কেউ যখন ইসলামের এমন কোন দিকে ঝুকে পড়ে যা সমাজে ইতিবাচকভাবে দেখা হয় না তখন সর্বপ্রথম বাধা আসে তার পরিবারের পক্ষ থেকে। মেয়েদের কথা জানি না, ছেলেদের কথা বলি। কোন ছেলে যখন দাড়ি রাখা শুরু করে তখন তার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনরাই তাকে বাধা প্রদানে অগ্রগামী হয়। তারা তাদের স্বপক্ষে যেসব উদ্ভট যুক্তি দাড় করায় তার কিছু নমুনা দিলাম --
* এখনি দাড়ি রাখলে মানুষ কি বলবে?
* তোমার দাড়ি রাখার বয়স হয় নি
* রাস্তাঘাটে পুলিশে ধরবে
* এখনতো দু'চারটে বের হয়েছে মাত্র। পরে সবদিক থেকে বের হলে রেখো।
উপরন্তু বিয়ে সংক্রান্ত নানাধরনের "ফান"তো আছেই। কেউ কেউ আমার ঘুমের মধ্যে দাড়ি কেটে ফেলার হুমকিও দেয়।
১৩-১৪ বছরের কোন ছেলে যখন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তখন তার পক্ষে দাড়ির পক্ষে অটল থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এমন অনেককে দেখেছি, যারা প্রথম প্রথম দাড়ি রাখলেও পরিবারের চাপের মুখে নতি স্বীকার করে নেয়। শুধু কিশোর বয়সীরাই এই ব্যাপারে পরাধীন নয় অনেক বয়স্ক লোক হজ্ব করতে যান। হজ্বের সময় দাড়ি রাখেন। দেশে ফিরে এসে পারিপার্শ্বিকতার কাছে হেরে যান।
মেয়েদের এমন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় কিনা জানা নেই। কেউ যখন পর্দা করা শুরু করে তখন কি তার ফ্যামিলির পক্ষ থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়? আপনাদের জানা থাকলে শেয়ার করেন।
যা বলছিলাম, মা-বাবা, ভাই-বোন অতি আপনজন। এছাড়াও রয়েছেন অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। ইসলামি বিধান অনুযায়ী আল্লাহর পরেই মায়ের স্থান, বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আত্মীয়তার সম্পর্ক বিনষ্টকারী সম্পর্কে কঠোর সতর্কতাবানী এসেছে। বাবা-মার আনুগত্য করতে বলা হয়েছে এবং তাদের প্রতি বিরক্ত হয়ে "আহ" করতেও নিষেধ করা হয়েছে।
কিন্তু একটা "কিন্তু" আছে!
আল্লাহর হুকুম আগে, রাসূলের সুন্নাহ আগে, বাবা-মায়ের আদেশ পরে। বাবা-মা যদি আল্লাহর হুকুম পালনে বাধা তৈরি করেন এবং রাসূলের (সাঃ) সুন্নত মানতে নিষেধ করেন তবে তাদের তাবেদারী করা মোটেই সমীচিন নয়। এমন অনেক অভিভাবক আছেন যারা চান না তাদের সন্তানেরা মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করুক। এতে নাকি পড়াশুনার সময় নষ্ট হয়। তারা চান না সন্তান মসজিদে বসে দু'মিনিট ঈমান-আমলের কথা শুনুক। কারন সামনে তাদের পরীক্ষা। পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে!
শত চেক দেয়ার পরেও সন্তান যখন কোন কারনে বিপথগামী হয় তখন তারাই তাকে আল্লাহ ও রাসূলের পথে পরিচালিত করতে চান!
আল্লাহর কুদরত বোঝা বড় মুশকিল। কাউকে সুস্থতার নেয়ামত দান করেন। সেটাও এক পরীক্ষা। নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে কিনা। কাউকে অসুস্থতার নেয়ামত দান করেন। সেটাও এক পরীক্ষা। পাপাচার থেকে বিমুখ হয় কিনা/ধৈর্য্য ধারন করে কিনা।
হালাল রুজি আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় একটি নেয়ামত। যার রুজি হালাল দুনিয়া তার জন্য সহজ। আখেরাতও তার জন্য সহজ ইনশা আল্লাহ। চাকুরী করুক, ব্যবসা করুক বা রিকশা চালাক মূল ব্যাপার একটাই যা উপার্জন করছে সেটা হালাল কিনা। যদি হালাল হয় তবে কম আয়ের মধ্যেই বরকত হয়। আর হারাম হলে যেভাবে আসে ঠিক সেভাবেই খরচ হয়ে যায়...
বর্তমানে হালালভাবে চাকুরী করা খুবই কঠিন একটা ব্যাপার। যারা চাকুরী খুজছে তাদের জন্যতো বটেই, যারা চাকুরীতে আছে তাদের জন্যও। চাকুরীর জন্য মোটা অংকের টাকা লাগে-এটা ওপেন সিক্রেট। চাকুরীর আগেই যদি ঘুষের লেনদেন হয়ে যায় তাহলে পরবর্তিতে কি হবে আল্লাহই ভাল জানেন। ঘুষ দিয়ে প্রশ্ন কিনে ডাক্তার হলে ভবিষ্যতে কি সেবা দিবে আল্লাহই ভাল জানেন। টাকা দিয়ে নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়ে কতটা মানুষ হবে আল্লাহই ভাল জানেন।
যারা চাকুরীতে আছেন তারা ভাল করেই জানেন চাকুরীর মানে কি। চাকর থেকে চাকুরী। চাকর যে কাজ করে তাকে চাকুরী বলে। বসের কথায় উঠবস করার নাম চাকুরী। বস সঠিক বলুক বা ভুল বলুক, তাদের দেশের ক্ষতি হোক, দেশের মানুষ গোল্লায় যাক-- কি আসে যায়! বিবেকের দরজায় তালা লাগানোর নাম চাকুরী। যাদের প্রতিষ্ঠানের অডিট আসে এবং যারা অডিট গুলো সামলান তারা ভালই জানেন পুকুরের কানপোনা গুলো কিভাবে রুই মাছ দেখানো হয়। আবার সময় মত রুইমাছ কে কানপোনা বোঝানো হয়।
এর ব্যতিক্রম খুব কমই আছে।
ভাগ্যবান তারাই যারা এসব থেকে দূরে আছে। আপনার আয় কম? আপনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন যে, আল্লাহ আপনাকে হারাম আয় থেকে বাচিয়েছেন। আর আল্লাহর সাহায্য ও মদদ তো আপনার জন্য আছেই। হারামখোরদের দোয়া কবুল হবে না। আপনি আল্লাহর কাছে চেয়ে নিন আপনার যা প্রয়োজন। নিশ্চয়ই মুমিনের জন্য আল্লাহই যথেষ্ঠ।
বাকি কাজ হলো নিজেকে আল্লাহর সাহায্য ও মদদের যোগ্য রাখা। কবীরা গোনাহ্ থেকে বেঁচে থাকা। প্রাসঙ্গিক একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিচ্ছি-
হজরত উমর (রাঃ)এর খিলাফতের জামানায় হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাষ (রাঃ) কে ১০৫০০ সাহাবীদের এক জামাতের আমীর বানিয়ে চীন সহ এশিয়ার কয়েকটি দেশকে দখল করার জন্য পাঠান। পথের মধ্যে সাহাবা আজমাঈনের সামনে সমুদ্র এসে যায়।হজরত সাদ (রাঃ) হজরত সালমান ফারসী (রাঃ) এর কাছে পরামর্শ চাইলেন যে কি করা যায় এই পরিস্হিতিতে কারণ হজরত সালমান ফারসী (রাঃ) রসুল (সঃ) এর সঙ্গে সর্বাধিক সফর করেছিলেন।
হজরত সালমান ফারসী (রাঃ) জবাব দিলেন যে, আমরা যেই দীনের জিমমাদারী নিয়ে এসেছি তা পুর না করা পর্যন্ত আমরা ফিরতে পারিনা। তবে আপনি দেখেন যে আপনার জামাতে কবীরা গুনাহ করনেওয়ালা কেউ আছে কিনা? কারণ কবীরা গুনাহ করা কেউ খাকলে ঐ জামাতের ওপর থেকে আললাহর সাহায্য দুরে সরে যায়।"
"হজরত সাদ (রাঃ) সকল সাথীদের দিকে একবার ডানদিক ও একবার বামদিকে দেখলেন এবং বললেন যে, না আমার জামাতে কোন ও কবীরা গুনাহ করনেওয়ালা সাথী নেই।
সুবহানআললাহ।কেমন মোবারক জামাত ছিল যে ১০৫০০ সাহাবীদের মধ্যে কেউই কবীরা গুনাহ করনেওয়ালা ছিল না। আর আললাহতালা কেমন চক্ষু হজরত সাদকে দান করেছিলেন যে শুধুমাত্র একবার তাকিয়েই তিনি বুঝতে পারলেন যে এই জামাতে কোন সাথীই কবীরা গুনাহ করনেওয়ালা নেই।
হজরত সালমান ফারসী (রাঃ) পরামর্শ দিলেন তবে ঘোড়া আগে চালানো যায়। হজরত সাদ (রাঃ) সকল সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিলেন ঘোড়া চালানোর জন্য।এবং এই দুয়া পাঠ করলেন -
"বিসমিললাহি তাওয়াক্কালতু আলাললহি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইললাবিললাহি আলিয়্যিল অযীম" এবং আসমাউল হুসনা পাঠ করলেন -
"ইয়া আউয়ালাল আউয়ালিলিন,ইয়া আখিরাল আখিরিন,ইয়া যাল কুওয়াতিল মাতিন, ইয়া রহিমাল মাসাকিন, ইয়া আরহামার রহিমিন। ইয়া আলিয়্যু,ইয়া আযিমু, ইয়া হালিমু ইয়া কারিম।"
সুবহানআললাহ। ১০৫০০ সাহাবীদের জামাত সমুদ্রের ওপর দিয়ে ছুটল। অপর পারে পৌছে হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,"আললাহর কসম! আমাদের ঘোড়ার পায়ের ক্ষুর ও পানিতে ভিজেনি।"
[হাদীসটির কোন সূত্র উল্লেখ করতে পারছি না বলে দুঃখিত। কারো এই ব্যাপারে কিছু জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন।]
সুতরাং আমাদের হতাশ হবার কিছু নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ।
No comments:
Post a Comment