হেফাজত তাহলে সানি লিয়নের কথা জানে?”
প্রথম প্রথম এই ধরনের বক্তব্যগুলো ফান করার জন্য দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এধরনের বক্তব্যের মধ্যে বিকৃত মানসিকতা ছাপ পাওয়া যায়। ভাবভঙ্গিতে মনে হচ্ছিল, হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ সানির নিয়মিত খদ্দের বা নিশ্চয়ই ভিডিও দেখে তাদের কাম-বাসনা চরিতার্থ করে! তা না হলে মাদ্রাসার হুজুরেরা সানি লিয়নের কথা জানল কিভাবে? (নাউজুবিল্লাহ!)
এইগুলোর জবাব দেয়ার রূচি হয় না। অন্যকথা বলি।
আমাদের একটা সাধারণ প্রবনতা হচ্ছে মাদ্রাসার সাথে সংশ্লিষ্টদের হেয় প্রতিপন্ন করার মানসিকতা। চাই সে ছাত্র হোক বা শিক্ষক। তার জ্ঞান-গরীমা, আর্থিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। তাকে দুনিয়া এবং দুনিয়ার জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ ও উদাসীন মনে করা। ধারনা করা সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে তাদের কোন ধারনাই নেই।
এই ধারনার উপর ভিত্তি করে তাদের সম্পর্কে যা নয় তাইতো বলি-ই, গালিগালাজ করতেও পিছপা হই না। ছোট্ট একটা প্রশ্ন করি। এদেশে যেসব ইসলামী মাসিক পত্রিকাগুলো বের হয় সেগুলোর কতগুলো আমরা পড়েছি? অন্তত কতগুলোর নাম জানি? আমার লিস্টে কি এমন কেউ আছেন যে নিয়মিত কোন ইসলামী মাসিকের গ্রাহক? থাকলে প্লিজ কোন পত্রিকা পড়েন উল্লেখ করুন। মাসিক মদীন, আদর্শ নারী, মঈনুল ইসলাম, আল-কাউসার-ইত্যাদি পত্রিকায় সময় সাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে প্রচুর লেখা প্রকাশিত হয়। ১৫-২০ টাকা দিয়ে এসব পত্রিকা আমরা কিনি না ঠিকই, কিন্তু গলাবাজি আর গালিবাজি দিয়ে পুষিয়ে দেই। নিজের যোগ্যতা নিয়ে চিন্তা করি না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের অতি মূল্যবাদ মগজ দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা তা ব্যবহার করি না। কেউ শিখিয়েও দেয় না কিভাবে ব্যবহার করতে হবে। কারও শেখারও কোন আগ্রহ নেই।
দুঃখজনক!

মানবতার চাদাবাজি

অহংকার আর বিরক্তি একই কথা নয়। অনেক সময় পোস্টের ভাষ্যে অহংকার প্রকাশ পেলেও বিরক্তিটাই মূল ব্যাপার।
যেখানে চাকুরী করি সেই প্রতিষ্ঠান অত্র এলাকায় মোটামুটি পরিচিত। অন্যকিছু না হোক অন্তত টাকাপয়সার দিক থেকে পরিচিত বাইরের মানূষের কাছে। ভেতরের খবরতো আমরা যারা চাকুরী করি তারা জানি। বাইরের মানুষ ওসব বিশ্বাস করবে না।
আমাদের অবস্থা যাই হোক না কেন বিভিন্ন ধরনের সাহায্যের আবেদন আমাদের কাছে আসে। আজ থেকে ২-৪ বছর আগেও এত আসত না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যার যাই প্রয়োজন হোক না কেন "অমুক প্রতিষ্ঠানে কাগজ দাও, অনেক টাকা পাবা"- বেশিরভাগই এমনটা ভাবছে এখন। সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ের জন্য কাগজ আসে তা হল বিয়ে! অমুকের মেয়ের বিয়ে, তমুকের বোনের বিয়ে এবং দুঃখের কথা হলেও সত্যি যে এসব ক্ষেত্রে প্রায় ৯৫ ভাগ হল হিন্দু ফ্যামিলির মেয়ে!
ভ্রু কুঁচকানোর কিছু নেই। হিন্দু হলে চাঁদা দিব না, মুসলিম হলে দেব - এমনটা ভাবার কোন কারন নেই। চাঁদা সমস্যা নয়। সমস্যা হল সিস্টেম! চট্টগ্রামের রিকশাওয়ালার মেয়ের বিয়েতেও ২০০ বরযাত্রী খাওয়াতে হয়। নাহলে পাত্রপক্ষ বিয়েতে রাজী হতে চায় না। কাজেই ভিক্ষা করে হলেও পাত্র পক্ষের দাবি মেটাতে হবে। অফটপিকে একটা প্রশ্ন রাখি, মুসলিম ধর্মেতো যৌতুক নিষিদ্ধ, কিন্তু আমরা মানি না। হিন্দু ধর্মে কি বৈধ? জানা আছে কি?
এসব গরীব হিন্দু পরিবারে সদস্যরা তাদের মেয়েদের বিয়েতে অনেকটা স্ববর্স্ব খোয়ানোর মত অবস্থা হয়। এইসব বিয়ের খাওয়া বা যৌতুক কোনটাই ইসলামী শরীয়ার দৃষ্টিতে বৈধ না। দুঃখ লাগে আমাদের চাঁদার টাকা ভাল কোন কাজে লাগছে না।
আচ্ছা গরীবদের কথা বাদই দিলাম। যাদের টাকাপয়সা আছে তাদের কথাই বলি। আমাদের এখানে চাকুরী করে ঢাকায় ফ্ল্যাট-দোকান নেই, এমন লোকের সংখ্যা কম। স্থানীয়দের বাদ দিয়ে অবশ্য। প্রায় প্রত্যেকেরই ফ্লাট, অথবা জমি বা অন্য কোন সম্পত্তি আছে। কাজেই ফট করে ৩০-৪০ লাখ টাকার দরকার হলে জোগাড় করতে পারবে না এটা কেন জানি বিশ্বাস হতে চায় না।
একটা সময় ছিল যখন মানুষের আর কোন উপায় থাকত না তখন অন্যের কাছে হাত পেতে দিত। পোলা বিদেশ যাবে? জমি বিক্রি করো। মেয়ের বিয়ে? গাভিটা বিক্রি করে দাও। অসুখ হয়েছে? ভিটে বন্ধক দাও।
এখন আর সেদিন নেই। আমার এক কলিগের দুটো কিডনিই বিকল হয়ে গেল। ভারতে চিকিৎসা করবেন। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন। অতি চালাকীর কারনে তার রোগ জটিল আকার ধারন করেছে। কোম্পানির ডাক্তার এই ব্যাপারে তার উপর যথেষ্ঠ ক্ষ্যাপা। তবুও তার রিকমেন্ডশনে কোম্পানি তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে। তবুও সে আমাদের নিকট সাহায্যের আবেদন করেছে। অথচ ঢাকায় তার ফ্ল্যাট আছে। সমালোচকদের মুখে শুনি তার স্ত্রী নাকি তাকে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে দিচ্ছে না বা তারও ফ্ল্যাট বিক্রি করার ইচ্ছে নেই। যারা খোজ খবর রাখে তাদের কাছে শুনি, তার স্ত্রী এখন তার মরার অপেক্ষায়।
কার জন্য তাহলে গাড়ী-বাড়ী? কি হবে এসব করে?
আজকে একটা আবেদন এসেছে। তিনি বিসিআইসির একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। বয়স ৪৯ বছর। আমাদের এখানে টিউশনি করান। জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, প্রফেশনালি কেউ যদি আমাদের এখানে টিউশনি করায় তবে মাসে লাখ খানেকের কাছাকাছি টাকা ইনকাম করা তার জন্য কোন ব্যাপারই না।
এইলোকেরও কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হবে। ৩০-৪০ লাখের মত খরচাপাতি লাগবে। যে চার্ট দেখলাম সে অনুযায়ী যদি টাকা উঠে তবে আমাদের এখান থেকে মানবিকতার খাতিরেই সে সাড়ে সাত লাখ টাকা পেয়ে যাবে। আর কোম্পানি যদি CSR ফান্ড থেকে দেয় তাহলেতো কথাই নেই। বসদের ছেলেমেয়েকে হয়ত পড়িয়েছেন, মেনেজ হয়ে যেতেই পারে।
যাদের টাকা নেই, তাদের কথা ভিন্ন। কিন্তু টাকা যাদের থাকার কথা তারাও যখন হাত পাতে তখন আল্টিমেটলি অভাবীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কারন আমাদের হাত তখন আর প্রসারিত হতে চায় না। গুটিয়ে থাকতে চায়।
মূলকথায় আসি। মাসের ১৫ দিন পার হয়ে গিয়েছে। মানিব্যাগের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, খালি হয়ে যাবার আশংকায় বাজারে যাওয়া হচ্ছে না। কাউয়ার ঠেং, বগার ঠেং রান্না করে নাকে-মুখে গুজে দিয়ে পড়ে থাকি। ভাবছি আর না, মানবিকতার চাঁদা দিয়ে নিজেই থালা হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাব।
যা আছে কপালে!

তাকওয়া ও বিভ্রান্তি

[বিতারিত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থণা করছি]
খুবই সাধারন কিছু কথাবার্তা লিখব। অনেকটা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আলাপ করার মত। এই লেভেলে কথা বলার জন্য রেফারেন্স দরকার হয় না। কাজেই সেদিকে যাব না।
মুসলিম হতে হলে প্রথমেই যেটা প্রয়োজন সেটা হল আল্লাহর প্রতি ঈমান। তারপর অন্যান্য বিষয়সমূহের প্রতি ঈমান। ঈমানের তারতম্য ও বিভ্রান্ত বিশ্বাসের কারনে কোন মুসলিমের আমলের তারতম্য ঘটে। অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন, আমি নিজেও একসময় চিন্তিত ছিলাম যে, আল্লাহ একজন, কুরআন একটি, মুহাম্মদ (সাঃ) একজন। তারপরও মুসলমানদের মধ্যে কেন এত বিভেদ? কাদের কথা বার্তা সঠিক? কাদেরকে আমরা অনুসরণ করব? যেহেতু আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগ পাই নি।
মুসলিমদের মধ্যে ভাগাভাগির একমাত্র কারন হল ধর্ম বিশ্বাস বা আকীদাগত বিভ্রান্তি। এই বিষয়টি নিয়ে আপাতত আলোচনা না-ই করলাম। ধরে নিলাম, একদল লোকের আকীদায় কোন বিভ্রান্তি নেই। তারপরও দেখা যায় তাদের মধ্যে আমলের কমবেশি হচ্ছে। একই বিষয়ে দু'জনের কার্যকলাপ দু'রকম হচ্ছে।
এমনটা হবার কারন তাদের মধ্যে তাকওয়া বা আল্লাহর প্রতি ভয়ের তারতম্য। একজন হয়ত আল্লাহকে বেশি ভয় পান, অন্যজন শয়তানের প্ররোচনায় অতটা সতর্ক নন।
উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
কেউ গোসলখানায় গোসল করার সময় দরজা টেনে দিল। ফলে বাইরের দুনিয়া তার আড়ালে চলে গেল। এরপর সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে গোসল সম্পন্ন করল। আরেকজন একই ভাবে দরজা টানার পর মনে মনে খেয়াল করল বাকি দুনিয়া আমার আড়াল হলেও আল্লাহর কাছ থেকেতো আমি আড়ালে নই। সে শরীরে কাপড় রেখেই গোসল করল।
গোসল কিন্তু দু'জনেরই হল। কিন্তু দু'জনের আমল ভিন্ন হল এবং তার প্রতিফল ভিন্ন হবে সেটাই স্বাভাবিক।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা কি হারাম? জ্বী না হারাম নয়, জায়েজ। তবে উত্তম নয়। প্রতমোক্ত ব্যক্তি জায়েজের উপর আমল করেছেন, দ্বিতীয় ব্যক্তি করেছেন উত্তমের উপর।
বর্তমান যুগ হচ্ছে জায়েজের যুগ। বেশিরভাগ মানুষই জায়েজের উপর আমল করতে চায়। নগণ্য সংখ্যক মানুষই আল্লাহতে ভীত হয়ে উত্তমের উপর আমল করে থাকেন। আমাদের কোম্পানীর প্রোভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি ইত্যাদি কোম্পানির কাছে জমা থাকে। কিন্তু প্রতিবছর এই ফান্ডের যে লভ্যাংশ আসে সেটা সবার মধ্যে বিলি করে দেয়া হয়। আমাদের ইমাম সাহেব বলে দিলেন যে, "এই টাকা নিজের জন্য খরচ করা জায়েজ আছে তবে কারো যদি তাকওয়া বেশি হয় তবে তা ভিন্ন বিষয়।" টাকা-পয়সার ব্যাপারে আবার তাকওয়া!
সঞ্চয়ী হিসাব থেকে লভ্যাংস পাওয়া যায়, পাওয়া যায় বিভিন্ন সুদভিত্তিক শেয়ার ব্যবসা থেকে, FDR থেকে, সঞ্চয়পত্র থেকে, এছাড়াও নানা উৎস থেকে।
যেকোন কিছু আমলের কুরআন-হাদীসের নির্দেশনা জরুরী। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছ থেকে সাহাবাগন (রাঃ) কুরআনুল কারীম শিখেছেন, শিখেছেন বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা। আমল করেছেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর অনুমতি ক্রমে বা নির্দেশনায়। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে, কুরয়ান-হাদীসের কোন জায়গায় আছে যে, সাহাবীদের পরে কেউ কুরআন-হাদীস সাহাবীদের চেয়ে ভাল বুঝবে না?
তার এই প্রশ্নের জবাব বুঝিয়ে দেয়ার মত ঘিলু অন্তত আমার নেই।
জীবনের সব ব্যাপারেই এই বিষয়টা সামনে রাখা দরকার। কুরআন-হাদীস কি বলেছে এবং সাহাবারা কিভাবে তার আমল করেছেন। অনেক মেয়েই বলে থাকে পর্দা করে মেয়েদের বাইরে যাওয়া জায়েজ। তারা এই কথার রেশ ধরে (অপ্রয়োজনে) মেয়েদের হাট-বাজার, চাকুরী-বাকুরী ইত্যাদি ব্যাপারে অনেক কিছুই বলে থাকেন। অথচ আয়েশা (রাঃ) মেয়েদের মসজিদের গমনের ব্যাপারে (রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মৃত্যুর পর) নেগেটিভ কথা বলেছেন!
ঐযে বললাম, তাকওয়া! দু'জন পর্দানশীল মেয়ের তাকওয়ার পরিমাণ কিভাবে সমান হতে পারে যখন একজন বাধ্য না হলে ঘরেই থাকে আর অন্যজন কারনে-অকারনে ঘুড়ে বেড়ায়? টাইট ফিট বোরকা পরে, নিজের ব্যাগের ফিতা দু'বুকের মাঝখান দিয়ে টেনে দেয়?
সম্ভব? 

রশি ও তাবিজ

বিভিন্ন হাদীসে তাবিজ, কবজ, রশি, সূতা, তাগা, ঝাড়-ফুঁক ইত্যাদি ব্যবহার শিরক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে অন্যান্য হাদীসে ঝাড়-ফুঁক ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ সকল হাদীসের সমন্বয়ের জন্য অনেক আলিম বলেছেন, কুরআনের আয়াত, হাদীস বা ভাল অর্থের দু'আ দ্বারা যেমন ঝাড়ফূঁক বৈধ, তেমনি এরূপ আয়াত, হাদীস বা ভাল অর্থের দু'আ লিখে 'তাবিয' আকারে ব্যবহারও বৈধ। কোনো কোনো আলিম বলেছেন যে, কুরআনের আয়াত, হাদীস বা ভাল অর্থেবোধক দু'আ দিয়া ঝাড়-ফুঁক বৈধ, কারণ তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে তাবীজ ব্যবহার কোনোভাবেই বৈধ নয়, কারণ তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। হাদীস শরীফে কুরআনের আয়াত বা ভাল দু'আ দ্বারা ঝাড়-ফুঁক দেওয়া বৈধ বলে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে অনেককে ফুঁক দিয়েছেন। তবে তিনি নিজে বা তাঁর সাহাবীগণ কখনো কাউকে তাবিজ লিখে ব্যবহার করতে দিয়েছেন বলে কোনো সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। উকবা ইবনু আমির আল-জুহানী (রাঃ) বলেন,
"একদল মানুষ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট আগমন করেন। তিনি তাদের ৯ জনের বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং একজনের বাইয়াত গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি ৯ জনের বাইয়াত গ্রহণ করলেন কিন্তু একে পরিত্যাগ করলেন? তিনি বলেন, এর দেহে একটি তাবিজ আছে। তখন তিনি তার হাত ঢুকিয়ে তাবিজটি ছিড়ে ফেলেন। অতঃপর তিনি তার বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং বলেনঃ "যে তাবিজ ঝুলালো সে শিরক করল।"
আব্দূল্লাহ ইবনু মাসঊদের (রাঃ) স্ত্রী যাইনাব (রাঃ) বলেন,
"ইবনু মাসঊদ (রাঃ) যখন বাড়িতে আসতেন তখন সাড়া দিয়ে আসতেন। ... একদিন তিনি এসে সাড়া দিলেন। তখন আমার ঘরে একজন বৃদ্ধা আমাকে ঝাড়ফুঁক করছিল। আমি বৃদ্ধাকে চৌকির নিচে লুকিয়ে রাখি। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) ঘরে ঢুকে আমার পাশে বসেন। এমতাবস্থায় তিনি আমার গলায় একটি সুতা দেখতে পান। তিনি বলেন, এ কিসের সুতা? আমি বললাম, এ ফুঁক দেওয়া সুতা। যাইনাব বলেন, তিনি সুতাটি ধরে ছিড়ে ফেলেন এবং বলেন, আব্দুল্লাহ্র পরিবারের শিরক করার কোন প্রয়োজন নেই। আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ "ঝাড়-ফূঁক, তাবীজ-কবজ এবং মিল-মহব্বতের তাবীজ শিরক।" যাইনাব বলেন, তখন আমি আমার স্বামী ইবনু মাসঊদকে বললাম, আপনি এ কথা কেন বলছেন? আল্লাহর কসম, আমার চক্ষু থেকে পানি পড়ত। আমি অমুক ইহুদির কাছে যেতাম। সে যখন ঝেড়ে দিত তখন চোখে আরাম বোধ করতাম। তখন ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেনঃ এ হলো শয়তানের কর্ম। শয়তান নিজ হাতে তোমার চক্ষু খোচাতে থাকে। এরপর যখন ফুঁক দেয়া হয় তখন সে খোচানো বন্ধ করে। তোমার জন্য তো যথেষ্ঠ ছিল যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যা বলতেন তা বলবে। তিনি বলতেনঃ অসুবিধা দূর করুন, হে মানুষের প্রতিপালক, সুস্থতা দান করুন, আপনিই শিফা বা সুস্থতা দানকারী, আপনার শিফা (সুস্থতা) ছাড়া আর কোন শিফা নেই, এমন (পরিপূর্ণ) শিফা বা সুস্থতা দান করুন যার পরে আর কোন অসুস্থতা অবশিষ্ট থাকবে না।"
তাবিয়ী ইসা ইবনু আবি লাইলা বলেন,
"আমরা সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু উকাইন বানূ মা'বাদ জুহানীকে (রাঃ) অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পেলাম। আমরা বললাম, আপনি কোনো তাবিজ ব্যবহার করেন না কেন? তিনি বলেনঃ আমি তাবিজ নেব? অথচ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যদি কেউ দেহে (তাবিজ জাতীয়) কোনো কিছু লটকায় তবে তাকে উক্ত তাবিজের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়।"
তাবিয়ী উরওয়া ইবনুয যুবাইর বলেনঃ
"সাহাবী হুযাইফা (রাঃ) একজন অসুস্থ মানুষকে দেখতে যান। তিনি লোকটির বাজুতে একটি রশি দেখতে পান। তিনি রশিটি কেটে দেন বা টেনে ছিড়ে ফেলেন এবং বলেন, অধিকাংশ মানুষই আল্লাহর উপর ঈমান আনে এবং তারা শিরকে লিপ্ত থাকে।"
[সূত্রঃ কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা নংঃ ৩৮৪, ৩৮৫, ৩৮৬, ৩৮৭]

অফিসিয়াল পিসি

[আমাদের অফিসে পিসি আছে। কিন্তু......]
৩২৩ চেংটেংটর, ১-৪২০ পৃঃ।
মাননীয় কর্তৃপক্ষ, 
বংচং লিমিটেড।
ভাঙ্গাচুড়া, চুঙ্গাদেশ।

বিষয়ঃ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের আবেদন।
জনাব,
যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা বংচং লিমিটেডের কতিপয় খেদমতগার গভীর উদ্বেগের সাথে পর্যবেক্ষন করিতেছে যে, আপনাদের দয়ায় আমাদের নিকট যেসব নিয়ামত পৌছিয়াছে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার হইতেছে না। আমরা বরাবরই দেখিয়াছি আপনারা আমাদের সকল সুযোগ সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া যাহা যাহ প্রয়োজন সকলি আমাদিগকে সরবরাহ করিয়া থাকেন। আমাদের প্রতি দয়াপরবশ হইয়া আপনারা কেবল বিদ্যুৎ, টেবিল-চেয়ার, খাতা-কলম, পাখা, শীতলীকরন যন্ত্রতো বটেই একটি মহামান্য হিসাব যন্ত্রও প্রদান করিয়াছেন। আমরা অত্যন্ত পুলকিত যে, এই মহামান্য হিসাব যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ইহাকে অন্তর্জালের বাহিরে রাখা হইয়াছে, এমনকি ইহা হইতে "স্বর" কাড়িয়া লইয়া ইহাকে বাক প্রতিবন্ধী বানাইয়া রাখা হইয়াছে।
কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় এই যে, ইহার মাউসের ডান বোতাম খানি এখনো কার্যক্ষম রহিয়াছে, ইহার কিবোর্ডের নাম্বার প্যাড দ্বারা এখনো সংখ্যা লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হইতেছে। এইসব অমূল্য বৈজ্ঞানিক আবিস্কারসমূহ সুলভে পাইয়া আমাদের মধ্য হইতে অনেকেই ইহার অপব্যবহার করিতেছে। যাহাতে দেশ ও জাতি তথা সমগ্র বিশ্ববাসী ও বর্হিবিশ্ববাসীর হইলোক এবং পরলোকের অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধন হইতেছে।
অতএব, বিনীত প্রার্থনা, উক্ত উচ্ছক্ষমতা সম্পন্ন পারমানবিক বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের সঠিক ব্যবহার ও দীর্ঘায়ু নিশ্চিতকর এবং সমগ্র সৃষ্টিকুলকে রক্ষা করিবার প্রয়াসে মাউসের ডান বোতমখানি ও কিবোর্ডের নাম্বার প্যাড সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা (যাহা যাহা না হইলেই নয় উহা ব্যতীত) বাতিল করিয়া এই অধমদিগকে আপনার কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ এবং আমৃত্য খেদমত করিয়ার সুযোগ দিয়া বাধিত করিয়া আপনার মহানুভবতার পরিচয় দিবেন।
বিনীত,
বংচং লিমিটেডের সকল খাদেমগনের পক্ষ হইতে
বাং লং মিং
সহকারী খেদমতগার,
বংচং লিমিটেড।