Featured Post

I SAID NO TO QUANTUM METHOD

পূর্বে পোস্ট আকারে প্রকাশিত। কারও সাথে ঝগড়া করার জন্য এটা দেইনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কেউ মানতে না পারলে আমার কিছু করার নেই।  আ...

Tuesday, November 4, 2014

নামাযের সময় বিভ্রান্তি (আসর)

১. বুখারী শরীফ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা-১২~১৬, ইমাম মুহাম্মাদ ইব্‌ন ইসমাঈল বুখারী (রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

৫১৪. হাফ্‌স ইব্‌ন উমর (রঃ)...আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী(সঃ)......তিনি আসরের সালাত আদায় করতেন এমন সময় যে, আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রানে পৌছে আবার ফিরে আসতে পারত, তখনও সূর্য সতেজ থাকত... [হাদীসে অংশবিশেষ]

৫১৭. ইব্‌রাহীম ইব্‌ন মুনযির (রঃ)...আয়িশা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এমন সময় আসরের সালাত আদায় করতেন যে, তখনো সূর্যরশ্মি ঘরের বাইরে যায়নি।

৫১৮. কুতাইবা(রঃ)...আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এমন সময় আসরের সালাত আদায় করেছেন যে, সূর্যরশ্মি তখনো ঘরের মধ্যে ছিল, আর ছায়া তখনো তাঁর ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েনি।

৫১৯. আবূ নু'আইম(রঃ)...আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী(সাঃ) আসরের সালাত আদায় করতেন, আর সূর্যরশ্মি তখনো আমার ঘরে থাকত। সালাত আদায় করার পরও পশ্চিমের ছায়া ঘরে দৃষ্টিগোচর হত না। আবূ আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রঃ)] বলেন, ইমাম মালিক, ইয়াহ্‌ইয়া ইব্‌ন সাঈদ, শুআইব ও ইব্‌ন আবূ হাফস্‌(রঃ) উক্ত সনদে এ হাদীসটির বর্ণনায়, 'সূর্যরশ্মি আমার ঘরের ভিতরে থাকত, ঘরের মেঝে ছায়া নেমে আসেনি' এরূপ বলেছেন।

৫২০. মুহাম্মদ ইব্‌ন মুকাতিল(রঃ)...সায়্যার ইব্‌ন সালামা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি ও আমার পিতা আবূ বারযা আসলামী (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ফরয সালাতসমূহ কিভাবে আদায় করতেন? তিনি বলেন, আল-হাজীর,......আর আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, তারপর আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রান্তে তার ঘরে ফিরে যেতো আর সূর্য তখনও সতেজ থাকতো।.... [হাদীসে অংশবিশেষ]

৫২১. আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন মাসলামা(রঃ)...আনাস ইব্‌ন মালিক(রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা (রাঃ) এর সঙ্গে আসরের সালাত আদায় করতাম। সালাতের অর লোকেরা আমর ইব্‌ন আওফ গোত্রের মহল্লায় গিয়ে তাদেরকে সালাত আদায় করা অবস্থায় পেত।১

টীকাঃ বণু 'আম্‌র মদীনা শরীফ থেকে দু'মাইল দূরে কুবা নামক স্থানে বসবাসরত ছিল। এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, মসজিদে নববীতে আসরের সালাত একটু আগে আদায় করা হত। আর অপরাপর মসজিদে একটু বিলম্বে আদায় করা হত। ইমাম আবূ হানীফা(রঃ) সাধারন মানুষের প্রতি লক্ষ্য রেখে অপর হাদীসের আলোকে দেরীতে আসর পড়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে অবশ্যই তা সূর্যকিরণ নিষ্প্রভ হওয়ার আগে হতে হবে।

৫২২. মুহাম্মদ ইব্‌ন মুকাতিল(রঃ)....আবূ উমামা(রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একবার আমরা উমর ইব্‌ন আবদুল আযীয (রঃ)-এর সঙ্গে যুহরের সালাত আদায় করলাম। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আনাস ইব্‌ন মালিক(রাঃ)-র কাছে গেলাম। আময়া গিয়ে তাঁকে আসরের সালাত আদায়ে রত পেলাম। আমি তাঁকে বললাম, চাচা! এ কোন সালাত যা আপনি আদায় করলেন? তিনি বললেন, আসরের সালাত। আর এ হলো রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সালাত, যা আমরা তাঁর সাথে আদায় করতাম।

৫২৩. আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন ইউসুফ(রঃ)...আনাস ইব্‌ন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আসরের সালাত আদায় করতাম, তারপর আমাদের কোন গমনকারী কুবার দিকে যেত এবং সূর্য যথেষ্ঠ উপরে থাকতেই সে তাদের কাছে পৌছে যেত।

৫২৪. আবুল ইয়ামান(রঃ)...আনাস ইব্‌ন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) আসরের সালাত আদায় করতেন, আর সূর্য তখনও যথেষ্ট উপরে উজ্জ্বল অবস্থায় বিরাজমান থাকত। সালাতের পর কোন গমনকারী 'আওয়ালী'র১ দিকে রওয়ানা হয়ে তাদের কাছে পৌছে যেত, আর তখনও সূর্য উপরে থাকত। আওয়ালীর কোন কোন অংশ ছিল মদীনা থেকে চার মাইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে।

টীকা-১: আওয়ালী বা উঁচু এলাকা। মদীনার উপকন্ঠে নজদের দিকের গ্রামগুলোকে আওয়ালী বা উঁচু এলাকা ধরা হত। আর তিহামার দিকের গ্রামগুলোকে 'সাফিলা' বা নিম্নএলাকা বলা হত।

২. সহীহ মুসলিম, ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃঃ ৩৯৫~৪১২,বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার।

১২৬৮. ইবনে শিহাব থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেছেন) 'উমার ইবনে 'আবদুল আযীয একদিন নামায পড়তে বেশ দেরী করে ফেললেন। ....... এরপর উরওয়া বললেনঃ নবী(সাঃ)-এর স্ত্রী 'আয়েশা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এমন সময় 'আসরের নামায পড়তেন যখন সূর্য কিরন তাঁর কামরার মধ্যে পড়তো। তখনো তা দেয়ালের ওপর উঠে যেতো না। [হাদীসের অংশবিশেষ]

টীকাঃ বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায়, জিবরাঈল (আঃ)দুইবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এভাবে নামায পড়িয়েছিলেন এবং প্রত্যেকবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই পড়িয়েছিলেন। তবে একবার নামায প্রথম ওয়াক্তসমূহে পড়িয়েছিলেন। আর দ্বিতীয়বার মুস্তাহাব বা শেষ ওয়াক্তে পড়িয়েছিলেন।

আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এমন সময় 'আসরের নামায পড়তেন যখন সূর্য-কিরন 'আয়েশার(রাঃ) কামরার ভিতর প্রবেশ করতো। একথা দ্বারা প্রমানিত হয় যে, বেশ কিছু বেলা থাকতে অর্থাৎ সূর্যাস্তের বেশ আগে তিনি আসরের নামায পড়তেন। কারণ সূর্য কিছু উপরে না থাকলে কামরার মধ্যে তার কিরন প্রবেশ করা সম্ভব নয়। তাই স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, সূর্য কিরন তখনও দেয়ালের ওপর উঠতো না।

১২৬৯. 'আয়েশা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ নবী(সাঃ) এমন সময় 'আসরের নামায পড়তেন যে, তখনও সূর্য-কিরন আমাদের মধ্যে ঝলমল করতো। বেশ কিছুক্ষন পরও কামরার মধ্যে ছায়া পড়ত না। আবু বকর বলেছেনঃ এরপরও বেশি কিছুক্ষন ছায়া উপরে উঠতো না।

১২৭০. উরওয়া ইবনে যুবায়ের থেকে বর্ণিত। (তিনি বলছেন) নবী(সাঃ)-এর স্ত্রী 'আয়েশা তাঁকে জানিয়েছেন যে, নবী (সাঃ) যে সময় 'আসরের নামায পরতেন তখনও সূর্যের কিরণ তার কামরার মধ্যে থাকতো এবং তা কামরার মধ্য থেকে উপরের দিকে (দেয়ালে) উঠে যেতো না।

১২৭১. [এটাও ১২৭০ হাদিসের মতই]

১২৭২. 'আবদুল্লাহ ইবনে 'আমর থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেছেন, ...তোমরা যখন আসরের নামায পড়বে তখন জেনে রেখো আসরের নামাযের সময় হলো সূর্য বিবর্ণ হয়ে হলুদ (সোনালী বা তাম্রবর্ণও বলা যেতে পারে) বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত।... [হাদীসের অংশবিশেষ। এই হাদীসে প্রতি ওয়াক্তের সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে সম্ভবত]


১২৭৩. 'আবদুল্লাহ্‌ ইবনে 'আমর নবী(সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ...... আর সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালী বা তাম্রবর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত 'আসরের নামাযের ওয়াক্ত থাকে...... [হাদীসের অংশবিশেষ]

১২৭৫. 'আবদুল্লাহ ইবনে 'আমর(রাঃ) তকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেনঃ .....'আসরের নামাযের সময় থাকে সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালী বা তাম্রবর্ণ ধারন না করা পর্যন্ত। ... [হাদীসের অংশবিশেষ]

১২৭৬. 'আব্দুল্লাহ ইবনে 'আমর ইবনে আস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-কে নামাযে সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বললেনঃ ... আসরের নামযে সময় থাকে সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালী বা তাম্রবর্ণ ধারণ করার পর উপরের প্রান্ত ভাগ অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত।

১২৭৮. সুলাইমান ইবনে বুরাইদা তার পিতা বুরাইদার মাধ্যমে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। [একব্যক্তির নামাযের ওয়াক্ত নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে নবী (সাঃ) প্রথমদিন] এরপর(আসরের সময় হলে)তিনি তাকে [বেলাল (রাঃ) কে] আসরের নামাযের ইকামাত দিতে বললেন। বেলাল ইকামাত দিলেন। নবী (সাঃ) তখন 'আসরের নামায পরলেন। সূর্য তখনও বেশ উপরে ছিল এবং পরিষ্কার ও আলো ঝলমল দেখাচ্ছিলো।...... [দ্বিতীয় দিন] তিনি এমন সময় 'আসরের নামায পড়লেন সূর্য তখনও বেশ উপরে ছিল।তবে আগের দিনের তুলনায় বেশ দেরী করে পড়লেন...... এরপর জিজ্ঞেস করলেনঃ নামাযের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারী ব্যাক্তি কোথায়? লোকটি তখন বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমি উপস্থিত আছি। তখন রাসূলুল্লাহ(সাঃ) লোকটিকে বললেনঃ দুইদিন যে দুটি সময়ে আমি নামায পড়লাম এরই মধ্যবর্তী সময়টুকু হলো নামাযের ওয়াক্তসমূহ।

১২৯৫. আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্নিত। তিনি জানিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যে সময় 'আছরের নাময পড়তেন সূর্য তখনও আকাশের অনেক ওপরে অবস্থান করতো এবং তখন তার তেজ বিদ্যমান থাকতো। (অর্থাৎ তেজ কমে বর্ণ পরিবর্তন হত না)। নামায শেষে যার দরকার পড়তো সে মদীনার 'আওয়ালী বা শহরতলীর দিকে চলে যেতো এবং সেখানে পৌছার পরেও সূর্য আকাশের বেশ ওপরে থাকত। তবে বর্ণনাকারী কুতাইবা তার বর্ণনায় "তারা আওয়ালী বা শহরতলীর দিকে চলে যেতো" কথাটা উল্লেখ করেননি। অন্য সনদে হারূন ইবনে সাঈদ আয়লী ইবনে ওয়াহাব, 'আমর ও ইবনে শিহাবের মাধ্যমে আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন। আনাস ইবনে মালিক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আসরের নামায পড়তেন.... বলে শুরু করে হুবহু বর্ণনা করেছেন।

টীকাঃ মদীনার মূল শহরের আশেপাশের এলাকাকে আওয়ালী বলা হতো। যাকে আধুনিক ভাষায় শহরতলী বলা হয়। মদীনার এই শহরতলীর জনবসতিপূর্ণ এলাকা সর্বোচ্চ আট মাইল এবং সর্বনিম্ন দুই থেকে তিনমাইল দুরত্বে অবস্থিত ছিল। এর থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বেশ বেলা থাকতেই 'আসরের নামায পড়তেন। নামায শেষ করে একজন লোক ইচ্ছা করলে মদীনার শহরতলীর সর্বাপেক্ষা নিকটতম স্থানে অর্থাৎ দুই মাইল পথ হেঁটে গিয়ে উপনীত হতো। তখনও সূর্যের তেজ কমতো না বা বর্ণপরিবর্তন হতো না। আবার কোন কোন হাদীসে উল্লেখিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে আসরের নামায পড়ে লোকজন কেউ কেউ আমর ইবনে আওফ গোত্রের এলাকায় গিয়ে দেখতে পেতো যে, তারা সবেমাত্র আসরের নামায পড়ছে।

১২৯৭. আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন। আমরা রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর সাথে এমন সময় আসরের নামায পড়তাম যে তার পরে লোকজন বনী 'আমর ইবনে 'আওফ গোত্রের এলাকায় গিয়ে দেখতে পেতো যে তারা তখন মাত্র আসরের নামায পড়ছে।

টীকাঃ ইমাম নববী ও অন্য উলামাদের মতে, বনী আমর ইবনে আওফ গোত্রের এলাকা মদীনা থেকে শহরতলীর দিকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত ছিলো। সুতরাং একজন লোক রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর সাথে নামায পড়ার পর এই দুই মাইল হেঁটে বনী আমর ইবনে আওফ গোত্রের এলাকায় গিয়ে তাদেরকে আসরের আনাময পড়তে দেখতে পেত। এ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ওয়াক্তের প্রথমদিকে আসরের নাময পড়তেন। আর বনী আমর ইবনে আওফ পড়তো মধ্যবর্তী সময়ে। প্রথম কথা হলো, তারা যে সময় নামায পড়তো সে সময় নামায পড়া জায়েজ। দ্বিতীয় কথা হলো, তারা ছিল সবাই কৃষিজীবী মানুষ। তাই তাদেরকে ক্ষেতে-খামারে ও বাগানে কাজ করতে হতো। মাঠের এসব কাজ শেষ করে তারা নামাযের ওযু ও পবিত্রতা অর্জন করে জামায়াতে নামায পড়ার জন্য একত্র হতো। তাই তাদের আসরের নামাযে এতটুকু দেরী হয়ে যেতো।

এই হাদীস তেকে ইমাম শাফেয়ী, আহমাদ ও অন্য উলামাগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, মুল ছায়া বাদে প্রতি বস্তুর ছায়া যখন বস্তুটির সমান দৈর্ঘ্য হবে তখনই আসরের নামাযের সময় হয়ে যাবে। তবে হযরত যাবির ও আবদুল্ললাহ্‌ ইবনে আব্বাস কর্তৃক নামাযের ওয়াক্ত অধ্যায়ে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার ভিত্তিতে ইমাম আবু হানীফা(রঃ) বলেছেনঃ প্রত্যেক বস্তুর মূল ছায়া বাদে দ্বিগুণ ছায়া হলেই আসরের নামাযের সময় হয়।

৪. মুয়াত্তা, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৮~৬১ ইমাম মালিক (রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

রেওয়ায়ত ২

উরওয়াহ (রঃ) বলিলেনঃ নবী করীম(সাঃ) এর সহধর্মিনী আয়েশা (রাঃ) আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করিয়াছেনঃ রাসূলুল্লাহ(সাঃ) যখন আসর পড়িতেন তখনও সূর্য্যের আলো আয়েশার হুজরাতে থাকিত। আলো ঘরের মেঝে হইতে প্রাচীরে উঠার পূর্বে।

রেওয়ায়ত ৬

নাফি' (রঃ) হইতে বর্ণিত - উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) তাঁহার (অধীনস্থ) কর্মকর্তাদের নিকট লিখিয়াছেনঃ ....... আর আসরের নামায পড়িও যখন সূর্যত উর্ধ্বে উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন থাকে। (সেই সময় হইতে) সূর্যাস্তের পূর্বে সওয়ারী ব্যাক্তি দুই অথবা তিন ফরসখ চলিতে পারে এতটুকু সময় পর্যন্ত...... [হাদীসের অংশবিশেষ]

রেওয়ায়ত ৭

মালিক ইব্‌ন আসবাহী (রাঃ) হইতে বর্ণিত - উমর ইব্‌ন খাত্তাব(রাঃ) আবূ মূসা আশ'আরী(রাঃ)-এর নিকট (পত্র) লিখিয়াছেনঃ ......আর আসর পড় যখন সূর্য উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন থাকে, উহাতে হলুদ বর্ণ প্রকাশ হওয়ার পূর্বে...... [হাদীসের অংশবিশেষ]

রেওয়ায়ত ৯

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন রাফি'(রঃ) আবূ হুরায়রা(রাঃ)-এর নিকট নামাযের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করিলেন। উত্তরে আবু হুরায়রা (রাঃ) বলিলেনঃ ...আর আসর পড় যখন তোমার ছায়া তোমার দ্বিগুন হয়। [হাদীসের অংশবিশেষ]

রেওয়ায়ত ১০

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) বলিয়াছেনঃ আমরা আসর পড়িতাম, অতঃপর লোকজন বাহির হইতেন (কুবায় অবস্থিত) বনি আমর ইবন আউফ-এর বস্তির দিকে। তথায় তাঁহাদিগকে এই অবস্থায় পাইতেন যে, তাঁহারা আসরের নামায পড়িতেছেন।

রেওয়ায়ত ১১

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) বলেনঃ আমরা আসর পড়িতাম। অতঃপর গমনকারী কুবার দিকে গমন করিতেন এবং তাঁহাদের (কুবাবাসীদের) নিকট আসিয়া পৌছিতেন (এমন সময় যে), সূর্য তখনও উঁচুতে।

৪. আবু দাঊদ শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা-২২৬~২২৮, ইমাম আবু দাঊদ (রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

৪০৪. কুতায়বা ইব্‌ন সাঈদ...আনাস্‌ ইব্‌ন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আসরের নামায এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্য উপরে উজ্জল অবস্থায় থাকত এবং কোন ব্যাক্তি নামায শেষে "আওয়ালীয়ে মদীনা" বা মদীনার উচ্চ শহরতলীতে যাওয়ার পরেও সূর্য উপরে দেখতে পেত--(বুখারী, মুসলিম, ইব্‌ন মাজা, নাসাঈ)

টীকাঃ আওয়ালী হল মদীনার পাশ্ববর্তী শহরতলীতে অবস্থিত একটি গ্রামের নাম। মদীনা হতে এর নিকটতম দূরত্ব দুই মাইল এবং শেষ প্রান্তের দূরত্ব হল ৮ মাইল।-(অনুবাদক)

৪০৫. আল-হাসান ইব্‌ন আলী...ইমাম যুহরী (রঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আওয়ালী নামক শহরতলীর দূরত্ব মদীনা হতে ২ অথবা ৩ মাইল। রাবী বলেন, সম্ভবতঃ ইমাম যুহরী ঐ স্থানের দূরত্ব চার মাইলও বলেছেন।


৪০৬. ইউসুফ্‌ ইব্‌ন মুসা...খায়সামা(রঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূর্য জীবিত থাকার অর্থ তার উষ্ণতা অবশিষ্ট থাকা বা অনুভব করা।

৪০৭. আল-কানাবী...উরওয়া(রঃ) বলেন, আয়েশা(রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এমন সময় আসরের নামায আদায় করতেন যখন সূর্‍্যের রশ্মি তাঁর ঘরের মধ্যে থাকত এবং তা দেয়ালে উঠার পূর্বে--(বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, ইব্‌ন মাজা, মালেক, তিরমিযী)


৪০৮. মুহাম্মাদ ইব্‌ন আবদুর রহমান--ইয়যীদ থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট মদীনাতে আগমন করি। এ সময় তিনি আসরের নামায--সূর্যের রঙ উজ্জ্বল থাকাবস্থায় (সূর্যের রঙ পরিবর্তিত হওয়ার পূর্বে) আদায় করতেন।

টীকাঃ হানাফী মাযহাবের মতানুযায়ী প্রত্যেক বস্তুর "আসল ছায়া" বাদে--যখন তার ছায়া দ্বিগুন হয় তখন আসরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত এই নামায আদায় করা যায়। তবে সূর্যের রঙ যদি পরিবর্তিত হয়ে যায়, তখন মাকরুহ সময় এসে যায়। কোন কারণবশতঃ কেউ যদি আসরের নামায যথাসময়ে আদায় করতে অপারগ হয়, তবে ঐ ব্যাক্তির জন্য ঐ দিনের আসরের নামায (কাযা না করে) সূর্যাস্তের সময়েও আদায় করা জায়েয।-(অনুবাদক)

৫. তিরমিযী শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা-১৫৬~১৫৮, ইমাম আবূ ঈসা আত তিরমিযী (রঃ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

অনুচ্ছেদঃ আসরের সালাত জলদি আদায় করা

১৫৯. কুতায়বা(রঃ)...আইশা(রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল(সাঃ) আসরের সালাত আদায় করেছেন আর তখনও সূর্যের আলো আমার কক্ষের মাঝে ছিল, আলোর ছায়া কক্ষ থেকে উঠে যায়নি।

এই বিষয়ে আনাস, আবূ আরওয়া, জাবির, রাফি' ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।
আসরের সালাত পিছিয়ে পড়া সম্পর্কে একটি হাদীছ রাফি' (রাঃ)এর বরাতেও রাসূল(সাঃ) থেকে বর্ণিত আছে; কিন্তু এটি সহীহ নয়।

ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী(রঃ) বলেনঃ আইশা(রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি হাসান ও সহীহ।

হযরত উমর, আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন মাসঊদ, আইশা, আনাস(রাঃ)-এর মত ফকীহ সাহাবীগণ এবং একাধিক তাবিঈও আসরের সালাত জলদী আদায় করার মত গ্রহণ করেছেন। তাঁরা আসরের সালাত পিছিয়ে পড়াকে মাকরুহ্‌ বলে অভিমত দিয়েছেন। আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন মুবারাক, (ইমাম আবূ হানীফা), শাফিঈ, আহমদ, ইসহাক (রঃ)-এর অভিমত এ-ই।

অনুচ্ছেদঃ আসরের সালাত পিছিয়ে আদায় করা।

১৬১. আলী ইব্‌ন হুজর(রঃ)...উম্মু সালমা(রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ রাসূল(সাঃ) যুহরের ক্ষেত্রে তোমাদের তুলনায় বেশি জলদী করতেন আর তোমরা আসরের ক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে বেশি জলদী করছ।


ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রঃ) বলেনঃ ইসমাঈল ইব্‌ন উলায়্যা-ইব্‌ন জুরায়জ-ইব্‌ন আবি মুলায়কা-উম্মু সালমা (রাঃ) সনদেও হাদীছটি অনুরূপভাবে বর্ণিত আছে।

৫. মেশকাত শরীফ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৬৬~১৭৫। মাওলানা নূর মুহাম্মাদ আ'জমী (রঃ), এমদাদিয়া পুস্তকালয়, লিঃ। ঢাকা।

৫৩৪--(১) হয়রত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলিয়াছেনঃ ...আর আছরের সময় (ইহার [যুহরের] পর হইতে) যে পর্যন্ত না সূর্য হলদে হয়... [হাদীসের অংশবিশেষ]
ব্যাখ্যাঃ ...আছরের নামায দুই মিছলের [ছায়া আসলী বাদ ছায়া দুই গুন হওয়া পর্যন্ত] পর পড়াই উত্তম। ইহাতে সতর্কতা রহিয়াছে।


"যে পর্যন্ত হলদে না হয়"--কাহারও মতে সূর্য যখন থালার ন্যায় দেখায়, দৃষ্টিতে চোখ ঝলসায় না, তখনই উহা হলদে হয়। আর কাহারও মতে সূর্যের আলো যখন গাছ-গাছড়ার মাথায় পতিত হয় এবং অনেকটা নিষ্প্রভ ও বিকৃত দেখায়, তখনই উহা হলদে হয়। মোটকথা, হলদে হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আছরের নির্দোষ সময়। অতঃপর অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত মাকরূহ সময়।

৫৩৬--(৩) হযরত ইব্‌নে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলিয়াছেনঃ হযরত জিবরীল(আঃ) খানায়ে কা'বার নিকট দুইবার আমার ইমামতি করিয়াছেন। ...আছর পড়াইলেন [প্রথমদিন] যখনই প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তাহার একগুন হইল;...... [দ্বিতীয়দিন] আছর পড়াইলেন যখন তাহার ছায়া দুইগুন হইয়া গেল;... [হাদীসের অংশবিশেষ]

৫৩৮--(৫) হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হইতে বর্নিত আছে, তিনি নিজ প্রশাসকদের নিকট লিখিলেন, ...... আছর পড়িবে যখন সূর্য উচ্চে পরিষ্কার সাদা থাকে, যাহাতে একজন (উট) সওয়ার সূর্য অদৃশ্য হইবার পূর্বেই দুই বা তিন 'ফর্সখ' অতিক্রম করিতে পারে...[হাদীসের অংশবিশেষ] ফর্সখ,--তিন মাইল।

৫৪০--(১)হযরত সাইয়্যার ইবনে সালামা(রাঃ) বলেন, আমি ও আমার পিতা (সাহাবী)হযরত আবু বারযা আসলামীর নিকটে গেলাম। আমার পিতা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ফরয নামায কিরূপে পড়িতেন? তিনি বলিলেন, ...এবং আছর পড়িতেন যাহার পর আমাদের কেহ মদীনার শেষ প্রান্তে তাহার বাড়ীতে ফিরিত, অথচ সূর্য তখনও পরিষ্কার থাকিত...... [হাদীসের অংশবিশেষ]

৫৪১--(২) হযরত মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে হাসান ইবনে আলী(রাঃ) বলেন, আমরা সাহাবী হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ্‌কে নবী করীম(সাঃ)এর নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি বলিলেন, ...আছর পড়িতেন--আর তখনও সূর্য দীপ্তিমান থাকিত... [হাদীসের অংশবিশেষ]

৫৪৪--(৫) হযরত আনাস(রাঃ)বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) আছরের নামায পড়িতেন, তখন সূর্য উচ্চ ও উজ্জ্বল থাকিত। অতঃপর কেহ আওয়ালীর (উচ্চ স্থানগুলির) দিকে যাইত এবং তথায় পৌছিত, তখনও সূর্য উপরে থাকিত, অথচ আওয়ালীর কোন কোন স্থান মদীনা হইতে চারি মাইল বা তাহার কাছাকাছি দূরে।--মোত্তাঃ

ব্যাখ্যাঃ এই উচ্চ আবাস বা উচ্চ স্থানগুলি মদীনা শহর হইতে মসজিদে বনী কোরায়যার দিকে অবস্থিত। ইহা হইতে বুঝা যায় না যে, আছরের নামায এক মিছলের পরেই পড়া হইত। কেননা, সাধারণভাবে পথ চলিলে ঘন্টায় তিন মাইল চলা যায়। সুতরাং সূর্যাস্তের দেড় কি পৌনে দুই ঘন্টা পূর্বে আছরের নামায পড়া হইলেও চারি মাইল পথ অতিক্রম করার পরও সূর্য দিগন্তের উপরে থাকে।

৬. সুনানু নাসাঈ শরীফ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ২৩৮~২৪৩, ইমাম আবূ আবদির রাহমান আহমদ ইব্‌ন শু'আয়ব আন্‌-নাসাঈ(র), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

[ এখানে আসরের ওয়াক্ত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহ উপরোক্ত গ্রন্থসমূহের আলোচনায় চলে এসেছে বিধায় আর উল্লেখ্য করা হল না।]

৭. সুনানু ইবনে মাজাহ, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ২৬৮, আবূ 'আবদুল্লাহ্‌ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াজীদ মাজাহ্‌ আল-কাযবীনী

অনুচ্ছেদঃ 'আসরের সালাতের ওয়াক্ত

৬৮২. মুহাম্মদ ইবন রুমহ(রঃ)...আনাস ইবন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সূর্য উপরে পূর্ণ উজ্জ্বল থাকাকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) 'আসরের সালাত আদায় করতেন। এরপর সালাত শেষে কোন গমনকারী তার আওয়ালী নামক বাসস্থানে যেত অথচ তখনও সূর্য উপরে থাকত।

৬৮৩. আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা(রঃ)...'আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (সঃ) 'আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন, যখন সূর্যের আলো আমার কক্ষে বিচ্ছুরিত হতো। এরপর সূর্যের তাপ অনুভূত হতো না।

[উপরোক্ত হাদীস সমূহ অধ্যয়ন করলে স্পটতই বোঝা যায় বর্তমানে আমাদের দেশে সময়ে আছরের সালাত আদায় করা হয় তা মুস্তাহাব ওয়াক্তেরই অন্তর্গত। কারন তখন নামাযের সময় সূর্যের বর্ণ হলুদ হয় না, তেজ বিদ্যমান থাকে, সরাসরি সূর্য্যের দিকে তাকানো যায় না। নামাযে শেষ করার আরো সময় পরে সূর্যের আলোতে আর তাপ অনভূত হয় না। এটাও জানা যায়, আসল ছায়া বাদে ছায়া দ্বিগুন হলে আছরের সালাত পড়া ভাল। লোকজনের সুবিধার জন্য কিছু সময় দেরীতে পড়লেও অসুবিধা নেই। তবে সূর্য হলুদ হবার পর মাকরুহ ওয়াক্ত শুরু হয়। মাকরূহ ওয়াক্তের আগেই জলদী আসরের সালাত আদায় করা উচিত। হাদীস শরীফে অন্যান্য হাদীসে আসরের সালাত হতে বিমুখ ব্যক্তির উপর ভয়াবহ অসন্তুষ্টির কথা এসেছে।--লেখক]

ক্রেজি!

আচ্ছা মানলাম, মানলাম ছেলেরা খারাপ!

ছেলেদের গায়ে জোড় বেশি, ছেলেরা রেপ করতে পারে। বিয়ের পর পর ছেলেদের সাহস বেড়ে যায়। বিবাহিত ছেলেরা বেশি বেশি রেপ করে!

মানলাম!

ছেলেরা বউতে সন্তুষ্ট হয় না। পরকীয়া করে, কাজের মেয়ের পিছে লাগে।

মানলাম! মানলাম!

ছেলেরা সাংসারিক কোন দায়িত্ব পালন করে না। সারাদিন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়, বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজীতে ব্যস্ত থাকে। সন্তানদের জন্য তার কোন ভালবাসা, দায়িত্ববোধ নেই।
মানলাম, মেনে নিলাম!

ছেলেরা সংসারের জন্য কোন স্যাক্রিফাইস করে না। মেয়েদের মত বাপ-মা ছেড়ে আসে না। মেয়েদের কোন মূল্য দেয় না। তাদের কাজকর্মের কোন দামই নেই ছেলেদের কাছে।

মানলাম! মানলাম!! মানলাম!!!

খবরদার! কোন ছেলের ত্রিসীমানায় আসবা না। কোন ছেলেকে ভালবাসবা না। কোন ছেলেকে বিয়ে করবা না। যাও, ভাল কোন মেয়েকে বিয়ে করে সংসার করো।

গুড লাক এন্ড গেট লস্ট!

নিয়তের বরকত!

প্রথমে দুটো হাদিস বর্ণনা করে নেই।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর শক্তিধর মহান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সৎ কাজ ও অসৎ কাজ লিখে দিয়েছেন। এরপর তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের সংকল্প করে তা করেনি, তাকে আল্লাহ্‌ তাআলা একটি পূর্ণ নেকীর সওয়াব দান করেন। আর যদি সংকল্পের পর এ কাজ করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত, এমনকি তার থেকেও বেশি গুণ সওয়াব দান করেন। আর যদি কোন গুনাহর কাজের সংকল্প করে তা না করে, তাহলে আল্লাহ্‌ তার বিনিময়ে একটি পূর্ণ সওয়াব লিখে দেন। আর যদি সংকল্প করার পর সে গুনাহর কাজটি করে, তাহলে আল্লাহ্‌ তাআলা তার একটি মাত্র গুনাহ লেখেন। তথ্যসূত্রঃ (বুখারী ও মুসলিম)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলতে শুনেছিঃ অতীতকালে তিনজন লোক কোথাও চলার পথে রাত যাপনের জন্য তাদেরকে এক পর্বত গুহায় আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তারা সেখানে প্রবেশ করার পর পাহাড়ের চূড়া থেকে একখানা পাথর খসে পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। এরপর তারা বলল-"তোমরা একমাত্র আল্লাহর নিকট তোমাদের খাঁটি নেক আমলকে ওসীলা করে দো'আ করলে, পাথরের এ বিপদ থেকে মুক্তি পেতে পার।" তাদের একজন বললঃ হে আল্লাহ্‌! আমার পিতামাতা ছিলেন খুবই বৃদ্ধ। আর আমি তাঁদেরকে আমার পরিবার-পরিজনের আগেই দুধ পান করিয়ে দিতাম। একদিন জ্বালামী কাঠের সন্ধানে আমাকে বহুদূর যেতে হল এবং যথাসময়ে বাড়ি ফিরে আসতে পারলাম না, এমনকি তাঁরা ঘুমিয়ে পড়লেন। আমি তাঁদের রাতে খাবার জন্য দুধ দোহন করে এনে দেখি তাঁরা ঘুমিয়ে আছেন। অতঃপর আমি তাঁদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা এবং তাঁদের আগে পরিবার-পরিজনকে দুধ খাওয়াতেও আমি অপছন্দ করলাম। অতএব আমি দুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে তাঁদের জাগ্রত হওয়ার অপেক্ষায় রইলাম। অপরদিকে আমার সন্তানগুলো পায়ের নিকট ক্ষুধায় গড়াগড়ি করছিল। এমতাবস্থায় ভোর হয়ে গেল। তারপর তাঁরা জেগে উঠে দুধ পান করলেন। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি আপনারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করে থাকি তবে এ পাথরের কারনে আমরা যে বিপদে পড়েছি তা থেকে আমাদের মুক্তি দিন। এত পাথরখানা কিছুটা সরে গেল বটে, কিন্তু এর ফাঁক দিয়ে তারা বের হতে পারল না। দ্বিতীয় ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমার এক চাচাত বোন ছিল। আমি তাকে সর্বাপেক্ষা বেশি ভাল বাসতাম। অন্য এক বর্ণনায় আছে, পুরুষ নারীকে যত বেশি ভালবাসতে পারে আমি তাকে তত বেশি ভালবাসতাম। অতপর আমি তার সঙ্গে মিলনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলাম। সে আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। এমনকি এক দুর্ভিক্ষের বছর সে আমার নিকট এল। সে আমার নিকট নিজেকে নিরালায় অর্পণ করবে শর্তে আমি তাকে ১২০ টি স্বর্ণমুদ্রা দিলাম। এতে সে রাজী হয়ে গেল। আমি যখন তাকে নিরালায় পেলাম, অন্য এক বর্ণনায় আছেঃ যখন আমি তার দু'পায়ের মাঝখানে বসলাম, তখন সে বললঃ "আল্লাহকে ভয় কর এবং অনাধিকারে আমার কুমারীত্ব নষ্ট করো না।" তখনই আমি তার থেকে ফিরে গেলাম। অথচ মানুষের মধ্যে সে আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়ে ছিল। আমি তাকে যে স্বর্ণমুদ্রা দিয়েছিলাম তাও ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ আপনরই সন্তুষ্টির লাভের উদ্দেশ্যে করে থাকি, তবে আমাদের এ বিপদ দূর করে দিন। এতে পাথরখানা আরও কিছুটা সরে গেল। কিন্তু তাতেও তারা বের হতে সমর্থ হল না। তৃতীয় ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমি কয়েকজন শ্রমিক রেখেছিলাম। তাদের সবাইকে তাদের পারিশ্রমিক দিয়ে দিলাম। কিন্তু একজন তার পারিশ্রমিক রেখে চলে গেল। আমি তার পারিশ্রমিক ব্যবসায় খাটালাম। তাতে ধন-সম্পদ অনেক বেড়ে গেল। কিছুকাল অতিবাহিতের পর সে ব্যক্তি আমার নিকট এসে বললঃ হে আল্লাহর বান্দাহ্‌! আমার পারিশ্রমিক দিয়ে দিন। আমি বললামঃ উট, গরু, ছাগল, চাকর-বাকর যা কিছু দেখছ এ সবই তোমার পারিশ্রমিক। সে বললঃ 'হে আল্লাহ্‌র বান্দাহ্‌! তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করো না।' আমি বললাম, 'আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না।' এরপর সে সব কিছুই নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই রেখে গেল না। হে আল্লাহ! আমি যদি আপনারই সন্তুষ্টি লাভের আশার উদ্দেশ্যে এ কাজটি করে থাকি, তাহলে আমাদের এ বিপদ থেকে মুক্তি দিন। এরপর পাথরখানা সরে গেল। অতপর তারা সকলেই বের হয়ে চলে গেল।

তথ্যসূত্রঃ (বুখারী ও মুসলিম)

[শব্দার্থে রিয়াদুস সালহীন ১ম খন্ড। পৃষ্ঠা-৯,১০,১১]

এবার নিজে কিছু কথা বলি। অন্য হাদীসে এসেছে, "প্রত্যেক কাজের ফলাফল তার নিয়তের উপর নির্ভরশীল।" যে যেমন নিয়ত করতে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য তেমন ফায়সালা করবেন।

আমাদের দৈনন্দিক কাজগুলোর পিছনের নিয়ত একটু যাচাই করা দরকার। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ "মানব ও জ্বিন জাতিকে আমি শুধু আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের থেকে কোন রিযিক চাই না এবং তাদের থেকে আমি খাবারও চাই না।" (সূরা আয্‌যারিয়াতঃ ৫৬-৫৭)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায় একজন মুসলমানের যাবতীয় কাজ ইবাদতের মধ্যে পড়ে। মুসলমানের খাওয়া, ঘুম, বিবাহ, সংসার ইত্যাদি সবই ইবাদত। যদি তাতে নিয়ত ঠিক থাকে এবং তা আল্লাহর রাসূল(সাঃ) এর দেখানো পথে হয়।

কেউ যদি এই নিয়তে খাবার খায় যে, এই খাবার খেয়ে আমার দেহে যে শক্তি হবে তা দিয়ে আমি আল্লাহর ইবাদত করব। তবে ইনশাআল্লাহ খাবার খাওয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য (ক্ষুধা নিবারন) পূর্ণ হবেই উপরন্তু নিয়তের বরকতে নেকীর অধিকারী হবেন। আর কারো যদি শুধু ক্ষুধা নিবারনের উদ্দেশ্য থাকে তবে তাতো পুরা হবে কিন্তু নেকী থেকে বঞ্চিত হল।

কেউ যদি এই নিয়তে বিবাহ করে যে, এর দ্বারা সে আল্লাহর হুকুম পুরা করবে, হারামগমন থেকে বেঁচে থাকবে তবে বিবাহের দ্বারা তার শারীরিক ও মানসিক চাহিদাতো মিটবেই উপরি হিসেবে মহামূল্যবান নেকী অর্জন হবে।

কেউ যদি চাকুরী এই নিয়তে করে যে এর দ্বারা তার হালাল উপার্জনের একটা ব্যবস্থা হবে তবে সে তার পরিবারস্থ সকলের ভরণপোষন তো করলই আবার নেকীরও ভাগিদার হল।

কোন ছাত্র যদি নিয়ত করে আমি পড়াশুনা করছি, আমার পড়াশুনালদ্ধ জ্ঞান দ্বারা আমি ইসলামের খেদমত করব। রাসূলের (সাঃ) সুন্নাহ জিন্দা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব তবে সে ইসলামের খেদমত করতে পারুক বা না পারুক, তারা দ্বারা রাসূল (সাঃ) এর কোন সুন্নাহ জিন্দা হোক বা না হোক, নিজের নিয়তের বরকতে নেকীর ভাগিদার হবে।

এমনিভাবে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র সকল কাজ দাত ব্রাশ করা, গোসল করা, বাজার-সদাই, সন্তান-সন্ততির লালন পালন, বাবা-মার খেদমত-ইত্যাদি সকল কাজ ইবাদতের মধ্যেই গন্য হবে যখন তার নিয়ত ঠিক হবে এবং রাসূল (সাঃ) এর তরীকায় হবে।

কিছুদিন আগে কম্বোডিয়ান এক ভাইয়ের কাছে ঘটনা শুনলাম। করাচীর এক মসজিদে এক তাবলীগ জামাত সবাইকে বিদেশে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে সফর করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করছিল। সেখানে সবাই নিয়ত করলেও একটি কিশোর ছেলে নিয়ত করছিল না। তাকে যখন বক্তা বললেন, তুমিও নিয়ত করো। তখন সে জবাব দিল, আমার চুল ফেলে দেবার জন্য ব্লেড কেনার মত পয়সা আমার কাছে নেই। আমি কিভাবে বিদেশ সফর করব? ভাই বললেন, তুমি এখন নিয়ত করো। তোমার যখন সুযোগ হবে তখন যাবে। সে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যদি আমাকে যেতে না হয় তবে আমি নিয়ত করলাম।

অতপর সেই ছেলেটির যখন ৬৭ বছর বয়স তখন তার পাসপোর্টে ৭০ টি দেশের সীল ছিল! (অথবা ৭০ বছরে ৬৭)

মহান আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,"তোমাদের কুরবানীর পশুর গোশত ও রক্ত আল্লাহ্‌র কাছে কক্ষনো পৌছে না। বরং তোমাদের তাকওয়া বা আল্লাহ্‌ ভীতিই তার কাছে পৌছে। (সূরা হজ্বঃ৩৭)

অন্য হাদিসে আছে, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাদের বিচার হবে তাদের মধ্যে একজন শহীদ থাকবেন। তাকে আল্লাহর দরবারে দাড় করিয়ে তার উপর আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামত সমূহ দেখানো হবে। সে সেগুলো চিনতে পারবে এবং স্বীকার করে নেবে। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, এই সমস্ত নেয়ামতের বিপরীতে তুমি কি করেছো? তখন সে বলবে, ইয়া আল্লাহ্‌! আমি তোমার রাহে যুদ্ধ করেছি এবং শহীদ হয়েছি। এরশাদ হবে, মিথ্যে বলছো। সেটাতো তুমি এইজন্য করেছিলে যে, লোকে তোমাকে বীর বলবে। তাতো বলা-ই হয়েছে।

এরপর তাকে ফায়সালা শোনানো হবে এবং অধমুখো করে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

তারপর যার বিচার হবে তিনি একজন আলেম হবেন। তাকে ডেকে এনে তার উপর প্রদত্ত নেয়ামত সমূহ দেখানো হবে। সে তা স্বীকার করে নিবে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, এইসব নেয়ামতের মোকাবেলায় তুমি কি আমল করেছো? সে বললে, ইয়া আল্লাহ্‌! আমি সারাজীবন তোমার কালামের জ্ঞান ধারন করেছি। তার রক্ষনাবেক্ষন করেছি। এরশাদ হবে, মিথ্যে বলছো! সেসব তো তুমি করেছিলে যেন লোকে তোমাকে বড় আলেম বলবে। সেতো বলা-ই হয়েছে।

এরপর তাকেও ফায়সালা শোনানো হবে এবং অধোমুখে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

তারপর যাকে বিচারের জন্য আনা হবে তিনি একজন ধনী লোক হবেন। তাকেও তার উপর প্রদত্ত নেয়ামত সমূহ দেখানো হবে। সে ওসব চিনতে পারবে। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে এই নেয়ামতের তুমি কি শুকরিয়া আদায় করেছো? সে বললে, আমার ধনসম্পদ আমি যথা সাধ্য আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় করেছি। বলা হবে, মিথ্যে বলছো। ওসবতো তুমি এই কারনে করেছিলে যে, লোকে তোমাকে দাতা বলবে। লোকেরা তাতো বলেছেই।

এরপর তাকেও ফায়সালা শোনানো হবে এবং অধোমুখো করে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের নিয়ত ভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করুন। লোকদেখানো আমল হতে হেফাজত করুন।

ছোট্ট আমাদের জীবন, সময় খুব অল্প। এই সময়ের মধ্যেই আমাদের পরকালের জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করতে হবে। সুতরাং এই ছোট্ট জীবনের সব কাজই যেন আমল হয়ে যায় সেভাবে আমরা আমাদের নিয়তকে সংশোধন করে নেব।

ইনশাআল্লাহ! আমরা সফলকাম হব।

Saturday, October 25, 2014

কোরবানী-২০১৪

কোরবানী ঈদ রিপোর্ট-২০১৪ । যাদের সাথে দেখা হল না, তাদের জন্য। 

এইবার ঈদ আসলে আমি যেভাবে ভেবেছিলাম হবে ঠিক সেভাবে হয় নি। আমি সাধারনত যেসব প্ল্যান করি, মিস হয় না। এবারের ঈদের বড় বড় দুটো প্ল্যান মিস হয়েছে। 

প্রথম থেকে ছিলাম কনফিউজ। এই বছর অনেক ছুটি নিয়েছি। সো ঈদের সময় কবে থেকে ছুটি নেব, কতদিন নেব এইসব। ছুটি নিলেও পরে যাব কিভাবে? ট্রেনে নাকি বাসে? আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম ট্রেনে একটা রিস্ক নেব। টিকেট পাই কিনা।
একা একা ট্রেন জার্নি খুব বোরিং। যানজট নেই কিছু নেই, তাও ভৈরব যেতে লাগে ৫ ঘন্টা। এত সময় শুধু বসে থাকাও যায় না। ঝিমুনি এসে যায়। সংগে ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজের কারনে ঝিমানোও যায় না। কখন বেহাত হয়ে যায়! বসার একটু পরেই টের পেলাম সিটের ফোমের ভিতর দিয়ে নিচের স্টিলের রডের শক্ত ছোয়া পাওয়া যাচ্ছে। আরাম করে বসারও উপায় নেই।
যাইহোক, রাত সাড় নয়টা নাগাদ পাঁচদোনা পৌছালাম। ঈদের আগের রাত। বাসস্ট্যান্ডের পেসেঞ্জার পেতে এক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে ধারনাতেও ছিল না।
চিটাগাং থাকতেই দুইজন আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে যেন বাসস্ট্যান্ডে এসেই যেন ফোন করি। একজন হল রিফাত, আরেকজন হল এক ছোটভাই। সি এন জিতে থাকতেই ছোটভাইটাকে ফোন দিয়ে বলছি যেন এক নম্বরের গেটের সামনে থাকে। আর নেমে ফোন দিলাম রিফাত কে।
বাসস্ট্যান্ড নেমেই দেখি এক তামশা! গানের আসর বসেছে! একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই এটা কি? বললেন যে, কি জানি ভাই...আমি এইমাত্র আসলাম।
একটু পরে সদ্য জীবিতদের খাতা থেকে নাম কাটা যাওয়া ছেলেটা তার মটর সাইকেল নিয়ে হাজির। পাশেই ঝুলানো মিস্টির প্যাকেট। আমার ঠোটের মুচকি শয়তানি হাসি দেখে সেও হেসে দিল। চড়ে বসলাম তার গাড়িতে। গেটের কাছে এসে দেখি সেই ছোটভাই দাঁড়িয়ে আছে তার সাইকেল নিয়ে। কুশল বিনিময়ের একফাঁকে সে আমাকে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল। প্যাকেটের মুখ ফাঁক করে দেখি আমার জন্য সে গিফট কিনেছে!
আমি যখন খুব অবাক হই তখন ভাষা খুজে পাই না। আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না, আমার কি করা উচিত। আমি কি ওকে ধন্যবাদ দিব? নাকি ঈদের সময় বাসায় দাওয়াত দিব? নাকি ওকেও কিছু একটা কিনে দেব? নাকি অন্য কিছু করব? রাতের এগারোটা বেজে গেছে। সারাদিন তেমন কিছু খাওয়াও হয়নি, ক্লান্তিতো আছেই। অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূড় অবস্থায় ওকে বিদেয় দিয়ে রিফাতের মটরসাইকেলে চড়ে বাসায় চলে আসলাম।
ঈদের দিনটাতো একরকম কেটেই গেল। সবার যেমন কেটেছে তেমনই। বিপত্তি বাধল রাতের বেলা। কলোনীতে বিদ্যুৎ নেই! জিটিজি উপর লোড কমানোর জন্য হাউজিংয়ের লাইন কেটে দেয়া হয়েছে। গরমে অবস্থা কাহিল। পরেরদিন স্পিন খেলা হবে কিনা এই ডিসিশনের উপর আমার আরেকটা ডিসিশন অপেক্ষা করছে। কিন্তু বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় কোন ডিসিশন নেওয়া হল না।
ঈদ ছাড়াও কলোনীতে যাওয়া হয়। সেই একই প্যাটার্ন। সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হয়ে হোস্টেলে যাওয়া, তারপর রাত ৯-১০ টার দিকে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু আড্ডাবাজি। তারপর আরবার ফিরে আসা। ঈদের সময় এই প্যাটার্নের একমাত্র ভিন্নতা হল আমাদের স্পিন খেলা। আমি যথেষ্ঠ আশাবাদী ছিলাম। হয়ত সবাই আগ্রহ দেখাবে। কিন্তু............. যাইহোক যেটা হয়নি সেটা নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই।
আফসোস হল এই কারনে যে, আমার অন্য প্ল্যানটাও ভেস্তে গেল। খেলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় অন্যটাতে সময়মত ডিসিশন দিতে পারি নি। 

প্রতিদিনই ঘুরে ফিরে হোস্টেল-বাজার-ঘর। ভাবছিলাম বাপ্পির সাথে একদিন সকালে বের হব। ক্যামেরা নিয়ে। তারপর হন্টন চলবে। বাপ্পি আবার ঘাড়ের ব্যাথায় অস্থির। ঈদের রাতে গেলাম বাপ্পিকে দেখতে। সেখানে গিয়ে এক বিব্রতকর পরিস্থিতি। 

বাসার সিলিংয়ের প্লাস্টার খসে পড়েছে আগেই। এবার কাজ করানোর কথা। যাদের ঠিক করেছি তারা ছাদের কাজ করার পর কিছু পেমেন্ট পেয়ে তাইরে নাইরে শুরু করল। সিলিংয়ের কাজ করার জন্য লোক ঠিক করা হল। পরের দিন সকাল থেকে কাজ শুরু করবে। পরেরদিন সকালে আবার আমি চিটাগাং চলে আসব। সবার কাছে বিদেয় নিয়ে টিয়ে রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ৫ টায় উঠতে হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সব ফর্সা। কিরে কয়টা বাজে? দেখি ৬ টা ১৮! পুরাই মাথায় হাত। এলার্ম দিয়েছে কিন্তু টের পাইনি। ধূর! আজকে আর যাবই না। পাশ ফিরে আবার শুয়ে পড়লাম।
সাড়ে নয়টার দিকে দু'জন লোক এলো। ঘুম থেকে উঠলাম। রুম রেডি করে দিলাম কাজ করার জন্য। কাজ চলল প্রায় আছরের আগ পর্যন্ত। যদিও ধোয়া ধুয়ি শেষ হতে হতে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল।ভারী বোঝা টানতে গিয়ে কোমড়ে হ্যাচকা টান খেয়ে বাঁকা হয়ে রইলাম কতক্ষন। চুলা পরিষ্কার করতে গেলাম, চুলার পাশের বটিতে লেগে আঙ্গুল কেটে গেল। পর্দা লাগাতে গেলাম, দেখি একপাশের তারকাটা মিসিং। ঐটা ঠিক করতে যেয়ে অন্যহাতের আঙুলে খেলাম কেচা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুপুরে খাওয়া খেলাম।
পরদিন সকালে কিন্তু সময়মতই উঠলাম। কিন্তু পড়লাম অন্য বিপত্তিতে। দিনটাই শুরু হল ঝগড়া দিয়ে।
সকালবেলা পৌনে ছয়টায় ঘর থেকে বেড়িয়ে যখন হাটা শুরু করেছি তখন দেখি পায়ে টান লাগে! অনেকটা অনেকদিন পরে দৌড়ালে যেমন হয়। উঠলাম সিনএনজিতে। স্ট্যান্ডে আর সিএনজি না থাকায় ভাড়া চাইল ৫ টাকা বেশি।
>কেরে? ৩০ টাকার ভাড়া ৩৫ টাকা কেরে?
>>ঈদের সিজন না? বেশি দেওন লাগব।
>বেশি দিতাম কেরে? আমগোরে বেশি কেডা দেয়?
>>আপ্নেরাতো সরকারী চাকরী করেন। হুইয়া বইয়া থাইক্যা বেতন বোনাস পান। আমগোর বোনাস কে দেয়? সারাদিন গাড়ি চালাই...
>তো কি হইছে? আমগোরে জিম্মী কইরা ভাড়া বেশি নিতেন কেরে আমনে? টাকা হালাল হইত না...
>>আমনেগো টাকা হালাল হইত না। অফিস করেন মিয়া চাইর ঘন্টা...একসপ্তাহ পর্যন্ত এমুন চলব। রবিবার পর্যন্ত...সহাল সহাল আপনের লগে মেজাজ গরম করতারতাম না। না গেলে না যাইবেন... ..............................[আমার সহযাত্রীর সাথে সিএনজি ড্রাইভার]

সিএনজি ছেড়ে দিয়ে এখন বাসের অপেক্ষায়। আসল একটা বাস। ফুল লোড। লোকালে ভাড়া ৩০-৩৫ টাকা। ঐটাও লোকাল, তবে বাস বড়। ভাড়া চায় ৬০ টাকা। উঠলাম না।
উঠলাম মেঘালয় লাক্সারীতে। নরসিংদী রুটে যাদের যাতায়াত আছে তারা নাম শুনে থাকবেন। কাউন্টার সিস্টেম, তাই ভাড়াও ডাবলের বেশি। নেহায়েত কপালগুনে সেই ৪০ সিটের লাক্সারিয়াস মেঘালয়ের ৩৭ নম্বর লাক্সারিয়াস সিটটা আমার কপালে পড়ল। যাই হোক আরেকজনের বিরাট এক গাট্টি কোনরকমে আমার লম্বা লম্বা পা দিয়ে পাশ কাটিয়ে ভারী ব্যাগ কোলের উপর রেখে বসে পড়লাম।
ভূলতা কাউন্টারে এসে নতুন নাটক! গাড়ি থামতেই এক লাল দাড়ির মুরুব্বীগোছের লোক উঠলেন। আমার পাশের ৩৮,৩৯,৪০ নং সিট দখল করলেন। তার পিছে পিছে এলেন দশাসই শরীরের এক হিন্দু মহিলা! সে যখন দেখল সিট সবগুলা দখন তখনই চিল্লাচিল্লি শুরু।
>এই কি ব্যাপার? আপনি একা তিন সিট নিচ্ছেন ক্যান? মহিলার সিট দেন।
>>আরে আমার সিট তিনটাই লাগবে....
>এটা কি ধরনের কথা? আপনি মহিলার সিট দিবেন না...!!
>>আমারোতো মহিলা। আমার লাগবে সিট। দুইটা বাচ্চা আছে। ....এই তোরা বাসে উঠস না কেন?
বলতে বলতেই হিন্দু মহিলার স্বামী, তারপিছে ২ বাচ্চা নিয়ে আরেক দশাসই বোখরাওয়ালী, তারপিছনে গাট্টিবোচকা নিয়ে বোখরাওয়ালী মোটামুটি স্বাস্থ্যের স্বামীর আগমন।
>এই আপনি সিট ছাড়েন না কেন? মহিলা বসতে দিবেন না? ...হিন্দুর স্বামী।
>> আরে আমার তিন সিটই লাগবে। মহিলা আছে, দুইটা বাচ্চা আছে।

এই প্যাচাপ্যাচির ফাঁকে দুই বাচ্চাকে দুই সিটে বসিয়ে মহিলা বসল আমার পাশের সিটে। দুই সিটে বাচ্চা হওয়াতে আমার ও মহিলার সিটের মধ্যে ভালই গ্যাপ ছিল। তাদের বসিয়ে দিয়ে মুরুব্বী নেমে গেছেন।
হিন্দু মহিলা গজগজ করতেছে, "এই বুড়ার সাথে তুমি পারলা না। আমি একা থাকলে এক ধাক্কা দিয়া বুড়ারে কই ফালাইতাম...!"
আমরা ইতোমধ্যে অধৈর্য্য হয়ে উঠছি। কন্ট্রাকটর কোথায়? গাড়ি ছাড়ে না কেন? পরে শুনলাম, এই বাসের কন্ট্রাকটরের মৃগী হয়েছিল। আমরা অবশ্য বাস থেকেই দেখছিলাম একজনকে ধরে সবাই শুইয়ে দিছে।
"আমরা জব করি। জব ধরতে হয়! পুরুষ বসে যাবে আর মহিলা দাড়ায়ে যাবে!!"- হিন্দু মহিলার গজগজানী চলতেছে।
এদিকে বোখরাওয়ালীর জামাই তাদের মালামাল সাইড করেছে। দাঁড়িয়ে আছে। তাই দেখে বোরখাওয়ালীর দরদ উথলাইয়া উঠছে। বাচ্চা দুইটারে ঠেলা দিয়া সরাইছে। আমার আর তার সিটের মধ্যে গ্যাপ বাড়াইছে। তারপর জামাইরে ইশারা দিছে। লোকটা হিন্দু মহিলাকে বলল, "এই যে এখানে বসেন।"
"আমি বসব না। আপনি বসেন!!" মহিলা ঝামটা মারল।
"এখানে কোথায় বসবে? এখানে কি সিট আছে নাকি?" - আমি।
"বিধর্মী তো বিধর্মীই। (আরো কি কি জানি বলছে )" বোরখাওয়ালীর জামাই।
এইবার বাসে কেয়ামত নাইমা আইল।
"এই কি বললেন আপনি? কি বললেন? বিধর্মী বললেন ক্যান?"- হিঃ মহিলা।
"আপনি বিধর্মী গালি দিলেন কেন? কত বড় সাহস! বিধর্মী গালি দেয়। বেয়াদপ কোথাকার।"- হিঃ মহিলার জামাই।
"বিধর্মীরে বিধর্মী বলব নাতো কি বলব? তুই চুপ। স্টুপিড!"-বোঃ জামাই হিঃ জামাইকে।
"আপনি বিধর্মী বলেন কেন?"- হিন্দু ফ্যামিলির ছেলে। বয়স ১৩-১৪ হবে।
"ফাজিলের কোথায়কার!"-আরেক হিন্দু যাত্রী।
"আপনি এইগুলা বলেন কেন? আপনি একাই মুসলমান? আমরা মুসলমান না?"-আরেক মুসলিম (!) সহযাত্রী।

চিল্লাচিল্লীতে কাউন্টার থেকে লোক আসল। ঐ মুরুব্বীও কোথা থেকে এসে হাজির। ঘটনা আঁচ করতে পেরে বোখরাওয়ালীর জামাইরে মুরুব্বী দিছে ধমক। আর ঐ লোকের পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করছে।
এইসব ঘটনার ফাঁকফোকড়ে লোকটা আমার পাশে এসে বসল। আমি কিছু বললাম না। আমার বসতে তেমন কোন প্রবলেম হচ্ছিল না। কিন্তু লোকটা মনেহয় আমার নিরবতাকে অন্যভাবে নিল।
"দেখছেন? ব্যবহারটা কি করল? বসতে দিলাম...আর কেমন করল..."
এইসুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলাম।
"ভাই আপনি নিজেইতো রং কথা (বিধর্মী) বলছেন। আপনি বসতে বলেন কেন? এখানে কি সিট আছে? আপনার নিজেরই সিট নাই আপনি আরেকজনকে বসতে কেন বলেন?"
ঝাড়ি খেয়ে বেটা একদম চুপ। আমি চিন্তা করলাম, টিকেট কেটে হিন্দু যাচ্ছে দাঁড়িয়ে আর টিকেট ছাড়া মুসলিম (!) যাচ্ছে সিটে বসে।
যাইহোক, আসলাম চিটাগাং রোড। ইউনিকের টিকেট কাটলাম। আমার আগে এক দম্পতি (দুই বাচ্চাসহ) টিকেট কাটছে। আমি কাটছি সাড়ে সাতটায়। গাড়ি ঢাকা থেকে ছাড়বে পৌনে আটটায়। ৮ টা ২০ বেজে গেছে গাড়ির খবর নাই। এখন ঐ ভদ্রলোক কাউন্টারের লোকের সাথে হইচই।
"হ্যা, গাড়ি আসবে বললেন ১০-১৫ মিনিট পর। এখন এক ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে। গাড়ির খবর নাই। বাচ্চাগুলা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।"
"কে বলছে গাড়ি ১০-১৫ মিনিট পরে আসবে? আমি বলছি ঢাকা থেকে গাড়ি 7:45 এ ছাড়বে। আসতে আসতে ৩০-৪০ মিনিট লাগবে।"
"আপনি একেক সময় একেক কথা বলেন কেন? এক কথা বলবেন। গাড়ি দেরি হলে বলবেন ১০-২০ মিনিট দেরি হবে। দুই কথা বলেন কেন?"
"দুই কথা কে বলছে? আমি দুই কথা বলি নাই। হেরে (আমাকে) জিগান টিকেট বিক্রির সময় কি বলছি।"
আমি-"ভাই বাদ দেন। বাচ্চারা কান্না কাটি করতেছেতো তাই এসব কথা বলতেছে। আমরাতো জানিই এই রুটের গাড়ির অবস্থা।"

এরপরও ওই লোক গজগজ করলেও কাউন্টারের ম্যানেরজার কিছু বলে নাই আর।
গাড়িতে উঠেও আরেকজনের সাথে ঝগড়া করলাম। যে ঘটনার জন্য যে দোষী না সেই ঘটনায় তার সাথে মেজাজ খারাপ করলাম। মুড অফ অবস্থা চিটাগাং শহরে এসে পৌছালাম।
একঘন্টা বাকি এখনো কম্পোনীর গাড়ি আসতে। এখন কি করব? অপেক্ষা নাকি লোকাল সার্ভিস দেখব? নাকি ওয়াল্টনের কাস্টমার কেয়ার খুজব? আগে নাহয় যুহর পড়ে নেই।
নামাযের পর সিদ্ধান্ত নিলাম ওয়াল্টনের কাস্টমার কেয়ারটাই আগে খুজে বের করি। তারপর দেখা যাবে কিহয়। ফোন দিলাম। বলল আগ্রাবাদ আসতে হবে, আমরা ৬ টা পর্যন্ত আছি।
গেলাম আগ্রাবাদ। বাসে থাকতেই একজনের সাথে কথা বলে মুহুরীপাড়া কোনদিকে আইডিয়া নিয়েছি। কিন্তু নেমে রিকশাওয়ালাকে মুহুরীপাড়া বলাতে চিনলই না। হাটা শুরু করলাম। সিঙ্গাপুর মার্কেটের সামনে দিয়ে হেটে হেটে একটু দূরেই একটা মোড়ে আসলাম। আবার ফোন দিলাম,
"ভাই কোথায় আপনাদের দোকান? রিকশাওয়ালাতো চিনে না..." 
"ভাই রিকশাওয়ালাকে বলেন যে, ...... কমিউনিটি সেন্টারের পরেই। ২-৩ মিনিট লাগবে?"
"....... কমিউনিটি সেন্টার?"
"জ্বী..."
"ওকে..."

পাশে থাকা ট্রাফিক পুলিশ আমার কথা শুনল। তারপর উনি নিজেই আমাকে একটা রিকশা ঠিক করে দিল। এই প্রথম মনে হয় কোন পুলিশকে ভাল একটা কাজ করতে সরাসরি দেখলাম!
যাইহোক, কমিউনিটি সেন্টারের ছাড়িয়ে একটু এগিয়েই রিকশা ছেড়ে দিলাম। Waltonbd আর খুজে পাই না। কোথায় কোথায়? সাত পাচ ভাবতে ভাবতে সামনের দিকে এগুচ্ছি। হঠাৎ দূরে সাইনবোর্ডটা চোখে পড়ল। হাটার গতি বাড়ালাম। সামনে যেয়ে দেখি বন্যা! কি অবস্থা আগ্রাবাদে! ঘূর্নিঝড় হুদহুদের প্রভাবে উচ্চজোয়ারে নর্দমা উপচিয়ে রাস্তায় গোড়ালির উপর পর্যন্ত পানি।
এখনতো আর রিকশাও পাই না। কি আর করা। পচা পানি পেরিয়ে গলির ভিতর চিপার মধ্যে গেলাম। ফেরার সময় রিকশা পাওয়াতে আর পানিতে পার ফেলতে হয় নি। ততক্ষনে এক ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। গাড়ি চলে গেছে। পেটেও টান পড়েছে। আগ্রাবাদ মোড়ে হোটেল জামানে ঢুকলাম। লাঞ্চ সেরে তারপর আস্তে আস্তে আমার ডেরায় পৌছালাম।