১. বুখারী শরীফ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা-১২~১৬, ইমাম মুহাম্মাদ ইব্ন ইসমাঈল বুখারী (রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
৫১৪. হাফ্স ইব্ন উমর (রঃ)...আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী(সঃ)......তিনি আসরের সালাত আদায় করতেন এমন সময় যে, আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রানে পৌছে আবার ফিরে আসতে পারত, তখনও সূর্য সতেজ থাকত... [হাদীসে অংশবিশেষ]
৫১৭. ইব্রাহীম ইব্ন মুনযির (রঃ)...আয়িশা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এমন সময় আসরের সালাত আদায় করতেন যে, তখনো সূর্যরশ্মি ঘরের বাইরে যায়নি।
৫১৮. কুতাইবা(রঃ)...আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এমন সময় আসরের সালাত আদায় করেছেন যে, সূর্যরশ্মি তখনো ঘরের মধ্যে ছিল, আর ছায়া তখনো তাঁর ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েনি।
৫১৯. আবূ নু'আইম(রঃ)...আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী(সাঃ) আসরের সালাত আদায় করতেন, আর সূর্যরশ্মি তখনো আমার ঘরে থাকত। সালাত আদায় করার পরও পশ্চিমের ছায়া ঘরে দৃষ্টিগোচর হত না। আবূ আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রঃ)] বলেন, ইমাম মালিক, ইয়াহ্ইয়া ইব্ন সাঈদ, শুআইব ও ইব্ন আবূ হাফস্(রঃ) উক্ত সনদে এ হাদীসটির বর্ণনায়, 'সূর্যরশ্মি আমার ঘরের ভিতরে থাকত, ঘরের মেঝে ছায়া নেমে আসেনি' এরূপ বলেছেন।
৫২০. মুহাম্মদ ইব্ন মুকাতিল(রঃ)...সায়্যার ইব্ন সালামা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি ও আমার পিতা আবূ বারযা আসলামী (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ফরয সালাতসমূহ কিভাবে আদায় করতেন? তিনি বলেন, আল-হাজীর,......আর আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, তারপর আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রান্তে তার ঘরে ফিরে যেতো আর সূর্য তখনও সতেজ থাকতো।.... [হাদীসে অংশবিশেষ]
৫২১. আবদুল্লাহ্ ইব্ন মাসলামা(রঃ)...আনাস ইব্ন মালিক(রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা (রাঃ) এর সঙ্গে আসরের সালাত আদায় করতাম। সালাতের অর লোকেরা আমর ইব্ন আওফ গোত্রের মহল্লায় গিয়ে তাদেরকে সালাত আদায় করা অবস্থায় পেত।১
টীকাঃ বণু 'আম্র মদীনা শরীফ থেকে দু'মাইল দূরে কুবা নামক স্থানে বসবাসরত ছিল। এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, মসজিদে নববীতে আসরের সালাত একটু আগে আদায় করা হত। আর অপরাপর মসজিদে একটু বিলম্বে আদায় করা হত। ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) সাধারন মানুষের প্রতি লক্ষ্য রেখে অপর হাদীসের আলোকে দেরীতে আসর পড়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে অবশ্যই তা সূর্যকিরণ নিষ্প্রভ হওয়ার আগে হতে হবে।
৫২২. মুহাম্মদ ইব্ন মুকাতিল(রঃ)....আবূ উমামা(রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একবার আমরা উমর ইব্ন আবদুল আযীয (রঃ)-এর সঙ্গে যুহরের সালাত আদায় করলাম। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আনাস ইব্ন মালিক(রাঃ)-র কাছে গেলাম। আময়া গিয়ে তাঁকে আসরের সালাত আদায়ে রত পেলাম। আমি তাঁকে বললাম, চাচা! এ কোন সালাত যা আপনি আদায় করলেন? তিনি বললেন, আসরের সালাত। আর এ হলো রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সালাত, যা আমরা তাঁর সাথে আদায় করতাম।
৫২৩. আবদুল্লাহ্ ইব্ন ইউসুফ(রঃ)...আনাস ইব্ন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আসরের সালাত আদায় করতাম, তারপর আমাদের কোন গমনকারী কুবার দিকে যেত এবং সূর্য যথেষ্ঠ উপরে থাকতেই সে তাদের কাছে পৌছে যেত।
৫২৪. আবুল ইয়ামান(রঃ)...আনাস ইব্ন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) আসরের সালাত আদায় করতেন, আর সূর্য তখনও যথেষ্ট উপরে উজ্জ্বল অবস্থায় বিরাজমান থাকত। সালাতের পর কোন গমনকারী 'আওয়ালী'র১ দিকে রওয়ানা হয়ে তাদের কাছে পৌছে যেত, আর তখনও সূর্য উপরে থাকত। আওয়ালীর কোন কোন অংশ ছিল মদীনা থেকে চার মাইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে।
টীকা-১: আওয়ালী বা উঁচু এলাকা। মদীনার উপকন্ঠে নজদের দিকের গ্রামগুলোকে আওয়ালী বা উঁচু এলাকা ধরা হত। আর তিহামার দিকের গ্রামগুলোকে 'সাফিলা' বা নিম্নএলাকা বলা হত।
২. সহীহ মুসলিম, ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃঃ ৩৯৫~৪১২,বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার।
১২৬৮. ইবনে শিহাব থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেছেন) 'উমার ইবনে 'আবদুল আযীয একদিন নামায পড়তে বেশ দেরী করে ফেললেন। ....... এরপর উরওয়া বললেনঃ নবী(সাঃ)-এর স্ত্রী 'আয়েশা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এমন সময় 'আসরের নামায পড়তেন যখন সূর্য কিরন তাঁর কামরার মধ্যে পড়তো। তখনো তা দেয়ালের ওপর উঠে যেতো না। [হাদীসের অংশবিশেষ]
টীকাঃ বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়, জিবরাঈল (আঃ)দুইবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এভাবে নামায পড়িয়েছিলেন এবং প্রত্যেকবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই পড়িয়েছিলেন। তবে একবার নামায প্রথম ওয়াক্তসমূহে পড়িয়েছিলেন। আর দ্বিতীয়বার মুস্তাহাব বা শেষ ওয়াক্তে পড়িয়েছিলেন।
আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এমন সময় 'আসরের নামায পড়তেন যখন সূর্য-কিরন 'আয়েশার(রাঃ) কামরার ভিতর প্রবেশ করতো। একথা দ্বারা প্রমানিত হয় যে, বেশ কিছু বেলা থাকতে অর্থাৎ সূর্যাস্তের বেশ আগে তিনি আসরের নামায পড়তেন। কারণ সূর্য কিছু উপরে না থাকলে কামরার মধ্যে তার কিরন প্রবেশ করা সম্ভব নয়। তাই স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, সূর্য কিরন তখনও দেয়ালের ওপর উঠতো না।
১২৬৯. 'আয়েশা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ নবী(সাঃ) এমন সময় 'আসরের নামায পড়তেন যে, তখনও সূর্য-কিরন আমাদের মধ্যে ঝলমল করতো। বেশ কিছুক্ষন পরও কামরার মধ্যে ছায়া পড়ত না। আবু বকর বলেছেনঃ এরপরও বেশি কিছুক্ষন ছায়া উপরে উঠতো না।
১২৭০. উরওয়া ইবনে যুবায়ের থেকে বর্ণিত। (তিনি বলছেন) নবী(সাঃ)-এর স্ত্রী 'আয়েশা তাঁকে জানিয়েছেন যে, নবী (সাঃ) যে সময় 'আসরের নামায পরতেন তখনও সূর্যের কিরণ তার কামরার মধ্যে থাকতো এবং তা কামরার মধ্য থেকে উপরের দিকে (দেয়ালে) উঠে যেতো না।
১২৭১. [এটাও ১২৭০ হাদিসের মতই]
১২৭২. 'আবদুল্লাহ ইবনে 'আমর থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেছেন, ...তোমরা যখন আসরের নামায পড়বে তখন জেনে রেখো আসরের নামাযের সময় হলো সূর্য বিবর্ণ হয়ে হলুদ (সোনালী বা তাম্রবর্ণও বলা যেতে পারে) বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত।... [হাদীসের অংশবিশেষ। এই হাদীসে প্রতি ওয়াক্তের সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে সম্ভবত]
১২৭৩. 'আবদুল্লাহ্ ইবনে 'আমর নবী(সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ...... আর সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালী বা তাম্রবর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত 'আসরের নামাযের ওয়াক্ত থাকে...... [হাদীসের অংশবিশেষ]
১২৭৫. 'আবদুল্লাহ ইবনে 'আমর(রাঃ) তকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেনঃ .....'আসরের নামাযের সময় থাকে সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালী বা তাম্রবর্ণ ধারন না করা পর্যন্ত। ... [হাদীসের অংশবিশেষ]
১২৭৬. 'আব্দুল্লাহ ইবনে 'আমর ইবনে আস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-কে নামাযে সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বললেনঃ ... আসরের নামযে সময় থাকে সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালী বা তাম্রবর্ণ ধারণ করার পর উপরের প্রান্ত ভাগ অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত।
১২৭৮. সুলাইমান ইবনে বুরাইদা তার পিতা বুরাইদার মাধ্যমে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। [একব্যক্তির নামাযের ওয়াক্ত নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে নবী (সাঃ) প্রথমদিন] এরপর(আসরের সময় হলে)তিনি তাকে [বেলাল (রাঃ) কে] আসরের নামাযের ইকামাত দিতে বললেন। বেলাল ইকামাত দিলেন। নবী (সাঃ) তখন 'আসরের নামায পরলেন। সূর্য তখনও বেশ উপরে ছিল এবং পরিষ্কার ও আলো ঝলমল দেখাচ্ছিলো।...... [দ্বিতীয় দিন] তিনি এমন সময় 'আসরের নামায পড়লেন সূর্য তখনও বেশ উপরে ছিল।তবে আগের দিনের তুলনায় বেশ দেরী করে পড়লেন...... এরপর জিজ্ঞেস করলেনঃ নামাযের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারী ব্যাক্তি কোথায়? লোকটি তখন বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমি উপস্থিত আছি। তখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) লোকটিকে বললেনঃ দুইদিন যে দুটি সময়ে আমি নামায পড়লাম এরই মধ্যবর্তী সময়টুকু হলো নামাযের ওয়াক্তসমূহ।
১২৯৫. আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্নিত। তিনি জানিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যে সময় 'আছরের নাময পড়তেন সূর্য তখনও আকাশের অনেক ওপরে অবস্থান করতো এবং তখন তার তেজ বিদ্যমান থাকতো। (অর্থাৎ তেজ কমে বর্ণ পরিবর্তন হত না)। নামায শেষে যার দরকার পড়তো সে মদীনার 'আওয়ালী বা শহরতলীর দিকে চলে যেতো এবং সেখানে পৌছার পরেও সূর্য আকাশের বেশ ওপরে থাকত। তবে বর্ণনাকারী কুতাইবা তার বর্ণনায় "তারা আওয়ালী বা শহরতলীর দিকে চলে যেতো" কথাটা উল্লেখ করেননি। অন্য সনদে হারূন ইবনে সাঈদ আয়লী ইবনে ওয়াহাব, 'আমর ও ইবনে শিহাবের মাধ্যমে আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন। আনাস ইবনে মালিক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আসরের নামায পড়তেন.... বলে শুরু করে হুবহু বর্ণনা করেছেন।
টীকাঃ মদীনার মূল শহরের আশেপাশের এলাকাকে আওয়ালী বলা হতো। যাকে আধুনিক ভাষায় শহরতলী বলা হয়। মদীনার এই শহরতলীর জনবসতিপূর্ণ এলাকা সর্বোচ্চ আট মাইল এবং সর্বনিম্ন দুই থেকে তিনমাইল দুরত্বে অবস্থিত ছিল। এর থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বেশ বেলা থাকতেই 'আসরের নামায পড়তেন। নামায শেষ করে একজন লোক ইচ্ছা করলে মদীনার শহরতলীর সর্বাপেক্ষা নিকটতম স্থানে অর্থাৎ দুই মাইল পথ হেঁটে গিয়ে উপনীত হতো। তখনও সূর্যের তেজ কমতো না বা বর্ণপরিবর্তন হতো না। আবার কোন কোন হাদীসে উল্লেখিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে আসরের নামায পড়ে লোকজন কেউ কেউ আমর ইবনে আওফ গোত্রের এলাকায় গিয়ে দেখতে পেতো যে, তারা সবেমাত্র আসরের নামায পড়ছে।
১২৯৭. আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন। আমরা রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর সাথে এমন সময় আসরের নামায পড়তাম যে তার পরে লোকজন বনী 'আমর ইবনে 'আওফ গোত্রের এলাকায় গিয়ে দেখতে পেতো যে তারা তখন মাত্র আসরের নামায পড়ছে।
টীকাঃ ইমাম নববী ও অন্য উলামাদের মতে, বনী আমর ইবনে আওফ গোত্রের এলাকা মদীনা থেকে শহরতলীর দিকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত ছিলো। সুতরাং একজন লোক রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর সাথে নামায পড়ার পর এই দুই মাইল হেঁটে বনী আমর ইবনে আওফ গোত্রের এলাকায় গিয়ে তাদেরকে আসরের আনাময পড়তে দেখতে পেত। এ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ওয়াক্তের প্রথমদিকে আসরের নাময পড়তেন। আর বনী আমর ইবনে আওফ পড়তো মধ্যবর্তী সময়ে। প্রথম কথা হলো, তারা যে সময় নামায পড়তো সে সময় নামায পড়া জায়েজ। দ্বিতীয় কথা হলো, তারা ছিল সবাই কৃষিজীবী মানুষ। তাই তাদেরকে ক্ষেতে-খামারে ও বাগানে কাজ করতে হতো। মাঠের এসব কাজ শেষ করে তারা নামাযের ওযু ও পবিত্রতা অর্জন করে জামায়াতে নামায পড়ার জন্য একত্র হতো। তাই তাদের আসরের নামাযে এতটুকু দেরী হয়ে যেতো।
এই হাদীস তেকে ইমাম শাফেয়ী, আহমাদ ও অন্য উলামাগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, মুল ছায়া বাদে প্রতি বস্তুর ছায়া যখন বস্তুটির সমান দৈর্ঘ্য হবে তখনই আসরের নামাযের সময় হয়ে যাবে। তবে হযরত যাবির ও আবদুল্ললাহ্ ইবনে আব্বাস কর্তৃক নামাযের ওয়াক্ত অধ্যায়ে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার ভিত্তিতে ইমাম আবু হানীফা(রঃ) বলেছেনঃ প্রত্যেক বস্তুর মূল ছায়া বাদে দ্বিগুণ ছায়া হলেই আসরের নামাযের সময় হয়।
৪. মুয়াত্তা, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৮~৬১ ইমাম মালিক (রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
রেওয়ায়ত ২
উরওয়াহ (রঃ) বলিলেনঃ নবী করীম(সাঃ) এর সহধর্মিনী আয়েশা (রাঃ) আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করিয়াছেনঃ রাসূলুল্লাহ(সাঃ) যখন আসর পড়িতেন তখনও সূর্য্যের আলো আয়েশার হুজরাতে থাকিত। আলো ঘরের মেঝে হইতে প্রাচীরে উঠার পূর্বে।
রেওয়ায়ত ৬
নাফি' (রঃ) হইতে বর্ণিত - উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) তাঁহার (অধীনস্থ) কর্মকর্তাদের নিকট লিখিয়াছেনঃ ....... আর আসরের নামায পড়িও যখন সূর্যত উর্ধ্বে উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন থাকে। (সেই সময় হইতে) সূর্যাস্তের পূর্বে সওয়ারী ব্যাক্তি দুই অথবা তিন ফরসখ চলিতে পারে এতটুকু সময় পর্যন্ত...... [হাদীসের অংশবিশেষ]
রেওয়ায়ত ৭
মালিক ইব্ন আসবাহী (রাঃ) হইতে বর্ণিত - উমর ইব্ন খাত্তাব(রাঃ) আবূ মূসা আশ'আরী(রাঃ)-এর নিকট (পত্র) লিখিয়াছেনঃ ......আর আসর পড় যখন সূর্য উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন থাকে, উহাতে হলুদ বর্ণ প্রকাশ হওয়ার পূর্বে...... [হাদীসের অংশবিশেষ]
রেওয়ায়ত ৯
আবদুল্লাহ্ ইব্ন রাফি'(রঃ) আবূ হুরায়রা(রাঃ)-এর নিকট নামাযের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করিলেন। উত্তরে আবু হুরায়রা (রাঃ) বলিলেনঃ ...আর আসর পড় যখন তোমার ছায়া তোমার দ্বিগুন হয়। [হাদীসের অংশবিশেষ]
রেওয়ায়ত ১০
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) বলিয়াছেনঃ আমরা আসর পড়িতাম, অতঃপর লোকজন বাহির হইতেন (কুবায় অবস্থিত) বনি আমর ইবন আউফ-এর বস্তির দিকে। তথায় তাঁহাদিগকে এই অবস্থায় পাইতেন যে, তাঁহারা আসরের নামায পড়িতেছেন।
রেওয়ায়ত ১১
আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) বলেনঃ আমরা আসর পড়িতাম। অতঃপর গমনকারী কুবার দিকে গমন করিতেন এবং তাঁহাদের (কুবাবাসীদের) নিকট আসিয়া পৌছিতেন (এমন সময় যে), সূর্য তখনও উঁচুতে।
৪. আবু দাঊদ শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা-২২৬~২২৮, ইমাম আবু দাঊদ (রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
৪০৪. কুতায়বা ইব্ন সাঈদ...আনাস্ ইব্ন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আসরের নামায এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্য উপরে উজ্জল অবস্থায় থাকত এবং কোন ব্যাক্তি নামায শেষে "আওয়ালীয়ে মদীনা" বা মদীনার উচ্চ শহরতলীতে যাওয়ার পরেও সূর্য উপরে দেখতে পেত--(বুখারী, মুসলিম, ইব্ন মাজা, নাসাঈ)
টীকাঃ আওয়ালী হল মদীনার পাশ্ববর্তী শহরতলীতে অবস্থিত একটি গ্রামের নাম। মদীনা হতে এর নিকটতম দূরত্ব দুই মাইল এবং শেষ প্রান্তের দূরত্ব হল ৮ মাইল।-(অনুবাদক)
৪০৫. আল-হাসান ইব্ন আলী...ইমাম যুহরী (রঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আওয়ালী নামক শহরতলীর দূরত্ব মদীনা হতে ২ অথবা ৩ মাইল। রাবী বলেন, সম্ভবতঃ ইমাম যুহরী ঐ স্থানের দূরত্ব চার মাইলও বলেছেন।
৪০৬. ইউসুফ্ ইব্ন মুসা...খায়সামা(রঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূর্য জীবিত থাকার অর্থ তার উষ্ণতা অবশিষ্ট থাকা বা অনুভব করা।
৪০৭. আল-কানাবী...উরওয়া(রঃ) বলেন, আয়েশা(রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এমন সময় আসরের নামায আদায় করতেন যখন সূর্্যের রশ্মি তাঁর ঘরের মধ্যে থাকত এবং তা দেয়ালে উঠার পূর্বে--(বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, ইব্ন মাজা, মালেক, তিরমিযী)
৪০৮. মুহাম্মাদ ইব্ন আবদুর রহমান--ইয়যীদ থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট মদীনাতে আগমন করি। এ সময় তিনি আসরের নামায--সূর্যের রঙ উজ্জ্বল থাকাবস্থায় (সূর্যের রঙ পরিবর্তিত হওয়ার পূর্বে) আদায় করতেন।
টীকাঃ হানাফী মাযহাবের মতানুযায়ী প্রত্যেক বস্তুর "আসল ছায়া" বাদে--যখন তার ছায়া দ্বিগুন হয় তখন আসরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত এই নামায আদায় করা যায়। তবে সূর্যের রঙ যদি পরিবর্তিত হয়ে যায়, তখন মাকরুহ সময় এসে যায়। কোন কারণবশতঃ কেউ যদি আসরের নামায যথাসময়ে আদায় করতে অপারগ হয়, তবে ঐ ব্যাক্তির জন্য ঐ দিনের আসরের নামায (কাযা না করে) সূর্যাস্তের সময়েও আদায় করা জায়েয।-(অনুবাদক)
৫. তিরমিযী শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা-১৫৬~১৫৮, ইমাম আবূ ঈসা আত তিরমিযী (রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
অনুচ্ছেদঃ আসরের সালাত জলদি আদায় করা
১৫৯. কুতায়বা(রঃ)...আইশা(রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল(সাঃ) আসরের সালাত আদায় করেছেন আর তখনও সূর্যের আলো আমার কক্ষের মাঝে ছিল, আলোর ছায়া কক্ষ থেকে উঠে যায়নি।
এই বিষয়ে আনাস, আবূ আরওয়া, জাবির, রাফি' ইব্ন খাদীজ (রাঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।
আসরের সালাত পিছিয়ে পড়া সম্পর্কে একটি হাদীছ রাফি' (রাঃ)এর বরাতেও রাসূল(সাঃ) থেকে বর্ণিত আছে; কিন্তু এটি সহীহ নয়।
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী(রঃ) বলেনঃ আইশা(রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি হাসান ও সহীহ।
হযরত উমর, আবদুল্লাহ্ ইব্ন মাসঊদ, আইশা, আনাস(রাঃ)-এর মত ফকীহ সাহাবীগণ এবং একাধিক তাবিঈও আসরের সালাত জলদী আদায় করার মত গ্রহণ করেছেন। তাঁরা আসরের সালাত পিছিয়ে পড়াকে মাকরুহ্ বলে অভিমত দিয়েছেন। আবদুল্লাহ্ ইব্ন মুবারাক, (ইমাম আবূ হানীফা), শাফিঈ, আহমদ, ইসহাক (রঃ)-এর অভিমত এ-ই।
অনুচ্ছেদঃ আসরের সালাত পিছিয়ে আদায় করা।
১৬১. আলী ইব্ন হুজর(রঃ)...উম্মু সালমা(রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ রাসূল(সাঃ) যুহরের ক্ষেত্রে তোমাদের তুলনায় বেশি জলদী করতেন আর তোমরা আসরের ক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে বেশি জলদী করছ।
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রঃ) বলেনঃ ইসমাঈল ইব্ন উলায়্যা-ইব্ন জুরায়জ-ইব্ন আবি মুলায়কা-উম্মু সালমা (রাঃ) সনদেও হাদীছটি অনুরূপভাবে বর্ণিত আছে।
৫. মেশকাত শরীফ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৬৬~১৭৫। মাওলানা নূর মুহাম্মাদ আ'জমী (রঃ), এমদাদিয়া পুস্তকালয়, লিঃ। ঢাকা।
৫৩৪--(১) হয়রত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলিয়াছেনঃ ...আর আছরের সময় (ইহার [যুহরের] পর হইতে) যে পর্যন্ত না সূর্য হলদে হয়... [হাদীসের অংশবিশেষ]
ব্যাখ্যাঃ ...আছরের নামায দুই মিছলের [ছায়া আসলী বাদ ছায়া দুই গুন হওয়া পর্যন্ত] পর পড়াই উত্তম। ইহাতে সতর্কতা রহিয়াছে।
"যে পর্যন্ত হলদে না হয়"--কাহারও মতে সূর্য যখন থালার ন্যায় দেখায়, দৃষ্টিতে চোখ ঝলসায় না, তখনই উহা হলদে হয়। আর কাহারও মতে সূর্যের আলো যখন গাছ-গাছড়ার মাথায় পতিত হয় এবং অনেকটা নিষ্প্রভ ও বিকৃত দেখায়, তখনই উহা হলদে হয়। মোটকথা, হলদে হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আছরের নির্দোষ সময়। অতঃপর অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত মাকরূহ সময়।
৫৩৬--(৩) হযরত ইব্নে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলিয়াছেনঃ হযরত জিবরীল(আঃ) খানায়ে কা'বার নিকট দুইবার আমার ইমামতি করিয়াছেন। ...আছর পড়াইলেন [প্রথমদিন] যখনই প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তাহার একগুন হইল;...... [দ্বিতীয়দিন] আছর পড়াইলেন যখন তাহার ছায়া দুইগুন হইয়া গেল;... [হাদীসের অংশবিশেষ]
৫৩৮--(৫) হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হইতে বর্নিত আছে, তিনি নিজ প্রশাসকদের নিকট লিখিলেন, ...... আছর পড়িবে যখন সূর্য উচ্চে পরিষ্কার সাদা থাকে, যাহাতে একজন (উট) সওয়ার সূর্য অদৃশ্য হইবার পূর্বেই দুই বা তিন 'ফর্সখ' অতিক্রম করিতে পারে...[হাদীসের অংশবিশেষ] ফর্সখ,--তিন মাইল।
৫৪০--(১)হযরত সাইয়্যার ইবনে সালামা(রাঃ) বলেন, আমি ও আমার পিতা (সাহাবী)হযরত আবু বারযা আসলামীর নিকটে গেলাম। আমার পিতা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ফরয নামায কিরূপে পড়িতেন? তিনি বলিলেন, ...এবং আছর পড়িতেন যাহার পর আমাদের কেহ মদীনার শেষ প্রান্তে তাহার বাড়ীতে ফিরিত, অথচ সূর্য তখনও পরিষ্কার থাকিত...... [হাদীসের অংশবিশেষ]
৫৪১--(২) হযরত মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে হাসান ইবনে আলী(রাঃ) বলেন, আমরা সাহাবী হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ্কে নবী করীম(সাঃ)এর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি বলিলেন, ...আছর পড়িতেন--আর তখনও সূর্য দীপ্তিমান থাকিত... [হাদীসের অংশবিশেষ]
৫৪৪--(৫) হযরত আনাস(রাঃ)বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) আছরের নামায পড়িতেন, তখন সূর্য উচ্চ ও উজ্জ্বল থাকিত। অতঃপর কেহ আওয়ালীর (উচ্চ স্থানগুলির) দিকে যাইত এবং তথায় পৌছিত, তখনও সূর্য উপরে থাকিত, অথচ আওয়ালীর কোন কোন স্থান মদীনা হইতে চারি মাইল বা তাহার কাছাকাছি দূরে।--মোত্তাঃ
ব্যাখ্যাঃ এই উচ্চ আবাস বা উচ্চ স্থানগুলি মদীনা শহর হইতে মসজিদে বনী কোরায়যার দিকে অবস্থিত। ইহা হইতে বুঝা যায় না যে, আছরের নামায এক মিছলের পরেই পড়া হইত। কেননা, সাধারণভাবে পথ চলিলে ঘন্টায় তিন মাইল চলা যায়। সুতরাং সূর্যাস্তের দেড় কি পৌনে দুই ঘন্টা পূর্বে আছরের নামায পড়া হইলেও চারি মাইল পথ অতিক্রম করার পরও সূর্য দিগন্তের উপরে থাকে।
৬. সুনানু নাসাঈ শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ২৩৮~২৪৩, ইমাম আবূ আবদির রাহমান আহমদ ইব্ন শু'আয়ব আন্-নাসাঈ(র), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
[ এখানে আসরের ওয়াক্ত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহ উপরোক্ত গ্রন্থসমূহের আলোচনায় চলে এসেছে বিধায় আর উল্লেখ্য করা হল না।]
৭. সুনানু ইবনে মাজাহ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ২৬৮, আবূ 'আবদুল্লাহ্ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াজীদ মাজাহ্ আল-কাযবীনী
অনুচ্ছেদঃ 'আসরের সালাতের ওয়াক্ত
৬৮২. মুহাম্মদ ইবন রুমহ(রঃ)...আনাস ইবন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সূর্য উপরে পূর্ণ উজ্জ্বল থাকাকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) 'আসরের সালাত আদায় করতেন। এরপর সালাত শেষে কোন গমনকারী তার আওয়ালী নামক বাসস্থানে যেত অথচ তখনও সূর্য উপরে থাকত।
৬৮৩. আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা(রঃ)...'আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (সঃ) 'আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন, যখন সূর্যের আলো আমার কক্ষে বিচ্ছুরিত হতো। এরপর সূর্যের তাপ অনুভূত হতো না।
[উপরোক্ত হাদীস সমূহ অধ্যয়ন করলে স্পটতই বোঝা যায় বর্তমানে আমাদের দেশে সময়ে আছরের সালাত আদায় করা হয় তা মুস্তাহাব ওয়াক্তেরই অন্তর্গত। কারন তখন নামাযের সময় সূর্যের বর্ণ হলুদ হয় না, তেজ বিদ্যমান থাকে, সরাসরি সূর্য্যের দিকে তাকানো যায় না। নামাযে শেষ করার আরো সময় পরে সূর্যের আলোতে আর তাপ অনভূত হয় না। এটাও জানা যায়, আসল ছায়া বাদে ছায়া দ্বিগুন হলে আছরের সালাত পড়া ভাল। লোকজনের সুবিধার জন্য কিছু সময় দেরীতে পড়লেও অসুবিধা নেই। তবে সূর্য হলুদ হবার পর মাকরুহ ওয়াক্ত শুরু হয়। মাকরূহ ওয়াক্তের আগেই জলদী আসরের সালাত আদায় করা উচিত। হাদীস শরীফে অন্যান্য হাদীসে আসরের সালাত হতে বিমুখ ব্যক্তির উপর ভয়াবহ অসন্তুষ্টির কথা এসেছে।--লেখক]
No comments:
Post a Comment