Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Saturday, October 17, 2015

‪‎বাংলাদেশী, হজ্ব ও সৌদিয়ান‬


আল্লারহর রহমতে হজ্বের সফরের অভিজ্ঞতা হয়েছে। বেশ কয়েকবছরের আগের হলেও মাঝে মাঝে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলার জন্য সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে হয়। এবারের হজ্বের সময় ব্যথিত চিত্তে দু-দুটো বড়ধরনের দুর্ঘটনা খবর পড়েছি, ছবি দেখেছি, সেসব নিয়ে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় নানা ধরনের ঝড় দেখেছি। তখনই ভেবেছি কিছু লিখব। যথাসম্ভব আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমার অভিজ্ঞতা প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করব।
আমি ছিলাম আমাদের কাফেলার মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী। সত্যি বলতে পুরো সফরে আমার বয়সী কম সংখ্যক ছেলেই চোখে পড়েছে। নানাবিধ টেনশনে পাসপোর্ট হাতে পাবার পর ভিতরে কি লেখা আছে খুলেও দেখিনি। কি ভুলটা করেছি টের পেলাম বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে। স্বচ্ছ কাঁচের ওপাশে বসে থাকা পুলিশের ইউনিফর্ম পরা ভদ্রলোক পাসপোর্ট খুলে যখন ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেন তখন উলটাপালটা বলা শুরু করলাম। চাকুরীতে কতদিন হয়েছে, এই কয়দিনে হজ্বের টাকা কিভাবে জোগাড় হল - এইসব জেরা থেকে আমাকে উদ্ধার করলেন আমার সিনিয়র এক কলিগ। তিনি পাশের কাউন্টারে ছিলেন। বড় ভাই জবাব দেয়ার পর ইমিগ্রেশন পেরোতে আর তেমন কোন সমস্যা হয় নি।
বাংলাদেশ বিমানের ভাড়া করা যে স্প্যানিশ বিমানে আমরা যাচ্ছিলাম, সত্যি কথা বলতে অতভাল সার্ভিস আশা করি নি। টোটাল পাচ ঘন্টার ফ্লাইটে দুটো নাস্তা, একবার ভারী খাবার। নাস্তার উপকরণাদির মধ্যেই অনেককিছুই আমার কাছে একেবারে নতুন ছিল। পাশেই বিগবস ছিলেন। তিনি কিভাবে কি করেন, সেটা দেখে দেখে আমিও নাস্তা সেরে নিলাম।
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট হওয়াতে জেদ্দা বিমানবন্দরের আমাদের বিশেষ ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়। সকাল পাঁচটায় ল্যান্ড করার পর ইমিগ্রেশন শুরু হতে হতে ৯-১০ টা বেজে যায়। বহুক্ষন লাইনে দাঁড়িয়ে যখন সৌদি ইমিগ্রেশনের সামনে গেলাম তখন সৌদি অফিসার আমার দিকে "কমবয়সী? বয়স কত?"-টাইপ চাহনি দিলেন। একবার পাসপোর্ট দেখে আরেকবার আমার মুখে দিকে দেখে। আঙ্গুলের ছাপ নিল, হয় নাই। আবার নিল, হচ্ছে না। আবার নিল! পারলে আমাকে কালিতে চুবিয়ে নিয়ে ছাপ রেখে দেয়!
ইমিগ্রেশনের ঝামেলা পার হয়ে মক্কায় পৌছাতে পৌছাতে আছরের ওয়াক্ত হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার ছিল, জুম্মা মিস, যোহর মিস। মিসরীয় ড্রাইভার বহু অনুরোধের পরও রাস্তায় কোথাও গাড়ি থামাতে রাজি হয় নি। এরমধ্যে ব্যাটা একবার রাস্তা হারিয়ে ফেলল। ঘুরে ফিরে একই রাস্তায় বার বার আসতে লাগল। নাহলে হয়ত যোহর পড়া যেত।
পরে আমাদের ইমাম সাহেবের নিকট শুনলাম এমনসব ঘটনার কারন কি। হজ্ব কাফেলায় বাংলাদেশী যারা যায় তাদের অনেকেই হজ্বের পর ফিরে আসে না। পালিয়ে যায়। এই কারনে সৌদি সরকার বাংলাদেশীদের (বিশেষত বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে যারা আসে) বিশেষ নজরে রাখে। আমার আরেক কলিগের মুখে শুনলাম (কাতার এয়ারওয়েজে ছিলেন তিনি) বিমান থেকে নেমেই ইমিগ্রেশন পার হয়েছেন তারা। একঘন্টার মধ্যে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন তারা।
মক্কার আশে পাশের দোকানগুলোতে উপমহাদেশীয় লোকজনই বেশি। চিটাগঙ্গের লোক / রোহিঙ্গা আছে প্রচুর। কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই। সৌদিয়ানদের মত পোশাক, অনর্গল আরবী বলছে। প্রথম দেখায় সৌদিয়ান বলে ভুল হয়। তারপর যখন নিজেদের মধ্যে চিটাগাং/বক্সবাজারে ভাষায় কথা বলে তখন চোখ দু'টো কপালে উঠে, মুখ হয়ে যায় হা!
সে যাই হোক, একদোকানে কিছু কেনার পর ক্যাশে বসা সৌদিয়ান আমাকে ১০ রিয়েলের একটা নোট ফেরত হিসেবে ধরিয়ে দিল। তাকিয়ে দেখি এক কোনায় ছিড়া। স্বাভাবিকভাবে নোট পালটে দিতে বললাম। সৌদিয়ান নোট ফেরত নিয়ে আমার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে বলল,
"বাংলাদেশ?"
আমি অবাক! হাসলাম।
"শেখ হাসিনা?"
আমার হাসি বিস্তৃত হল। মাথা ঝাকালাম।
"যালেম! যালেম!" - বলে সৌদিয়ান চেঁচিয়ে উঠল।
আমি মুখ কালো করে বেরিয়ে আসলাম। এমন দু'একটি ঘটনায় আমি বুঝতে পারলাম সৌদিয়ানরা বাংলাদেশীদের খুব বেশি ভাল দৃষ্টিতে দেখে না। একসময় দেখলে দেখতে পারে। এখন দেখে না।
হজ্বের আগে এজেন্সীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গা যেমন জাবালে নূর পাহাড়, আরাফাতের ময়দান, ওহুদের প্রান্তর-ইত্যাদি ভ্রমনের ব্যবস্থা করা হল। বার বার সাবধান করে দেয়া এবং সতর্ক থাকা স্বত্তেও একজন আরাফাতের ময়দানে হারিয়ে গেলেন। আমাদের ইমামা সাহেব তখন তাকে খুজে অন্য আরেক জায়গা থেকে ধরে নিয়ে আসলেন। তখন প্র্যাকটিক্যালি বুঝলাম কেন সেই মিশরীয় গাড়িচালক আমাদের শত অনুরোধের পরেও গাড়ী থামাননি। এই খোজাখুজির ঝামেলা কে করে!
প্রথম দিন যখন জামরায় পাথর মারতে যাই তখন আমাদের ৩-৪ জনের ছোট ছোট গ্রুপ করে দেয়া হয়। ইমাম সাহেব হেসে বলেই দেন চেষ্টা করবেন হারিয়ে না যেতে। না হারানোটা কতটা কঠিন সেটা টের পেলাম কিছুদূর এগোবার পর। পাঞ্জাদিয়ে ধরে রেখেছি। মানুষের চাপে হাত ভেঙে যাবার আগেই ছেড়ে দিতে হল। পাথার মেরে সামনের দিকে এগিয়ে একটা টানেল আছে। এদিক দিয়ে শর্টকাটে মক্কায় যাওয়া যায়। আমরা যেতে যেতে ঐ টানেল দিয়ে লোকজন যেতে দিচ্ছে না। ঐদিকে নাকি প্রচন্ড ভীড় হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। অন্যরাস্তা ধরলাম আমরা। যখন মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে আর ভয় নেই, তখনি হারিয়ে গেলাম। মক্কায় ফেরার পথে ১০-১৫ সেকেন্ডের জন্য পিছনে তাকিয়েছি পরিচিত কাউকে দেখা যায় কিনা। তারপর সামনে তাকিয়ে দেখি এতক্ষন যাদের সাথে ছিলাম তারা উধাও। ভয় পেলেও ভরষা হারালাম না। এতক্ষন তাপদাহ থাকলেও ইতোমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। বড় বড় ঠান্ডা ফোটা পড়তে লাগল। কিছুক্ষন দাড়ালাম এক দোকানের সামনে। আমার মত আরো অনেকেই এদিক সেদিক আশ্রয় নিয়েছে। কতক্ষন আর দাড়িয়ে থাকব? বৃষ্টির মধ্যেই নেমে গেলাম।
রাস্তার সাইনে ক্বাবা ঘরের সিম্বল দিয়ে দিকনির্দেশনা দেখে হাটছি। হাটতে হাটতে একসময়ের মক্কা টাওয়ারের বিশাল ঘড়ি চোখে পড়ল। হাপ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক ফিরে আসতে পেরেছি। তারপরও প্রায় ঘন্টা খানেক লেগেছে মক্কার হোটলে পৌছাতে।
সেসময় খুব বেশি বাংলাদেশী ভাল ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল ছিল না। তবে আমার কাছে একটা LG মোবাইল ছিল। যার ক্যামেরা ছিল ৫ মেগাপিক্সেলের। বলাই বাহুল্য এই মোবাইল আমি নিয়ে যাই নি। নিয়ে গিয়েছিলাম নোকিয়া ১২০৩। হারানো ভয়ে নয়, নিজের উপর এতটুকু ভরষা ছিল না যে নিজেকে সামলে রাখতে পারব কিনা। হয়ত ক্বাবা ঘরের গায়ে হাত দিয়ে একটা সেলফি তুলে ফেললাম, হয়ত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রওজার সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল হাতে এদিক ওদিক করলাম--এইসব আশংকায় মোবাইল রেখেই গিয়েছে।
সাহাবা (রাঃ) গন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যেমন সম্মান করেছেন তেমনটার ধারে কাছেওতো আমি যেতে পারব না অন্তত বেয়াদবের মত যেন আচরণ না হয় সে চেষ্টা করেছি। কিন্তু অনেককেই দেখেছি অমনটা করতে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রওজার ভিতরের দিকে উকি দেয়াতো আছেই, অনেকেই ভিতরের ছবি তুলতে চেষ্টা করেছেন পুলিশের শত বাধা মুখেও। সেখানকার পুলিশও মুখ খোলার আগে শতবার ভাবে। গলা যেন উচু না হয়ে যায়, কেউ যেন কষ্ট না পায়। মক্কার পুলিশ একটু গরম হলেও, রওজায় মুবারকে যারা দায়িত্ব পালন করেন তারা একেবারেই ঠান্ডা। কারনটা নিশ্চয়ই বোধগম্য।
এবার হজ্বের সময় কিছু ছবি টাইমলাইনে এসেছে। ক্বাবাঘর ধরে সেলফি, মসজিদে নববীতে দাঁড়িয়ে সেলফি। কেউ কেউ ছবি সহ নানান আপডেট দিয়েছেন। ছোট্ট প্রশ্ন করে, ভাই আপনারা ওখানে কেন গিয়েছেন? হজ্বের সফরে? নাকি ছবি তুলতে? এক-দেড়টা মাস ছবি না তুলে থাকতে পারলেন না? ইসলামে অহেতুক ছবি তোলার ব্যাপারে শিথিলতা নেই-এই ব্যাপারটা জানেন তো? আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন!
সৌদিতে যাবার পর একজন টেলিফোনে আমার সাথে যোগাযোগ করেন। পরিচয় দেবার পর বুঝতে পারলাম তিনি কোন এক সম্পর্কে আমার দুলাভাই হন। দেখার করার পর জানলাম উনি সেখানে গাড়ি চালান। ময়লার গাড়ি। একদিন উনার গাড়িতে চড়লাম। আমাদের দেশের মত খোলা ট্রাক নয়। দুর্গন্ধ ছড়াবার সুযোগ সে গাড়িতে নেই। কথায় কথায় জানলাম উনি সেখান অনেকদিন থেকেই আছেন। থাকা-খাওয়ার খরচ বাদ দিয়েও মাসে ১২-১৩ শত রিয়েল তার উদ্ধৃত থেকে যায়। আমি অবাক হওয়াতে উনি বললেন। খাবার খরচ তেমন একটা লাগে না। প্রচুর ফাস্টফুডের দোকান আছে যেখানে উনার গাড়ি থামার কথা নয়। উনি সেখানে গাড়ি থামিয়ে ময়লা নেন। এতে দোকান মালিক খুশি হয়ে তাকে অনেক সময় কিছু টাকা বা কোন ফুড আইটেম দেন। সেগুলো খেয়েই উনার কেটে যায়।
উনার গাড়িতে ঘুড়লাম অনেকক্ষন। মদীনা থেকে ময়লা নিয়ে কোথায় ডাম্পিং করেন সেটাও দেখিয়ে নিয়ে আসলেন। এরমধ্যে জুস-কোক খাওয়ানোতো আছেই। আরেকদিন ফোন দিয়ে দেখা করলেন। তারপর বললেন রিসেন্টলি উনার একটা মেয়ে হয়েছে। সে মেয়ের জন্য একটা সোনার চেইন, ছোট কম্বল আর কিছু কাপড়চোপড় আমার কাছে দিতে চান। আমি এত খাতির যত্মের কারন বুঝতে পারলাম এবং প্রচন্ড বিরক্ত হলাম। কিন্তু চক্ষু লজ্জায় না বলতে পারলাম না। পেটে খেলে পিঠে সয় বলে একটা কথা আছে না? তারপরও একটা বড় কম্বল দিতে চেয়েছিলেন। আমি এটা সেটা বলে কাটিয়ে গেলাম। অথচ সৌদিতে এমন কুরিয়ারও আছে যারা গ্যারান্টি দিয়ে মালামাল বাসায় পৌছে দিয়ে যাবে। রিয়েল খরচের ভয়ে ঐ কুরিয়ার তারা ব্যবহার করেন না। হাজী সাহেবদের ঘাড়ে দিয়ে দেন।
সৌদি অব্যবস্থাপনার কথা আজ থেকে শুনছি না। হজ্বে যাবার আগে থেকেই শুনছি।
সৌদি সরকার মুসলমান হিসেবে মুসলিমদের কাছ থেকে কেন ভিসার টাকা নেয়?
সৌদি বাদশাহ্‌ এই করছেন, সেই করেছেন আর দুনিয়ার মুসলমান মার খাচ্ছে...
হজ্ব হল সৌদি সরকারের ব্যবসা। এই ব্যবসার উপরে সৌদি টিকে আছে ...
ইত্যাদি হাবিজাবি নানান কিছু। আগেও চুপ ছিলাম, এখনো চুপই আছি। চালুনি হয়ে ছাকনির দিকে আঙ্গুল যত কম তোলা যায় ততই ভাল। কখন আবার আমি চালুনি সেটা প্রকাশ হয়ে যায়!
গুছিয়ে লিখতে পারিনি। দুঃখিত। 
unsure emoticon

No comments: