কুরবানীর ঈদটা না গেলে আসলে আরাফাত ভাইয়ের ধৈর্য্য সম্পর্কে ভালভাবে ধারনা পাওয়া যেত না। কুরবানী যেহেতু কিনতে হবে সেহেতু কুরবানীর ঈদের প্রস্তুতি ঈদের বেশকিছুদিন আগে থেকেই শুরু হয়। টাকা জোগাড় করে রাখতে হয় দ্বিগুন পরিমান। যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে যেন বিপদে পড়তে না হয়। রোজার ঈদের মত জামা-কাপড় কেনার হ্যাপা না থাকলেও অন্যান্য হ্যাপাতো আছেই।
হাটে যাও, হাটে যাও... হো
ছুড়ি ধারাও, বটি ধারাও... ছো
চাপাতি কিনো, কোবানি কিনো... কো
.....................................
.....................................
এই আরাফাত ভাই, আপনার লিস্টি এত লম্বা কেন?
নিজে থেকে গরু কিনতে না পারলে আরাফাত ভাইয়ের শান্তি লাগে না। আরে কোরবানীর ঈদের মজাটাইতো গরু-খাসী কেনা। এখানে যদি দূরে দূরে থাকি তাহলে আর কিভাবে হবে? বিপুল বিক্রমে আরাফাত ভাই চললেন কুরবানীর হাটে। সাথে শরীক আছে আরো কয়েকজন।
আগের রাতে তুমুল বর্ষণের কারণে হাটে থকথকে কাঁদা। কাঁদা পানির সাথে গরুর বর্জ্য মিশে চারদিকে পুরো মঁ মঁ করেছে সুগন্ধে।
আরাফাত ভাই বুদ্ধি করে বার্মিজ স্যান্ডেল পড়ে এসেছেন। কাদাপানি গেলে বার্মিজের উপর দিয়ে যাক। চামড়ার ক্ষতি করে লাভ কি? চারপাশে গরু উঠেছে ভালই। দামও মোটামুটি। এখানে থেকেই কিনে ফিরবেন নাকি আরো দুটো হাট ঘুড়বেন সেই আলোচনা যখন চলছিল ঠিক তখনি "ধর ধর" রবে শোরগোল শুরু হয়ে গেল। পিছনে ফিরে তাকাতেই আরাফাত ভাই দেখলেন একদল লোক তার দিকেই ছুটে আসছে। তবে লোকগুলো নিজের ইচ্ছায় আসছে না। একটা দুই শিংওয়ালা হাতি ফোঁসফোঁস করতে করতে তাদের টেনে নিয়ে আসছে। কাদার মধে ক্ষুর দেবে যাবার থপ থপ শব্দ আর গরম ফোঁস ফোঁসের শব্দে আরাফাত ভাই জায়গায় জমে গেলেন। আগেই বলেছি আরাফাত ভাইয়ের মাথা বিপদে একটু ধীরে কাজ করে। হাতিটার শিং যখন আরাফাত ভাইয়ের হালকা গজিয়ে উঠা ভূড়ি থেকে একফুট দূরে তখন লোকজন টেনে হাতির গতিরোধ করতে সমর্থ হল। আর আরাফাত ভাইও যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেলেন। হুড়মুড় করে ছুটতে যেয়েই উনার বার্মিজ স্যান্ডেলখানা ফুৎ করে পিছলে গেল আর আরাফাত ভাই ধরাম করে ধরাশয়ী হলেন। গরুর তামাশায় লোকজন যেমন থমকে গিয়েছিল, আরাফাত ভাইয়ের তামাশায় তারা হো হো করে হেসে উঠল। আরাফাত ভাইয়ের বেগতিক অবস্থা দেখে সেদিনের মত গরুক্রয় কর্মসূচি স্থগিত করা হল।
বাসায় আসার পর সুমিভাবি আরাফাত ভাইকে ১৪ বার গোসল করালেন। তারপরও নাকি আরাফাত ভাইয়ের গা থেকে দুর্গন্ধ যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে আরাফাত ভাইয়ের চোখ লাল হয়ে এসেছে দেখে হয়ত সুমি ভাবির মনে একটু দয়া হল। আরাফাত ভাই সর্বশেষ গোসলখানা দিলেন আতর আর বডি স্প্রে দিয়ে। তারপরও রাতের বেলা যখন ঘুমাতে গেলে তখন সুমিভাবি একটা বালিশ তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে দিলেন,
"আজকে আপনি সোফায় ঘুমান। আমি এই অবস্থায় আপনার সাথে ঘুমাতে পারব না।"
মনের দুঃখে আরাফাত ভাই.........
ঈদের দিন কুরবানী করার সময় আরাফাত ভাই গরুর মাথা ধরলেন। যিনি জবাই করবেন তিনি বার বার বলে দিলেন কোন অবস্থাতেই মাথা ছাড়া যাবে না। জবাই করার সময় যে গলার কাছে রক্তনালী চেপে ধরেছিল তার হাত ছুটে গেল হুড়োহুড়িতে। আর যায় কোথায় ফিনকি দিয়ে রক্ত এসে আরাফাত ভাই পুরো গোসল। চমকে উঠে আরাফাত ভাই মাথা ছেড়ে দিলেন। এরপর যেন কেয়ামত শুরু হয়ে গেল। গরুর মাথার বাড়িতে দুইজন ছিটকে গেল। লাফ দিয়ে গরু উঠে দিল দৌড়। বাচ্চা পোলাপান যারা কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তারা দিল দৌড়। একজনতো ধাক্কা খেয়ে ড্রেনেই পড়ে গেল। সারা গায়ে রক্ত মেখে আরাফাত ভাই স্ট্যাচু হয়ে গেলেন!
পাচ ঘন্টা পর আরাফাত ভাই যখন শেষবারের মত গরুর বন্টণকৃত অংশ নিয়ে ঘরে আসলেন তখন সুমি ভাবি দরজা খুলেই নাঁকমুখ কুঁচকে উঠে তাড়াতাড়ি নাকে কাপড় চাপা দিলেন।
"এই এমন বিদঘুটে গন্ধ আসে কোথা থেকে? দেখিতো এর মধ্যে কি?"
"কি আবার গরুর ভুড়ি...!"
"এই পচা ভুড়ি কে খাবে? ওমাগো, গন্ধেইতো মরে যাচ্ছি। আমি এইগুলো করতে পারব না। তাড়াতাড়ি ফেলে দিয়ে আসেন এইগুলা।"
"কি বলে! ভুড়ি ফেলব কেন? ভুড়ি খেতে কত মজা! গোশতের চেয়ে ভুড়ির মজাইতো বেশি!"
"আপনি ভুড়ি ফেলে দিয়ে আসবেন কিনা বলেন!"
মনের দুঃখে আরাফাত ভাই.........
রাতে ঘুমুতে যাবার সময় সুমি ভাবিকে ডেকে আরাফাত ভাই কাধটা একটু মালিশ করে দিতে বললেন। কোপাকুপি, টানাহেচড়ায় কাঁধ ব্যথা করছে। বলেই আরাফাত ভাই উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন। সুমিভাবি কি একটা মলম বের করে ভালভাবে দলাই মলাই করে দিলেন। একটু যখন আরাম বোধ হল তখন আরাফাত ভাই ঘুরে শুয়ে একটানে সুমিভাবিকে বুকের উপর নিয়ে আসলেন।
চরম লুমান্টিক অবস্থায়ও সুমিভাবির নাকটা কেন জানি কুঁচকে উঠল। ছিটকে দূরে সরে যেয়ে বললেন,
"এই আপনি গোসল করেন নাই?"
"কি বল? গোসল করব না কেন?"
"তাহলে আপনার গা থেকে ভুড়ির গন্ধ আসছে কেন?"
"ভুড়ির গন্ধ আসছে? কোথায়? নাতো... কোন গন্ধইতো নাই..."
"আপনিতো পাবেনই না। ভুড়ি ফেলে দিয়ে আসতে বলছি বলে কি কাঁচাই খেয়েছেন নাকি? এই নিন বালিশ, সোফায় গিয়ে ঘুমান..."
"ঈদের দিন এইগুলো কি শুরু করলে তুমি?"
"আপনি যাবেন কিনা বলেন!"
এবং আবারো মনের দুঃখে আরাফাত ভাই........
No comments:
Post a Comment