মায়েরা তাদের ছোটবাচ্চাদের কপালে কাজল দিয়ে টিপ দিয়ে দেয়। নজর টিপ।তারপর পাউডার লাগিয়ে দেয়। ছোটবেলার এলবাম খুজলে টিপওয়ালা ছবি পাওয়া যাবে না এমন মানুষ আমাদের জেনারেশন পর্যন্ত খুব বেশি থাকার কথা নয়।বাচ্চাকে মানুষের বদনজর থেকে বাচাতে মায়ের চেষ্টার কমতি নেই। কারো যেন বদনজর তার বাচ্চার গায়ে না লাগে। বাচ্চার যেন কোন ক্ষতি না হয়।
কারো লাউয়ের মাচায় বড় বড় লাউ ধরেছে। পাশ দিয়ে যাবার সময় কেউ একজন বলল, উহ! এত বড় লাউ জীবনেও দেখিনি!
ব্যাস। কাজ হয়ে গেল। পরেরদিনই লাউ গাছে মরে শেষ। লোকে বলে নজর লেগেছে।
কারো চেহাড়া খুব সুন্দর। উজ্জ্বল গাত্রবর্ণ, ঘনকালো চুল। পরিচ্ছদে রুচির ছাপ পাওয়া যায়। তাকে দেখে কেউ বলে ফেলল, কত্ত সুন্দর!
রাত থেকেই মানুষটা জ্বরে পড়ে গেল। জ্বরে পুড়ে গায়ের রঙ কালো হয়ে গেল। চুল পড়ে গেল। শুকিয়ে চিমসা লেগে গেল।
এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে নতুন নয়। আগে প্রায়ই এই ধরনের ঘটনার কথা শুনেছি। এখন একটু কম শুনি। তাকদিরের ব্যাপারটা জানার পর আমার ধারনা ছিল, নজরলাগা এবং নজর এড়াতে আমরা যেসব কাজ করি তা নিতান্তই কুসংস্কার। কিন্তু কিছুদিন আগে তফসীরে মা'আরেফুল কোরআন ঘাটতে গিয়ে এই বিষয়টা আমার নজরে আসে। হবহু তুলে দিচ্ছি।
সূরা ইউসুফের ৬৭-৬৯ আয়াতের তফসীরে ‘তফসীরে মা’আরেফুল কোরআন, পঞ্চম খন্ডের, ৯৭ পৃষ্ঠা’য় আছে,
/*এতে বোঝা গেল যে, মানুষের চোখ (কুদৃষ্টি) লাগা এবং এর ফলে অন্য মানুষ অথবা জন্তু জানোয়ারের কষ্ট কিংবা ক্ষতি হওয়া সত্য। এটা মুর্খতাসুলভ কুসংস্কার নয়। এ কারনেই ইয়াকুব (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক থেকে পুত্রদের আত্মরক্ষার চিন্তা করেছেন।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও একে সত্যায়িত করেছে। এক হাদীসে তিনি বলেনঃ কুদৃষ্টি মানুষকে কবরে এবং উটকে উনানে ঢুকিয়ে দেয়। এ কারনেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেসব বিষয় থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং উম্মতকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেছেন, তন্মধ্যে “আমি কুদৃষ্টি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি” রয়েছে। (কুরতুবী)
সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে আবু মহল ইবনে হুনায়ফের ঘটনা সুবিখ্যাত। একবার গোসল করার জন্য পরিধেয় বস্ত্র খুলতেই তাঁর গৌরবর্ণ ও সুঠাম দেহের উপর আমের ইবনে রবীয়ার দৃষ্টি পতিত হয়। সাথে সাথে তার মুখ থেকে বের হয়ে পড়েঃ আমি আজ পর্যন্ত এমন সুন্দর ও কান্তিময় দেহ কারও দেখিনি। আর যায় কোথায়, তৎক্ষণাৎ মহল ইবনে হুনায়ফের দেহে ভীষণ জ্বর চেপে গেল। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংবাদ পেয়ে প্রতিকারার্থে আমের ইবনে রবীয়াকে আদেশ দিলেন যে, সে যেন ওযু করে ওযুর পানি থেকে কিছু অংশ পাত্রে রাখে। অতঃপর তা যেন মহল ইবনে হুনায়ফের দেহে ঢেলে দেওয়া হয়। আদেশ মত কাজ করা হলে মহল ইবনে হুনায়ফ রক্ষা পেলেন। তার জ্বর থেকে গেল এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)র সাথে পূর্ব নির্ধারিত অভিযানে রওয়ানা হয়ে গেলেন। এ ঘটনায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমের ইবনে রবীয়াকে সতর্ক করে বলেছিলেনঃ “কেউ আপন ভাইকে কেন হত্যা করে? তোমার দৃষ্টিতে যখন তার দেহ সুন্দর প্রতিভাত হয়েছিল তখন তুমি তার জন্য বরকতের দোয়া করলে না কেন? মনে রেখো, চোখ লেগে যাওয়া সত্য”।
এ হাদীস থেকে আরও জানা গেল যে, অপরের জান ও মালের মধ্যে যদি কেউ বিস্ময়কর কোন কিছু দেখে, তবে তার উচিত দোয়া করা যে, আল্লাহ্ তা’আলা এতে বরকত দান করুন। কোন কোন রেওয়ায়েতে আছে যে, “মাশা আল্লাহু লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলা উচিত। এত কুদৃষ্টির প্রভাব বিনষ্ট হয়ে যায়। আরও জানা গেল যে, কেউ চোখ লাগায় আক্রান্ত হলে যার চোখ লাগে, তার হাত, পা ও মুখমণ্ডল ধোয়া পানি রোগীর দেহে ঢেলে দিলে চোখ লাগার অনিষ্ট বিদূরিত হয়ে যায়।
কুরতুবী বলেনঃ আহ্লে সুন্নত ওয়াল-জমাআতের সব শীর্ষস্থানীয় আলিম এ বিষয়ে একমত যে, চোখ লাগা এবং তদ্বারা ক্ষতি সাধিত হওয়া সত্য। */
তো বোঝা গেল যে, নজর লাগা কুসংস্কার নয় বরং কুসংস্কার হল আমরা নজর এড়াতে যা করি। ইসলামে যে নির্দেশনা এসেছে সেটা মানি না, জানিও না। কোথ্যেকে কোথ্যেকে বানিয়ে বানিয়ে কিসব কিসব করি!
আল্লাহ তা'আলা আমাদের আমল করার তওফীক দান করুন। আমীণ
2 comments:
Nijer kono photo te Chokh lagar shomvabona roeche ki?
লাগতে পারে। আল্লাহই ভাল জানেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি শেয়ার না করাই ভাল।
Post a Comment