Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Saturday, January 31, 2015

বিয়ে

বিয়ের আগে কথাচ্ছলে হোক বা সত্যিকারভাবে হোক অনেক সহপাঠি বন্ধুরা বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলেই বলত, "দোস্ত একটা মেয়ে খুজে দে। বিয়ে করব।"
আমিও জানতে চাইতাম, "কেমন মেয়ে চাস?/কেমন মেয়ে তোর পছন্দ?"
"এই ভাল একটি মেয়ে, শান্ত-শিষ্ট, সংসারী..." ইত্যাদি ইত্যাদি।
"আচ্ছা দেখবো নে" বলে কাটিয়ে আসলেও মনে মনে গালি দিয়ে বলতাম, তুই যেমন, তোর বউটাও যেন তেমনই হয়!তুই দুনিয়া ভেজে খেয়ে ফেলিস আর বউ চাস সতী-সাধ্বী!
আর বিয়ের পর এখন যে প্রশ্নটি শুনি সেটি হল, কেমন মেয়ে বিয়ে করব বা কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত?
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিয়ে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জীবনের জটিলতম কাজগুলোর মধ্যে একটি। আমি এখানে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কথা বলতে চাই।
প্রথমেই বলে নেই, সঙ্গিনী বা সঙ্গী নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিন্তু স্ব-স্ব পাত্র/পাত্রীর। অভিভাবকের নয়। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় অভিভাবকের চাপের মুখে মেয়ে বা ছেলেরা বিয়েতে রাজি হয়। বিয়েতে আসলে 'দেখিনা কি হয়' ধরনের চিন্তা করার সুযোগ নেই। তাই মনোমালিন্য, ভাঙচুর- যা হবার তা বিয়ের আগে হওয়াই ভাল। বিয়ের পরে শান্তিতে থাকা যায় সেজন্য আগে থেকেই চেষ্টা করা দরকার।
অনেক ছেলেদের দেখেছি যারা আজীবন টাউট-বাটপারি, ইতরামি-ফাইজলামি করলেও বিয়ের সময় ফুলের মত পবিত্র মেয়ে খোজে। তাদের মনোভাব হল যা করার আগেই করে নেই বিয়ের পর আর করব না/বিয়ের পর আর করতে পারব না। স্বভাব/অভ্যাস এত সহজে বদলে যায় না। বিয়ের পর কিছুদিন হয়ত সংযতভাবে চলে কিন্তু পরে আবার আগের মত।
বিয়ের জন্য আসলে এমন কাউকে নির্বাচন করা উচিত যে কিনা আপনার জীবনযাত্রার সাথে পরিচিত। মানে আপনি যেমন জীবন যাপন করেন সে-ও কাছাকাছি করে। তাহলে পরস্পরের সাথে সহজে অভ্যস্থ হওয়া যায়। ছোট ছোট কিছু উদাহরণ দেই, যেমন আপনি ঘুড়ে বেড়াতে পছন্দ করেন বা চাকুরীর সুবাদে আপনাকে লম্বা সময় ভ্রমণ করতে হয়। এখন আপনি যদি এমন মেয়ে বিয়ে করেন যে কিনা বাস দেখলেই ভক করে বমি করে দেয় তাহলে কিন্তু বিয়ের পর এর হ্যাপা আপনাকেই টানতে হবে।
আবার আপনাকে অফিসের বিভিন্ন পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হয়। ধূমপান, মদপান থেকে শুরু করে বৈদেশিক কায়দা-কানুনে আরো অনেক কিছুই হয়। এখন বাবা-মার চাপে পড়ে আপনি মাওলানার মেয়েকে বিয়ে করলেন। বিয়ের পর মাওলানার মেয়ে আপনাকে সৈয়দ সাহেব বানিয়ে দিবে বা আপনি হতে পারবেন সে সম্ভবনা আমার মতে খুবই ক্ষীন। বরং আপনার বউ মাওলানার মেয়ে থেকে নায়লা নাঈম হয়ে যাবে সে সম্ভবনাই বেশি।
আমি মনে হয় আমার কথা গুলো বোঝাতে পারছি না।
মেয়ে খোজার আগে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার আমি কেমন মেয়ে চাই। আমি কি চাকুরীজীবি বউ চাই নাকি চাকুরী ছাড়া? আমি কি উচ্চশিক্ষিত বউ চাই নাকি মোটামুটি হলেই চলবে? আমি কি বোরকাওয়ালী বউ চাই নাকি বোরকাছাড়াও চলবে? বড়লোকের মেয়ে হতে হবে নাকি গরীবের মেয়ে হলেই হবে? বড় ফ্যামিলির মেয়ে হলে কি সমস্যা আছে? মেয়ে কি ধবধবে ফর্সা হতে হবে নাকি শ্যামলা? মেয়ে কি বরিশালেরই হতে হবে? ইত্যাদি ইত্যাদি...
মেয়েরা বিয়ের আগে ছেলের মধ্যে কি খোজে জানি না। তবে ধারনা করতে পারি। দাড়িতে অনেক মেয়ের চুলকানী আছে। তাই আপনার দাড়ি থাকলে অবশ্যই দাড়ি সম্পর্কে পাত্রীর মতামত কৌশলে জেনে নেয়াই ভাল। পক্ষান্তরে মেয়েরাও ছেলের কাছ থেকে সরাসরি শুনে নেবেন যে, বিয়ের পর পড়াশুনা চালিয়ে যেতে দেবে কিনা। চাকরী করার ইচ্ছে থাকলে স্বামী অনুমতি দেবে কিনা। বিয়ের পর কি শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথে থাকতে হবে নাকি আলাদা ঘর হবে? বোরকা পড়ার অভ্যাস না থাকলে বিয়ের পর কি বোরকা পড়তে হবে? ইত্যাদি ইত্যাদি...
অনেকেই লজ্জায় এসব ব্যাপারে ঠিকভাবে খোজ নেন না। অনেকেই আশংকা করেন এসব ছোটখাট ব্যাপারের আলোচনা তুলে কারো অসন্তোষের স্বীকার হন কিনা। আমি আবারো বলতে চাই, বিয়ের পরে অশান্তি পোহানোর চেয়ে বিয়ের আগে খটমট করা ভাল। বিয়ের পর অশান্তি হলে সারাজীবন পস্তাতে হবে।
আপনি ছেলে বা মেয়ের মধ্যে কি দেখতে চান সেটা ঠিক করার পর কাজ হল আপনার চাহিদাসমূহের মধ্যে অগ্রগামী কোনগুলো সেগুলো ঠিক করে ফেলা। কারন আপনি যেমন চান ঠিক তেমন পেয়ে যাবেন এমন সম্ভবনা শূন্যের কোঠায়। তাই কিছু ব্যাপার ধরে রেখে কিছু ব্যাপারে আপনাকে ছাড় দিতে হতে পারে।
যেমন কেউ যদি বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করতে চায় তখন দেখা গেল মেয়ের গায়ের রঙ শ্যামলা। অনেক বড়লোক বাবাই তার শ্যামলা মেয়েকে পাত্রস্থ করার জন্য পাত্রকে প্রতিষ্ঠিত করে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়।
আবার দেখা গেল দেখতে সুন্দর কিন্তু উচ্চতা কম।
মেয়ে সহজ-সরল, সংসারী কিন্তু পড়াশুনায় গোল্লা!
মেয়ে বোরকা পড়ে কিন্তু স্বভাব-চরিত্র ইসলামিক নয়। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি বলছি না আপনি পারফেক্ট মেয়ে পাবেন না। পাবেন। সংখ্যায় খুব অল্প। পারফেক্ট মেয়ে বিয়ে করার মত পারফেক্ট ছেলে আপনি হতে পেরেছেন কিনা সেটাও কিন্তু অনেক বড় একটা প্রশ্ন!
আমার পরিচিত একজন একটা মেয়ে দেখেছিল। মেয়ের বাবা সরকারী কর্মকর্তা। মেয়ে দেখতে ভাল। উচ্চশিক্ষিত এবং আরো পড়াশুনার ইচ্ছা আছে। বিসিএস দিয়ে সরকারী চাকুরীর আশা করে। সরকারী না হলে বেসরকারীতেও সমস্যা নেই। চাকুরী দরকার। চাকুরীর ব্যাপারে সে খুবই আগ্রহী। বোরকা পড়ে। ছবি আকতে পারে, গানও শিখে।
পারফেক্টের সংগা আসলে একেকজনের কাছে একেক রকম। আমার পরিচিত ঐ লোকের কাছে উপরোক্ত মেয়েটা পারফেক্ট নয়। অন্তত তারজন্য নয়। সে একা একা থাকে। বউ নিয়ে সংসার করতে চায়। বউ চাকুরী নিয়ে দূরে থাকলে বিয়ে করার আর দরকার কি?
সে এমন মেয়ে চেয়েছিল যে কিনা ঘরে থাকবে, তার বউ হয়ে। ঘর সামলাবে, তাকে সামলাবে। আল্লোহর হুকুম-আহকাম মানবে। এটাই তার কাছে মূল বিবেচ্য বিষয়। অন্যবিষয়গুলো সে ছাড় দিতে প্রস্তুত।
তাই আপনি সত্যিকারভাবে কি চান আর কতটুকু ছাড় দিতে পারবেন সেটা আগে থেকেই ভেবে রাখবেন।
অন্যকোন ব্যাপারে না হোক বিয়ের ব্যাপারে পরিবারের সাথে জোড় গলায় কথা বলুন। আপনার পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার জানিয়ে দিন। টিভি নাটক-সিনেমার মত কাল্পনিক জগৎ ছেড়ে বাস্তবের মাপকাঠিতে সম্ভাব্য পাত্র/পাত্রীকে যাচাই করুন। বিয়েতে ঠকলেন তো সারাজীবনের জন্য ঠকলেন। সবদিক দেখে করার পরও অনেকে ঠকে। ভাগ্যের উপরতো আর কারো হাত নেই। তবুও সাবধানের মার নেই।
শুভকামনা রইল যারা বিয়ের ব্যাপারে ভাবছেন তাদের জন্য। আল্লাহ হাফিজ!

আমাদের গল্প


সম্ভবত বাপ্পি সাহেব এর মাধ্যমে জানতে পারি বা সে আমাকে এক গ্রপে এড করে। যেখানে বইমেলা উপলক্ষে লেখা চাওয়া হয়। বইমেলায় নিজে বই বের করব বা শেয়ারিং এ লেখা দিব এটা কখনো ভেবেছি কিনা জানি না। আমার মনোভাব ছিল অনেকটা, 'আচ্ছা দেখি না কি হয়' টাইপ!

নতুন গল্প লেখা নেই। লেখার মুরোদও নেই। পুরনো গল্প নিয়েও সমস্যা। কোনটা রেখে কোনটা দেই। দুই বা ততোধিক গল্প দিতে বলা হলেও আমি একটাই দিয়েছি। অনেকটা বাজির মত। লাগলে বাজিমাত, আর না লাগলে নাই। আমার আজাইরা গল্প সিলেক্ট হলেই কি আর না হলেই বা কি!

গল্প সিলেক্ট হল! কারা সিলেক্ট করল, কিসের ভিত্তিতে সিলেক্ট করল-কে জানে? সত্যি কথা বলতে গেলে মনে মনে একটু হাসি-ই এসেছিল। আজাইরা একটা গল্প সিলেক্ট হল, কোন বোকাগুলা জানি সিলেকশন কমিটিতে ছিল! হে হে হে...

কিছুদিন পরে জানতে পারলাম বই বের হবে। নালন্দা থেকে। প্রকাশককে টাকা দিতে হবে। চিনি না, দেখি নি-এমন মানুষকে স্রেফ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে টাকা দিতে হবে।

ভার্চুয়াল লাইফের অনেক জায়গায় টাকা দিয়েছি। ছোট থেকে শুরু করে মোটা অংকের টাকা দিয়েছি। স্রেফ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। তাই যখন টাকার তোলা হচ্ছিল তখন বই বের হবে এটা বিশ্বাস করি নি। আবার টাকা হাওয়া হয়ে যাবে সেটাও বিশ্বাস করি নি। আবারো সেই 'আচ্ছা দেখি না কি হয়' ফিলিংস! সম্ভবত বাপ্পির সাথে কথা বলার সময় এই ব্যাপারে আমি সন্দেহ প্রকাশ করি।

পরে শুনলাম ২০০০ টাকা দিতে হবে। মাত্র ২০০০ টাকা! এই তুড়িতেই উড়িয়ে দিলাম। ধূর দুই হাজার টাকা মেরে দিলে আমার তেমন কিছুই আসবে যাবে না। আর যার কাছে টাকা পাঠাব ( দুর্জয় অভি ) সেও যে শমশের বিন মুবেন হয়ে যাবে তেমন কোন সম্ভবনা নেই। সো, দেখি না কি হয়!

ওহ! ফাঁকে একটি কথা বলে নেই। আমার বিশ্বাস হল যার যেটার সামর্থ্য আছে সেটাই তার করা উচিত। আরেকজনের ঘাড়ে পা দিতে তার ঘাড় ব্যথা করে নিজের কোন কাজ করানোটা আমি পছন্দ করি না। নিজে এমনটা করতে চাই না, কেউ করতে চাইলে তাকেই কঠিনভাবে নিরুৎসাহিত করি। সে আর আগাতে সাহস পায় না।

আমি খুবই অবাক হলাম যখন জানতে পারলাম এখনো কারো কারো টাকা দেয়া বাকি! অভি এখনো দু-একজনের কাছে টাকা পায়!

আমার জানামতে অভির বাপের জমিদারি নেই। নাকি আছে? আর প্রকাশকরা বাকিতে বই বের করেছে সেটাও অবিশ্বাস্য! তাহলে অভি টাকা পেমেন্ট করল কিভাবে? অভির কি ঠেকা পড়ল নিজের পকেটের টাকা দিয়ে আমাদের লেখা ছাপানোর? এত দৌড়াদৌড়ি, হুড়োহুড়ি করার?

আসলে কিছু লোকজন থাকেই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর। নিজের সময়, ঘাম দিয়ে অন্যের ভাল করতে চায়। অভির সাথে যারা শ্রম দিয়েছে তারাও এই ক্যাটাগড়িতে।

দোষ আসলে অভির নয়। আমার মত কিছু দু'পেয়েদের! যারা ছেড়া কাথায় শুয়ে লাখটাকার স্বপ্নে মশগুল। কোন বদনার দাম যদি ১০ টাকা হয় তাহলে সেটা ১০ টাকা দিয়েই কিনতে হবে। ৮ টাকা বা ৯ টাকা দিয়ে কেনার সুযোগ নেই। দিলাম ৮ টাকা আর ২ টাকা বাকি রাখলাম অথবা বদনা বগলতলে নিয়ে বাড়ির পথে হাটা ধরলাম, আমার মত দু'পেয়েদের এমন কর্মে দোকানদারের সম্মান ভূলুন্ঠিত হবার জোরাল সম্ভবনা থাকে। টাকার মূল্য না হয় আমি শোধ দিতে পারব কিন্তু আমার গাফিলতি বা স্বপ্নবিলাসীতার কারনে যদি কারো বিন্দুমাত্র সম্মানহানি ঘটে তবে তার মূল্য কিভাবে পরিশোধ করব?

যা বলছিলাম। বই বের হয়ে গিয়েছে। এই বইয়ের কথা মনে হলে আমার সমযোজী বন্ধনের কথা মনে পড়ে। যারা রসায়ণ পড়েছেন তারা মনে হয় ধরতে পেরেছেন আমি কি বলতে চাইছি।

এটা আমাদের সবার বই। কারো একক বই নয়। কিন্তু কারো সাথে যদি বইয়ের কথা বলতে যাই তখন গর্ব করে বলে ফেলি, এইবারের বইমেলায় আমার একটা বই এসেছে! আমার মনে হয় প্রতিটি লেখক-লেখিকা এই কাজ করেন! 
smile emoticon
এবার আসি অভিযোগ প্রসংগে। সত্য কথা হল ভাল কিছু হলে কিছু লোক দাঁড়িয়ে যাবে সেই ভালর ভিতরে কালো খুজতে। কথায় আছে না, মানিকে মানিক চিনে আর **রে চিনে কচু! ঐ **রদের আলোচনা করা মানেই তাদের গুরুত্ব দেয়া। বই বের হয়ে গেছে। এটা একটা ফ্যাক্ট!

এই ফ্যাক্ট কিছু লোকের নিন্মাঙ্গের বেদনার কারন হতেই পারে। এটা এমনি এক ব্যথা যেটা কোন মলমে সারার নয়। এই ব্যথা দিন দিন বাড়তে থাকে। এই রোগে আক্রান্তরা ব্যথা নিয়ে মৃত্যবরণ করে। তারা চায় তাদের ব্যথা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। সো আবোল-তাবোল কথা বলতেই থাকে। তাদের কথায় রিয়েক্ট করা মানেই ব্যথায় একটু আরাম দেয়া।

আমি ব্যক্তিগত ভাই চাই না তাদের ব্যথায় কেউ আরাম দেক। তারা কাতরাক। তাদের কাতরানি দূর থেকে দেখতে বড় ভাল লাগে। তাদের কাছে যেতে নেই। দুর্গন্ধ!

অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সে নাকি আমাদের টাকা মেরে দিচ্ছে। এত টাকা লাগে না বই বের করতে!

আমার টাকা+আমার রয়ালিটির টাকা সব অভিরে দিয়া দিলাম। দেখি আমাকে কে ঠেকায়!

আমার এই কথা শুনে কারো নিন্মাঙ্গের ব্যথা বাড়িয়ে গেলে সে জন্য অভি দায়ী নয়। আমি দায়ী। দেখি কে কি করতে পারে!

অতীত ও সমকালীন আমি‬

চাকুরী পাবার পর বোনাস পেয়ে প্রথম যে কাজটি করি সেটি হল ল্যাপটপ কিনি, নেট কানেকশনও নেই। সেও মনে হয় ২০০৮ সালের শেষের দিকের কথা। ফেসবুকের কথা জানতাম না। এদিক সেদিক ঘোড়াঘুড়ি করে সময় কাটাতাম। ইয়াহু চ্যাট রুমে কত চ্যাট করেছি! কিছুদিন পরে আমার এক বন্ধু কাছে ফেসবুকের কথা শুনি। সাইন আপ করে একাউন্ট খোলার পর বোঝার চেষ্টা করি। তখন ফেসবুক তেমন কেউ ব্যবহার করে না আমাদের দেশে। লেখালেখির প্লাটফর্ম ছিল ব্লগিং। আমিও আমার ব্লগে টুকটাক লেখা দিতাম।

ধীরে ধীরে ফেসবুক ব্লগিংয়ের জায়গা দখল করে। এখন ব্লগে ঢোকাই হয় না। গলাবাজি আর গালিবাজির ভয়েই একপ্রকার ব্লগিং থেকে বীতশ্রদ্ধ হয়ে কাপুরুষের মত ব্লগিং বাদ দেই। ধীরে ধীরে ফেসবুকের মজা পেয়ে যাই। একা একা থাকতাম। ফেসবুকে ফ্রেন্ড সার্কেলের কারো কারো সাথে চ্যাট করে নিসঙ্গতা কাটানোর চেষ্টা করতাম। তখন জলদি ঘুমাতাম রাতে। সকালে এমনিতেই ঘুম পূর্ণ হয়ে ঘুম ভেঙে যেত।

মন থাকত ভাল। অদ্ভূত এক আনন্দ নিয়ে আমার দিন শুরু হত। তখনকার দিনের আমার ফেবু স্ট্যাটাস দেখলে আমার মন ভালর পরিমাণের একটা আন্দাজ করা যায়।


ফেসবুক আমার কাছে সত্যিকারে আকর্ষনীয় হয়ে উঠে আমার জীবনে লিহামের আগমনে। (নামটা অবশ্যই ছদ্ম ও মানুষটা মেয়ে) মাঝে মাঝে আমি খুব ফ্রাংক্লি কথা বলতে পারি। মেন্টালিটির মিল যাদের সাথে থাকে আর প্রথম দর্শনের যাদের পছন্দ হয় তাদের সাথে খুব সহজভাবে মিশতে পারি। আর এসময় যদি কারো মন খারাপ থাকে তার মন ভাল করে দেয়া নিমিষের ব্যাপার ছিল। লিহামের সাথে কথা বলতে আমার ভাল লাগত। তারও নিশ্চয়ই ভাল লাগত। দুঃখের সাগরে ভেসে থাকা কোন মেয়ে যখন আমার সাথে কমফোর্ট ফিল করত তখন আমার আরো বেশি ভাল লাগত। আমি তার জন্য অপেক্ষা করতাম কখন অনলাইনে আসবে। সেও আমার জন্য অপেক্ষা করত।

মেয়েটার ব্যক্তিত্ব আমাকে চরমভাবে আকর্ষণ করত। এমন দুর্বার আকর্ষণ আমি আর কারো প্রতি অনুভব করিনি আর ভবিষ্যতে করব কিনা কে জানে! সে ছিল আমার জীবনের প্রথম মেয়ে যার সাথে আমি এতটা ফ্রী হয়েছিলাম, যে আমার সাথে এতটা ফ্রী হয়েছিল। আমি তাকে ঘিড়ে আমার স্বপ্নজাল বুনতে থাকি। সম্ভব-অসম্ভব নানা ধরনের কল্পনাতে মত্ত হই।

মেয়েদের একটি বৈশিষ্ট হল তারা ছেলেদের মনোভাব বুঝতে পারে। কে তাকে ভালবাসে আর কে তাকে শুধুই কামনা করে তাও বুঝতে পারে। আমি যে তার প্রেমে পড়ে গেছি সেটা আমি বুঝতে পারার আগেই সে বুঝতে পেরেছিল। এই প্রসঙ্গে কথা উঠলেই সে আমাকে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে সাবধান করে দিত। আমি এখনো বিশ্বাস করি সে আমাকে কষ্ট দিতে চায় নি।

আমি ছোটবেলা থেকেই ভয়ংকর রকম জেদী। আর নিজের কাছে সব ব্যাপারে পরিষ্কার থাকতে চাই। কেউ যেন আমাকে কোন বিষয়ে দোষারোপ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখি। তবে ন্যায় কথা বলার চেষ্টা করি তাতে যতই দোষারোপ আসুক না কেন।

আমি কখনই চাইনি যে লিহাম আমাকে দোষারোপ করুক যে আমি তার নিসঙ্গতার সুযোগ নিচ্ছি। আমি চেয়েছি আমি যেন সারাজীবন তার পাশে থাকতে পারি। তার মনের তল যেন পাই। তাই নিজের বিবেকের তাড়নায় কঠিন জিনিস সহজ করে তার সামনে উপস্থাপন করি। আমার বন্ধু যারা আমার এই ব্যাপারটা জানত সবাই স্বীকার করেছে আমি যা করতে চাচ্ছি তা চরম দুঃসাহসিক ও বোকার মত। এমন কেউ করে না। ব্যাপারটা আমি খোলাসা করতে চাই না। সেক্ষেত্রে লিহামের পরিচয় ফাঁস হয়ে যাবার সম্ভবনা রয়েছে। আমি সেই ঝুঁকি নিতে পারি না।

এই ঘটনার পর থেকেই যেন আমাদের মধ্যে যেন একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়। লিহাম ভান করে সে আমার সাথে আগের মতই আছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারি আমরা ধীরে ধীরে দূর থেকে দূরতম প্রান্তে চলে যাচ্ছি!

তাকে আমি যেভাবে চেয়েছি ততটা আবেগ দিয়ে মনে হয় আর কিছু আল্লাহর কাছে চাই নি।

যতটা কষ্ট স্বীকার করেছি, আর কারো জন্য তা করিনি।

যত চোখের পানি ফেলেছি, অন্য কখনো তা ফেলিনি।

তার জন্য নিজের ইগোকে যেভাবে জবাই করেছি, আর কখনো তা করিনি।

কিন্তু ফলাফল স্বরূপ আমাদের সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয় না। মনেহয় আমিই স্বাভাবিক হতে পারি নি। তার দাবি অনুযায়ী সে আমার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চেয়েছে। কিন্তু আমি স্বাভাবিক রাখতে পারি নি। হয়ত তার কথাই ঠিক।

আমার তখনকার ভাঙা হৃদয়ের নিসঙ্গ জীবনে যে ছেলেটা আমাকে সঙ্গ দিত তার নাম Adnan Sowmik Suhan সুহানের সাথে আমার পরিচয় সম্ভবত কোন আড্ডা পেজের সূত্র ধরে। কোন আড্ডা পেজের কমেন্টের সূত্র ধরে সুহানের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাই। তারপর অনেক কথা-বার্তাই হত। সে এসব কথার কোন কিছুই জানত না। এখনো জানে না। এই স্টাটাস পড়ার পর জানছে আর কি। কিছু কিছু ব্যাপারে আমি খুবই চাপা।

সুহানের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে বর্তমানের ন্যানোম্যান আসিফ মেহ্‌দীর সাথে পরিচয়। ২০১৩ সালের শেষের দিকে লিহাম আমার "মুসলমানিত্ব" নিয়ে প্রশ্ন তোলে। চরম অপমানসূচক কথাগুলো আমার ভিত নাড়িয়ে দেয়। আমি বুঝতে পারি সে আর কোন কিছু বিনিময়ে আমার হবে না। আমিও মন শক্ত করে তার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নেই। কথাগুলো সে বলেছিল আমার এক বন্ধুর কাছে। তাকে অবিশ্বাস করার প্রশ্নই উঠে না।

বুকে পাথর বেঁধে চলাফেরা করি আর রাতের বেলা অশ্রু সামলাই। মনে মনে চিন্তা করি আর জীবনে কখনো যেন লিহামের সাথে দেখা না হয়। তার প্রতি আমার কোন ঘৃনাবোধ থেকে আমি এই চিন্তা করি নি। করেছি তার সামনে আমি পড়তে চাই না তাই। কি দরকার শুধু শুধু নিজের পরাজয়ের মুখোমুখি হবার? যার আশা ছেড়েছি তার থেকে দূরত্ব রাখাই শ্রেয়।

এইসব ঘটনার ফাঁকেই ২০১৪ সালের বইমেলা এসে পড়ল। সুহান, আসিফ ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আমি ন্যানো জিলাপি উৎসব-২০১৪ উৎযাপনের আয়োজন করলাম। উৎসব হবে বাংলা একাডেমীর নজরুল মঞ্চে। ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে বিকাল ৪ টায় সবাইকে নজরুল মঞ্চে আসার জন্য বলা হল। ফেসবুকে ইভেন্ট খোলা হয়েছিল। সেখানে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হল। আমিও অফিস থেকে ছুটি নিলাম। ঢাকা যেতে হবে।

আমি ঢাকা যেতে চাই না। চাই না কারন একটাই। লিহামের সাথে আমার স্মৃতিগুলো সামনে এসে দাঁড়ায়। আমার সহ্য করতে কষ্ট হয়। রবীন্দ্র সরোবর, ধানমন্ডি স্টার কাবাব, কলাবাগান, গুলিস্তান, আহসান মঞ্জিল-- আমাকে তার কথা মনে করিয়ে দেয়। কেউ আমাকে ঢাকা যাবার কথা বললেও আমি মানা করি। কারন ঐ একটাই।

ন্যানো জিলাপী উৎসবে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিলেও মনে মনে শংকিত ছিলাম যে লিহামের সাথে দেখা হয় কিনা। আসিফ ভাই ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন আমার ক্যামেরা আছে কিনা। আমি জানালাম ক্যামেরা নাই তবে দুই একদিনের মধ্যে হাতে আসবে, অর্ডার দেয়া আছে। ফেব্রুয়ারীর ১৭ তারিখ DSLR টা হাতে পাই। ভালভাবে কিছু বোঝার আগেই ক্যামেরা হাতে ঢাকা চলে আসি।

প্রথমেই ফজলে রাব্বি ইফরান আর সুহানের সাথে দেখা হয়। একটু পরে আসিফ ভাই আসলেন। জিলাপী খাওয়ালেন আমাদের। তারপর চারটা বাজাতে আমরা চললাম নজরুল মঞ্চের দিকে। আমার গলায় তখন ক্যামেরা ঝুলছে। বইমেলায় ঢুকতেই আমার মাথায় বাজ পড়ল!

কালো শাড়ি পড়া ঐ মেয়েটা কে? আরেক DSLR ওয়ালার পিঠের উপর হাতে ভর দিয়ে ঝুকে বসে থাকা ঐ মেয়েটি কে? কে ঐ মেয়েটি গাছের পাকা বাউন্ডারির উপর বসে আছে?

নিজের ক্রাশকে অন্যের সাথে দেখলে কেমন অনুভূতি হয়? আমি আসলেই কিছুই অনুভব করছিলাম না। করছিলাম কিনা তাও মনে নেই আসলে। আসিফ ভাই সামনে, পিছনে আমি, সুহান আর ইফরান। আমি হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছি!

কালো শাড়ি পড়া মেয়েটা বসা থেকে উঠে সামনে এগিয়ে হাসিমুখে পোজ দিল। আর ক্যামেরাওয়ালা চটপট কিছু ছবি তুলে নিল!

এরই মধ্যে আসিফ ভাই সামনে এগিয়ে গেছেন। আমি ভেবেছিলাম উনি গাছের পিছন দিয়ে যাবেন। আমরা তাকে অনুসরণ করব। কিন্তু উনি সামনে দিয়েই গেলেন। আমি আমার উলটো করে পড়া ক্যাপ সোজা করে পড়ে কপালের উপর টেনে দিলাম। কাধদুটো উঁচু করে চেহাড়া আড়াল করতে চাইলাম। তারপর লম্বা লম্বা পা ফেলে অন্যদিকে মুখে করে আসিফ ভাইয়ের অনুসরন করলাম।

এগিয়েই দেখি আহসান হাবীব, জিকো ভাই আরো কয়েকজন বিদেশি লেখক এসেছেন আমাদের বই মেলায়। আসিফ ভাই হাসি হাসি মুখ করে প্রস্তুত। আমিও ক্যামেরা নিয়ে দুই-একটা ছবি তুললাম। ফোন বেজে উঠল। আমি বুঝে গেলাম কার ফোন এসেছে।

ফোন রিসিভ করে বললাম, তোমাকে দেখতে পাচ্ছি। আসতেছি দাড়াও। সুহান আর ইফরান সম্ভবত আমাকে লিহামের সাথে কথা বলতে দেখেছে। তোমরা কি আইডিয়া করতে পেরেছো আমি কার সাথে কথা বলছি?

কিছুক্ষন কাটা কাটা কথা বলে আমি চলে আসলাম। আমার পাল্‌স তখন বাড়তি, গলা শুকনো, বুকটা ভারি লাগছে আর মাথাটা পালকের মত হালকা!

পরিচয় হল মেহেদী হাসান, সাতিয়া মুনতাহা নিশা , আখতারুজ্জামান বাপ্পি, আজিম হোসন সহ আরো দু-একজনের সাথে। ঘুড়লাম, ফিরলাম, বই কিনলাম। সব করলাম হাসিমুখে! সেদিন আসিফ ভাইয়ের বাসায় ভাত খেয়েছি। সেখানে আংকেলের সাথে পরিচয় হয়। উনার মত পজিটিভ মাইন্ডের মানুষ আমার আর চোখে পড়েনি এখনো। উনার সাথে কথা বলে নিজেকে একটু সুস্থ লাগল। এরপর আমার বেয়াই জসিম ভাইয়ের কাছে চলে যাই কল্যানপুরে। আমার ভাগ্য ভালে সেদিন আমাকে একা বেশিক্ষন থাকতে হয় নি। থাকলে হলে নির্ঘাত চোখের পানি ফেলতাম।

আমার ঢাকা ভীতি আরো বেড়ে গেল। আগেতো যেতে চাইতাম না। আর এখন বদ্ধমূল ধারনা হয়েছে যে গেলেই লিহামের সামনে পড়তে হবে। লিহাম আমাকে ক্যামেরা নিয়ে ঘোড়াঘুড়ি করতে দেখে আমার বন্ধুর কাছে অভিযোগ করেছে আমি নাকি আমার ক্যামেরা দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে তার ছবি তুলেছি!

নিজের উপর আমার শত অভিশাপ! লিহামের পিছনে ঘুড়তে ঘুড়তে, তার প্রতি ডেডিকেশন দেখাতে গিয়ে আমি নিজেকে তার দৃষ্টিতে এতটাই নিচে নামিয়েছি যে, সে আমার সম্পর্কে এমন একটা আশংকা করতে পারল! সুহান, কি দরকার বলো সেধে সেধে ব্লেম নেবার? সুহান আমাকে ঢাকা আসার আমন্ত্রণ জানায় মাঝে মাঝে। আমি রেগে যাই। কিছুদিন আগে আবারো বলাতে মেজাজ হারিয়ে তাকে কিছু কড়া কথা শোনাই। তখন সুহান প্রমিজ করে সে আর আমাকে বিরক্ত করবে না। সুহান তার কথা রেখেছে, সত্যিই আমাকে আর বিরক্ত করে নি।

কোন এক বিচিত্র কারনে কিছু মানুষ আমাকে অতিশয় পছন্দ করে। সুহান সেই সব মানুষদের একজন যারা কোন কারন ছাড়াই আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু আমি এমনই মানুষ যে যারা আমাকে পছন্দ করে তাদের দাম দেই না। আর যারা দূর দূর করে তাদের পিছে পিছে ঘুরি!

আবার আগের প্রসঙ্গে ফিরে যাই। আমি এখনো ভেবে অবাক হই সাদা ফুলের সাথে আমার কিভাবে পরিচয় হল! আপনারা অনিক খান কে তো চিনেন-ই তাইনা? আমার সাথে সাদা ফুলের পরিচয় হয়েছে অনিক খানের মাধ্যমে! 

grin emoticon
গত বছর ১৪-ই এপ্রিল অনিক খানের পহেলা বৈশাখ সম্পর্কিত একটা স্ট্যাটাসে আমি কমেন্ট করি। পরের দিন আমাকে সাদা ফুল রিকোয়েস্ট পাঠায়। এক্সেপ্ট করি। নকও প্রথমেই সে-ই করে। অনিক খানের স্ট্যাটাসে কত কত লোক লাইক কমেন্ট করে। তার মধ্য থেকে সাদা ফুল আমাকেই রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিল! তারপর মেয়ে হয়েও প্রথমে অগ্রসর হয়ে আমাকে নক করে!

কাকতালের উপর বকতাল!

প্রথমদিন কথা বলতে গিয়েই খেলাম একটা ঝাড়ি! এত প্রশ্ন কেন করি? ইনফো দেখে কি এড করি নি?-- 

grin emoticon
লিহাম ও সাদাফুল, দুইজনেরই জন্মসংখ্যা ০১। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী জন্মসংখ্যা ০১ হলে তার স্বভাব-আচরন যেমন হবার কথা লিহামের তেমন হলেও সাদাফুল ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা।

সাদাফুলের ধৈর্য্যের পরিচয় পাই আমি আমাদের বিয়ের আগের রাতে। গত মাসের ২৬ তারিখ আমাদের বিয়ের হয়। তার আগের দিন অফিস করে বিকেলে আমি রওনা হই বাসার উদ্দেশ্যে। BRTC র এসি বাস হলেও বিয়ের টেনশন আর মেঘনা ব্রীজের উপর গাড়ি বিকল হবার কারনে সৃষ্ট যানজটে দীর্ঘসময় বসে থেকে দুপুরে ভাত না খাওয়া আমি আমার ধৈর্য্যের শেষ সীমায় পৌছে যাই। চ্যাটে তার সাথে অসংলগ্ন কথা-বার্তা বলতে থাকি। সে আমার কোন কথায় উত্তেজিত না হয়ে নরম সুরে কথা বলে আমাকে শান্ত হতে সাহায্য করে।

আমাদের সম্পর্কের পরিনতি কিন্তু এত সহজ ছিল না। আমাদের ফ্যামিলি আমাদের সাপোর্টে ছিল না। কিন্তু আমাদের দুজনের একটা ফিলিং ছিল যে, আমাদের বিয়ে হবে। আমার আম্মা এখানে ছেলেকে বিয়ে করাবেনই না। আর তার ফ্যামিলির প্রথম কথা হল, ফেসবুক হল ভুয়া। এখানে সবাই ধান্ধায় থাকে। বিভিন্ন নাটক-সিনেমা দেখে তাদের এমন ধারনা হয়েছিল।

কিন্তু আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আমাদের ফ্যামিলিকে কনভিন্স করতে। আমার ছোট ভাই আম্মাকে যেভাবে বুঝিয়েছে কোন ছেলে বোধহয় তার মাকে সেভাবে বোঝায় না। সাদাফুলের কথা হল সে ফ্যামিলির অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে না। তার ফ্যামিলি যেখানে বিয়ে দিবে সেখানেই করবে। আমি অনেক সময় উত্তেজিত হয়ে পালিয়ে বিয়ে করার কথা বললেও সে কখনই আমাকে উৎসাহিত করে নি।

এরমধ্যে আমি তাকে অফিসিয়ালি দেখার আগে আনঅফিসিয়ালি একবার দেখা করতে রাজি করাই। আমাকে ভালবাসে এমন কারো সাথে প্রথমবারের মত দেখা হবে। কোরবানির ঈদের আগের ঘটনা। প্লান করি যে, ঈদের বাড়িতে গেলে একফাকে দেখা করে আসব। কিন্তু গিফট কি নেব? রিয়াজ উদ্দিন বাজারে অনেক ঘুরাঘুরি করে একটা মগ কিনি যার গায়ে লেখা ছিল Me and You আরেকটা ছোট্ট পুতুল কিনি।

এরই মধ্যে সাদা ফুল প্লান করে তার এক কাজিনকে নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে আসার। সে বাসা থেকে একা একা বের হয় না। তাই কাজিনকে আনা। কিন্তু কাজিন তেমন একটা আগ্রহ না দেখানোয় আমাদের দেখা করার পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। প্রচন্ড রাগে আমি মগ আর পুতুল আমার ছোটবোনকে দিয়ে দেই। সাদাফুল আমার জন্য একটা রুমাল সেলাই করেছিল। আমি সেই রুমাল নেইনি। দেখতেও চাই নি। ভবিষ্যতেও চাই না।

আমার ছোট ভাই ও বন্ধুর কল্যানে গত ১৯ শে নভেম্বর আমি পারিবারিকভাবে মেয়ে দেখতে যাই। আমার সাথে যান আমার আম্মা ও মাঐ (বোনার শ্বাশুড়ী) মেয়ে দেখার পর আম্মা তার মত পরিবর্তন করেন। সাদাফুলের মধ্যে আম্মা কি দেখেছেন কে জানে, আম্মা একদম পটে যান। হয়ত তার দুয়ার বরকতে আল্লাহ আম্মার অন্তরকে ঘুড়িয়ে দেন।

এখন মেয়ের ফ্যামিলি আমাকে পছন্দ করার পালা। আম্মা একটা কথাই বলেছিলেন, তারা যদি ছেলে দেখে রাজি হন। অন্যথায় রাজি হবার কোন কারন নেই। আমি প্রতিষ্ঠিত নই, ভাল জব করি। কিন্তু সহসাই প্রতিষ্ঠিত হব এমন কোন সম্ভবনাও নেই। কিন্তু মেয়ের বাবা (আমার শ্বশুড় রাজি হলেন) এটাও হয়ত সাদাফুলের দোয়ারই বরকত।

আমি এমনিতে যতটুকু খুশি হয়েছি তারচেয়ে অনেক বেশি খুশি হয়েছি সাদাফুলের খুশি দেখে। হায়! আমিও কারও জন্য খুশির কারন। আমার কি এমন যোগ্যতা আছে সাদাফুলের মত একজন মানুষের খুশির কারন হবার? আল্লাহই ভাল জানেন।

আমার মসজিদের বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল। আলহামদুলিল্লাহ আমার সে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। অন্যসব কিছুও আমার মনমত হয়েছে। আমি একটা "বউ" চেয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমি "বউ"-ই পেয়েছি।

ফেসবুকের কল্যানে অনেক অঘটনই ঘটছে। তবে ভাল কিছু যে ঘটছে না তা নয়। প্রযুক্তির আসলে ভাল-মন্দ দুই দিকই আছে। আমাদের উচিত পজিটিভ মাইন্ড নিয়ে ভাল জিনিসটা গ্রহন করা। আমি আমার ফ্যামিলির সাথে কোনরূপ ছলচাতুরী করতে চাই নি। আজকাল বিভিন্ন নাটক সিনেমায় দেখি লাভার কে পাবার জন্য হাজারো মিথ্যে, ছলচাতুরী আশ্রয় নেয়া হয়। তারপর একসময় তাদের মিল হয়। আলহামদুলিল্লাহ, আমি কঠিন কিছু সত্য আমার ফ্যামিলির কাছে প্রকাশ করেও সাদাফুল কে পেয়েছি। এর শোকর আমি কিভাবে আদায় করব?

আমি একটা কথা বলি? অনেকেই বলে থাকেন যে, ভালবাসা সত্য হলে সেই ভালবাসা পূর্ণতা পায়। এটা যে একটা ডাহা মিথ্যে কথা সেটা আমার জীবন থেকেই আমি প্রমাণ পাই। লিহামের প্রতি আমার ভালবাসায় বিন্দুমাত্র খাঁদ ছিল না। তবুও আমি তাকে পাইনি। পেয়েছি সাদাফুল কে। কারন হিসেবে আমি মনে করি সাদাফুলেই হল আমার Soulmate.

সে আমার জীবনের ধ্রুবতারার মত। গভীর সমুদ্রে যখন দিক হারিয়ে ঝড়-বিধ্বস্থ জাহাজ নিয়ে যখন ডুবে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম, তখন সে ধ্রুবতারা হয়ে আমাকে পথ দেখিয়ে আমার আমার কাংখিত বন্দরে পৌছে দিল।

I don't know what makes me feel so lucky! But I certainly know a thing that I LOVE YOU. I'll be there for you till death and after death Insha Allah!

‪#‎পাভেল‬, এই স্ট্যাটাস যদি তোমার নজরে আসে তবে আমি আশা করব তুমি তোমার মুখ বন্ধ রাখবে। ধন্যবাদ।

ছ্যাচড়া

কেউ কি আমাকে ছ্যাচড়া শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে তথ্য দিতে পারেন? এই শব্দটি কোথ্যেকে আসল? কে-ই বা আবিস্কার করল? চিকন দাগে এর অর্থই বা কি?

খচ্চর হল ঘোড়া ও গাধার সংকর যারা প্রজননে অক্ষম। আর গন্ধগকুল বা খাটাশ হল ছোট সাইজের শিয়ালের মত দেখতে কালো এক প্রাণী। তবে আমরা যখন কথা বলার সময় খচ্চর, খাটাশ শব্দগুল ব্যবহার করি তখন গালি হিসেবে ব্যবহার করি। কেউ যদি অপরিষ্কার থাকে বা এমন কোন কাজ করে যা সাধারনত স্বাস্থ্যসম্মত নয় তখন তাকে খচ্চর, খাচ্চর, খাচর, খাচরা, খাটাশ- ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করি।

ই খাচরা শব্দ থেকেই ছ্যাচড়া শব্দের উৎপত্তি বলেই তো মনে হচ্ছে। তবে অর্থগত কিন্তু পার্থক্য হয়েছে। ছ্যাচড়া শব্দটা মানসিক দৈন্যতা প্রকাশ করে। সহজভাবে বললে তারা মানসিকভাবে খাচ্চর!

এখন ছ্যাচড়া চেনার উপায় কি? উপায় খুব সহজ!

মাসে ইনকাম হাজার হাজার টাকা। চালচলনে ফিটফাট। দামী দামী এক্সেসরিজ ব্যবহার করে। সুগন্ধীর সুবাসে অজ্ঞান হবার দশা। কিন্তু মেসের খাবারের টাকা অগ্রিম দেয় না। -- তুই একটা ছ্যাচড়া!

দেখতে শুনতে ভাল। ইন ছাড়া শার্ট পড়েন না। চুলগুলো সবসময় আচরানো। ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে উথাল পাথাল প্রেমের আলাপ করেন। বাপের পকেট কেটে গার্লফ্রেন্ডের বান্ধবীদের ট্রিট দেয়। কিন্তু বাসের কন্টাকটরের সাথে এক টাকার লেনা-দেনা নিয়ে গালিগালাজের সাথে চড় থাপ্পড় ফ্রী দেন।--তুই একটা ছ্যাচড়া!

অফিসে সারাদিন ঝিম মেরে পড়ে থাকেন। জিহ্বা দিয়ে রাজা-উজির মারেন। কিন্তু বছরে একদিন বসেরা আসলেই হুলস্থুল! -- তুই, তুই একটা ছ্যাচড়া!

সোনার চামচ মুখে দিয়ে বড় হয়েছেন। কোনদিন দাগ লাগানো শার্ট পড়েন নি। কিভাবে দাগ লাগে সেটাও জানেন না। দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ ডিগ্রী নেয়া। কিন্তু পাবলিক বাসে উঠে মুখটা চুন করে পাশের সিট ব্লক করে বসে থাকেন। - তুই একটা ছ্যাচড়া!

উনি একজন উঠতি বয়সের মানুষ। ফেসবুকে FnF এর অভাব নেই। প্রতিটি পোস্টেই লাইক-কমেন্টের বন্যা। তাও ইনবক্সে লাইক খুজে বেড়ান। দুই কলম লেখার মুরোদ নেই। আরেকজনের লেখা সংগ্রহ বলে চালিয়ে দেন। জিজ্ঞেস করলে বলেন, আরে এটাতো সবাই জানেন!-- হ, হ, তুই একটা অনলাইন ছ্যাচড়া!

মাফ চাই

কোন বিশেষ দিবস নিয়ে কেন জানি আমার বিশেষ কোন অনভূতি কাজ করে না। স্বাভাবিক, সবাই একরকম হবে এমন নয়। আমাদের জাতীয় দিবসগুলোর মধে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শোক দিবস, বিপ্লব ও সংহতি দিবস, বিজয় দিবস-ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য। এছাড়াও ভালবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুণ এগুলোতো আছেই। এদেশের মানুষজন উৎসব প্রবণ। কোন উপলক্ষ্য পেলেই হল। উপলক্ষ্যেকে ঘিরে নানা কার্যক্রমে জড়িয়ে যায়।

আমার কাছে বেশিরভাগই অর্থহীন ও অপচয় লাগে। ক্ষেত্র বিশেষে বাড়াবাড়িও মনে হয়। এই যেমন বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে পিপি হিসেবে বাংলাদেশের পতাকা দেয়া নিয়ে ফেসবুকে দু'টো গ্রুপ হয়ে গেল। দুই গ্রুপের অনেকেই একে অপরের প্রতি কাঁদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত ছিলেন যা হোমফিড দেখে স্পষ্টই বুঝতে পেরেছি। যে দিতে চায় তার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলাও বাড়াবাড়ি আর যে দিতে চায় না তাকেও কটাক্ষ করা বা অনুরোধ করাটাও বাড়াবাড়ি লেগেছে।

আমার পিসি, আমার মডেম, আমার কেনা মেগাবাইট! আমি আমার প্রোফাইল পিক কি দিব না দিব সেটা নাহয় আমিই ঠিক করি। আপনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আপনি আপনার পিপি, কপি- কি দেবেন না দেবেন সম্পূর্ণই আপনার ব্যাপার। আমার আপনাকে বা আপনার আমাকে কোন কারনে পছন্দ না হলে, পরস্পরের ধারে কাছে না ঘেষলেই ল্যাঠা চুকে যায়।

তবে একটা কাজ আমি করি। বাংলা লেখার চেষ্টা করি। আগে থেকেই করি। ৫-৬ বছর আগে যখন ফেসবুকে বাংলা অক্ষরে লেখা যেত না তখন ইংরেজি অক্ষর দিয়েই বাংলা লিখতাম। যাদের সাথে ইনবক্সে টুক টাক কথা হয়, বা যাদের পোস্টে মন্তব্য করি তারা হয়ত লক্ষ্য করেছেন ব্যাপারটা। না করলেও ক্ষতি কিছু নেই। এমনো হয়েছে বাংলা অক্ষর দিয়ে ইংরেজী পোস্ট করেছি। বাংলা লিখতে ভাল লাগে তাই বাংলাতেই লিখি।

লেখার সময় চেষ্টা করি যেন বানান শুদ্ধ থাকে। কোন গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধ যতই ভাল হোক না কেন বানান ঠিক না থাকলে তার আবেদন অনেকখানি হারিয়ে যায়। পাঠকের বিরক্তির উদ্রেগ হয়। নিজে যেমন চেষ্টা করি শুদ্ধ লিখতে তেমনি কারো লেখায় ভুল বানান অথবা টাইপো থাকলে তাকে ধরিয়ে দিতে চেষ্টা করি। এই কাজ করতে গিয়ে এমন হয়েছে যে, আমার পাঠকদের মধ্যে একজন যদি আমার লেখায় কোন ভুল পান বা কোন ধরনের অসঙ্গতি দেখতে পান তবে আমাকে ইনবক্সে জানিয়ে দেন।

ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাণে। বানান ভুলের এই খেলায় মাঝে মাঝে ভুলেই যাই আসলে সব জায়গায় নাক গলানোর অধিকার আমার নেই। সবাই সংশোধনের যোগ্য নয়। অহংকারী ব্যক্তি কখনো সংশোধিত হতে পারে না।

কিছু কিছু জায়গায় ভাল ভাল পোস্টে বানানের কথা তুলে উল্টো বাঁশ খেয়েছি। এমনভাবে খেয়েছি যে কুঁই কুঁই ও করতে পারিনি। মানে মানে কেটে পড়েছি। কি দরকার ক্রেজি লোকজনের সাথে তর্ক করার। কেউ হয়ত বলতে পারেন টাইপো ছিল। না ভাই, টাইপো ছিল না। কেউ যদি লিখে "আমি বাত খাই" তাহলে টাইপো বলা যায়। কিন্তু বার বার যদি লিখে "আমি বাত খাই" তাহলে বোঝাই যায় সে আসলে "ভাত" শব্দটার সাথে পরিচিত নয়।

বিনামূল্যে জ্ঞান ও মিলে যায় অনেক সময়। "একসময় আমরা পড়েছি বাড়ী, গাড়ী, নারী। আর এখনকার স্কুলে পড়ানো হয় বাড়ি, গাড়ি, নারি। যান, তাদের কাছে গিয়ে বানান ঠিক করার কথা বলেন।"

আমি ভাই ক্ষুদ্র মানুষ। নিজের ক্ষুদ্রতার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আমি কিভাবে বিদ্যাগ্রহ নাহিদ মহোদয়কে বলি, "স্যার, ছেলে-পেলেতো এইসব কথা বলে। কথা কি সত্য?" অনেক ধন্যবাদ ভাই আমাকে আমার চোখে আঙুল দিয়ে আমার অবস্থান দেখিয়ে দেবার জন্য।

আর হ্যা, করজোড়ে মাফ চাই! ক্ষমা করে মহত্ত্বের পরিচয় দেবেন। ভুলে ভুল বানানের কথা বলে ফেলেছি। এই ধরনের ভুল থেকে যেন ভবিষ্যতে মুক্ত থাকতে পারি সে দোয়া করবেন দয়া করে। এই নরাধমের বেয়াদবি মন থেকে মুছে ফেলে মাফ করে দিবেন।

অসংখ্য ধন্যবাদ!

অন্তরমিল

"বাড়ি যাবেন নাকি?"
"হ্যা। যাবো তো..."
"কবে যাবেন?"
"অমুক তারিখে?"
"ও তাই নাকি? তাহলেতো ভালই। আমিও যাব ঢাকা। চলেন একসাথে যাই।"
"না। আপনার সাথে যাব না।"
"কেন? কি হয়েছে?"
"ভয়ে যাব না।"
"ভয়!! কিসের ভয়?"
"কিসের ভয় পরে বলছি। আগে বলেন বনী ইসরাঈলের নাম শুনেছেন?"
"শুনেছি মনে হয়। তো?"
"বনী ইসরাঈল কিভাবে ধ্বংস হয়েছে জানেন? জানা থাকলেও শোনেন আবার। বনী ঈসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম অধঃপতন শুরু হয় এভাবে যে, তাদের মধ্যে কেউ খারাপ কাজ করলে অন্যেরা বাধা দিত। কিন্তু পূর্ব সম্পর্কের দরূন তার সাথে উঠা-বসা, খানা-পিনা চালিয়ে যেত। ফলে আল্লাহ তায়ালা একের অন্তরকে অন্যের অন্তরের সাথে মিলিয়ে দিলেন। ফলে সকলেই ধ্বংস হয়ে গেল।
সেদিন আপনি উরু দেখা যায় এমন একটা হাফপ্যান্ট পড়ে ব্যাডমিন্টন খেলতে গেলেন। আমি আপনাকে বলেছিলাম, এটা কি পড়েছেন? হাটুর পর্যন্ত ঢাকা থাকে এমন কিছু পড়তে পারেন না? নাভি থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত ঢাকা রাখা ছেলেদের জন্য ফরয। আপনি নিজে গোনাহ করছেন। আমাদের চোখে পড়ছে। আমাদেরও গোনাহ হচ্ছে। যে দেখায় এবং যে দেখে-দুইজনেরই গোনাহ।
আপনি আমার কথা উড়িয়ে দিলেন। টিটকিরি মেরে বললেন, "ওসব আমার জানা আছে। ওসব বহুত দেখেছি।"
এখন যদি আমি আপনার সাথে আগের মতই আপনার সাথে উঠা-বসা করি, চলা-চল করি তবে আমার ভয় হয় একদিন আমিও আপনার মত অর্ধউলংগ হয়ে সবার সামনে নির্লজ্জের মত চলাফেরা করব। আমি নির্লজ্জ হতে চাই না। তাই, আপনার সাথে আমার যাওয়া সম্ভব না। আপনি আপনার মত যান। আমি আমার মত যাব ইন শা আল্লাহ!"

একজন জাপানী মহিলার দৃষ্টিতে ইসলাম ও পর্দা (প্রথম পর্ব)

[এই পোস্টটি মাননীয় শেখ আব্দুল আজিজ বিন বায এর 'ইসলামী হিজাব বা পর্দা' বইটির একটি অংশ। প্রতি মুসলিম নারীর অবশ্য পাঠ্য। আশাকরি, বর্তমানে যারা পর্দা (?) করেন তাদের অনেকের কিছু ভ্রান্তধারনার অবসান হবে]
বোন খাওলা একজন জাপানী নাগরিক। তিনি বর্তমানে রিয়াদস্থ জাপানী দূতাবাসে কর্মরত তাঁর স্বামীর সাথে রিয়াদে অবস্থা করছেন। গত ২৫/১০/১৯৯৩ তারিখে তিনি সৌদি আরবের আল-কাসীম প্রদেশের কেন্দ্র "বুরাইদা" শহরের ইসলামি কেন্দ্রের মহিলা বিভাগে আসেন এবং ইসলাম ও পর্দা সম্পর্কে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ইংরেজী ভাষায় একটি লিখিত প্রবন্ধ পড়ে শোনান। পরে উপস্থিত বোনেদের সাথে আলোচনা ও মত বিনিময় করেন। তাঁর মূল প্রবন্ধটির বঙ্গানুবাদ এখানে পেশ করা হল।
আমার ইসলামঃ
ফ্রান্সে অবস্থান কালে আমি ইসলাম গ্রহণ করি। ইসলাম গ্রহনের পূর্বে অধিকাংশ জাপানীর ন্যায় আমিও কোন ধর্মের অনুসারী ছিলাম না। ফ্রান্সে আমি ফরাসী সাহিত্যের উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর লেখাপড়ার জন্য এসেছিলাম। আমার প্রিয় লেখক ও চিন্তাবিদ ছিলেন সাঁর্তে, নিৎশে ও কামাস। এদের সবার চিন্তাধারাই নাস্তিকতাভিত্তিক।
ধর্মহীন ও নাস্তিকতা প্রভাবিত হওয়া সত্ত্বেও ধর্মের প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ ছিল। আমার অভ্যন্তরীণ কোন প্রয়োজন নয়, শুধুমাত্র জানার আগ্রহই আমাকে ধর্ম সম্পর্কে উৎসাহী করে তোলে। মৃত্যুর পরে আমার কি হবে তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা ছিল না, বরং কিভাবে জীবন কাটাব এটাই ছিল আমার আগ্রহের বিষয়।
দীর্ঘদিন ধরে আমার হচ্ছিল আমি আমার সময় নষ্ট করে চলেছি, যা করার তা কিছুই করছি না। ঈশ্বরের বা স্রস্টার অস্তিত্ব থাকা বা না থাকা আমার কাছে সমান ছিল। আমি শুধু সত্যকে জানতে চাইছিলাম। যদি স্রস্টার অস্তিত্ব থাকে তাহলে তাঁর সাথে জীবন যাপন করব, আর যদি স্রস্টার অস্তিত্ব খুজে না পাই তাহলে নাস্তিকতার জীবন বেছে নেব, এটাই ছিল আমার উদ্দেশ্য।
ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে আমি পড়াশুনা করতে থাকি। ইসলাম ধর্মকে আমি ধর্তব্যের মধ্যে আনিনি। আমি কখনো চিন্তা করিনি যে এটা পড়াশোনার যোগ্য কোন ধর্ম। আমার বদ্ধমূল ধারণা ছিল, যে ইসলাম ধর্ম হল মূর্খ ও সাধারণ মানুষদের একধরনের মুর্তিপূজার ধর্ম। কত অজ্ঞানই না আমি ছিলাম!
আমি কিছু খৃষ্টানের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করি। তাদের সাথে আমি বাইবের অধ্যয়ন করতাম। বেশ কিছুদিন গত হবার পর আমি স্রস্টার অস্তিত্বর বাস্তবতা বুঝতে পারলাম। কিন্তু আমি এক নতুন সমস্যার মধ্যে পড়লাম, আমি কিছুতেই আমার অন্তরে স্রস্টার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারছিলাম না, যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম যে স্রস্টার অস্তিত্ব রয়েছে। আমি গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু বৃথাই চেষ্টা, আমি শুধু স্রস্টার অনুপস্থিতিই অনুভব করতে লাগলাম।
তখন আমি বৌদ্ধ ধর্ম অধ্যয়ন করতে শুরু করলাম। আশা করছিলাম এই ধর্মের অনুশাসন পালনের এবং যোগাভ্যাসের মাধ্যমে আমি ঈশ্বরকে অনুভব করতে পারব। খৃষ্টানধর্মের ন্যায় বৌদ্ধধর্মেও আমি অনেক কিচু পেলাম যা সত্য ও সঠিক বলে মনে হল। কিন্তু অনেক বিষয় আমি বুঝতে বা গ্রহণ করতে পারলাম না। আমার ধারনা ছিল, ঈশ্বর বা স্রস্টা যদি থাকেন তাহলে তিনি সকল মানুষের জন্য এবং সত্য ধর্ম অবশ্যই সবার জন্য সহজ ও বোধগম্য হবে। আমি বুঝতে পারলাম না, ঈশ্বরকে পেতে হলে কেন মানুষকে স্বাভাবিক জীবন পরিত্যাগ করতে হবে।
আমি এক অসহায় অবস্থায় নিপতিত হলাম। ঈশ্বরের সন্ধানে আমার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা কোন সমাধানে আসতে পারলাম না। এমতাবস্থায় আমি একজন আলজেরীয় মুসলিমের সাথে পরিচিত হলাম। তিনি ফ্রান্সেই জন্মেছেন, সেখানেই বড় হয়েছেন। তিনি নামাজ পড়তেও জানতেন না। তার জীবনযাত্রা ছিল একজন সত্যিকার মুসলিমের জীবনযাত্রা থেকে অনেক দূরে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি তার বিশ্বাস ছিল খুবই দৃঢ়। তার জ্ঞানহীন বিশ্বাস আমাকে বিরক্ত ও উত্তেজিত করে তোলে। আমি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
শুরুতেই আমি পবিত্র কুরআনের এক কপি ফরাসী অনুবাদ কিনে আনি। কিন্তু আমি ২ পৃষ্ঠাও পড়তে পারলাম না, কারণ আমার কাছে তা খুবই অদ্ভূত মনে হচ্ছিল।
আমি একা একা ইসলামকে বোঝার চেষ্টা ছেড়ে ছিলাম এবং প্যারিস মসজিদে গেলাম, আশা করছিলাম সেখানে কাউকে পাব যিনি আমাকে সাহায্য করবেন।
সেদিন ছিল রবিবার এবং মসজিদে মহিলাদের একটি আলোচনা চলছিল। উপস্থিত বোনেরা আমাকে আন্তরিকতার সাথে স্বাগত জানালেন। আমার জীবনে এই প্রথম আমি ধর্মপালনকারী মুসলিমদের সাথে পরিচিত হলাম। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে, নিজেকে তাঁদের মধ্যে অনেক সহজ ও আপন বলে অনুভব করতে লাগলাম, অথচ খৃষ্টান বান্ধবীদের মদ্যে সর্বদাই নিজেকে আগন্তক ও দূরাগত বলে অনুভব করতাম।
প্রত্যেক রবিবারে আমি আলোচনায় উপস্থিত হতে লাগলাম, সাথে সাথে মুসলিম বোনদের দেওয়া বইপত্র পড়তে লাগলাম। এসকল আলোচনার প্রতিটি মুহূর্ত এবং বইয়ের প্রতি পৃষ্ঠা আমার কাছে ঈশ্বরের প্রত্যাদেশের মত মনে হতে লাগল। আমার মনে হচ্ছিল, আমি সত্যের সন্ধান পেয়েছি। সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যাপার হল, সেজদায় রত অবস্থায় আমি স্রষ্টাকে আমার অত্যন্ত কাছে অনুভব করতাম।
আমার পর্দাঃ
দু'বছর আগে যখন ফ্রান্সে আমি ইসলাম গ্রহণ করি তখন মুসলিম স্কুলছাত্রীদের ওড়না বা স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢাকা নিয়ে ফরাসীদের বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। অধিকাংশ ফরাসী নাগরিকের ধারণা ছিল, ছাত্রীদের মাথা ঢাকার অনুমতি দান সরকারী স্কুলগুলোকে ধর্মনিরপেক্ষ রাখার নীতির বিরোধী। আমি তখনো ইসলাম গ্রহণ করিনি। তবে আমার বুঝতে খুব কষ্ট হত, মুসলিম ছাত্রীদের মাথায় ওড়না বা স্কার্ফ রাখার মত সামান্য একটি বিষয় নিয়ে ফরাসীরা এত অস্থির কেন। দৃষ্যতঃ মনে হচ্ছিল যে, ফ্রান্সের জনগন তাদের ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা, বৃহৎ শহরগুলোতে নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি আরব দেশগুলো থেকে আসা বহিরাগতদের ব্যাপারে ব্যাপারে উত্তেজিত ও স্নায়ুপীড়িত হয়ে পড়েছিলেন, ফলে তাঁরা তাঁদের শহরগুলোতে ও স্কুলগুলোতে ইসলামি পোষাক দেখতে আগ্রহী ছিলেন না।
অপরদিকে আরব ও মুসলিম দেশগুলোতে মেয়েদের মধ্যে, বিশেষ করে যবতীদের মধ্যে ইসলামি হিজাব বা পর্দার দিকে ফিরে আসার জোয়ার এসেছে। অনেক আরব বা মুসলিম, এবং অধিকাংশ পাশ্চাত্য জনগনের কাছে এটা ছিল কল্পনাতীত; কারন তাদের ধারণা ছিল যে পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রসারের সাথে সাথে পর্দা প্রথার বিলুপ্তি ঘটবে।
ইসলামি পোশাক ও পর্দা ব্যবহারের আগ্রহ ইসলামি পুর্নজাগরণের একটা অংশ। এর মাধ্যমে আরব ও মুসলিম জনগোষ্ঠী সমূহ তাদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট, অর্থনৈতিক ও উপনিবেশিক আধিপত্যের মাধ্যমে যে গৌরব বিনষ্ট ও পদদলিত করার প্রতিনিয়ত চেষ্টা করা হচ্ছে।
জাপানী জনগনের দৃষ্টিতে মুসলমানদের পুরোপুরি ইসলাম পালন একধরনের পাশ্চাত্য বিরোধীতা ও প্রাচীনকে আঁকড়ে ধরে রাখার মানসিকতা, যা মেজি যুগে জাপানীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। তখন তারা প্রথম পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে আসে এবং পাশ্চাত্য জীবনযাত্রা ও পোশাক পরিচ্ছদের বিরোধীতা করে।
মানুষ সাধারনত ভালমন্দ বিবেচনা না করেই যে কোন নতুন বা অপরিচিত বিষয়তের বিরোধীতা করে থাকে। কেউ কেউ মনে করেন যে, হিজাব বা পর্দা হচ্ছে মেয়েদের নিপীড়নের একটি প্রতীক! তাঁরা মনে করেন, যে সকল মহিলা পর্দা মেনে চলে বা চলতে আগ্রহী তারা মূলতঃ প্রচলিত প্রথার দাস। তাদের বিশ্বাস, এ সকল মহিলাদেরকে যদি তাদের ন্যাক্কারজনক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন করা যায় এবং তাদের মধ্যে নারীমুক্তি ও স্বাধীন চিন্তার আহ্ববার সঞ্চারিত করা যায় তাহলে তারা পর্দাপ্রথয়া পরিত্যাগ করবে।
এ ধরনের উদ্ভট-বাজে চিন্তা শুধু তাঁরাই করেন যাদের ইসলাম সম্পর্কে ধারনা খুবই সীমাবদ্ধ। ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মবিরোধী চিন্তাধারা তাঁদের মনমগজ এমনভাবে অধিকার করে নিয়েছে যে তাঁরা ইসলামের সার্বজনীনতা ও সার্বকালীনতা বুঝতে একেবারেই অক্ষম। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিশ্বের সর্বত্র অগনিত অমুসলিম মহিলা ইসলাম গ্রহণ করছেন, যাদের মধ্যে আমিও রয়েছি। এদ্বারা আমরা ইসলামের সার্বজনীতা বুঝতে পারি।
এত কোন সন্দেহ নেই যে, ইসলামি হিজাব বা পর্দা অমুসলিমদের জন্য একটি অদ্ভূত ও বিস্ময়কর ব্যাপার। পর্দা শুধু নারীর মাথার চুলই ঢেকে রাখে না, উপরন্তু আরো এমন কিছু আবৃত করে রাখে যেখানে তাদের কোন প্রবেশাধিকার নেই, আর এজন্যই তাঁরা খুব অস্বস্তি বোধ করেন। বস্তুতঃ পর্দার অভ্যন্তরে কি আছে বাইরে থেকে তাঁরা তা মোটেও জানতে পারেন না।
প্যারিসে অবস্থান কালেই, ইসলাম গ্রহনের পর থেকে আমি হিজাব বা পর্দা মেনে চলতাম।১ আমি একটা স্কার্ফ দিয়ে আমার মাথা ঢেকে নিতাম। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে একই রঙের স্কার্ফ ব্যবহার করতাম। হয়ত অনেকে এটাকে নতুন একটা ফ্যাশন ভাবত। বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থানকালে আমি কাল বোরকায় আমার সমস্ত দেহ আবৃত করে রাখি, এমনকি আমার মুখমন্ডল এবং চোখও।
টীকা-১: এখানে ও সামনের আলোচনায় লেখিকা হিজাব বা পর্দা বলতে মুখমণ্ডল ও কবজি পর্যন্ত দুহাত বাদে পুরো শরীর ঢেকে রাখা বোঝাচ্ছেন। পবিত্র কুরআনে ও হাদীসের আলোকে সকল মুসলিম ইমাম ও আলিম একমত যে মেয়েদের সম্পুর্ণ শরীর অনাত্মীয় পুরুষদের থেকে আবৃত করতে হবে, শুধুমাত্র মুখমণ্ডল ও হাত খোলা রাখতে কেউ কেউ অনুমতি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আগে আলচনা হয়েছে।
["আগো আলোচনা" বলতে এখানে যে বইয়ে এই জাপানী মহিলার আত্মকথা এসেছে সে বইয়ের পূর্বের আলোচনা বোঝানো হয়েছে।--লেখক]
যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন পাঁচ ওয়াক্ত (নামাজ) আদায় করতে পারব কিনা, অথবা পর্দা করতে পারব কিনা তা নিয়ে আমি গভীরভাবে ভেবে দেখিনি। আসলে আমি নিজেকে এ নিয়ে প্রশ্ন করতে চাইনি; কারন আমার ভয় হত, হয়ত উত্তর হবে না সূচক এবং তাতে আমার ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত বিঘ্নিত হবে। প্যারিসে মসজিদে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আমি এমন এক জগতে বাস করেছি যার সাথে ইসলামের সামান্যতম সম্পর্ক ছিল না। নামাজ, পর্দা কিছুই আমি চিনতাম না। আমার জন্য একথা কল্পনা করাও কষ্টকর ছিল যে আমি নামাজ আদায় করছি বা পর্দা পালন করে চলছি। তবে ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা আমার এত গভীর ও প্রবল ছিল যে ইসলাম গ্রহণের পরে আমার কি হবে তা নিয়ে আমি ভাবিনি। বস্তুতঃ আমার ইসলাম গ্রহণ ছিল আল্লাহর অলৌকিক দান। আল্লাহু আকবার।
ইসলামি পোশাক বা হিজাবে আমি নিজেকে নতুন ব্যক্তিত্ব অনুভব করলাম। আমি অনুভব করলাম যে আমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হয়েছি, আমি সংরক্ষিত হয়েছি। আমি অনুভব করতে লাগলাম আল্লাহ আমার সঙ্গে রয়েছেন।
[চলবে]

নিকাহ/বিয়ে/শাদী/ম্যারেজ (শেষাংশ)

[এই পর্বের প্রায় সবটুকুই "আদর্শ বিবাহ ও দাম্পত্য---আব্দুল হামীদ মাদানী"-বইটি থেকে তুলে দেয়া হয়েছে। তাই আলাদাভাবে রেফারেন্স দিলাম না। মূল বইয়ে অনেক বিস্তারিত থাকায় সেখান থেকে মূল বিষয়গুলো দেয়ার চেষ্টা করেছি। কোন ভুল-ভ্রান্তি হলে দায়িত্ব আমার। মূল লেখকের নয়।]
:::::::::বিবাহের পূর্বে দেশাচার::::::::

১. যেকোন দিন বিবাহের দিন ধার্য করা যায়। এরজন্য কোন দিনকে শুভ বা অশুভ মনে করা ঠিক নয়। পঞ্জিকা দেখে শুভাশুভ দিন নির্বাচন বিদাত এবং বিজাতির অনুকরণ।

২. নিমন্ত্রণপত্রের কোণে হলুদ লাগিয়ে দেয়া বিদআত। এতে কোন শুভলক্ষণ আছে মনে করা শির্ক।

৩. ছেলেমেয়ের পর্দার বিধান লংঘিত হয়ে যায় এমন কোন আচার অনুষ্ঠান যেমন গায়ে হলুদ, "লগন", পান-চিনি ইত্যাদি বৈধ নয়।

৪. পাত্র-পাত্রীকে বিয়ে ঠিক হয়ে যাবার পর বাইরে যেতে না দেয়া, এই দিনে মসজিদে বা পীরের থানে সিন্নি বিতরণ অরা প্রভৃতি বিদআত ও শির্ক।

৫. বিভিন্ন অনুষ্ঠান বিধবা নারীদের আসতে না দেয়া ইসলামী প্রথা নয়।

৬. পুরুষ রঙ ব্যবহার করতে পারে না। তাই হাতে-পায়ে মেহেন্দি লাগাতে পারে না। হলুদ ব্যবহার করাও তার জন্য শোভনীয় নয়।

৭. রাতে ক্ষীর মুখে দেয়াও দেশাচার। সম্ভবত এটা অনুপ্রবেশ করা প্রথা। ইসলামী নয়।

৮. গীত-পার্টি, লেডিস ডান্স, অসার ও অশ্লীল মজলিসে কোন মুসলিম নারীর উপস্থিত হওয়া এবং ক্ষীর খাওয়ানো নিঃসন্দেহে হারাম। যেমন মহিলাদের এই কীর্তিকলাপ দর্শন করা বা নাচে ফেরি দেওয়া পুরুষদের জন্য বিশেষভাবে হারাম।

৯. আইবুড়ো বা থুবড়া ভাতের (অবিবাহিত অবস্থার শেষ অন্নগ্রহণের) অনুষ্ঠানো বিজাতীয় প্রথা। এই দিনের ক্ষীর-সিন্নি বিতরনও বিদআত।

১০. বিয়ের অনুষ্ঠানে অপব্যয় বা বিভিন্ন বিষয়ে গোঁ ধরে অযথা জটিলতার সৃষ্টি করা ঠিক নয়।

:::::::::বিবাহ বন্ধন:::::::::::

ইসলামী বিবাহে আকদের সময় ২ টি সাক্ষী জরুরী। পাত্র-পাত্রী যদি বিবাহে কোন শর্ত লাগাতে চায় তা লাগাতে পারে। তবে সে শর্ত যেন কোন হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল না করে।

:::::::::আক্‌দ কিভাবে হবে?::::::::::

মোহরানা ধার্য ইত্যাদি হয়ে থাকলে কাজী বা ইমাম সাহেব সূক্ষ্ণভাবে খোজ নিবেন যে, অলী কে এবং শরয়ী কিনা? বরের চার স্ত্রীর বর্তমানে এটা পঞ্চম বিবাহ তো নয়? বর মুসলিম তো? পাত্রী ইদ্দতের মধ্যে তো নয়? গর্ভবতী তো নয়? পাত্রের দ্বিতীয় বিবাহ হলে পূর্বের স্ত্রীর বর্তমানে এই পাত্রী তার বোন, ফুপু, বুনঝি বা ভাইঝি তো নয়। এই পাত্রী সধবা হয়ে কারো স্বামীত্বে নেই তো? পাত্রীর দ্বিতীয় বিবাহ হলে তার পূর্বস্বামী যথারীতি তালাক দিয়েছে তো? পাত্রী রাজী আছে তো? পাত্রীর কোন বৈধ শর্ত তো নেই? দু'জন সঠিক ও উপযুক্ত সাক্ষী আছে কিনা? ইত্যাদি।

অতঃপর সহীহ হাদীসসম্মত খুৎবা পাঠ করবেন। খুতবায় উল্লেখিত আয়াতাদির অনুবাদ পাত্রকে বুঝিয়ে দেওয়া উত্তম। প্রকাশ যে, এ খুৎবা আক্‌দের জন্য জরুরী নয়, সুন্নত। অতঃপর অলীকে বলতে বলবেন অথবা তার তরফ থেকে ওকীল হয়ে বরের উদ্দেশ্যে একবার বলবেন, "এত টাকা দেনমোহরের বিনিময়ে অমুক গ্রামের অমুকের কন্যা অমুকের (স্পষ্ট নাম উল্লেখ করে) তোমার সহিত বিবাহ দিচ্ছি।"

পাত্র বলবে, "আমি এই বিবাহ কবুল করছি।"

এরপর সকলে বরের উদ্দেশ্যে একাকী এই দুআ করবে, [যার অর্থ]

"আল্লাহ তোমার প্রতি বরকত বর্ষণ করুন, তোমাকে প্রাচুর্য দান করুন এবং তোমাদের উভয়কে মঙ্গলের মাঝে একত্রিত করুন।"


বাহ্যিক আড়ম্বরহীন ইসলামে এইখানে বিবাহের আসল কর্ম শেষ।

বর্তমানের ইয্‌ন নেওয়ার অনুষ্ঠান এবং উকীল ও সাক্ষী সহ কনের ইয্‌ন আনতে যাওয়ার ঘটনার সমর্থন শরীয়তে মিলে না। বিবাহ আক্‌দের জন্য সাক্ষী জরুরী, কনের ইয্‌নের জন্য নয়। এর জন্য কনের অভিভাবকই যথেষ্ঠ। অবশ্য অভিভাবকের পক্ষ থেকে ধোকা বা খেয়ানতের আশংকা থাকলে কাযী নিজে অথবা তাঁর প্রিতিনিধি পর্দার আড়াল থেকে কনের মতামত জানবে।

ইমাম বা কাজীকে খুশী হয়ে আক্‌দের পর কিছু উপহার দেওয়া যায়। এখানে দাবী ও জোরের কিছু নেই।

বরকনে নিজে পায়ে হেঁটে গাড়ি চাপবে-নামবে। বিকলাঙ্গ হলে মেয়েরা কেউ কনেকে এবং পুরুষে বরকে তুলবে। একান্ত যদি সম্মানের দরকার হয় তবে এই ভাবেই কনেকে মহিলা এবং বরকে পুরুষে চড়িয়ে দেবে। এছাড়া অন্যসব প্রচলিত প্রথা বেহায়ামী ও অবৈধ।

::::::::::কন্যা বিদায়:::::::::

বিদায়ের সময় কন্যাকে তার পিতা-মাতার উচিত যথোপযুক্ত উপদেশ/পরামর্শ দান করা। অতঃপর বেটীজামাইয়ের উদ্দেশ্যে এই দুআ পঠনীয়ঃ [যার অর্থ]

"হে আল্লাহ! ওদের দু'জনের জন্য বরকত দান কর এবং ওদের বাসরে মঙ্গল দান কর।"

:::::::::::বধূবরণ::::::::::::

ইসলামী প্রথায় এই (বাসরের) দিন বা রাত্রে বিবাহের প্রচার বিধেয়। 'দুফ' বাজিয়ে ছোট ছোট বালিকা মেয়েরা শ্লীলতাপূর্ণ গীত গাইবে। এই দিনে ইসলামী গজল গেয়ে আনন্দ করাই বিধিসম্মত; তবে তাতেও যেন শির্ক ও বিদ্‌আতের গন্ধ না থাকে। এই খুশীতে রেকর্ডের গান, মাইকের গান, ভিডিও প্রদর্শন প্রভৃতি ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

আতশ বা পটকাবাজীও বৈধ নয়।

::::::::::::::::::শুভ বাসর::::::::::

বাসর-কক্ষটি হবে মনোরম, সৌরভময়, সুসজ্জিত ও আলোকমন্ডিত। (অবশ্য এতে অপব্যয় করা উচিত নয়।) কক্ষের একপাশে থাকবে কিছু ফলফ্রুট, দুধ অথবা মিষ্টান্ন ও পানি।

বর ওযু করে বাসরে নব সাথীর অপেক্ষা করবে। নববধূকে ওযু করিয়ে সুসজ্জিতা ও সুরভিতা করে ভাবীরা এবং অন্যান্য মহিলারাও এই দুআ বলবে, [যার অর্থ]

"মঙ্গল ও বরকতের উপর এবং সৌভাগ্যের সহিত (তোমার নবজীবনের সূচনা হোক।)"

অতঃপর তাকে বাসর ঘরে ছেড়ে আসবে। পূর্ব হতেই স্বামী বাসরে থাকলে স্ত্রী সশ্রদ্ধ সালাম করে কক্ষে প্রবেশ করবে। স্বামী সস্নেহে উত্তর দেবে এবং উঠে মুসাফাহা করে শয্যায় বসাবে। কুশলাদি জিজ্ঞাসাবাদের পর স্বামী-স্ত্রী মিলে ২ রাকআত নামায পড়বে। তবে স্ত্রী দাঁড়াবে স্বামীর পশ্চাতে। মুসলিম দম্পতির নবজীবনের সূচনা হবে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে। স্বামীর পশ্চাতে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর নামায পড়াতে তার (বৈধ বিষয়ে) আনুগত্য করার ইঙ্গিত রয়েছে। সুতরাং প্রথমতঃ আল্লাহর ইবাদত ও দ্বিতীয়তঃ স্বামীর আনুগত্য ও খিদমত হল নারীর ধর্ম।

অতঃপর স্বামী দুআ করবে, [যার অর্থ]

"হে আল্লাহ! আমাকে আমার পরিবারে বরকত ও প্রাচুর্য দান কর এবং ওদের জন্যও আমার মাঝে বরকত ও মঙ্গল দান কর। হে আল্লাহ! যতদিন আমাদেরকে একত্রিত রাখবে ততদিন মঙ্গলের উপর আমাদেরকে অবিচ্ছিন্ন রেখো এবং বিচ্ছিন্ন করলে মঙ্গলের জন্যই আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করো।"

অতঃপর উঠে শয্যায় বসে স্বামী স্ত্রীর ললাটে হাত রেখে "বিসমিল্লাহ" বলে এই দুআ পাঠ করবে, [যার অর্থ]

"হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এর মঙ্গল এবং এর মধ্যে তোমার সৃষ্ট প্রকৃতির মঙ্গল প্রার্থনা করছি। আর তোমার নিকট এর অমঙ্গল এবং এর মধ্যে তোমার সৃষ্ট প্রকৃতির অমঙ্গল হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।"

অতঃপর সপ্রেমে কোলে টেনে নিয়ে একটা চুম্বন দিয়ে স্বামী স্ত্রীকে বলবে, "আমাকে পেয়ে খুশী হয়েছ তো প্রিয়?" স্ত্রী লজ্জা ও ভয় কাটিয়ে বলবে, "আলহামদুলিল্লাহ, খুব খুশী হয়েছি। আপনি খুশী তো?" স্বামী বলবে, "আলহামদুলিল্লাহ, শত খুশী।"

তারপর দুধ, ফল বা মিষ্টি নিয়ে একে অপরকে খাইয়ে দেবে। এইভাবে নববধূর মন থেকে ভয় ও লজ্জা ধীরে ধীরে দূরীভূত হবে। উদ্বেলিত হবে প্রেমের তরঙ্গমালা।

এই সময় শুধু যৌন চিন্তাই নয় বরং ভাবী জীবনের বহু পরিকল্পনার কথাও উভয়ে আলোচনা করবে। এক অপরকে বিশেষ উপদেশ ও পরামর্শ দেবে।

সতর্কতার বিষয় যে, এই রাত্রে বা অন্য কোন সময়েও পরস্পরের পূর্বেকার ইতিহাস জানতে না চাওয়াই উভয়ের জন্য উত্তম। নচেৎ মধুরাত্রি বিষরাত্রিতে পরিনত হবে।

[বাসর নিয়ে আর এগুবার কোন যৌক্তিক কারনে খুজে পাচ্ছি না বলে এখানেই ইতি টানলাম। ]

উল্লেখ্য যে, বাসরে বর-কনের কথোপকথনে কানাচি পাতা হারাম। কানাচি পেতে গোপন কথা যে শোনে, কিয়ামতে তার কানে গলিত সীসা ঢালা হবে।

নব-দম্পতির প্রেমের জোয়ার প্লাবিত করুক তাদের জীবন ও যৌবনের উভয় কূলকে। এতে অপরের কাজ কি?

[আলহামদুলিল্লাহ! এই লেখাটি আমি শেষ করতে পেরেছি। যারা আগের পর্বগুলো দেখতে উৎসাহী তারা কষ্ট করে আমার নোট সেকশনে ঢুঁ মারুন। ধন্যবাদ।]