জোকস বলার আগে জোকসের কাহিনী বলে নেই একটু। বড় ভাই জোকসের একটা পেইজ চালানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উনার পেইজের লাইক সংখ্যা তখনকার দিনের কথা ভাবলে কম ছিল না। পঞ্চাশ-ষাট হাজার মানুষের লাইক ছিল পেইজটিতে। আমার কাছে মনে হয়েছে লাইকারদের মধ্যে প্রচুর ভারতীয় ছিলেন।
জোকস পেইজের এডমিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা ফেস করেছি তা হল, নির্মল বিনোদন মূলক কিছু খুজে বের করা। মানুষকে হাসানো অনেক কঠিন একটা কাজ। অনলাইনে বাংলা-ইংরেজী মিলিয়ে প্রচুর জোকস আছে। আছে কার্টুন। পড়ি, দেখি। কিন্তু হাসি আসে না। আমার নিজেরই যে জোকস পড়ে হাসি আসে না ঐ জোকস দিয়ে কিভাবে অন্যকে হাসাবো? এই চিন্তা করে প্রচলিত অনেক জোকস পোস্ট করতে পারি না। তাছাড়া আমার পলিসি ছিল চুলকানীমূলক কোন জোকস দিব না। আমার বিবেচনায় যদি এক্সেপশনাল না হয়েছে তাহলে এডাল্ট কোন জোকস পোস্ট করিনি।
অফিসের কলিগদের কাছে শোনা গল্পগুলো নিজের মত করে সাজিয়ে পোস্ট দিতাম। ইনবক্সে অনেকে পোস্ট দিত। দেয়ার মত হলে তাদেরগুলো কার্টেসী সহ দিতাম। নিজের ঘিলু ব্যবহার করে জোকস বা কার্টুন বানানোর মত ট্যালেন্ট আমি কখনই ছিলাম না। কাজেই জোকসের কিছু বই পত্রও কিনে নিলাম। কিন্তু সমস্যা একটাই। জোকস পড়ি, হাসি আসে না। পুরো বই হয়ত পড়ে শেষ করে ফেলেছি কিন্তু ঠোটের কোণা বাঁকা হয় না। দু'একটা ব্যতিক্রমতো আছেই।
তাছাড়া জোকস পোস্টের বড় সমস্যা হল, পাঠক জোকস বুঝতে পারে না। মাসুদ রানার কোন এক বইয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের একটা চুটকি ছিল এরকমঃ
এক ইংলিশ ভদ্রলোক এক স্প্যানিশ রেস্তোঁরায় খেতে গেলে। রেস্তোঁরার ম্যানেজার তাকে দেখে এগিয়ে এসে বিনয়ের সাথে বললেন,
"বন আপতিত!" [স্বাগতম বা এই জাতীয় কিছু হবে অর্থটা]
ইংরেজ ভদ্রলোক স্প্যানিশ কিছুই বোঝেন না। তিনি ভাবলেন, প্রথম কারো সাথে দেখা হলে নিজের পরিচয় দেয়া একটা ভদ্রতা। তাই তিনি হাত বাড়িয়ে জবাব দিলেন,
"রয় ডিকসন।"
ম্যানেজার আর কিছু না বলে তাকে টেবিল দেখিয়ে দিলেন। পরেরদিন আবারো যখন রেস্তোঁরায় যাবার পর ম্যানেজার তাকে দেখে বলে উঠলেন,
"বন আপতিত!"
ইংরেজ ভদ্রলোক এবার একটু অবাক হলেন। তাহলে কি প্রতিদিন নিজের পরিচয় দিতে হবে নাকি? তিনি একটু মাথা ঝাকিয়ে বললেন,
"রয় ডিকসন।"
এই ঘটনা ৩-৪ বার ঘটার পর ইংরেজ ভদ্রলোকের মনে একটু খটকা লাগল, ব্যাপারটা কি? প্রতিদিন পরিচয় দিতে হয় কেন?
ভদ্রলোক এক সন্ধ্যায় তার এক স্প্যানিশ বন্ধুকে ফোন করে ঘটনাটা বললেন। স্প্যানিশ বন্ধুতো হেসেই খুন। "বন আপতিত" মানে জানার পর ভদ্রলোক একটা লজ্জাই পেলেন।
পরেরদিন তিনি ঐ রেস্তোঁরায় গেলেন ডিনারে। এবার তিনি নিজেই ম্যানেজারের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
"বন আপতিত।"
মুচকি হেসে ম্যানেজার জবাব দিলেন,
"রয় ডিকসন।"
এই জোকসটা একদিন পেইজে দিয়েছিলাম। গালি-ঝাড়ি দেয়ার পর অনেকেরই প্রশ্ন ছিল এখানে টুইস্টা কোথায়? আমি উত্তর দেই নি। কারন জোকস পড়ে কেউ বুজতে না পারলে তাকে বোঝানো কঠিন।
এছাড়ারাও খেয়াল রাখতে হয় এই জোকসটা পড়ে আবার কেউ ধর্ম খুজে পাবে নাতো? মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত হানার মত কেউ মনে করবে নাতো? মেয়েদের ছোট করা হচ্ছে কি? মোট কথা ফিল্টারের শেষ নেই। এত ফিল্টার করতে গেলে শেষে জোকসই খুজে পাওয়া যায় না।
বাস্তব জীবনের একটা ঘটনা শেয়ার করেছিলাম অনেক আগে। ঈদের নামায পড়তে গিয়েছি ঈদগাহে। আমার এক বন্ধু তার ছোটভাই (পিচ্চি) ও তার বাবাকে নিয়ে আসছে নামায পড়তে। আমরা একসাথেই বসলাম। যথারীতি নামায শুরু হল, প্রথম রাকাতে যখন সেজদায় গেলাম তখন ঐ পিচ্চি হঠাৎ করে বলে উঠল,
"কান টানলে মাথা আসে, মাথা টানলে কান!"
এই কথা শুনে নামাযে স্থির থাকা মুশকিল। হাসির দমকে দমকে শরীর কেঁপে উঠেছিল।
এই পোস্ট টাইমলাইনে দেয়ার পর আমার কিছু দরদী ভাই বললেন, "এখানে নাকি নামাযের অবমাননা হয়েছে! জাহেলী যুগে কাফেররা এভাবেই নামায নিয়ে হাসি-তামাশায় মত্ত থাকত।"
প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ (সম্ভবত) মানুষের এই দিকটা কথা চিন্তা করে মূল্যবান একটা কথা বলেছিলেন সম্ভবত এলেবেলে তে। "কেউ যখন সিরিয়াস কিছু শোনে তখন তা হেসে উড়িয়ে দেয়। আর যখন কোন রসিকতা শোনে তখন গম্ভীরমুখে ভাবতে থাকে, এটা কি রসিকতা করার কিছু? এখানে রসিকতার কি আছে?"
[পুরোপুরি ডায়লগ মুখস্থ নেই। এমনি কিছু একটা হবে।]
আজকে বসে রিলাক্সেশন করছিলাম। চোখের পাতা বন্ধ। কিছুক্ষন পর আলোর তারতম্যতে বুঝতে পারলাম, আমার কোন এক কলিগ আমার মুখের সামনে হাত নাড়ছেন। কেউ ঘুমিয়ে আছে কিনা পরীক্ষা করতে আমরা যেভাবে হাত নাড়ি। মুহুর্তে মাথায় আগুন ধরে গেল। ভাবলাম আরেকবার দেখি ওমন করে কিনা। সাথে সাথেই আবার আলোর তারতম্য। আস্তে করে চোখটা খুললাম। তারপর ধারালো যে বানগুলো আমার মুখ থেকে ছুটল তাতে তার হাসি নিভে গেল। বললেন, 'রসিকতা' করলেন। মুখ থেকে বের হতে দেরি, আমার জবাব দিতে দেরি নেই।
সমবয়সী হলে আরো কঠিন কথা বলতাম। কিছুদিন পর মেয়ের বিয়ে দেবেন, এমন কলিগকে সবকিছু বলা যায় না। শহীদ আল বোখারী রিলাক্সেশনের এক পর্যায়ে বলেন, "কেউ আপনাকে ডেকে ফেললে বিরক্ত হবেন না বা মনে মনে রাগ করবেন না।" আজকে উনার কথা শুনি নি। ঝেড়ে দিয়েছি। অনিচ্ছাকৃত অপরাধ আর ইচ্ছাকৃত ফাজলামীর মধ্যে বিস্তর তফাৎ।
কোন রসিকতা কখন, কোথায়, কার সাথে করতে হবে এই গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অনেকেরই মাঝে অনুপস্থিত। কজ কমন সেন্স ইজ ভেরি আনকমন!
No comments:
Post a Comment