Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Saturday, January 31, 2015

অতীত ও সমকালীন আমি‬

চাকুরী পাবার পর বোনাস পেয়ে প্রথম যে কাজটি করি সেটি হল ল্যাপটপ কিনি, নেট কানেকশনও নেই। সেও মনে হয় ২০০৮ সালের শেষের দিকের কথা। ফেসবুকের কথা জানতাম না। এদিক সেদিক ঘোড়াঘুড়ি করে সময় কাটাতাম। ইয়াহু চ্যাট রুমে কত চ্যাট করেছি! কিছুদিন পরে আমার এক বন্ধু কাছে ফেসবুকের কথা শুনি। সাইন আপ করে একাউন্ট খোলার পর বোঝার চেষ্টা করি। তখন ফেসবুক তেমন কেউ ব্যবহার করে না আমাদের দেশে। লেখালেখির প্লাটফর্ম ছিল ব্লগিং। আমিও আমার ব্লগে টুকটাক লেখা দিতাম।

ধীরে ধীরে ফেসবুক ব্লগিংয়ের জায়গা দখল করে। এখন ব্লগে ঢোকাই হয় না। গলাবাজি আর গালিবাজির ভয়েই একপ্রকার ব্লগিং থেকে বীতশ্রদ্ধ হয়ে কাপুরুষের মত ব্লগিং বাদ দেই। ধীরে ধীরে ফেসবুকের মজা পেয়ে যাই। একা একা থাকতাম। ফেসবুকে ফ্রেন্ড সার্কেলের কারো কারো সাথে চ্যাট করে নিসঙ্গতা কাটানোর চেষ্টা করতাম। তখন জলদি ঘুমাতাম রাতে। সকালে এমনিতেই ঘুম পূর্ণ হয়ে ঘুম ভেঙে যেত।

মন থাকত ভাল। অদ্ভূত এক আনন্দ নিয়ে আমার দিন শুরু হত। তখনকার দিনের আমার ফেবু স্ট্যাটাস দেখলে আমার মন ভালর পরিমাণের একটা আন্দাজ করা যায়।


ফেসবুক আমার কাছে সত্যিকারে আকর্ষনীয় হয়ে উঠে আমার জীবনে লিহামের আগমনে। (নামটা অবশ্যই ছদ্ম ও মানুষটা মেয়ে) মাঝে মাঝে আমি খুব ফ্রাংক্লি কথা বলতে পারি। মেন্টালিটির মিল যাদের সাথে থাকে আর প্রথম দর্শনের যাদের পছন্দ হয় তাদের সাথে খুব সহজভাবে মিশতে পারি। আর এসময় যদি কারো মন খারাপ থাকে তার মন ভাল করে দেয়া নিমিষের ব্যাপার ছিল। লিহামের সাথে কথা বলতে আমার ভাল লাগত। তারও নিশ্চয়ই ভাল লাগত। দুঃখের সাগরে ভেসে থাকা কোন মেয়ে যখন আমার সাথে কমফোর্ট ফিল করত তখন আমার আরো বেশি ভাল লাগত। আমি তার জন্য অপেক্ষা করতাম কখন অনলাইনে আসবে। সেও আমার জন্য অপেক্ষা করত।

মেয়েটার ব্যক্তিত্ব আমাকে চরমভাবে আকর্ষণ করত। এমন দুর্বার আকর্ষণ আমি আর কারো প্রতি অনুভব করিনি আর ভবিষ্যতে করব কিনা কে জানে! সে ছিল আমার জীবনের প্রথম মেয়ে যার সাথে আমি এতটা ফ্রী হয়েছিলাম, যে আমার সাথে এতটা ফ্রী হয়েছিল। আমি তাকে ঘিড়ে আমার স্বপ্নজাল বুনতে থাকি। সম্ভব-অসম্ভব নানা ধরনের কল্পনাতে মত্ত হই।

মেয়েদের একটি বৈশিষ্ট হল তারা ছেলেদের মনোভাব বুঝতে পারে। কে তাকে ভালবাসে আর কে তাকে শুধুই কামনা করে তাও বুঝতে পারে। আমি যে তার প্রেমে পড়ে গেছি সেটা আমি বুঝতে পারার আগেই সে বুঝতে পেরেছিল। এই প্রসঙ্গে কথা উঠলেই সে আমাকে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে সাবধান করে দিত। আমি এখনো বিশ্বাস করি সে আমাকে কষ্ট দিতে চায় নি।

আমি ছোটবেলা থেকেই ভয়ংকর রকম জেদী। আর নিজের কাছে সব ব্যাপারে পরিষ্কার থাকতে চাই। কেউ যেন আমাকে কোন বিষয়ে দোষারোপ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখি। তবে ন্যায় কথা বলার চেষ্টা করি তাতে যতই দোষারোপ আসুক না কেন।

আমি কখনই চাইনি যে লিহাম আমাকে দোষারোপ করুক যে আমি তার নিসঙ্গতার সুযোগ নিচ্ছি। আমি চেয়েছি আমি যেন সারাজীবন তার পাশে থাকতে পারি। তার মনের তল যেন পাই। তাই নিজের বিবেকের তাড়নায় কঠিন জিনিস সহজ করে তার সামনে উপস্থাপন করি। আমার বন্ধু যারা আমার এই ব্যাপারটা জানত সবাই স্বীকার করেছে আমি যা করতে চাচ্ছি তা চরম দুঃসাহসিক ও বোকার মত। এমন কেউ করে না। ব্যাপারটা আমি খোলাসা করতে চাই না। সেক্ষেত্রে লিহামের পরিচয় ফাঁস হয়ে যাবার সম্ভবনা রয়েছে। আমি সেই ঝুঁকি নিতে পারি না।

এই ঘটনার পর থেকেই যেন আমাদের মধ্যে যেন একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়। লিহাম ভান করে সে আমার সাথে আগের মতই আছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারি আমরা ধীরে ধীরে দূর থেকে দূরতম প্রান্তে চলে যাচ্ছি!

তাকে আমি যেভাবে চেয়েছি ততটা আবেগ দিয়ে মনে হয় আর কিছু আল্লাহর কাছে চাই নি।

যতটা কষ্ট স্বীকার করেছি, আর কারো জন্য তা করিনি।

যত চোখের পানি ফেলেছি, অন্য কখনো তা ফেলিনি।

তার জন্য নিজের ইগোকে যেভাবে জবাই করেছি, আর কখনো তা করিনি।

কিন্তু ফলাফল স্বরূপ আমাদের সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয় না। মনেহয় আমিই স্বাভাবিক হতে পারি নি। তার দাবি অনুযায়ী সে আমার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চেয়েছে। কিন্তু আমি স্বাভাবিক রাখতে পারি নি। হয়ত তার কথাই ঠিক।

আমার তখনকার ভাঙা হৃদয়ের নিসঙ্গ জীবনে যে ছেলেটা আমাকে সঙ্গ দিত তার নাম Adnan Sowmik Suhan সুহানের সাথে আমার পরিচয় সম্ভবত কোন আড্ডা পেজের সূত্র ধরে। কোন আড্ডা পেজের কমেন্টের সূত্র ধরে সুহানের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাই। তারপর অনেক কথা-বার্তাই হত। সে এসব কথার কোন কিছুই জানত না। এখনো জানে না। এই স্টাটাস পড়ার পর জানছে আর কি। কিছু কিছু ব্যাপারে আমি খুবই চাপা।

সুহানের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে বর্তমানের ন্যানোম্যান আসিফ মেহ্‌দীর সাথে পরিচয়। ২০১৩ সালের শেষের দিকে লিহাম আমার "মুসলমানিত্ব" নিয়ে প্রশ্ন তোলে। চরম অপমানসূচক কথাগুলো আমার ভিত নাড়িয়ে দেয়। আমি বুঝতে পারি সে আর কোন কিছু বিনিময়ে আমার হবে না। আমিও মন শক্ত করে তার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নেই। কথাগুলো সে বলেছিল আমার এক বন্ধুর কাছে। তাকে অবিশ্বাস করার প্রশ্নই উঠে না।

বুকে পাথর বেঁধে চলাফেরা করি আর রাতের বেলা অশ্রু সামলাই। মনে মনে চিন্তা করি আর জীবনে কখনো যেন লিহামের সাথে দেখা না হয়। তার প্রতি আমার কোন ঘৃনাবোধ থেকে আমি এই চিন্তা করি নি। করেছি তার সামনে আমি পড়তে চাই না তাই। কি দরকার শুধু শুধু নিজের পরাজয়ের মুখোমুখি হবার? যার আশা ছেড়েছি তার থেকে দূরত্ব রাখাই শ্রেয়।

এইসব ঘটনার ফাঁকেই ২০১৪ সালের বইমেলা এসে পড়ল। সুহান, আসিফ ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আমি ন্যানো জিলাপি উৎসব-২০১৪ উৎযাপনের আয়োজন করলাম। উৎসব হবে বাংলা একাডেমীর নজরুল মঞ্চে। ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে বিকাল ৪ টায় সবাইকে নজরুল মঞ্চে আসার জন্য বলা হল। ফেসবুকে ইভেন্ট খোলা হয়েছিল। সেখানে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হল। আমিও অফিস থেকে ছুটি নিলাম। ঢাকা যেতে হবে।

আমি ঢাকা যেতে চাই না। চাই না কারন একটাই। লিহামের সাথে আমার স্মৃতিগুলো সামনে এসে দাঁড়ায়। আমার সহ্য করতে কষ্ট হয়। রবীন্দ্র সরোবর, ধানমন্ডি স্টার কাবাব, কলাবাগান, গুলিস্তান, আহসান মঞ্জিল-- আমাকে তার কথা মনে করিয়ে দেয়। কেউ আমাকে ঢাকা যাবার কথা বললেও আমি মানা করি। কারন ঐ একটাই।

ন্যানো জিলাপী উৎসবে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিলেও মনে মনে শংকিত ছিলাম যে লিহামের সাথে দেখা হয় কিনা। আসিফ ভাই ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন আমার ক্যামেরা আছে কিনা। আমি জানালাম ক্যামেরা নাই তবে দুই একদিনের মধ্যে হাতে আসবে, অর্ডার দেয়া আছে। ফেব্রুয়ারীর ১৭ তারিখ DSLR টা হাতে পাই। ভালভাবে কিছু বোঝার আগেই ক্যামেরা হাতে ঢাকা চলে আসি।

প্রথমেই ফজলে রাব্বি ইফরান আর সুহানের সাথে দেখা হয়। একটু পরে আসিফ ভাই আসলেন। জিলাপী খাওয়ালেন আমাদের। তারপর চারটা বাজাতে আমরা চললাম নজরুল মঞ্চের দিকে। আমার গলায় তখন ক্যামেরা ঝুলছে। বইমেলায় ঢুকতেই আমার মাথায় বাজ পড়ল!

কালো শাড়ি পড়া ঐ মেয়েটা কে? আরেক DSLR ওয়ালার পিঠের উপর হাতে ভর দিয়ে ঝুকে বসে থাকা ঐ মেয়েটি কে? কে ঐ মেয়েটি গাছের পাকা বাউন্ডারির উপর বসে আছে?

নিজের ক্রাশকে অন্যের সাথে দেখলে কেমন অনুভূতি হয়? আমি আসলেই কিছুই অনুভব করছিলাম না। করছিলাম কিনা তাও মনে নেই আসলে। আসিফ ভাই সামনে, পিছনে আমি, সুহান আর ইফরান। আমি হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছি!

কালো শাড়ি পড়া মেয়েটা বসা থেকে উঠে সামনে এগিয়ে হাসিমুখে পোজ দিল। আর ক্যামেরাওয়ালা চটপট কিছু ছবি তুলে নিল!

এরই মধ্যে আসিফ ভাই সামনে এগিয়ে গেছেন। আমি ভেবেছিলাম উনি গাছের পিছন দিয়ে যাবেন। আমরা তাকে অনুসরণ করব। কিন্তু উনি সামনে দিয়েই গেলেন। আমি আমার উলটো করে পড়া ক্যাপ সোজা করে পড়ে কপালের উপর টেনে দিলাম। কাধদুটো উঁচু করে চেহাড়া আড়াল করতে চাইলাম। তারপর লম্বা লম্বা পা ফেলে অন্যদিকে মুখে করে আসিফ ভাইয়ের অনুসরন করলাম।

এগিয়েই দেখি আহসান হাবীব, জিকো ভাই আরো কয়েকজন বিদেশি লেখক এসেছেন আমাদের বই মেলায়। আসিফ ভাই হাসি হাসি মুখ করে প্রস্তুত। আমিও ক্যামেরা নিয়ে দুই-একটা ছবি তুললাম। ফোন বেজে উঠল। আমি বুঝে গেলাম কার ফোন এসেছে।

ফোন রিসিভ করে বললাম, তোমাকে দেখতে পাচ্ছি। আসতেছি দাড়াও। সুহান আর ইফরান সম্ভবত আমাকে লিহামের সাথে কথা বলতে দেখেছে। তোমরা কি আইডিয়া করতে পেরেছো আমি কার সাথে কথা বলছি?

কিছুক্ষন কাটা কাটা কথা বলে আমি চলে আসলাম। আমার পাল্‌স তখন বাড়তি, গলা শুকনো, বুকটা ভারি লাগছে আর মাথাটা পালকের মত হালকা!

পরিচয় হল মেহেদী হাসান, সাতিয়া মুনতাহা নিশা , আখতারুজ্জামান বাপ্পি, আজিম হোসন সহ আরো দু-একজনের সাথে। ঘুড়লাম, ফিরলাম, বই কিনলাম। সব করলাম হাসিমুখে! সেদিন আসিফ ভাইয়ের বাসায় ভাত খেয়েছি। সেখানে আংকেলের সাথে পরিচয় হয়। উনার মত পজিটিভ মাইন্ডের মানুষ আমার আর চোখে পড়েনি এখনো। উনার সাথে কথা বলে নিজেকে একটু সুস্থ লাগল। এরপর আমার বেয়াই জসিম ভাইয়ের কাছে চলে যাই কল্যানপুরে। আমার ভাগ্য ভালে সেদিন আমাকে একা বেশিক্ষন থাকতে হয় নি। থাকলে হলে নির্ঘাত চোখের পানি ফেলতাম।

আমার ঢাকা ভীতি আরো বেড়ে গেল। আগেতো যেতে চাইতাম না। আর এখন বদ্ধমূল ধারনা হয়েছে যে গেলেই লিহামের সামনে পড়তে হবে। লিহাম আমাকে ক্যামেরা নিয়ে ঘোড়াঘুড়ি করতে দেখে আমার বন্ধুর কাছে অভিযোগ করেছে আমি নাকি আমার ক্যামেরা দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে তার ছবি তুলেছি!

নিজের উপর আমার শত অভিশাপ! লিহামের পিছনে ঘুড়তে ঘুড়তে, তার প্রতি ডেডিকেশন দেখাতে গিয়ে আমি নিজেকে তার দৃষ্টিতে এতটাই নিচে নামিয়েছি যে, সে আমার সম্পর্কে এমন একটা আশংকা করতে পারল! সুহান, কি দরকার বলো সেধে সেধে ব্লেম নেবার? সুহান আমাকে ঢাকা আসার আমন্ত্রণ জানায় মাঝে মাঝে। আমি রেগে যাই। কিছুদিন আগে আবারো বলাতে মেজাজ হারিয়ে তাকে কিছু কড়া কথা শোনাই। তখন সুহান প্রমিজ করে সে আর আমাকে বিরক্ত করবে না। সুহান তার কথা রেখেছে, সত্যিই আমাকে আর বিরক্ত করে নি।

কোন এক বিচিত্র কারনে কিছু মানুষ আমাকে অতিশয় পছন্দ করে। সুহান সেই সব মানুষদের একজন যারা কোন কারন ছাড়াই আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু আমি এমনই মানুষ যে যারা আমাকে পছন্দ করে তাদের দাম দেই না। আর যারা দূর দূর করে তাদের পিছে পিছে ঘুরি!

আবার আগের প্রসঙ্গে ফিরে যাই। আমি এখনো ভেবে অবাক হই সাদা ফুলের সাথে আমার কিভাবে পরিচয় হল! আপনারা অনিক খান কে তো চিনেন-ই তাইনা? আমার সাথে সাদা ফুলের পরিচয় হয়েছে অনিক খানের মাধ্যমে! 

grin emoticon
গত বছর ১৪-ই এপ্রিল অনিক খানের পহেলা বৈশাখ সম্পর্কিত একটা স্ট্যাটাসে আমি কমেন্ট করি। পরের দিন আমাকে সাদা ফুল রিকোয়েস্ট পাঠায়। এক্সেপ্ট করি। নকও প্রথমেই সে-ই করে। অনিক খানের স্ট্যাটাসে কত কত লোক লাইক কমেন্ট করে। তার মধ্য থেকে সাদা ফুল আমাকেই রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিল! তারপর মেয়ে হয়েও প্রথমে অগ্রসর হয়ে আমাকে নক করে!

কাকতালের উপর বকতাল!

প্রথমদিন কথা বলতে গিয়েই খেলাম একটা ঝাড়ি! এত প্রশ্ন কেন করি? ইনফো দেখে কি এড করি নি?-- 

grin emoticon
লিহাম ও সাদাফুল, দুইজনেরই জন্মসংখ্যা ০১। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী জন্মসংখ্যা ০১ হলে তার স্বভাব-আচরন যেমন হবার কথা লিহামের তেমন হলেও সাদাফুল ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা।

সাদাফুলের ধৈর্য্যের পরিচয় পাই আমি আমাদের বিয়ের আগের রাতে। গত মাসের ২৬ তারিখ আমাদের বিয়ের হয়। তার আগের দিন অফিস করে বিকেলে আমি রওনা হই বাসার উদ্দেশ্যে। BRTC র এসি বাস হলেও বিয়ের টেনশন আর মেঘনা ব্রীজের উপর গাড়ি বিকল হবার কারনে সৃষ্ট যানজটে দীর্ঘসময় বসে থেকে দুপুরে ভাত না খাওয়া আমি আমার ধৈর্য্যের শেষ সীমায় পৌছে যাই। চ্যাটে তার সাথে অসংলগ্ন কথা-বার্তা বলতে থাকি। সে আমার কোন কথায় উত্তেজিত না হয়ে নরম সুরে কথা বলে আমাকে শান্ত হতে সাহায্য করে।

আমাদের সম্পর্কের পরিনতি কিন্তু এত সহজ ছিল না। আমাদের ফ্যামিলি আমাদের সাপোর্টে ছিল না। কিন্তু আমাদের দুজনের একটা ফিলিং ছিল যে, আমাদের বিয়ে হবে। আমার আম্মা এখানে ছেলেকে বিয়ে করাবেনই না। আর তার ফ্যামিলির প্রথম কথা হল, ফেসবুক হল ভুয়া। এখানে সবাই ধান্ধায় থাকে। বিভিন্ন নাটক-সিনেমা দেখে তাদের এমন ধারনা হয়েছিল।

কিন্তু আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আমাদের ফ্যামিলিকে কনভিন্স করতে। আমার ছোট ভাই আম্মাকে যেভাবে বুঝিয়েছে কোন ছেলে বোধহয় তার মাকে সেভাবে বোঝায় না। সাদাফুলের কথা হল সে ফ্যামিলির অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে না। তার ফ্যামিলি যেখানে বিয়ে দিবে সেখানেই করবে। আমি অনেক সময় উত্তেজিত হয়ে পালিয়ে বিয়ে করার কথা বললেও সে কখনই আমাকে উৎসাহিত করে নি।

এরমধ্যে আমি তাকে অফিসিয়ালি দেখার আগে আনঅফিসিয়ালি একবার দেখা করতে রাজি করাই। আমাকে ভালবাসে এমন কারো সাথে প্রথমবারের মত দেখা হবে। কোরবানির ঈদের আগের ঘটনা। প্লান করি যে, ঈদের বাড়িতে গেলে একফাকে দেখা করে আসব। কিন্তু গিফট কি নেব? রিয়াজ উদ্দিন বাজারে অনেক ঘুরাঘুরি করে একটা মগ কিনি যার গায়ে লেখা ছিল Me and You আরেকটা ছোট্ট পুতুল কিনি।

এরই মধ্যে সাদা ফুল প্লান করে তার এক কাজিনকে নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে আসার। সে বাসা থেকে একা একা বের হয় না। তাই কাজিনকে আনা। কিন্তু কাজিন তেমন একটা আগ্রহ না দেখানোয় আমাদের দেখা করার পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। প্রচন্ড রাগে আমি মগ আর পুতুল আমার ছোটবোনকে দিয়ে দেই। সাদাফুল আমার জন্য একটা রুমাল সেলাই করেছিল। আমি সেই রুমাল নেইনি। দেখতেও চাই নি। ভবিষ্যতেও চাই না।

আমার ছোট ভাই ও বন্ধুর কল্যানে গত ১৯ শে নভেম্বর আমি পারিবারিকভাবে মেয়ে দেখতে যাই। আমার সাথে যান আমার আম্মা ও মাঐ (বোনার শ্বাশুড়ী) মেয়ে দেখার পর আম্মা তার মত পরিবর্তন করেন। সাদাফুলের মধ্যে আম্মা কি দেখেছেন কে জানে, আম্মা একদম পটে যান। হয়ত তার দুয়ার বরকতে আল্লাহ আম্মার অন্তরকে ঘুড়িয়ে দেন।

এখন মেয়ের ফ্যামিলি আমাকে পছন্দ করার পালা। আম্মা একটা কথাই বলেছিলেন, তারা যদি ছেলে দেখে রাজি হন। অন্যথায় রাজি হবার কোন কারন নেই। আমি প্রতিষ্ঠিত নই, ভাল জব করি। কিন্তু সহসাই প্রতিষ্ঠিত হব এমন কোন সম্ভবনাও নেই। কিন্তু মেয়ের বাবা (আমার শ্বশুড় রাজি হলেন) এটাও হয়ত সাদাফুলের দোয়ারই বরকত।

আমি এমনিতে যতটুকু খুশি হয়েছি তারচেয়ে অনেক বেশি খুশি হয়েছি সাদাফুলের খুশি দেখে। হায়! আমিও কারও জন্য খুশির কারন। আমার কি এমন যোগ্যতা আছে সাদাফুলের মত একজন মানুষের খুশির কারন হবার? আল্লাহই ভাল জানেন।

আমার মসজিদের বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল। আলহামদুলিল্লাহ আমার সে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। অন্যসব কিছুও আমার মনমত হয়েছে। আমি একটা "বউ" চেয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমি "বউ"-ই পেয়েছি।

ফেসবুকের কল্যানে অনেক অঘটনই ঘটছে। তবে ভাল কিছু যে ঘটছে না তা নয়। প্রযুক্তির আসলে ভাল-মন্দ দুই দিকই আছে। আমাদের উচিত পজিটিভ মাইন্ড নিয়ে ভাল জিনিসটা গ্রহন করা। আমি আমার ফ্যামিলির সাথে কোনরূপ ছলচাতুরী করতে চাই নি। আজকাল বিভিন্ন নাটক সিনেমায় দেখি লাভার কে পাবার জন্য হাজারো মিথ্যে, ছলচাতুরী আশ্রয় নেয়া হয়। তারপর একসময় তাদের মিল হয়। আলহামদুলিল্লাহ, আমি কঠিন কিছু সত্য আমার ফ্যামিলির কাছে প্রকাশ করেও সাদাফুল কে পেয়েছি। এর শোকর আমি কিভাবে আদায় করব?

আমি একটা কথা বলি? অনেকেই বলে থাকেন যে, ভালবাসা সত্য হলে সেই ভালবাসা পূর্ণতা পায়। এটা যে একটা ডাহা মিথ্যে কথা সেটা আমার জীবন থেকেই আমি প্রমাণ পাই। লিহামের প্রতি আমার ভালবাসায় বিন্দুমাত্র খাঁদ ছিল না। তবুও আমি তাকে পাইনি। পেয়েছি সাদাফুল কে। কারন হিসেবে আমি মনে করি সাদাফুলেই হল আমার Soulmate.

সে আমার জীবনের ধ্রুবতারার মত। গভীর সমুদ্রে যখন দিক হারিয়ে ঝড়-বিধ্বস্থ জাহাজ নিয়ে যখন ডুবে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম, তখন সে ধ্রুবতারা হয়ে আমাকে পথ দেখিয়ে আমার আমার কাংখিত বন্দরে পৌছে দিল।

I don't know what makes me feel so lucky! But I certainly know a thing that I LOVE YOU. I'll be there for you till death and after death Insha Allah!

‪#‎পাভেল‬, এই স্ট্যাটাস যদি তোমার নজরে আসে তবে আমি আশা করব তুমি তোমার মুখ বন্ধ রাখবে। ধন্যবাদ।

No comments: