বিয়ের আগে কথাচ্ছলে হোক বা সত্যিকারভাবে হোক অনেক সহপাঠি বন্ধুরা বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলেই বলত, "দোস্ত একটা মেয়ে খুজে দে। বিয়ে করব।"
আমিও জানতে চাইতাম, "কেমন মেয়ে চাস?/কেমন মেয়ে তোর পছন্দ?"
"এই ভাল একটি মেয়ে, শান্ত-শিষ্ট, সংসারী..." ইত্যাদি ইত্যাদি।
"আচ্ছা দেখবো নে" বলে কাটিয়ে আসলেও মনে মনে গালি দিয়ে বলতাম, তুই যেমন, তোর বউটাও যেন তেমনই হয়!তুই দুনিয়া ভেজে খেয়ে ফেলিস আর বউ চাস সতী-সাধ্বী!
আর বিয়ের পর এখন যে প্রশ্নটি শুনি সেটি হল, কেমন মেয়ে বিয়ে করব বা কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত?
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিয়ে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জীবনের জটিলতম কাজগুলোর মধ্যে একটি। আমি এখানে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কথা বলতে চাই।
প্রথমেই বলে নেই, সঙ্গিনী বা সঙ্গী নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিন্তু স্ব-স্ব পাত্র/পাত্রীর। অভিভাবকের নয়। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় অভিভাবকের চাপের মুখে মেয়ে বা ছেলেরা বিয়েতে রাজি হয়। বিয়েতে আসলে 'দেখিনা কি হয়' ধরনের চিন্তা করার সুযোগ নেই। তাই মনোমালিন্য, ভাঙচুর- যা হবার তা বিয়ের আগে হওয়াই ভাল। বিয়ের পরে শান্তিতে থাকা যায় সেজন্য আগে থেকেই চেষ্টা করা দরকার।
অনেক ছেলেদের দেখেছি যারা আজীবন টাউট-বাটপারি, ইতরামি-ফাইজলামি করলেও বিয়ের সময় ফুলের মত পবিত্র মেয়ে খোজে। তাদের মনোভাব হল যা করার আগেই করে নেই বিয়ের পর আর করব না/বিয়ের পর আর করতে পারব না। স্বভাব/অভ্যাস এত সহজে বদলে যায় না। বিয়ের পর কিছুদিন হয়ত সংযতভাবে চলে কিন্তু পরে আবার আগের মত।
বিয়ের জন্য আসলে এমন কাউকে নির্বাচন করা উচিত যে কিনা আপনার জীবনযাত্রার সাথে পরিচিত। মানে আপনি যেমন জীবন যাপন করেন সে-ও কাছাকাছি করে। তাহলে পরস্পরের সাথে সহজে অভ্যস্থ হওয়া যায়। ছোট ছোট কিছু উদাহরণ দেই, যেমন আপনি ঘুড়ে বেড়াতে পছন্দ করেন বা চাকুরীর সুবাদে আপনাকে লম্বা সময় ভ্রমণ করতে হয়। এখন আপনি যদি এমন মেয়ে বিয়ে করেন যে কিনা বাস দেখলেই ভক করে বমি করে দেয় তাহলে কিন্তু বিয়ের পর এর হ্যাপা আপনাকেই টানতে হবে।
আবার আপনাকে অফিসের বিভিন্ন পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হয়। ধূমপান, মদপান থেকে শুরু করে বৈদেশিক কায়দা-কানুনে আরো অনেক কিছুই হয়। এখন বাবা-মার চাপে পড়ে আপনি মাওলানার মেয়েকে বিয়ে করলেন। বিয়ের পর মাওলানার মেয়ে আপনাকে সৈয়দ সাহেব বানিয়ে দিবে বা আপনি হতে পারবেন সে সম্ভবনা আমার মতে খুবই ক্ষীন। বরং আপনার বউ মাওলানার মেয়ে থেকে নায়লা নাঈম হয়ে যাবে সে সম্ভবনাই বেশি।
আমি মনে হয় আমার কথা গুলো বোঝাতে পারছি না।
মেয়ে খোজার আগে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার আমি কেমন মেয়ে চাই। আমি কি চাকুরীজীবি বউ চাই নাকি চাকুরী ছাড়া? আমি কি উচ্চশিক্ষিত বউ চাই নাকি মোটামুটি হলেই চলবে? আমি কি বোরকাওয়ালী বউ চাই নাকি বোরকাছাড়াও চলবে? বড়লোকের মেয়ে হতে হবে নাকি গরীবের মেয়ে হলেই হবে? বড় ফ্যামিলির মেয়ে হলে কি সমস্যা আছে? মেয়ে কি ধবধবে ফর্সা হতে হবে নাকি শ্যামলা? মেয়ে কি বরিশালেরই হতে হবে? ইত্যাদি ইত্যাদি...
মেয়েরা বিয়ের আগে ছেলের মধ্যে কি খোজে জানি না। তবে ধারনা করতে পারি। দাড়িতে অনেক মেয়ের চুলকানী আছে। তাই আপনার দাড়ি থাকলে অবশ্যই দাড়ি সম্পর্কে পাত্রীর মতামত কৌশলে জেনে নেয়াই ভাল। পক্ষান্তরে মেয়েরাও ছেলের কাছ থেকে সরাসরি শুনে নেবেন যে, বিয়ের পর পড়াশুনা চালিয়ে যেতে দেবে কিনা। চাকরী করার ইচ্ছে থাকলে স্বামী অনুমতি দেবে কিনা। বিয়ের পর কি শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথে থাকতে হবে নাকি আলাদা ঘর হবে? বোরকা পড়ার অভ্যাস না থাকলে বিয়ের পর কি বোরকা পড়তে হবে? ইত্যাদি ইত্যাদি...
অনেকেই লজ্জায় এসব ব্যাপারে ঠিকভাবে খোজ নেন না। অনেকেই আশংকা করেন এসব ছোটখাট ব্যাপারের আলোচনা তুলে কারো অসন্তোষের স্বীকার হন কিনা। আমি আবারো বলতে চাই, বিয়ের পরে অশান্তি পোহানোর চেয়ে বিয়ের আগে খটমট করা ভাল। বিয়ের পর অশান্তি হলে সারাজীবন পস্তাতে হবে।
আপনি ছেলে বা মেয়ের মধ্যে কি দেখতে চান সেটা ঠিক করার পর কাজ হল আপনার চাহিদাসমূহের মধ্যে অগ্রগামী কোনগুলো সেগুলো ঠিক করে ফেলা। কারন আপনি যেমন চান ঠিক তেমন পেয়ে যাবেন এমন সম্ভবনা শূন্যের কোঠায়। তাই কিছু ব্যাপার ধরে রেখে কিছু ব্যাপারে আপনাকে ছাড় দিতে হতে পারে।
যেমন কেউ যদি বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করতে চায় তখন দেখা গেল মেয়ের গায়ের রঙ শ্যামলা। অনেক বড়লোক বাবাই তার শ্যামলা মেয়েকে পাত্রস্থ করার জন্য পাত্রকে প্রতিষ্ঠিত করে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়।
আবার দেখা গেল দেখতে সুন্দর কিন্তু উচ্চতা কম।
মেয়ে সহজ-সরল, সংসারী কিন্তু পড়াশুনায় গোল্লা!
মেয়ে বোরকা পড়ে কিন্তু স্বভাব-চরিত্র ইসলামিক নয়। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি বলছি না আপনি পারফেক্ট মেয়ে পাবেন না। পাবেন। সংখ্যায় খুব অল্প। পারফেক্ট মেয়ে বিয়ে করার মত পারফেক্ট ছেলে আপনি হতে পেরেছেন কিনা সেটাও কিন্তু অনেক বড় একটা প্রশ্ন!
আমার পরিচিত একজন একটা মেয়ে দেখেছিল। মেয়ের বাবা সরকারী কর্মকর্তা। মেয়ে দেখতে ভাল। উচ্চশিক্ষিত এবং আরো পড়াশুনার ইচ্ছা আছে। বিসিএস দিয়ে সরকারী চাকুরীর আশা করে। সরকারী না হলে বেসরকারীতেও সমস্যা নেই। চাকুরী দরকার। চাকুরীর ব্যাপারে সে খুবই আগ্রহী। বোরকা পড়ে। ছবি আকতে পারে, গানও শিখে।
পারফেক্টের সংগা আসলে একেকজনের কাছে একেক রকম। আমার পরিচিত ঐ লোকের কাছে উপরোক্ত মেয়েটা পারফেক্ট নয়। অন্তত তারজন্য নয়। সে একা একা থাকে। বউ নিয়ে সংসার করতে চায়। বউ চাকুরী নিয়ে দূরে থাকলে বিয়ে করার আর দরকার কি?
সে এমন মেয়ে চেয়েছিল যে কিনা ঘরে থাকবে, তার বউ হয়ে। ঘর সামলাবে, তাকে সামলাবে। আল্লোহর হুকুম-আহকাম মানবে। এটাই তার কাছে মূল বিবেচ্য বিষয়। অন্যবিষয়গুলো সে ছাড় দিতে প্রস্তুত।
তাই আপনি সত্যিকারভাবে কি চান আর কতটুকু ছাড় দিতে পারবেন সেটা আগে থেকেই ভেবে রাখবেন।
অন্যকোন ব্যাপারে না হোক বিয়ের ব্যাপারে পরিবারের সাথে জোড় গলায় কথা বলুন। আপনার পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার জানিয়ে দিন। টিভি নাটক-সিনেমার মত কাল্পনিক জগৎ ছেড়ে বাস্তবের মাপকাঠিতে সম্ভাব্য পাত্র/পাত্রীকে যাচাই করুন। বিয়েতে ঠকলেন তো সারাজীবনের জন্য ঠকলেন। সবদিক দেখে করার পরও অনেকে ঠকে। ভাগ্যের উপরতো আর কারো হাত নেই। তবুও সাবধানের মার নেই।
শুভকামনা রইল যারা বিয়ের ব্যাপারে ভাবছেন তাদের জন্য। আল্লাহ হাফিজ!
No comments:
Post a Comment