Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Saturday, October 17, 2015

ভরষা কেবল মাত্র আল্লাহতে!

কেউ যখন ইসলামের এমন কোন দিকে ঝুকে পড়ে যা সমাজে ইতিবাচকভাবে দেখা হয় না তখন সর্বপ্রথম বাধা আসে তার পরিবারের পক্ষ থেকে। মেয়েদের কথা জানি না, ছেলেদের কথা বলি। কোন ছেলে যখন দাড়ি রাখা শুরু করে তখন তার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনরাই তাকে বাধা প্রদানে অগ্রগামী হয়। তারা তাদের স্বপক্ষে যেসব উদ্ভট যুক্তি দাড় করায় তার কিছু নমুনা দিলাম --
* এখনি দাড়ি রাখলে মানুষ কি বলবে?
* তোমার দাড়ি রাখার বয়স হয় নি
* রাস্তাঘাটে পুলিশে ধরবে
* এখনতো দু'চারটে বের হয়েছে মাত্র। পরে সবদিক থেকে বের হলে রেখো।
উপরন্তু বিয়ে সংক্রান্ত নানাধরনের "ফান"তো আছেই। কেউ কেউ আমার ঘুমের মধ্যে দাড়ি কেটে ফেলার হুমকিও দেয়।
১৩-১৪ বছরের কোন ছেলে যখন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তখন তার পক্ষে দাড়ির পক্ষে অটল থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এমন অনেককে দেখেছি, যারা প্রথম প্রথম দাড়ি রাখলেও পরিবারের চাপের মুখে নতি স্বীকার করে নেয়। শুধু কিশোর বয়সীরাই এই ব্যাপারে পরাধীন নয় অনেক বয়স্ক লোক হজ্ব করতে যান। হজ্বের সময় দাড়ি রাখেন। দেশে ফিরে এসে পারিপার্শ্বিকতার কাছে হেরে যান।
মেয়েদের এমন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় কিনা জানা নেই। কেউ যখন পর্দা করা শুরু করে তখন কি তার ফ্যামিলির পক্ষ থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়? আপনাদের জানা থাকলে শেয়ার করেন।
যা বলছিলাম, মা-বাবা, ভাই-বোন অতি আপনজন। এছাড়াও রয়েছেন অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। ইসলামি বিধান অনুযায়ী আল্লাহর পরেই মায়ের স্থান, বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আত্মীয়তার সম্পর্ক বিনষ্টকারী সম্পর্কে কঠোর সতর্কতাবানী এসেছে। বাবা-মার আনুগত্য করতে বলা হয়েছে এবং তাদের প্রতি বিরক্ত হয়ে "আহ" করতেও নিষেধ করা হয়েছে।
কিন্তু একটা "কিন্তু" আছে!
আল্লাহর হুকুম আগে, রাসূলের সুন্নাহ আগে, বাবা-মায়ের আদেশ পরে। বাবা-মা যদি আল্লাহর হুকুম পালনে বাধা তৈরি করেন এবং রাসূলের (সাঃ) সুন্নত মানতে নিষেধ করেন তবে তাদের তাবেদারী করা মোটেই সমীচিন নয়। এমন অনেক অভিভাবক আছেন যারা চান না তাদের সন্তানেরা মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করুক। এতে নাকি পড়াশুনার সময় নষ্ট হয়। তারা চান না সন্তান মসজিদে বসে দু'মিনিট ঈমান-আমলের কথা শুনুক। কারন সামনে তাদের পরীক্ষা। পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে!
শত চেক দেয়ার পরেও সন্তান যখন কোন কারনে বিপথগামী হয় তখন তারাই তাকে আল্লাহ ও রাসূলের পথে পরিচালিত করতে চান!
আল্লাহর কুদরত বোঝা বড় মুশকিল। কাউকে সুস্থতার নেয়ামত দান করেন। সেটাও এক পরীক্ষা। নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে কিনা। কাউকে অসুস্থতার নেয়ামত দান করেন। সেটাও এক পরীক্ষা। পাপাচার থেকে বিমুখ হয় কিনা/ধৈর্য্য ধারন করে কিনা।
হালাল রুজি আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় একটি নেয়ামত। যার রুজি হালাল দুনিয়া তার জন্য সহজ। আখেরাতও তার জন্য সহজ ইনশা আল্লাহ। চাকুরী করুক, ব্যবসা করুক বা রিকশা চালাক মূল ব্যাপার একটাই যা উপার্জন করছে সেটা হালাল কিনা। যদি হালাল হয় তবে কম আয়ের মধ্যেই বরকত হয়। আর হারাম হলে যেভাবে আসে ঠিক সেভাবেই খরচ হয়ে যায়...
বর্তমানে হালালভাবে চাকুরী করা খুবই কঠিন একটা ব্যাপার। যারা চাকুরী খুজছে তাদের জন্যতো বটেই, যারা চাকুরীতে আছে তাদের জন্যও। চাকুরীর জন্য মোটা অংকের টাকা লাগে-এটা ওপেন সিক্রেট। চাকুরীর আগেই যদি ঘুষের লেনদেন হয়ে যায় তাহলে পরবর্তিতে কি হবে আল্লাহই ভাল জানেন। ঘুষ দিয়ে প্রশ্ন কিনে ডাক্তার হলে ভবিষ্যতে কি সেবা দিবে আল্লাহই ভাল জানেন। টাকা দিয়ে নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়ে কতটা মানুষ হবে আল্লাহই ভাল জানেন।
যারা চাকুরীতে আছেন তারা ভাল করেই জানেন চাকুরীর মানে কি। চাকর থেকে চাকুরী। চাকর যে কাজ করে তাকে চাকুরী বলে। বসের কথায় উঠবস করার নাম চাকুরী। বস সঠিক বলুক বা ভুল বলুক, তাদের দেশের ক্ষতি হোক, দেশের মানুষ গোল্লায় যাক-- কি আসে যায়! বিবেকের দরজায় তালা লাগানোর নাম চাকুরী। যাদের প্রতিষ্ঠানের অডিট আসে এবং যারা অডিট গুলো সামলান তারা ভালই জানেন পুকুরের কানপোনা গুলো কিভাবে রুই মাছ দেখানো হয়। আবার সময় মত রুইমাছ কে কানপোনা বোঝানো হয়।
এর ব্যতিক্রম খুব কমই আছে।
ভাগ্যবান তারাই যারা এসব থেকে দূরে আছে। আপনার আয় কম? আপনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন যে, আল্লাহ আপনাকে হারাম আয় থেকে বাচিয়েছেন। আর আল্লাহর সাহায্য ও মদদ তো আপনার জন্য আছেই। হারামখোরদের দোয়া কবুল হবে না। আপনি আল্লাহর কাছে চেয়ে নিন আপনার যা প্রয়োজন। নিশ্চয়ই মুমিনের জন্য আল্লাহই যথেষ্ঠ।
বাকি কাজ হলো নিজেকে আল্লাহর সাহায্য ও মদদের যোগ্য রাখা। কবীরা গোনাহ্‌ থেকে বেঁচে থাকা। প্রাসঙ্গিক একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিচ্ছি-
হজরত উমর (রাঃ)এর খিলাফতের জামানায় হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাষ (রাঃ) কে ১০৫০০ সাহাবীদের এক জামাতের আমীর বানিয়ে চীন সহ এশিয়ার কয়েকটি দেশকে দখল করার জন্য পাঠান। পথের মধ্যে সাহাবা আজমাঈনের সামনে সমুদ্র এসে যায়।হজরত সাদ (রাঃ) হজরত সালমান ফারসী (রাঃ) এর কাছে পরামর্শ চাইলেন যে কি করা যায় এই পরিস্হিতিতে কারণ হজরত সালমান ফারসী (রাঃ) রসুল (সঃ) এর সঙ্গে সর্বাধিক সফর করেছিলেন।
হজরত সালমান ফারসী (রাঃ) জবাব দিলেন যে, আমরা যেই দীনের জিমমাদারী নিয়ে এসেছি তা পুর না করা পর্যন্ত আমরা ফিরতে পারিনা। তবে আপনি দেখেন যে আপনার জামাতে কবীরা গুনাহ করনেওয়ালা কেউ আছে কিনা? কারণ কবীরা গুনাহ করা কেউ খাকলে ঐ জামাতের ওপর থেকে আললাহর সাহায্য দুরে সরে যায়।"
"হজরত সাদ (রাঃ) সকল সাথীদের দিকে একবার ডানদিক ও একবার বামদিকে দেখলেন এবং বললেন যে, না আমার জামাতে কোন ও কবীরা গুনাহ করনেওয়ালা সাথী নেই।

সুবহানআললাহ।কেমন মোবারক জামাত ছিল যে ১০৫০০ সাহাবীদের মধ্যে কেউই কবীরা গুনাহ করনেওয়ালা ছিল না। আর আললাহতালা কেমন চক্ষু হজরত সাদকে দান করেছিলেন যে শুধুমাত্র একবার তাকিয়েই তিনি বুঝতে পারলেন যে এই জামাতে কোন সাথীই কবীরা গুনাহ করনেওয়ালা নেই।
হজরত সালমান ফারসী (রাঃ) পরামর্শ দিলেন তবে ঘোড়া আগে চালানো যায়। হজরত সাদ (রাঃ) সকল সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিলেন ঘোড়া চালানোর জন্য।এবং এই দুয়া পাঠ করলেন -
"বিসমিললাহি তাওয়াক্কালতু আলাললহি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইললাবিললাহি আলিয়্যিল অযীম" এবং আসমাউল হুসনা পাঠ করলেন -
"ইয়া আউয়ালাল আউয়ালিলিন,ইয়া আখিরাল আখিরিন,ইয়া যাল কুওয়াতিল মাতিন, ইয়া রহিমাল মাসাকিন, ইয়া আরহামার রহিমিন। ইয়া আলিয়্যু,ইয়া আযিমু, ইয়া হালিমু ইয়া কারিম।"

সুবহানআললাহ। ১০৫০০ সাহাবীদের জামাত সমুদ্রের ওপর দিয়ে ছুটল। অপর পারে পৌছে হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,"আললাহর কসম! আমাদের ঘোড়ার পায়ের ক্ষুর ও পানিতে ভিজেনি।"
[হাদীসটির কোন সূত্র উল্লেখ করতে পারছি না বলে দুঃখিত। কারো এই ব্যাপারে কিছু জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন।]
সুতরাং আমাদের হতাশ হবার কিছু নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ।

হিজরী নববর্ষের তামাশা

অদূর ভবিষ্যতে.........
শুভ সন্ধ্যা! বেক্কল টিভির মধ্যরাতের খবরে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি আমি পিকলু। প্রথমেই বিস্তারিত!
গতকাল সারাদেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হল হিজরী নববর্ষ। এই উপলক্ষে যে যেভাবে পেরেছেন বিশেষ বানী দিয়েছেন। বানীতে সকলেই হিজরী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলে বাঙ্গালী সংস্কৃতি রক্ষায় হিজরী নববর্ষ বেশি বেশি পালন করার আহ্বান জানান।
হিজরী নববর্ষ উপলক্ষে বেক্কল টিভি কয়েকদিন ব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। বেক্কল টিভির আয়োজন সমূহের মধ্যে পূর্ণ দৈর্ঘ্য ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান "আয় খেজুর খাই" বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ইতোমধ্যে দর্শকমহলে এই অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে হিজরী নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকার জিরো পয়েন্টে এক গুটি খেলার আয়োজন করা হয়। খেজুরের বিচি দু'ভাগ করে খেলা এই খেলায় অংশগ্রহন করেন সর্বস্তরের জনগন স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহন করেন। খেলায় অংশ নিতে সুদূর সেন্টমার্টিন থেকে ঢাকায় আসা মিস কাঠপেন্সিল তার অনুভুতি ব্যক্ত করতে যেয়ে বলেন, "ওয়াও, এটা খুবই ফানি একটা খেলা। খেলতে পেরে আমার খুবই গুড লাগছে। তবে আমার একবারো উলটো উঠে নাই বলে একটু একটু খারাপ লাগছে।"
গুটি খেলায় অজস্র প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে প্রথম স্থান অধিকার করেন বাংলাদেশ গুটি লীগের সভাপতির ছেলে কার্সর খান। তাকে পুরস্কার হিসেবে নগদ একশত খেজুর খাইয়ে দেন বিশিষ্ট শিল্পপতি লায়ন নানাজিৎ সিংহ। তবে গুটি লীগের সভাপতির ছেলে হিসেবে প্রথম পুরষ্কার পাওয়াতে এই ব্যাপারে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন গুটিদলের খেলাধূলা বিষয়ক উপদেষ্টা চিকনা মিয়া। তবে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে কার্সন খান বলেন, "বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতে একটি মহল এসব বিভ্রান্তিকর কথা ছড়াচ্ছে। জনগনকে সাথে নিয়ে এসব অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দেয়া হবে।"
এদিকে রাজধানীর বড় বড় হোটেল গুলোতে হিজরী নববর্ষ উপলক্ষে ডিজে, ভিজে, আইজে, নাইযে, খাইযে, যাইযে সহ BOOZ পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। এসব হোটেলে সারারাত পার্টি করে সকালে বেলা অনেককেই আরেকজনের ঘাড়ে করে বাসায় যেতে দেখা যায়। তবে কিসে তাদের হুশজ্ঞান লোপ করল সে সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় নি। তবে আইএসে ওয়েবসাইটে এই ব্যাপারে তাদের দায় স্বীকারমূলক বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি তদন্তনাধিন আছে বলে আইনশৃংঙ্খলা ভঙ্গকারী বাহিনীর কেউ এই ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হন নি।
সংবাদের এই পর্যায়ে নিচ্ছি চিচিং ফাঁক বিজ্ঞাপন বিরতি। আবার ফিরে আসার ইচ্ছে নেই। নতুন হিজরী সনের প্রতিটি দিন খেজুরের কাটার গুতার মত আনন্দময় হোক এই কামনায় বিদায় নিচ্ছি আমি বেক্কল টিভির সংবাদ পাঠক পিকলু। শুভরাত্রি!

পিকলুর নোবেল

চক্ষুরোগ চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের জন্য বিশিস্ট চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ পিকলুর নোবেল লাভ!
জনৈক রোগী এই প্রতিবেদককে জানান, উনি বহুদিন ধরে চোখের জটিল "অঞ্জলি" রোগে ভুগছিলেন। নানান ধরনের এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় কাজ না হওয়ায় তিনি অবশেষে অপ্টিওঝাড়াপিস্ট পিকলুর স্মরণাপন্ন হন। ডা. পিকলু গভীর মনোযোগের সাথে তার কথা শোনেন এবং পাশের বাসা থেকে ২ বছর বয়সী এক ছেলেকে কোলে করে নিয়ে আসেন। এরপর রোগীর আক্রান্ত চোখে ঐ বাচ্চাটির উদোম লিংগ স্পর্শ করিয়ে দেন! ঐ সময় বাচ্চাটি ভয়ে কেঁদে উঠলেও রোগী বলেন যে, এরপর থেকে তার আর কখনো অঞ্জলি হয় নি!
পরবর্তীতে চক্ষুরোগ চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের সূচনাকারী এহেন মানবদরদী বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে সম্মানিত করা হয়!
বিশ্বের ঘরে ঘরে ডা. পিকলুর সেবা পৌছে যাক এই কামনায়........

‪‎বাংলাদেশী, হজ্ব ও সৌদিয়ান‬


আল্লারহর রহমতে হজ্বের সফরের অভিজ্ঞতা হয়েছে। বেশ কয়েকবছরের আগের হলেও মাঝে মাঝে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলার জন্য সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে হয়। এবারের হজ্বের সময় ব্যথিত চিত্তে দু-দুটো বড়ধরনের দুর্ঘটনা খবর পড়েছি, ছবি দেখেছি, সেসব নিয়ে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় নানা ধরনের ঝড় দেখেছি। তখনই ভেবেছি কিছু লিখব। যথাসম্ভব আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমার অভিজ্ঞতা প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করব।
আমি ছিলাম আমাদের কাফেলার মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী। সত্যি বলতে পুরো সফরে আমার বয়সী কম সংখ্যক ছেলেই চোখে পড়েছে। নানাবিধ টেনশনে পাসপোর্ট হাতে পাবার পর ভিতরে কি লেখা আছে খুলেও দেখিনি। কি ভুলটা করেছি টের পেলাম বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে। স্বচ্ছ কাঁচের ওপাশে বসে থাকা পুলিশের ইউনিফর্ম পরা ভদ্রলোক পাসপোর্ট খুলে যখন ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেন তখন উলটাপালটা বলা শুরু করলাম। চাকুরীতে কতদিন হয়েছে, এই কয়দিনে হজ্বের টাকা কিভাবে জোগাড় হল - এইসব জেরা থেকে আমাকে উদ্ধার করলেন আমার সিনিয়র এক কলিগ। তিনি পাশের কাউন্টারে ছিলেন। বড় ভাই জবাব দেয়ার পর ইমিগ্রেশন পেরোতে আর তেমন কোন সমস্যা হয় নি।
বাংলাদেশ বিমানের ভাড়া করা যে স্প্যানিশ বিমানে আমরা যাচ্ছিলাম, সত্যি কথা বলতে অতভাল সার্ভিস আশা করি নি। টোটাল পাচ ঘন্টার ফ্লাইটে দুটো নাস্তা, একবার ভারী খাবার। নাস্তার উপকরণাদির মধ্যেই অনেককিছুই আমার কাছে একেবারে নতুন ছিল। পাশেই বিগবস ছিলেন। তিনি কিভাবে কি করেন, সেটা দেখে দেখে আমিও নাস্তা সেরে নিলাম।
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট হওয়াতে জেদ্দা বিমানবন্দরের আমাদের বিশেষ ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়। সকাল পাঁচটায় ল্যান্ড করার পর ইমিগ্রেশন শুরু হতে হতে ৯-১০ টা বেজে যায়। বহুক্ষন লাইনে দাঁড়িয়ে যখন সৌদি ইমিগ্রেশনের সামনে গেলাম তখন সৌদি অফিসার আমার দিকে "কমবয়সী? বয়স কত?"-টাইপ চাহনি দিলেন। একবার পাসপোর্ট দেখে আরেকবার আমার মুখে দিকে দেখে। আঙ্গুলের ছাপ নিল, হয় নাই। আবার নিল, হচ্ছে না। আবার নিল! পারলে আমাকে কালিতে চুবিয়ে নিয়ে ছাপ রেখে দেয়!
ইমিগ্রেশনের ঝামেলা পার হয়ে মক্কায় পৌছাতে পৌছাতে আছরের ওয়াক্ত হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার ছিল, জুম্মা মিস, যোহর মিস। মিসরীয় ড্রাইভার বহু অনুরোধের পরও রাস্তায় কোথাও গাড়ি থামাতে রাজি হয় নি। এরমধ্যে ব্যাটা একবার রাস্তা হারিয়ে ফেলল। ঘুরে ফিরে একই রাস্তায় বার বার আসতে লাগল। নাহলে হয়ত যোহর পড়া যেত।
পরে আমাদের ইমাম সাহেবের নিকট শুনলাম এমনসব ঘটনার কারন কি। হজ্ব কাফেলায় বাংলাদেশী যারা যায় তাদের অনেকেই হজ্বের পর ফিরে আসে না। পালিয়ে যায়। এই কারনে সৌদি সরকার বাংলাদেশীদের (বিশেষত বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে যারা আসে) বিশেষ নজরে রাখে। আমার আরেক কলিগের মুখে শুনলাম (কাতার এয়ারওয়েজে ছিলেন তিনি) বিমান থেকে নেমেই ইমিগ্রেশন পার হয়েছেন তারা। একঘন্টার মধ্যে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন তারা।
মক্কার আশে পাশের দোকানগুলোতে উপমহাদেশীয় লোকজনই বেশি। চিটাগঙ্গের লোক / রোহিঙ্গা আছে প্রচুর। কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই। সৌদিয়ানদের মত পোশাক, অনর্গল আরবী বলছে। প্রথম দেখায় সৌদিয়ান বলে ভুল হয়। তারপর যখন নিজেদের মধ্যে চিটাগাং/বক্সবাজারে ভাষায় কথা বলে তখন চোখ দু'টো কপালে উঠে, মুখ হয়ে যায় হা!
সে যাই হোক, একদোকানে কিছু কেনার পর ক্যাশে বসা সৌদিয়ান আমাকে ১০ রিয়েলের একটা নোট ফেরত হিসেবে ধরিয়ে দিল। তাকিয়ে দেখি এক কোনায় ছিড়া। স্বাভাবিকভাবে নোট পালটে দিতে বললাম। সৌদিয়ান নোট ফেরত নিয়ে আমার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে বলল,
"বাংলাদেশ?"
আমি অবাক! হাসলাম।
"শেখ হাসিনা?"
আমার হাসি বিস্তৃত হল। মাথা ঝাকালাম।
"যালেম! যালেম!" - বলে সৌদিয়ান চেঁচিয়ে উঠল।
আমি মুখ কালো করে বেরিয়ে আসলাম। এমন দু'একটি ঘটনায় আমি বুঝতে পারলাম সৌদিয়ানরা বাংলাদেশীদের খুব বেশি ভাল দৃষ্টিতে দেখে না। একসময় দেখলে দেখতে পারে। এখন দেখে না।
হজ্বের আগে এজেন্সীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গা যেমন জাবালে নূর পাহাড়, আরাফাতের ময়দান, ওহুদের প্রান্তর-ইত্যাদি ভ্রমনের ব্যবস্থা করা হল। বার বার সাবধান করে দেয়া এবং সতর্ক থাকা স্বত্তেও একজন আরাফাতের ময়দানে হারিয়ে গেলেন। আমাদের ইমামা সাহেব তখন তাকে খুজে অন্য আরেক জায়গা থেকে ধরে নিয়ে আসলেন। তখন প্র্যাকটিক্যালি বুঝলাম কেন সেই মিশরীয় গাড়িচালক আমাদের শত অনুরোধের পরেও গাড়ী থামাননি। এই খোজাখুজির ঝামেলা কে করে!
প্রথম দিন যখন জামরায় পাথর মারতে যাই তখন আমাদের ৩-৪ জনের ছোট ছোট গ্রুপ করে দেয়া হয়। ইমাম সাহেব হেসে বলেই দেন চেষ্টা করবেন হারিয়ে না যেতে। না হারানোটা কতটা কঠিন সেটা টের পেলাম কিছুদূর এগোবার পর। পাঞ্জাদিয়ে ধরে রেখেছি। মানুষের চাপে হাত ভেঙে যাবার আগেই ছেড়ে দিতে হল। পাথার মেরে সামনের দিকে এগিয়ে একটা টানেল আছে। এদিক দিয়ে শর্টকাটে মক্কায় যাওয়া যায়। আমরা যেতে যেতে ঐ টানেল দিয়ে লোকজন যেতে দিচ্ছে না। ঐদিকে নাকি প্রচন্ড ভীড় হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। অন্যরাস্তা ধরলাম আমরা। যখন মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে আর ভয় নেই, তখনি হারিয়ে গেলাম। মক্কায় ফেরার পথে ১০-১৫ সেকেন্ডের জন্য পিছনে তাকিয়েছি পরিচিত কাউকে দেখা যায় কিনা। তারপর সামনে তাকিয়ে দেখি এতক্ষন যাদের সাথে ছিলাম তারা উধাও। ভয় পেলেও ভরষা হারালাম না। এতক্ষন তাপদাহ থাকলেও ইতোমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। বড় বড় ঠান্ডা ফোটা পড়তে লাগল। কিছুক্ষন দাড়ালাম এক দোকানের সামনে। আমার মত আরো অনেকেই এদিক সেদিক আশ্রয় নিয়েছে। কতক্ষন আর দাড়িয়ে থাকব? বৃষ্টির মধ্যেই নেমে গেলাম।
রাস্তার সাইনে ক্বাবা ঘরের সিম্বল দিয়ে দিকনির্দেশনা দেখে হাটছি। হাটতে হাটতে একসময়ের মক্কা টাওয়ারের বিশাল ঘড়ি চোখে পড়ল। হাপ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক ফিরে আসতে পেরেছি। তারপরও প্রায় ঘন্টা খানেক লেগেছে মক্কার হোটলে পৌছাতে।
সেসময় খুব বেশি বাংলাদেশী ভাল ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল ছিল না। তবে আমার কাছে একটা LG মোবাইল ছিল। যার ক্যামেরা ছিল ৫ মেগাপিক্সেলের। বলাই বাহুল্য এই মোবাইল আমি নিয়ে যাই নি। নিয়ে গিয়েছিলাম নোকিয়া ১২০৩। হারানো ভয়ে নয়, নিজের উপর এতটুকু ভরষা ছিল না যে নিজেকে সামলে রাখতে পারব কিনা। হয়ত ক্বাবা ঘরের গায়ে হাত দিয়ে একটা সেলফি তুলে ফেললাম, হয়ত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রওজার সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল হাতে এদিক ওদিক করলাম--এইসব আশংকায় মোবাইল রেখেই গিয়েছে।
সাহাবা (রাঃ) গন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যেমন সম্মান করেছেন তেমনটার ধারে কাছেওতো আমি যেতে পারব না অন্তত বেয়াদবের মত যেন আচরণ না হয় সে চেষ্টা করেছি। কিন্তু অনেককেই দেখেছি অমনটা করতে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রওজার ভিতরের দিকে উকি দেয়াতো আছেই, অনেকেই ভিতরের ছবি তুলতে চেষ্টা করেছেন পুলিশের শত বাধা মুখেও। সেখানকার পুলিশও মুখ খোলার আগে শতবার ভাবে। গলা যেন উচু না হয়ে যায়, কেউ যেন কষ্ট না পায়। মক্কার পুলিশ একটু গরম হলেও, রওজায় মুবারকে যারা দায়িত্ব পালন করেন তারা একেবারেই ঠান্ডা। কারনটা নিশ্চয়ই বোধগম্য।
এবার হজ্বের সময় কিছু ছবি টাইমলাইনে এসেছে। ক্বাবাঘর ধরে সেলফি, মসজিদে নববীতে দাঁড়িয়ে সেলফি। কেউ কেউ ছবি সহ নানান আপডেট দিয়েছেন। ছোট্ট প্রশ্ন করে, ভাই আপনারা ওখানে কেন গিয়েছেন? হজ্বের সফরে? নাকি ছবি তুলতে? এক-দেড়টা মাস ছবি না তুলে থাকতে পারলেন না? ইসলামে অহেতুক ছবি তোলার ব্যাপারে শিথিলতা নেই-এই ব্যাপারটা জানেন তো? আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন!
সৌদিতে যাবার পর একজন টেলিফোনে আমার সাথে যোগাযোগ করেন। পরিচয় দেবার পর বুঝতে পারলাম তিনি কোন এক সম্পর্কে আমার দুলাভাই হন। দেখার করার পর জানলাম উনি সেখানে গাড়ি চালান। ময়লার গাড়ি। একদিন উনার গাড়িতে চড়লাম। আমাদের দেশের মত খোলা ট্রাক নয়। দুর্গন্ধ ছড়াবার সুযোগ সে গাড়িতে নেই। কথায় কথায় জানলাম উনি সেখান অনেকদিন থেকেই আছেন। থাকা-খাওয়ার খরচ বাদ দিয়েও মাসে ১২-১৩ শত রিয়েল তার উদ্ধৃত থেকে যায়। আমি অবাক হওয়াতে উনি বললেন। খাবার খরচ তেমন একটা লাগে না। প্রচুর ফাস্টফুডের দোকান আছে যেখানে উনার গাড়ি থামার কথা নয়। উনি সেখানে গাড়ি থামিয়ে ময়লা নেন। এতে দোকান মালিক খুশি হয়ে তাকে অনেক সময় কিছু টাকা বা কোন ফুড আইটেম দেন। সেগুলো খেয়েই উনার কেটে যায়।
উনার গাড়িতে ঘুড়লাম অনেকক্ষন। মদীনা থেকে ময়লা নিয়ে কোথায় ডাম্পিং করেন সেটাও দেখিয়ে নিয়ে আসলেন। এরমধ্যে জুস-কোক খাওয়ানোতো আছেই। আরেকদিন ফোন দিয়ে দেখা করলেন। তারপর বললেন রিসেন্টলি উনার একটা মেয়ে হয়েছে। সে মেয়ের জন্য একটা সোনার চেইন, ছোট কম্বল আর কিছু কাপড়চোপড় আমার কাছে দিতে চান। আমি এত খাতির যত্মের কারন বুঝতে পারলাম এবং প্রচন্ড বিরক্ত হলাম। কিন্তু চক্ষু লজ্জায় না বলতে পারলাম না। পেটে খেলে পিঠে সয় বলে একটা কথা আছে না? তারপরও একটা বড় কম্বল দিতে চেয়েছিলেন। আমি এটা সেটা বলে কাটিয়ে গেলাম। অথচ সৌদিতে এমন কুরিয়ারও আছে যারা গ্যারান্টি দিয়ে মালামাল বাসায় পৌছে দিয়ে যাবে। রিয়েল খরচের ভয়ে ঐ কুরিয়ার তারা ব্যবহার করেন না। হাজী সাহেবদের ঘাড়ে দিয়ে দেন।
সৌদি অব্যবস্থাপনার কথা আজ থেকে শুনছি না। হজ্বে যাবার আগে থেকেই শুনছি।
সৌদি সরকার মুসলমান হিসেবে মুসলিমদের কাছ থেকে কেন ভিসার টাকা নেয়?
সৌদি বাদশাহ্‌ এই করছেন, সেই করেছেন আর দুনিয়ার মুসলমান মার খাচ্ছে...
হজ্ব হল সৌদি সরকারের ব্যবসা। এই ব্যবসার উপরে সৌদি টিকে আছে ...
ইত্যাদি হাবিজাবি নানান কিছু। আগেও চুপ ছিলাম, এখনো চুপই আছি। চালুনি হয়ে ছাকনির দিকে আঙ্গুল যত কম তোলা যায় ততই ভাল। কখন আবার আমি চালুনি সেটা প্রকাশ হয়ে যায়!
গুছিয়ে লিখতে পারিনি। দুঃখিত। 
unsure emoticon

আরাফাত ভাইয়ের ঈদ!

কুরবানীর ঈদটা না গেলে আসলে আরাফাত ভাইয়ের ধৈর্য্য সম্পর্কে ভালভাবে ধারনা পাওয়া যেত না। কুরবানী যেহেতু কিনতে হবে সেহেতু কুরবানীর ঈদের প্রস্তুতি ঈদের বেশকিছুদিন আগে থেকেই শুরু হয়। টাকা জোগাড় করে রাখতে হয় দ্বিগুন পরিমান। যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে যেন বিপদে পড়তে না হয়। রোজার ঈদের মত জামা-কাপড় কেনার হ্যাপা না থাকলেও অন্যান্য হ্যাপাতো আছেই।
হাটে যাও, হাটে যাও... হো
ছুড়ি ধারাও, বটি ধারাও... ছো
চাপাতি কিনো, কোবানি কিনো... কো
.....................................
.....................................
এই আরাফাত ভাই, আপনার লিস্টি এত লম্বা কেন?

নিজে থেকে গরু কিনতে না পারলে আরাফাত ভাইয়ের শান্তি লাগে না। আরে কোরবানীর ঈদের মজাটাইতো গরু-খাসী কেনা। এখানে যদি দূরে দূরে থাকি তাহলে আর কিভাবে হবে? বিপুল বিক্রমে আরাফাত ভাই চললেন কুরবানীর হাটে। সাথে শরীক আছে আরো কয়েকজন।
আগের রাতে তুমুল বর্ষণের কারণে হাটে থকথকে কাঁদা। কাঁদা পানির সাথে গরুর বর্জ্য মিশে চারদিকে পুরো মঁ মঁ করেছে সুগন্ধে।
আরাফাত ভাই বুদ্ধি করে বার্মিজ স্যান্ডেল পড়ে এসেছেন। কাদাপানি গেলে বার্মিজের উপর দিয়ে যাক। চামড়ার ক্ষতি করে লাভ কি? চারপাশে গরু উঠেছে ভালই। দামও মোটামুটি। এখানে থেকেই কিনে ফিরবেন নাকি আরো দুটো হাট ঘুড়বেন সেই আলোচনা যখন চলছিল ঠিক তখনি "ধর ধর" রবে শোরগোল শুরু হয়ে গেল। পিছনে ফিরে তাকাতেই আরাফাত ভাই দেখলেন একদল লোক তার দিকেই ছুটে আসছে। তবে লোকগুলো নিজের ইচ্ছায় আসছে না। একটা দুই শিংওয়ালা হাতি ফোঁসফোঁস করতে করতে তাদের টেনে নিয়ে আসছে। কাদার মধে ক্ষুর দেবে যাবার থপ থপ শব্দ আর গরম ফোঁস ফোঁসের শব্দে আরাফাত ভাই জায়গায় জমে গেলেন। আগেই বলেছি আরাফাত ভাইয়ের মাথা বিপদে একটু ধীরে কাজ করে। হাতিটার শিং যখন আরাফাত ভাইয়ের হালকা গজিয়ে উঠা ভূড়ি থেকে একফুট দূরে তখন লোকজন টেনে হাতির গতিরোধ করতে সমর্থ হল। আর আরাফাত ভাইও যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেলেন। হুড়মুড় করে ছুটতে যেয়েই উনার বার্মিজ স্যান্ডেলখানা ফুৎ করে পিছলে গেল আর আরাফাত ভাই ধরাম করে ধরাশয়ী হলেন। গরুর তামাশায় লোকজন যেমন থমকে গিয়েছিল, আরাফাত ভাইয়ের তামাশায় তারা হো হো করে হেসে উঠল। আরাফাত ভাইয়ের বেগতিক অবস্থা দেখে সেদিনের মত গরুক্রয় কর্মসূচি স্থগিত করা হল।
বাসায় আসার পর সুমিভাবি আরাফাত ভাইকে ১৪ বার গোসল করালেন। তারপরও নাকি আরাফাত ভাইয়ের গা থেকে দুর্গন্ধ যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে আরাফাত ভাইয়ের চোখ লাল হয়ে এসেছে দেখে হয়ত সুমি ভাবির মনে একটু দয়া হল। আরাফাত ভাই সর্বশেষ গোসলখানা দিলেন আতর আর বডি স্প্রে দিয়ে। তারপরও রাতের বেলা যখন ঘুমাতে গেলে তখন সুমিভাবি একটা বালিশ তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে দিলেন,
"আজকে আপনি সোফায় ঘুমান। আমি এই অবস্থায় আপনার সাথে ঘুমাতে পারব না।"
মনের দুঃখে আরাফাত ভাই.........
ঈদের দিন কুরবানী করার সময় আরাফাত ভাই গরুর মাথা ধরলেন। যিনি জবাই করবেন তিনি বার বার বলে দিলেন কোন অবস্থাতেই মাথা ছাড়া যাবে না। জবাই করার সময় যে গলার কাছে রক্তনালী চেপে ধরেছিল তার হাত ছুটে গেল হুড়োহুড়িতে। আর যায় কোথায় ফিনকি দিয়ে রক্ত এসে আরাফাত ভাই পুরো গোসল। চমকে উঠে আরাফাত ভাই মাথা ছেড়ে দিলেন। এরপর যেন কেয়ামত শুরু হয়ে গেল। গরুর মাথার বাড়িতে দুইজন ছিটকে গেল। লাফ দিয়ে গরু উঠে দিল দৌড়। বাচ্চা পোলাপান যারা কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তারা দিল দৌড়। একজনতো ধাক্কা খেয়ে ড্রেনেই পড়ে গেল। সারা গায়ে রক্ত মেখে আরাফাত ভাই স্ট্যাচু হয়ে গেলেন!
পাচ ঘন্টা পর আরাফাত ভাই যখন শেষবারের মত গরুর বন্টণকৃত অংশ নিয়ে ঘরে আসলেন তখন সুমি ভাবি দরজা খুলেই নাঁকমুখ কুঁচকে উঠে তাড়াতাড়ি নাকে কাপড় চাপা দিলেন।
"এই এমন বিদঘুটে গন্ধ আসে কোথা থেকে? দেখিতো এর মধ্যে কি?"
"কি আবার গরুর ভুড়ি...!"
"এই পচা ভুড়ি কে খাবে? ওমাগো, গন্ধেইতো মরে যাচ্ছি। আমি এইগুলো করতে পারব না। তাড়াতাড়ি ফেলে দিয়ে আসেন এইগুলা।"
"কি বলে! ভুড়ি ফেলব কেন? ভুড়ি খেতে কত মজা! গোশতের চেয়ে ভুড়ির মজাইতো বেশি!"
"আপনি ভুড়ি ফেলে দিয়ে আসবেন কিনা বলেন!"
মনের দুঃখে আরাফাত ভাই.........
রাতে ঘুমুতে যাবার সময় সুমি ভাবিকে ডেকে আরাফাত ভাই কাধটা একটু মালিশ করে দিতে বললেন। কোপাকুপি, টানাহেচড়ায় কাঁধ ব্যথা করছে। বলেই আরাফাত ভাই উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন। সুমিভাবি কি একটা মলম বের করে ভালভাবে দলাই মলাই করে দিলেন। একটু যখন আরাম বোধ হল তখন আরাফাত ভাই ঘুরে শুয়ে একটানে সুমিভাবিকে বুকের উপর নিয়ে আসলেন।
চরম লুমান্টিক অবস্থায়ও সুমিভাবির নাকটা কেন জানি কুঁচকে উঠল। ছিটকে দূরে সরে যেয়ে বললেন,
"এই আপনি গোসল করেন নাই?"
"কি বল? গোসল করব না কেন?"
"তাহলে আপনার গা থেকে ভুড়ির গন্ধ আসছে কেন?"
"ভুড়ির গন্ধ আসছে? কোথায়? নাতো... কোন গন্ধইতো নাই..."
"আপনিতো পাবেনই না। ভুড়ি ফেলে দিয়ে আসতে বলছি বলে কি কাঁচাই খেয়েছেন নাকি? এই নিন বালিশ, সোফায় গিয়ে ঘুমান..."
"ঈদের দিন এইগুলো কি শুরু করলে তুমি?"
"আপনি যাবেন কিনা বলেন!"
এবং আবারো মনের দুঃখে আরাফাত ভাই........

‎কবিতা‬??!! - ১৬


সত্যি বলছি,
<> <> <> গভীর রাতের ক্লান্ত চোখে ঘুম ছিল না, 
<> <> <> মুঠোফোনে ফিসফাস, সময়ের জ্ঞান ছিল না, 
<> <> <> মেসেজের আদরে আদরে কুটনামি-ভান ছিল না,
<> <> <> মেসেঞ্জারের টুনটুনে আবেগের কম ছিল না,
<> <> <> তবুও বলছো তুমি, তোমার আমার প্রেম ছিল না!

চিঠির প্রতি লাইনে লাইনে শব্দগুলো মিথ্যে ছিল না
আড্ডার চোখাচোখি কাম ছিল না, খুনসুটিতে পাপ ছিল না,
চোখের জলে বৃষ্টি ছিল, ঝড় ছিল না।

সত্যি বলছি,
<> <> <> তোমার জন্য ভালবাসায় এতটুকু ভুল ছিল না।



Dedicated to Joy Shahriar (Singer of সত্যি বলছি)

চুল...

বয়স একেবারে কম হয়নি, আবার খুব বেশীও বলা যায় না। সে যাই হোক এইক্ষুদ্র জীবনে বহু নাপিতের কাছে বহুবার চুল কাটিয়েছি। তবে জীবনে যে এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি তা আবারো প্রমানিত হল।
অন্য সবার মত এই নাপিতকেও বললাম, আমাও চুলের কোন ছাট নেই। শুধু ছোট করে দেন সবদিকে সমান করে। বলে মোবাইল বের করে ফেসবুকে ঢুকলাম। অন্যসবার মত এই ব্যাটাও পিছন থেকেই চুল কাটা শুরু করল। আমি মোবাইলে ডুব দিলাম।
কতক্ষন পরে আয়নার দিকে তাকিয়ে আমি পুরো হা! ব্যাটা দেখি সত্যই চুল ছোট করে ফেলেছে! ঐতো মাথার তালু দেখা যাচ্ছে!
ভাবলাম চুপ থাকি। দেখিনা কি করে!
অন্য সবার কাছে যেখানে আমাকে বার বার বলতে হয়েছে, আরেকটু কাটেন, সামনের দিকে আরো ছোট করেন; সেখানে এবার আমাকে বলতে হল, ভাই থামেন, আর ছোট করতে হবে না!
কাটা শেষ করার পর আমি উনাকে বললাম যে, ভাই, আপনার মত সাহসী লোক আর একটাও দেখি নাই। অন্যদের ছোট করতে বললে শুধু কাচি চিরণীর ঘষার শব্দ শুনি কিন্তু চুল আর ছোট হয় না। নাম কি ভাই আপনার?
"মোশাররফ"
বলেন কি ভাই! এই প্রথম মুসলমান কাউকে এদেশে চুল কাটতে দেখলাম! আবার যদি এদিকে এসে চুল কাটাই তবে আপনার এখানেই আসব ইনশাআল্লাহ!
মোশাররফ ভাই খুশি, আমিও খুশি!
বি.দ্র. চুল ছোট থাকার অনেক সুবিধার মধ্যে দুইটি:
১. ভেজা চুল তাড়াতাড়ি শুকায়। ফলে খুশকির সমস্যা কম হয়।
২. চুলে তেল, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার অল্প দিলেই চলে। ফলে ওরা দীর্ঘজীবী হয়! : D

চুলকায় তাই, চুলকে যাই!


এবার আমাদের লাল গরুটার মত কালার অন্য কোন গরুর চোখে পড়ে নি। ঘাড়ের অংশ কালো আর সারা গা লাল। চামড়ায় একটা ঘষা খাবারও দাগ নেই যে সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুয়ে দিব। দুঃখের বিষয় আমি হাটে যাবার আগেই গরু কেনার পর্ব শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে আমার বন্ধুর কাছে শুনলাম যার কাছে থেকে গরুটা কেনা হয়েছে তার নাম গোপাল। বিক্রেতা গোপাল হলেও গরুর মালিক গোপাল নয়। আরেক হিন্দু মহিলার গরু গোপালকে দিয়েছে বিক্রির জন্য। ঐ হিন্দু মহিলা ও গোপাল, দু'জনেই জানে এখন যারা গরুটা কিনবে তারা কুরবানী করে দিবে। তারপরও গরু বিক্রি করেছে। পয়েন্ট টু বি নোটেড ইউর অনার...
আমার বন্ধুরা বিক্রির পর গোপালের চোখে পানি দেখেছে। বিক্রির জন্য আনা গরু বিক্রি করে যদি গোপাল কাঁদতে পারে তবে যে মহিলা গরু লালন-পালন করেছে তার অবস্থা কি হয়েছে সেটা সহজেই অনুমেয়। কুরবানী একদিন আগে কেনা হোক বা কয়েকদিন আগে কেনা হোক। বোবা পশুর উপর একটা মায়া পড়ে যায়। যারা পশুর সাথে থাকে তারা এই ব্যাপারটা অনুভব করবে। যারা থাকেই না তাদের কেমন লাগে জানি না।
তারপরও আমরা মুসলিমরা কুরবানী দেই। উৎসাহ, আনন্দ-উদ্দীপনা নিয়েই দেই। কারন মায়ার চেয়ে আল্লাহর হুকুম বড়। যত মায়াই লাগুক কুরবানী দিতে হবে। পরিবারের ছোট থেকে বড় সব সদস্যরাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কুরবানীর প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে যায়। আগেরকার নবীদের সময় কুরবানীর পশুর গোশত খাওয়া যেত না। শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর শরীয়তে খাওয়া যায়। অবশ্য আগের বিধান প্রযোজ্য থাকলে কতজন কুরবাণী দিত সেই প্রসঙ্গে নাই বা গেলাম।
হিন্দু সম্প্রদায় আগে চার ভাগে বিভক্ত থাকলেও বর্তমানে দু'ভাগে বিভক্ত। একটি হল দাদাবাবু সম্প্রদায় আর একটি হল উপরোক্ত গোপাল ও ঐ হিন্দু মহিলা যে সম্প্রদায়ের ঐ সম্প্রদায়ের। দাদাবাবু সম্প্রদায়ের কাজ দুইটা। দাদাগিরি করা আর চুলকানীর ভাব হলেই চুলকে দেয়া।
ক্রিকেটার মুসফিকুর রহীম আজকে একটা ছবি দিয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে মুশফিক গরু কুরবানী দিচ্ছে। মানে নিজেই জবাই দিচ্ছে, অন্যরা গরু ধরে আছে। আমার কাছে এটা সাহসিকতার কাজ। প্রচুর মানুষ আছে যারা শুধু মাত্র সাহসের অভাবে ছুড়ি হাতে নিতে পারে না। জবাই করতে অভিজ্ঞ লোক খোজেন। এখানে মুশফিক যদি সত্যিই নিজে কুরবানী করে থাকেন তবে একজন মুসলিম হিসেবে তাকে আমি অন্তত বাহ্‌বা দিব।
মুশফিকের ছবিটা দেখার পর দাদাবাবুদের চুলকানী শুরু হয়েছে। ভারত গরু রফতানী বন্ধ করার পর যে দাদাবাবুরা আনন্দে বগল বাজাচ্ছিল তারাই যখন দেখল যে লাভ তেমন কিছুই হয়নি তখন নিন্মাঙ্গের কাপড় কাধে ফেলে জোড়সে নিতম্ব চুলকাতে শুরু করে দিলেন। এই দেশীয় ছুপা সাগরেদরাও মাঝে মাঝে তাদের সাথে গলা মিলিয়ে হুক্কা হুয়া ডেকে দাদাবাবুদের চুলকানী খাউজানীতে পরিণত করে দিল।
পরিশেষে, দাদাবাবুদের ছোট্ট একটা অনুরোধ। দাদাবাবুরা আমারদের নিয়ে না ভেবে ঐ গোপাল এবং গোপালদের সম্প্রদায় নিয়ে যদি ভাবেন তবে আপনাদের ধুতিও কাধে তুলতে হবে না, গোপালদেরও চোখের পানি ফেলতে হবে না।
যত্তসব!

আচরণ সমাচার!

মানুষ সম্পর্কে চট করে কোন সিদ্ধান্তে আসা ঠিক না। এই ভাল মনে হয়, আবার কয়েকদিন পর কেমন জানি। সেদিন ব্যাংকে গেলাম। টাকা পাঠাবো বাড়িতে। নির্ধারিত পরিমাণের বেশি হওয়াতে অনলাইন চার্জ দিতে হবে। মানিব্যাগ খুলে দেখি খুচরা যা আছে তাতে হবে না। ১৪ টাকা কম। আর ব্যাংকের বুথ হওয়াতে সেখানে খুচরা টাকাও পাওয়া যাবে না। আমার অবস্থা দেখে পাশ থেকে এক কলিগ এগিয়ে এলেন। ধরাযাক, তার নাম রোহিত শর্মা। ভদ্রলোক নিজে থেকেই আমাকে সাহায্য করতে চাইলেন। খুচরা ১৪ টাকা দিলেন। আমি ভাবলাম, বড় ভাল লোক তো! দু-তিনদিন পর বাজারে যখন দেখা হল তখন আমি তাকে টাকাটা ফেরত দিলাম। তখন কথায় কথায় শর্মা সাহেব জানালে ১৫ বছর আগে মেস চালানোর সময় একজনের কাছে টাকা পেতেন, সেই টাকা এখনো পান নি। আমি আর কি বলব? হ্যা এর সাথে হ্যা মিলিয়ে গেলাম।
কোম্পানির নিযুক্ত কন্সালটেন্টের একটা গ্রুপ এসেছে আমাদের ইনকাম ট্যাক্সের কাগজপত্র নিয়ে যেতে। আমাদের তরফ থেকে তারাই জমা দিয়ে দেবে। সকাল বেলা গেলাম তাদের ওখানে। তখনো তারা অফিসে এসে পৌছায় নি। এরমধ্যে ব্যাগ খুলে কাগজ ঘাটতে গিয়ে দেখি গুরুত্বপূর্ণ কাগজটাই ফেলে এসেছি। ব্যাগটা চেয়ারে রেখে দিলাম অনেকটা সিরিয়াল দেয়ার মত। তারপর যখন কাগজ আনতে বের হয়েছি তখন দেখি শর্মা সাহেব যাচ্ছেন। কাগজ নিয়ে ফিরে আসার সময়ই দেখি গ্রুপের লোকজন বহনকারী বাস আসছে। আমি পৌছাতে পৌছাতে তাদেরও নামা শেষ হল বাস থেকে। রুমে পৌছে আমি অবাক! আমার ব্যাগ পাশের চেয়ারে সরিয়ে দিয়ে শর্মা সাহেব বসে পড়েছেন। ভাবলাম সমস্যা নেই, পাশের টেবিলেই কাজ সারি। এরই মধ্যে শর্মা সাহেব যে টেবিল দখল করেছেন সেই টেবিলের লোকটা বলল এই টেবিলে কাজ শুরু হতে একটু দেরি হবে। আপনি পাশের টেবিলে যান। শুনে শর্মা সাহেব তড়িঘড়ি করে চেয়ার থেকে উঠলেন, আমিও চেয়ারের পাশে পৌছে ব্যাগে হাত দিয়েছি তুলে বসার জন্য। চট করে শর্মা সাহেব বলে উঠলেন, ব্যাগ ঐ চেয়ারে ছিল।
আমার গেল মেজাজ গরম হয়ে। রাগত স্বরেই বলে উঠলাম, হ্যা, পাশের চেয়ারেই ছিল।
তারপর অন্য টেবিল যেটা খালি ছিল সেটাতে বসলাম। ইনকাম ট্যাক্সের কাগজপত্র জমা দেয়া ঝামেলার কাজ। তারউপর যদি সিরিয়াল ধরতে হয় তাহলে এক ঘন্টা এখানেই শেষ। আর কয়েকজনের পিছনে পড়লে তো কথাই নেই। কখন খালি হবে, কখন বসা যাবে। আমি অবাক হয়েছি শর্মা সাহেবের ভাবভঙ্গি দেখে। সেদিন আরেকজনের দোষারোপ করে আজকে কি কাজটা করল!
** বাংলাদেশ এ দলের সাথে ভারত এ দলের সিরিজ চলছে। প্রথমটাতে বাংলাদেশ হারার পর ফেসবুক মিডিয়া যেগুলো চোখে পড়েছে সেগুলোর কোনটাতেই বাংলাদেশের হারের খবর সরাসরি লিখেনি। (অন্তত আমার চোখে পড়েনি) শুধু কার কি ব্যাক্তিগত অর্জন ছিল সেটা লিখেছে। বাংলাদেশ হেরেছে নাকি জিতেছে সেটা বুঝতে পারছিলাম না। তবে ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে পারছিলাম যে, বাংলাদেশ বোধহয় জিততে পারে নি। নাহলে রঙচঙা কতধরনের শিরোনাম দেখতে হত। যেমনটা হয়েছে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জেতার পর।
*** অনেকসময় আমরা কোন পোস্ট কপি করার পর কার্টেসী দেই সংগৃহীত। পোস্টের আসল মালিক কে জানার পরও সংগৃহীত দেবার কারনটা আমার বুঝে আসে না। এমনতো না আমি দুনিয়া ঘাটাঘাটি করে পোস্টটা সংগ্রহ করেছি। কয়েক কিলোবাইট ডাটা আর কয়েক সেকেন্ড সময় ছাড়াতো আর কিছুই আমার ব্যয় হয় নি। তবে কেন এই সংকীর্ণতা?

Friday, September 18, 2015

দাগ!

দাগ থেকে দারুন কিছু না হয়ে এটা কি হল?
বিকেলে অফিস থাকলে আমরা কমন একটা নাস্তা করি। একেকদিন একেকজন নাস্তা নিয়ে আসে। আর সেটাই মিলেমিশে খাই। গতকালকের নাস্তা ছিল পেয়ারা, বাংলা কলা আর চিটাগাং এর বিখ্যাত ওয়েল ফূডের ড্রাই কেক। ডাসা ডাসা পেয়ারাগুলো দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। নাস্তার অপেক্ষা না করে নিজের ভাগেরটা সাবাড় করে দিলাম।
এর আগে একদিন পেয়ারার জুস বানিয়েছিলাম। খুব মজা হয়েছিল। সেজন্য ঐ ভাই বললেন জুস বানাতে। আমি যুক্তি দিলাম, পাকা পেয়ারা হলে জুস বানাতাম। কাচা পেয়ারা জুস বানানোর কি দরকার। চিবিয়ে খেতেই মজা। আমার কথা শুনলে উনি নিজেও উনার ভাগেরটা খাওয়া শুরু করলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চিটাগাং এ কাচা পেয়ারার তুলনায় পাকা পেয়ারার চাহিদা ভাল!
যাই হোক, আসল কথায় আসি। যখন সন্ধ্যা হল তখন নাস্তার জন্য সবাই আস্‌লো। আমার ভাগে বাকি আছে বিস্কিট আর কলা। আমার আবার ক্যামিকেল মুক্ত সাগরকলা ছাড়া অন্য কোন কলা খেতে ইচ্ছে করে না। তবুও কোনমতে বাংলা কলা একটা খেলাম। এবার বিস্কিট খাবার আগে চা বানিয়ে নিলাম। তারপর চা এ ডুবিয়ে বিস্কিট খেতে লাগলাম। বিপত্তিটা বাধল এখানেই।
পায়ের উপর ঠ্যাং তুলে আরামসে চায়ে বিস্কিট ডুবিয়ে খাচ্ছি। হুট করে ভেজা বিস্কিট মুখে দেয়ার সময় ভেঙে ছলাৎ করে চায়ের পেয়ালায় ড্রাইভ দিল। আর চা ছলকে উঠে জায়গামত পড়ল! আমি আড়চোখে দেখে নিলাম কেউ খেয়াল করেছে কিনা। করেনি! সবাই গল্পে মশগুল। আস্তে করে পেপারটা টেনে নিয়ে কোলের উপর রাখলাম। নাস্তা খেতে খেতে ব্যাপারটা ভুলেই গেলাম।
ঘন্টাখানেক পর বস ডাকলেন তার রুমে। বসের সাথে কথা বলে বেড়িয়ে আসার সময় খেয়াল করলাম। প্যান্টে দাগ হয়ে আছে। কিন্তু দাগটা হয়েছে ছেলেদের অতিপরিচিত দাগের মত!
হায় হায়! বসে দেখে ফেলছে নাকি? লুজ্জা লুজ্জা...
তাড়াতাড়ি শার্টের ইন ছেড়ে দিলাম। তারপর ঐ অবস্থাতেই ডিউটি শেষ করলাম। ভাগ্যিস আমাদের সাথে কোন মেয়ে কাজ করে না। তাহলেতো আমি খারাপ পুলা হয়ে যেতাম!
দাগ থেকে ভাল কিছু হয় না। তাই দাগ ভাল না। এখন আবার ঘষে ঘষে দাগ তুলতে হবে। যন্ত্রণা!

মাযহাব সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নোত্তর

দ্বীন নিয়ে অহেতুক তর্ক-বিতর্ক ইসলাম ভাল চোখে দেখে নি। কুরাআন ও হাদীসে এই ব্যাপারে সতর্কবার্তা এসেছে। তাই কূট তর্ক এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হল সহজভাবে সহজ কিছু কথা বলা। যার ইচ্ছা সে মানবে, মানতে না চাইলে কে জোর করবে? তবে আশা করি যারা সন্দিহান তাদের সন্দেহ দূর হবে।
নিশ্চয়ই আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সিরাতুল মুস্তাকীমে চলা সম্ভব নয় এবং বিভ্রান্তি থেকে বাচাও সম্ভব নয়।
১. মাযহাব কাকে বলে?
২. মাযহাবের শাব্দিক অর্থ কি?

মাযহাব কি সেটা বলার আগে আরো কিছু পরিভাষা জানা দরকার। সেগুলো হল তাক্বলীদ, ইজতিহাদ ও ফিক্বহ।
ইজতিহাদের শাব্দিক অর্থ, উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাসাধ্য পরিশ্রম করা। ইসলামী ফেকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় ইজতিহাদ অর্থ,কোরআন ও সুন্নায় যে সকল আহকাম ও বিধান প্রচ্ছন্ন রয়েছে সেগুলো চিন্তা-গবেষণার মাধ্যেমে আহরণ করা। যিনি এটা করেন তিনি হলেন মুজতাহিদ।
[]
এবার আসি ফিকহের বিষয়ে।
ফিকহ হল
১. কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট বিধানবলীর সুবিন্যস্ত ও সংকলিত রূপ।
২. এবং ইসলামী ইবাদতসমূহের নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতির সুবিন্যস্ত রুপ যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সাহাবীগনকে (রাঃ) শিখিয়েছিলেন। তাঁরা তাবেয়ীগনকে এবং তাঁরা তাদের পরবর্তী লোকদেরকে শিখিয়েছিলেন।
৩. অনুরূপ ফিকহের আরেকটি গুরত্বপূর্ণ অংশ হল, ঐসব মাসআলার সুবিন্যস্ত সমষ্টি যা কুরআন-হাদীসে স্পষ্টভাবে বিদ্যমান নেই। [এখানেই ইজতিহাদের প্রসঙ্গ চলে আসে-পোস্টদাতা।]
এই ফিকহের একাধিক সংকলন বিদ্যমান ছিল, যার মধ্যে বর্তমান কাল পর্যন্ত শুধু চারটি সংকলনই স্থায়ীত্ব ও গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে। সেগুলো হল- ফিকহে হানাফী, ফিকহে মালেকী, ফিকহে শাফেয়ী, ফিকহে হাম্বলী। সাধারণ পরিভাষায় ফিহকের প্রত্যেকটি সংকলন ‘মাযহাব’ নামে পরিচিত। বলা বাহুল্য এখানে ‘মাযহাব’ শব্দটির অর্থ “ফিকহের মাযহাব” তথা ফিকহের নির্দিষ্ট একটি সংকলন। এখানে মাযহাব অর্থ দ্বীন বা আকাঈদ বিষয়ে মতবিরোধকারী কোন “ফির্কা” নয়।
[মাযহাব ও তাকলীদ কি ও কেন। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী। মাকতাবাতুল আশরাফ। পৃষ্ঠাঃ ১১-১৪]
তাক্বলীদের অর্থঃ
১. অনুসরণ করা, নকল করা, অনুকরণ করা। (ফারহাঙ্গ)
২. বেড়ী লাগানো, গলায় তরবারী ঝুলানো, কুরবানীর জন্তুর গলায় চিহ্ন স্বরূপ কিছু ঝুলিয়ে দেয়া ইত্যাদি। (আল-কাওসার)
৩. কোন কাজ কারও দায়িত্বে অর্পণ করা বা ন্যস্ত করা। (বয়ানুল্‌-লিসান)
৪. ‘হার’ পরিধান করা, “চিন্তা-গবেষণা ব্যতীত কারও কথার অনুসরণ বা অনুকরণ করা”; “ঐ শাহী নির্দেশ যা অনুসরণ করার জন্য জারী করা হয়”। (মিসবাহ)
আর পরিভাষায় ‘তাক্বলীদ’ অর্থ স্বধর্মীয় কোণ অনুসরনযোগ্য খাটি মুত্তাকী বুযুর্গের কথা ও কাজকে এই আস্থার ভিত্তিতে গ্রহন করে নিয়ে আমল করা যে, তিনি অবশ্যই উক্ত কথা বা কাজ কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই বলেছেন। উক্ত মেনে নেওয়া বা আমল করার ব্যাপারে দলীলের অপেক্ষা না করা। কিন্তু অযদি তৎক্ষনাৎ বা পরবর্তিতে দলীলও পাওয়া যায় বা বুঝে এসে যায়; তবে এটাও তাক্বলীদের পরিপন্থী নয়। মোট কথা, তাক্বলীদের জন্য দলীল-প্রমাণ তালাশ করা জরুরী নয়। আর দলীলের সম্যক ধারনা আব জ্ঞানও তাকলীদ পরিপন্থি নয়।
[সূত্রঃ মাযহাব মানব কেন? মুফ্‌তী মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। আলকাউসার প্রকাশনী। পৃষ্ঠা নং ১৭]
[সুতরাং বোঝা গেল কুরআন ও হাদীসে যেসব বিষয় প্রছন্ন বা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই সেগুলো নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বিধান বের করাই ইজতিহাদ। সেগুলোর (এবং যেগুলো স্পষ্টভাবে বিদ্যমান সেগুলোর) সংকলিত, সুবিন্যস্ত রূপই ফিকহ্‌। সেই ফিকহের অনুসরণ করাই তাক্বলীদ। এই পর্যন্ত বোঝার পর নিচের প্রশ্নগুলো যে অর্থহীন সেটাও না বোঝার কারন দেখি না।
১২. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণ রায়িআল্লাহু আনহু এর মাযবাহ কি ছিল?
১৩. এটা কি এখনো প্রচলিত আছে? নাকি বন্ধ হয়ে গেছে?
১৪. বন্ধ হলে কে বন্ধ করল?
১৫. কেন করল?
১৬. বন্ধ করার অধিকার কে দিল?
১৮. আর যদি বন্ধ হয়ে না থাকে তবে অন্যের নামে মাযহাব সৃষ্টি করার প্রয়োজন কি?

-পোস্টদাতা]
মাজহাব এর শাব্দিক অর্থ মতামত, বিশ্বাস, ধর্ম, আদর্শ, পন্থা, মতবাদ, উৎস। (মিসবাহুল লুগাত, থানবী লাইব্রেরী-২৬২ পৃষ্ঠা)
৩. প্রচলিত চার মাযহাব মান্য করা কি ফরয?
সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, “আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম। অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে”।
এই আয়াতের তাফসীরে তফসীরে মা’আরেফুল-কোরআনের ৫ম খন্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় (ইসলামী ফাউন্ডেশন) লেখা আছে,
আলোচ্য আয়াতের “অতএব জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে” বাক্যটি যদিও বিশেষ বিষয়বস্তু সম্পর্কে বলা হয়েছে, কিন্তু ভাষা ব্যাপকতার কারণে এ জাতীয় সব ব্যাপারকে শামিল করে। তাই কোরআনী বর্ণনাভঙ্গির দিক দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তিগত ও ইতিহাসগত বিধি যে, যারা বিধি-বিধানের জ্ঞান রাখে না, তারা যারা জানে, তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে নেবে এবং তাদের কথামত কাজ করা জ্ঞানহীনদের উপর ফরয হবে। একেই তাকলীদ (অনুসরণ) বলা হয়। [এরপর বিস্তারিত আলোচনার পর লেখা হয়েছে] এরপর দিন দিন জ্ঞানের মাপকাঠি সংকুচিত হতে থাকে এবং তাকওয়া ও আল্লাহ্‌ভীতির পরিবর্তে মানবিক স্বার্থপরতা প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে যদি কোন মাস’আলায় যে-কোন ইমামের উক্তি গ্রহণ করার এবং অন্য মাস’আলায় অন্য ইমামের উক্তি গ্রহন স্বাধীনতা দেয়া হয়, তবে এর আবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে মানুষ শরীয়ত অনুসরণের নামে প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে যাবে। যে ইমামের উক্তিতে সে নিজ প্রবৃত্তির স্বার্থ পূর্ণ হতে দেখবে সেই ইমামের উক্তিকেই গ্রহণ করবে। বলা বাহুল্য; এরূপ করার মধ্যে ধর্ম ও শরীয়তের অনুসরণ হবে কম এবং স্বার্থ ও প্রবৃত্তির অনুসরণ হবে বেশী। অথচ দীন ও শরীয়তের অনুসরণ না করে স্বার্থ ও প্রবৃত্তির অনুসরণ উম্মতের ইজমা দ্বারা হারাম। আল্লামা শাতেবী ‘মুয়াফাকাত’ গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। সাধারণ তাকলীদের বিরোধীতা সত্ত্বেও ইবনে তাইমিয়া এ ধরনের অনুসরণকে স্বীয় ফতোয়া গ্রন্থে ইজমা দ্বারা হারাম বলেছেন। এ কারনেই পরবর্তী ফিকাহবিদগন এটা জরুরী মনে করেছেন যে, আমলকারীদের ওপর কোন একজন ইমামেরই তাকলীদ করা বাধ্যতামূলক করে দেয়া উচিত। এখান থেকেই ব্যক্তিতাকলীদের সূচনা।
হযরত গাঙ্গুহী (রহ) তাক্বলীদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তাক্বলীদ’ বা অনুসরণ সাধারণত ‘ফরয’। কেননা আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেন, “তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করে নাও, যা কিছু তোমাদের অজানা রয়েছে”।
উক্ত আয়াত দ্বারা ‘তাক্বলীদ’ বা অন্যকে অনুসরণ করা ‘ফরয’ করে দেওয়া হয়েছে। (কারণ, একমাত্র মানার জন্যই ‘জানা’ জরুরী হয়ে থাকে। যার মানার বা অনুসরণ করার নিয়্যত নেই, তার জানারও দরকার নেই)
[মাযহাব মান্‌বো কেন? পৃষ্ঠা-৩৪]
[উপরোক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার যে, মাযহাব মান্য করা ‘ফরয’ (অবশ্য অন্য কিতাবে ওয়াজিবও বলা হয়েছে এবং সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।) তাই বলে চার মাযহাব একসাথে মানা বৈধ নয় বরং যেকোন কে মাযহাব মান্য করা ফরয। একাধিক ইমামের ফতোয়া অনুযায়ী চলতে গেলে নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণের সম্ভবনা রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে আলাদা পোস্ট দেয়া সম্ভব। সংক্ষিপ্ত করা হল। –পোস্টদাতা।)
৪. যদি ফরয হয়ে থাকে তাহলে এ ফরযটি উদ্ভাবন করল কে?
--উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার।
৫. এটি টি সকলের জন্যই? ৬. না কিছু লোকের জন্য?
-- যাদের ইজতিহাদ করার যোগ্যতা নেই তাদের জন্য।
৭. যারা চার মাযহাব মানে না,তারা কি মুসলিম নয়?
-- মূলবিষয়তো লিখেই দিলাম। এবার আপনিই ফতোয়া দিন তারা কি...

৮. হানাফী, শাফি’ঈ, মালিকী ওহাম্বলী এ চার মাযহাব কখন সৃষ্টি করা হয়েছে? ৯. কে সৃষ্টি করেছে?
-- সৃষ্টি করার অর্থ এখানে ধরে নিলাম “সূচনা” করা। ফিকহি মাযহাবের গোড়াপত্তন হয় ১০০ হিজরীর পরে। ইমামগন ও তাদের ছাত্রদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তা পূর্ণতা পায় ও সংকলিত হয়।
১০. কেন করেছে?
-- “ইজতিহাদ, ফিক্‌হ, মাযহাবের সংজ্ঞাগুলো আরেকবার পরে নিন দয়া করে।
১১. যাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি করা হয়েছে তাঁরা কি এ মাযহাবগুলি বানিয়ে নিতে বলেছেন?
-- আরেকটি অদ্ভূত ও অর্থহীন প্রশ্ন। উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি না।

১৯. চার মাযহাব মান্য করা ফরয হলে যারা চার মাযহাব মানেন না অথবা চার মাযহাব সৃষ্টি হওয়ার আগে যার মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের উপায় কি?
২০. তারা কি জাহান্নামী হবেন? (নাউযুবিল্লাহ)
২১. ইমাম চারজন কোন মাযহাব মানতেন?
২২. তাঁদের পিতা-মাত, উস্তাদ মন্ডলী ও পূর্বপুরূষগণ করা মাযহাব মেনে চলতেন?
২৩. সে মাযহাব কি এখন মানা যায় না?

এই প্রশ্নের উত্তরে “মাযহাব” কাকে বলে সেটা আবার দেখে নেয়ার অনুরোধ করছি। যে মাযহাব কাকে বলে সেটা পড়েছে তার কাছে এইসব প্রশ্ন আজগুবি।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সময় ফিকহ সংকলিত অবস্থায় ছিল না। ফিকহ্‌তো অনেক দূরের ব্যাপার কুরআনুল কারীমই সংকলিত অবস্থায় ছিল না। জামিউল কুরআন উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) কুরআন সংকলন করেন। যা যুগের পর যুগ পার হয়ে বর্তমানে আমাদের নিকট বিদ্যমান। হযরত উসমান (রাঃ) এর কুরআন সংকলনের পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ), আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ), ওমর (রাঃ) পরলোকগত হন। কাজেই এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে তারা কুরআনের (সংকলিত কুরআনের) অনুসারী ছিলেন কিনা তাহলে আর জবাব দেয়ার মত কিছু থাকে না। হাদীসও সংকলিত অবস্থায় ছিল না। অনেক পরে হাদীসের ইমামগন হাদীস সংকলিত করেন। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে, আগের যুগের মুসলিমরা কি বুখারী শরীফ মানতেন? বুখারী শরীফ যদি না মানেন তবেতো তারা সহীহ হাদিস অস্বীকার করলেন। তাদের হুকুম কি হবে? তারা কি জান্নাতী হবে না?
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং তার সুযোগ্য সাহাবাগনের (রাঃ) এর যুগে মানুষ যেকোন সমস্যার সমাধানে তাদের স্বরনাপন্য হতে এবং তাদের নির্দেশিত পথে আমল করতেন। তাদের মৃত্যুর মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে জেনে আমল করার পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়েছে। কাজেই কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী “জানা না থাকলে জ্ঞানীদের কাছ থেকে জেনে” নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। এটাই তাক্বলীদ।
যেমনটা সাহাবীরা করেছেন। তাদের মনে কোন প্রশ্ন জাগলে সরাসরি রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করতেন। পরবর্তী যুগের মানুষেরা সাহাবীদের (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করতেন এবং সে অনুযায়ী আমল করতেন।
আগেই বলেছি মাযহাব মানা তাদের জন্য জরুরী যাদের ইজতিহাদের যোগ্যতা নেই। যারা মুজতাহিদ (যিনি ইজতিহাদ করেন) তাদের জন্য মাযহাব মানা জরুরী নয়। কারন তারা নিজেরাই যেকোন সমস্যার সমাধান বের করতে সক্ষম।
২৪. ঈমানদারীতে এবং কুরআন-হাদীসের বিদ্যায় চার ইমাম শ্রেষ্ঠ ছিলেন না চার খলীফাহ্?
-- অবশ্যই চার খলীফাহ্‌ শ্রেষ্ঠ।
২৫. যদি খলীফাহগণ শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকেন তবে তাদের নামে মাযহাব হল না কেন?
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনার প্রশ্নটি যৌক্তিক। তবে না বুঝার কারণে আপনার মনে এমন প্রশ্ন উদয় হয়েছে। মূল কারণ হল, আমরা যদি বলি যে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর তাকলীদ করা হোক। তাহলে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর তাকলীদ করলে তাঁর কাছে ছিল কুরআন, রাসূল সাঃ এর হাদীস এবং তার নিজস্ব ফাতওয়া। কিন্তু হযরত উমর, হযরত উসমান ও হযরত আলী রাঃ এর ফাতওয়া কিন্তু হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর কাছে ছিল না? তাই তাঁর তাকলীদ করলে আমরা বাকি তিন খলীফায়ে রাশেদের ফাতওয়া থেকে বঞ্চিত থাকছি।
একইভাবে আমরা যদি উমর রাঃ এর তাকলীদের কথা বলি, তাহলে হযরত উমর রাঃ এর কাছে কুরআন, হাদীস, হযরত আবু বকর রাঃ এর ফাতওয়া এবং তাঁর নিজের ফাতওয়া রয়েছে। বাকি উসমান রাঃ এবং হযরত আলী রাঃ এর ফাতওয়া থাকছে না।
একই অবস্থা হযরত উসমান রাঃ এর তাকলীদের কথা বললে। হযরত আলী রাঃ এর তাকলীদের কথা বললে তাঁর কাছে কুরআন, হাদীস, হযরত আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ এর ফাতওয়া এবং হযরত আলী রাঃ এর নিজস্ব ফাতওয়া পাওয়া যাবে। কিন্তু তৎকালীন জিবীত থাকা ও মৃত্যুবরণ করা বাকি সাহাবীদের ফাতওয়া পাচ্ছি না।
এ কারণে সাহাবীদের পরবর্তীতে তাবেয়ী ইমাম আবু হানীফা এবং তাবে তাবেয়ী ইমাম শাফেয়ী, মালিক ও আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর তাকলীদের মাধ্যমে কুরআন, হাদীস এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের ফাতওয়াও পাওয়া যায়। আর আমাদের কাছে কুরআন হাদীসের সাথে সাহাবাগণও অনুসরণীয়।
وعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين من بعدي عضوا عليها بالنواجذ
হযরত ইরবাজ বিন সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধর। এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে আঁকড়ে ধর আমার পরে। এগুলোকে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধর। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৬১৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২০১২৫, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৫০, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৭৯, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৯২২, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৩২৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৪২, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪২০১, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-৪৩৭, মাশকিলুল আসার, হাদীস নং-৯৯৮}
তাই চার ইমামের তাকলীদ করার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের মাসায়েল পাওয়া যাচ্ছে। যা শুধু চার খলীফার তাকলীদ করলে পাওয়া যেতো না।
আর আমরা বিশেষ করে ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ এর অনুসরণ এ জন্য করে থাকি যে, যেহেতু হযরত আলী রাঃ সম্পর্কে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে,
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : أنا مدينة العلم و علي بابها فمن أراد المدينة فليأت الباب
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ আমি হলাম ইলমের শহর। আর আলী হল এর দরজা। সুতরাং যে ব্যক্তি শহরে প্রবেশ করতে চায়, সে যেন দরজা দিয়ে আসে। {মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৪৬৩৭, আলমুজামুল কাবীর লিততাবারী, হাদীস নং-১১০৬১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩২৮৯০, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-৫৭৪২}
যেহেতু আমরা ইলমের শহর রাসূল সাঃ এর ইলম পর্যন্ত পৌঁছতে চাই দরজা দিয়ে। আর ইলমের দরজা হযরত আলী রাঃ কুরআন, হাদীস, হযরত আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ এবং হযরত উসমান রাঃ এর ফাতওয়াসহ কুফায় এসে শুয়ে আছেন। তাই সেই কুফায় জন্ম নেয়া ইমামে আজম রহঃ এর তাকলীদ করার মাধ্যমে এই সকল ইলমের দরজা দিয়ে রাসূল সাঃ এর ইলমের শহরে প্রবেশ করে থাকি।
এ কারণে আমরা ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ এর তাকলীদ করে থাকি। যেহেতু তার কাছে সকল ইলমের ভান্ডার এসে পৌঁছেছে হযরত আলী রাঃ সহ অন্যান্য সাহাবীগণের পদচারণায় ধন্য কুফায়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
ইমেইল-jamiatulasad@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com

[ফেসবুক থেকে-পোস্ট দাতা]
২৬. তাঁরা কি ইমামগণ অপেক্ষা কম যোগ্য ছিলেন?
-- কখনই না।

২৭. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর কালিমা পড়বে, ইমামদের নামে মাযহাব মানবে আর পীর-ফক্বীরদরে ত্বরীকাহ্ মত চলবে এ নির্দেশ কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোথায় আছে?
২৮. আল্লাহ নাবীর কি মাযহাব বা ত্বরীকাহ নেই?
২৯. সে মাযহাব বা ত্বরীকাহ কি যথেষ্ট নয়?

-- কিসব প্রশ্ন! হযরত উসমান (রাঃ) কুরআন সংকলন করেন। তাহলে কি কেউ বলতে পারে যে উসমানের কুরআন মানার কথা কোথায় আছে?
হাদীসের ইমামগন (রঃ) ছিহাহ্‌ সিত্তাহ্‌ সংকলন করেন। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে বুখারীর হাদিস মানার কথা কোথায় আছে?
প্রকৃতপক্ষে কুরআন আল্লাহর তরফ থেকেই। উসমান (রাঃ) সেটা সংকলন করেন এবং পূর্নাঙ্গ পুস্তিকার আকার দেন। তাতে কুরআনের মর্যাদা কমে যায় নি। আর কোন বোকাও একথা বলবে না যে, এটাতো উসমানের কুরআন!
হাদীসগ্রন্থসমূহে (ছিহাহ্‌ ছিত্তাহ্‌ সমুহে। এছাড়া অনেক গ্রন্থে সহীহ হাদীস পাওয়া যায়) হাদীস সমূহ সংকলিত হয়েছে। এই হাদীস সমূহও সংকলকগনের নয়। বরং তা সাহাবা (রাঃ)দের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর। কাজেই ইমাম বুখারীর হাদীস বলে কিছু নেই।
মাযহাব হল ফিকহের সংকলিত রূপ। ফিকহ্‌ এসেছে কুরআন ও হাদীস থেকে। (ফিকহ্‌ এর সংজ্ঞা আবার দেখে নিন।) কাজেই ফিকহ্‌ গ্রন্থসমূহে যে ফাতওয়া দেয়া হয়েছে তা সংকলকগনের কোন নিজস্ব ফতোয়া নয়। কুরআন-হাদীস থেকে সংগ্রহীত। তারপরও “আমরা আম্বিয়া আলাইহিমুস্‌ সালাম ছাড়া আর কাউকে মা’সূম ভুল-ত্রুটির উর্দ্ধে মনে করি না। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একজন উম্মতী এবং তার শরীয়তের খাদেম মনে করি। তাঁর ফিকহ্‌এর অনুসরণ আমরা এইজন্যই করি যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) শরীয়তের হুকুম আহ্‌কাম জানার জন্য ফকীহগনের শরনাপন্ন হওয়ার আদেশ করেছেন।
ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এর কোন কথা যদি শরীয়তের দলীল দ্বারা ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে সেটা হানাফী ফিকহ্‌এর মধ্যে “ফতোয়া যোগ্য” বিবেচিত হয় না। তাহলে আমরা কিভাবে কুরআন-হাদীসের বিরোধীতা করে তাঁর তাকলীদ করলাম”।
[উদ্ধৃত অংশটুকু “মাযহাব ও তাকলীদ কি ও কেন” বইয়ের ১৬-১৭ পৃষ্ঠা থেকে]
তাহলে বোঝা গেল ফিকহ্‌এর অনুসরনের মাধ্যমে মূলত কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণই করা হয়।
৩০. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর প্রতি কি ইসলাম পরিপূণ করা হয়নি?
৩১. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম কি কামিল নাবী নন?
৩২. ইসলাম কি মুকাম্মল ধর্ম নয়?

-- চার মাযহাবের কোন ইমাম এবং তার অনসারীদের কেউ এমন আক্বীদা পোষন করেন বলে আমার জানা নেই। কারো জানা থাকলে প্রমাণ পেশ করুন দয়া করে।
৩৩. ইসলাম পূর্ণ পরিণত এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম কামিল হয়ে থাকলে অন্যের মত ও পথ মান্য করার অবকাশ কোথায়?
৩৪. যারা পূর্ন পরিণত ইসলাম এবং কামিল নাবীকে অসম্পূর্ণ প্রমাণ করে অন্যের দ্বারা তা পূর্ণ করার স্বপ্ন দেখছে, তারা কি কুরআন ও সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করছে না?

-- আগেই বলেছি মাযহাব মানা মানেই হল কুরআন-সুন্নাহের অনুসরণ। মুজতাহিদগন কখনই এমন দাবি করেন নি যে, তারা ইসলামকে পূর্ণ করেছেন। তাদের সুযোগ্য অনুসারীদের কেউও এমন আক্বীদা পোষন করে না যে, ইসলাম অপূর্ণ ছিল, মুজতাহিদগন তা পূর্ণ করেছেন! (আস্তাগফিরুল্লাহ!)
বস্তুত মাযহাব বিরোধীদের এসব অভিযোগের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।
৩৫.যে দলটি মুক্তি পাবে বলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছেন- সে নাজাতপ্রাপ্ত দল চার মাযহাবের কোনটি?
৩৬. জান্নাতের পথ বা সীরাতুল মুস্তকীম বুঝবার জন্য আল্লাহ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম একটি সরল রেখা আস্কন করে বললেন, এটা আল্লাহর পথ।তোমরা এর অনুসরণ কর। তৎপর ঐ সরল রেখাটির ডানে- বামে আরো কতকগুলি রেখা আঁকলেন ও বললেন, এ পথগুলির প্রত্যেকটিতে একটি করে শাইত্বন আছে। তারা নিজ নিজ পথের দিকে ডাকছে। তোমরা ঐ পথগুলির অনুসরণ করো না। যদি কর, তহলে তারা তোমাদেরকে সরল পথ হতে বিভ্রান্ত করে ফেলবে। (মিশকাত) এ হাদীস অনুসারী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর পথ সিরাতুল মুস্তাকীম ব্যতীত অন্য পথগুলি কি শাইত্বনের পথ নয়?

-- ৩৫ নং প্রশ্নটি আসলে কোন প্রশ্নই না। প্রশ্নকর্তার ভঙ্গিতে মনে হচ্ছে চার মাযহাব চারটি পৃথক দল এবং পরস্পরের সাথে বিরোধ ও রেষারেষিতে মত্ত! এটা মাযহাব বিরোধীদের কষ্ট কল্পনা।
মুসলিম সমাজের বিবাদ বিরোধের মূল কারন হল আক্বীদায় বিভ্রান্তি। কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী যারা সহীহ আক্বীদার অনুসারী তারাই মূলত নাজাত প্রাপ্ত। চার মাযহাবের কোন ইমাম ও তাদের অনুসারীগন আক্বীদাগতভাবে বিভ্রান্ত নয়। তারা সকলেই কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী।
৩৭. কালিমা পড়া হয় নাবীর নামে, ক্ববরে রাখা হয নাবীর ত্বরীকায়, ক্ববরে জিজ্ঞাসা করা হবে নাবীর কথা, হাশর ময়দানেও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম শাফা’য়াত করবেন আল্লাহ আদেশে- সে মহানবী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম এর ত্বরীকাহ্ বাদ দিয়ে অন্যের ত্বরীকাহ্ মানলে নাজাত পাওয়া যাবে কি?
-- না, পাওয়া যাবে না। এসবের সাথে মাযহাবের অনুসরণকারীদের সম্পর্ক বোঝা গেল না।
৩৮. বাংলাদেমে মাযার ও পীরের অন্ত নেই; যত পীর তত ত্বরীকাহ্। পীর সাহেবরা আজকাল
ক্বিবলা বানিয়ে নিয়েছেন। মানুষ কি মানুষের ক্বিবলা হতে পারে?
৩৯. তারা তাদের আস্তানাগুলিকে দারগা শরীফ, খানকা শরীফ, মাযার শরীফ, ওরশ শরীফ প্রভূতি নাম দিয়ে মুসলিমদের তীথস্থান মাক্কা ও মাদীনাহ্ আবমাননার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে?
৪০. পীর তার মুরীদকে বলে সব সময় পীরের ক্বলবের সাথে তোমার ক্বলব মিলিয়ে রাখবে, যখন পীর তার স্ত্রীর উপর. ...। তখন মুরীদ কোথায় থাকে?
৪১. এগুলি কি দ্বীন ও শরী’আতের নামে ভন্ডামী নয়?

-- তথাকথিত পীর ও তাদের কার্যকলাপের সঙ্গে মাযহাবের অনুসারীদের কোন সম্পর্ক নেই।
৪২. মুসলমানদের আল্লাহ এক, নবী এক, কুরআন এক, কেবলা এক এবং একই তাদের ধর্মকর্ম রীতি-নীতি। সুতরাং তাদের মুক্তি ও কল্যাণের পথ হচ্ছে মাত্র একটিই। যা ইসলাম, সিরাতে মুস্তাকীম বা তরিকায়ে মুহাম্মাদী।
-- হ্যা, ঠিক আছে। এখানে প্রশ্নটা কি?
(৪৩) আবু হানীফা কি হানাফী মাযহাব তৈরী করেছেন?
-- মাযহাবের সংজ্ঞা পড়ে আসুন আবার। পরিষ্কার হয়ে যাবে।

(৪৪) আবু হানীফা কি রাসূল সাঃ এর সব হাদীস জানতো? যদি জেনে থাকে তাহলে পরবর্তীতে হাদীস সংগ্রহের প্রয়োজন হলো কেনো? তার মাযহাবটাই তো যথেষ্ঠ ছিলো।তাই নয় কি?
-- ইমাম আবু হানীফা (রঃ) হাদীস শাস্ত্রের কি জানতেন না জানতে সেটা বিস্তারিত জানতে “মাযহাব মানব কেন?” এর ১৩২ তম পৃষ্ঠায় দেখুন। 
সাহাবী (রাঃ) গনও কিন্তু হাদীস সংকলন করেন নি। “আমি প্রশ্ন করি হযরত আবু বকর ওমর ওসমান আলি রা: কোন হাদিসের কিতাব লিখেছেন যেখান থেকে কোন হাদিস জাল কোন হাদিস যইফ তা জানতে পারতাম। অবশ্যয় লিখেননি। ওনারা যেকারনে লিখেন নি, সে কারনে ইমাম আবু হানিফাও লিখেন নি।

কারণ টা কি?
১। ছাহাবা যুগ যাকে হাদীসে খায়রুল কুরুন বলেছে সে যুগে হাদীস জাল বা জঈফ হয়নি, যার কারণে হাদস সংকলনের প্রয়োজন দেখা দেয়নি বরং হাদীস উস্তাদ থেকে শুনে শুনে মুখস্থ রাখা হইত। ইমাম আবু হানিফা সেই যুগেরই মানুষ ছিলেন। অর্থাত উনি সাহবা এবং তাবঈদের থেকে হাদীস শিক্ষা গ্রহণ করেচেন। পরের ‍যুগে যখন হাদিস জাল করা শুরু হয় তখন ইমাম আহমদ, ইমাম বোখারী প্রমুখ ব্যক্তি হাদীস সংকলনের কাজ শুরু করেন।
২। হাদিস শরীফে আছে : মুসলিম শরীফের রেওয়ায়াত।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( لا تَكْتُبُوا عَنِّي وَمَنْ كَتَبَ عَنِّي غَيْرَ الْقُرْآنِ فَلْيَمْحُهُ وَحَدِّثُوا عَنِّي وَلا حَرَجَ ... ) رواه مسلم
হুযুর পাক সা: বলেন: তোমরা আমার থেকে কোরান অন্য কিছু লিখবেনা। যদি লিখে থাক তাহলে মুছে ফেল। কিন্তু আমার থেকে রেওয়ায়াত কর।

এই হাদিসে কোরান ছাড়া অন্য কিছু লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। এর উপর ছাহাবাগণ আমল করেছেন, ইমাম আবু হানিফাও আমল করেছেন।
উনারা হাদিসের উপর আমল করাতে আপনার কোন অসুবিধা হইলে জানাবেন।
ইমাম আবু হানিফা রাহ: নিজে কোন কিতাব লিখেননি সংকলনের কাজে ব্যস্ত থাকার কারনে। তবে ওনার ছত্ররা ওনার রেওয়ায়ত সমুহ একত্রিক করেছেন।

যেমন :
1। الفقه الأكبر، برواية حماد بن أبي حنيفة
لفقه الأكبر، برواية أبي مطيع البلخي(2)
العالم والمتعلم، برواية أبي مقاتل السمرقندي(3)
رسالة الإمام أبي حنيفة إلى عثمان البتي(4)
الوصية، برواية أبي يوسف(5)”

(৪৫) যদি বলেন আবু হানীফা মাযহাব তৈরী করেছে তাহলে আমার প্রশ্নঃ আবু হানীফার ওস্তাদ হাম্মাদ কোন্ মাযহাব তৈরী করেছেন? নাকি করেননি? হাম্মাদের তো উচিত ছিলো হাম্মাদী মাযহাব তৈরী করা। তাহলে হাম্মাদ কেন মাযহাব তৈরী করেননি? নাকি হাম্মাদের মাযহাব তৈরী করার মত সামর্থ্য ছিলনা?
(৪৬) আবু হানীফার জন্মের আগের দিন যেসব মানুষ মারা গেছে তারা কোন মাযহাব মানতো?

(৪৭) আবু হানীফা যখন শিশু ছিলো তখন সারা দুনিয়ার মুসলিমগণ কোন মাযহাব মানতো?
(৪৮) আবু হানীফা তো আর জন্ম থেকেই মুজতাহিদ ছিলেননা।মুজতাহি দ হতে কম করে হলেও ২৫/৩০ বছর বয়স হয়েছে তার। তাহলে আবু হানীফার বয়স ২৫/৩০ বছর হওয়ার আগে সারা দুনিয়ার মুসলিমরা কোন মাযহাব মানতো? 
(৪৯) মুসলিম বিশ্বের এরিয়াটা একবার দেখুনঃ পশ্চিমে মরক্কো, আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল থেকে পূবে চীনের সীমান্ত আর উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর থেকে দক্ষিণে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিরাট এলাকা। আবু হানীফার জন্মের ছয়মাস আগে এই বিরাট এলাকায় কার মাযহাব মানা হত? তখন কিন্তু সব সাহাবা জীবিত ছিলেননা। দলিল সহ জানতে চাই।

দলিল সহ আগেই বলা হয়েছে, সে যুগে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আহমাদ, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ছাড়াও আরো অনেক মুজতাহিদ ছিল। তারাও কুরআন-সুন্নাহ গবেষনা করে সে অনুযায়ী মাছয়ালা দিতেন। কিন্তু কালক্রমে তাদের মতামতসমূহ সংরক্ষিত হয়নি। উপরোক্ত চার ইমামের ফিকহ্‌ প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং তাদের অনুসারীগন তা সংরক্ষন ও সমৃদ্ধ করেন। ধীরে ধীরে তা সমগ্র বিশ্বে ব্যাপ্তি লাভ করে। ৪৪ নং প্রশ্নের উত্তরেই বলা হয়েছে, হাদীস সংকলনের আগে মানুষ কিভাবে আমল করত এবং কেন হাদীস সংকলনের প্রয়োজন হল। এ নিয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন দেখি না।