বই পড়ার আগে দেব না ভেবেছিলাম। বইটা পড়ার পর মনে হচ্ছে দেয়া দরকার। বইয়ের রিভিউ কিভাবে লিখে আমার জানা নেই। আমার কেমন লেগেছে সেটাই আমি লিখব। প্রথমে পুরো বইটা নিয়ে কয়েকটা লাইন লিখি।
বইটা দেখতে খুব সুন্দর। ধ্রুব এষ তার প্রচ্ছদের বরাবরেই মতই তার মেধার সাক্ষর রেখেছেন। বইয়ের পাতা গুলোও ভাল হয়েছে। বড় বড় লেখকদের বইয়ের পাতা যেমন হয়, তেমনি। শুধু ভাল না পাতার উপর লেখাগুলো!
ভাল না লাগার সবচেয়ে বড় কারণ হল পুরো বইটাতে অসংখ্য ভুল। প্রধানত বানান ভুল! বানানের ভুল নাকি সঠিক বানান আমি জানি না নাকি এখন বানান পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে-ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
দ্বিতীয় ভুল যেটা চোখে পড়েছে সেটা হল, যতি-বিরাম চিহ্নের ব্যবহার না করা। কিছু কিছু স্থানে "এখানে প্রস্রাব করিবেন না করিলে ১০ টাকা জরিমানা"-র মত অবস্থা হয়েছে। লেখকের বক্তব্য বুঝতে পেরেছি কিন্তু বুঝতে কষ্ট হয়েছে।
বইয়ের কিছু কিছু স্থানে বর্ণনার সাথে কথোপকথন মিশে গিয়েছে এবং দুই ব্যক্তির বক্তব্য একই লাইনে চলে এসেছে। কোনটা কার বক্তব্য বুঝতে ঝামেলা হয় এমন হলে।
এমন কেন হল কে জানে! প্রুফ রিডারের কারণে নাকি কম্প্যূটার কম্পোজে সমস্যা-বুঝতে পারছি না। অন্যকোন বই হলে কিছুদূর পড়েই পড়া বাদ দিতাম।
এবার আসি প্রতি গল্পের দিকে। তারপর লেখকদের উদ্দেশ্য করে দু-একটি কথা বলব।
প্রথমেই মেবাজ। বইয়ের যে তিন-চারটি গল্প আমার মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে তার মধ্যে মেবাজ একটি। শুরুর দিকে একটু ধীর গতির হলেও পরের দিকে সেটা পুষে যায়।
বোন। আমার ধারনা এই গল্পটি নেয়া হয়েছে লেখকে সম্মান করে। সম্মান করেছেন সম্পাদক সাহেব। না হলে ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করার মত কিছু এটা নয়।
মহব্বত_আলী। এটা বইয়ের মধ্যে কিভাবে ঢুকল সেটা আমার মাথায় ঢুকে না।
ফরবিডেন_আর্ট। এই গল্পটাই সবচেয়ে ভাল লেগেছে। চমৎকার! লেখক কি আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন? থাকলে আওয়াজ দিন। আর না থাকলে আমি আপনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে আগ্রহী।
চার। এই গল্পটাও ভাল লেগেছে। তবে শেষের দিকে ঘটনা প্রবাহ যদি আরেকটু ধরে রাখা যেত তবে আরও ভাল লাগত। লেখকের জন্য শুভকামনা।
কয়েদী। এই গল্পটা আগেই পড়েছি। তাই কয়েদী নিয়ে কিছু লিখলাম না।
একাকী_একটি_রুপালি _পরী। যে কনসেপ্টের উপর গল্পটি লেখা হয়েছে, তার উপর অনেক বড় উপন্যাস লেখা যায়। লেখিকা হুড়মুড় করে শেষ করে দিয়ে আমাদের বঞ্চিত করেছেন।
ছেলেটা_ও_মেয়েটা। বলার কিছু নেই। তেমন ভালও লাগেনি, খারাপও লাগেনি।
বাস্তব_নিয়তি। এলোমেলো লাগল। কেমন জানি...
পাগলি। দুই পৃষ্ঠার গল্প! কি আর বলব? কিছুই বলার নেই।
বিন্দু_আমি। দেখা হল, প্রেমে পড়লাম, ছ্যাকা খেলাম- টাইপ লিখনি। ভাল লাগেনি।
পৃথিবী_এবং_আমরা। আপনি গল্পটা আরও বড় করতে পারতেন। যদি তাড়াহুড়ো করে থাকেন তবে আমি বলব আরও সময় দিন লেখা-লেখির পিছনে। ভাল করতে পারবেন ইন শা আল্লাহ!
ঘেউ। আজাইরা গল্পগুলোর মধ্যে একটা।
অবর্ণনীয়_প্রেম। কোন ছেলে তার বোনের সাথে এমন করতে পারে-এটা ভাবা/কল্পনা করা আমার জন্য কঠিন। অবাস্তব লাগল কাহিনী।
দেয়ালের_ঐ_পাশে_মা। এটা ঠিক আছে। ঘটনাপ্রবাহ স্বাভাবিক।
আয়না। আমার লেখা এটা। এটা নিয়ে আপনারা সমালোচনা করুন।
জেগে_উঠা_আর্তনাদ। পড়ার জন্য পড়লাম। কোন আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি নিজের ভেতর।
নোনাজল। বাংলাদেশে ফেসবুক এসেছে বা ফেসবুক মানুষ ব্যবহার করছে কতদিন হয়েছে? একজন লোক বৃদ্ধ বয়সে তার তারুণ্যের স্মৃতি রোমন্থন করতে যেয়ে ফেসবুকের কথা স্মরণ করছেন! ভাই, একটু তো সেন্সটা কাজে লাগান। সবকিছু অব্যবহৃত থাকলে কি চলবে?
ফসল। গল্প শুরু হল। কিন্তু শেষ হল না। ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার ধারাবিবরণীর মত। শুরুর ১৫ মিনিট ধারাবিবরণী শুনলে কি কিছু বোঝা যায়? না ভাল লাগে?
দীর্ঘশ্বাস। কেমন জানি গল্পটা...
নির্জন_দ্বীপে। মনে হল কোন মুখস্থ করা গল্প পড়লাম। আগে মুখস্থ করে তার যেন উগরানো হল!
একটি_কলম। প্রথম লাইনেই যতি চিহ্নের কোন অস্তিত্ব না থাকার কারণে বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল। মনে হল গল্প হুট করেই শেষ হয়ে গেল। শেষ হয়েছে না লিখিত অংশ বাদ পড়েছে কে জানে!
অতৃপ্ত_ভালবাসা। গল্প যে কত আজাইরা হতে পারে এটি তার একটি উদাহরণ!
অধরা_ভালবাসা।লুতুপুতু গল্প। ইমম্যাচিউর টাইপের লেখা।
অতৃপ্ত_আত্মা। ভাল লাগেনি।
সমকোণী_ত্রিভুজ। ভাল লাগল না, খারাপও লাগল না।
অস্তিত্বহীন_অনুভূতি। এটাও অবাস্তব লাগল আমার কাছে।
টান। নরমাল লাগল। তেমন কোন অনুভূতি কাজ করেনি...
সোডিয়াম_আলো_আর_আমার_ছায়া। ভালই...তবে শেষের দিকে কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।
একটু_প্রেম_ও_কিছু_চাপা_বিরহের_কথা। লেখক গল্প লেখা বাদ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করলে ভাল করবেন বলে আমার ধারনা।
একা। ভালই...
সাফল্যের_দ্বিতীয়_ভালবাসা। একেবারেই সাদামাটা। ‘ক্ষুধা লাগল। ভাত খেলাম। তরকারী বাসি ছিল। পেট খারাপ হয়ে গেল।‘-টাইপ। বিরক্ত লাগল পড়ার সময়।
নিশিপরীর_গল্প_লেখা। লেখনী সুন্দর। গল্পের বুনন ভাল হয়েছে। আরাম পেয়েছি পড়ে।
বেজাগতিক_সত্যের_চাদর_গায়ে। বইয়ের সবচেয়ে বিরক্তিকর গল্প। লেখক পাঠককে একগাদা জ্ঞান দেবার চেষ্টা করেছেন। ফালতু...
মা। এটা কোন গল্প নয়। সম্ভবত ফেসবুক পোস্ট। বইয়ের মধ্যে কিভাবে ছাপা হল কে জানে!
একটি_বদনার_জীবন_কাহিনী। ফালতু এবং ফাউল স্টোরি। ‘আত্মকাহিনী’-টাইপ লেখা লেখকের আরও বেশি বেশি পড়া উচিত।
নিশিকন্যা। গল্পের পটভূমি সুন্দর। আমার মত ফিনিশিং এর সমস্যা আছে লেখকের।
নিস্তব্ধতার_গল্প। শুরু না হতেই শেষ! এই ধরনের গল্প পড়লে লেখকের উপর রাগ লাগে। যত্তসব!
নন্দিনী। চঅঅলেএ...
মায়ের_অভিমান। এই গল্পেরও পটভূমি ভাল। সমাপ্তিও ঠিক আছে। ভালই লেগেছে।
এবার লেখকদের উদ্দেশ্যে বলি। কথাগুলো আমার নয়। মুহম্মদ জাফর ইকবালের। তাকে নিশ্চয়ই পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। তাকে যখনি প্রশ্ন করা হয়, “কিভাবে আপনার মত বড় লেখক হতে পারব?” তিনি এক কথাই বলেন, “পড়, পড় এবং পড়”।
ভাল লিখতে হলে বেশি বেশি পড়তে হবে। ফেসবুকের লেখা নয়। বাস্তবের বই। টাকা দিয়ে কিনে হোক, লাইব্রেরীতে গিয়ে হোক বা ধার করে হোক-বেশি বেশি বই পড়া চাই। তাহলে বড় লেখকরা কিভাবে লেখেন সে সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাবে। তখন কিছু লিখলে লেখা ভাল হবে, পাঠক সন্তুষ্ট থাকবে।
লেখক হবার কোন শর্টকাট নেই। “আইলাম, বইলাম, খাইলাম, ঘুমাইলাম”- টাইপ লেখা লিখলে না কারো ভাল লাগবে, না কারো কোন কাজে আসবে!
ধন্যবাদ...